চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা নামল ১০ ডিগ্রিতে
Published: 7th, February 2025 GMT
কিছুদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ উঠানামা করছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায়। হঠাৎ করে একদিনের ব্যবধানে ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে দাঁড়িয়ে ১০ ডিগ্রিতে। হঠাৎ এই আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে আবারও জেঁকে বসেছে শীতের তীব্রতা। বিপাকে পড়তে হচ্ছে জেলার খেটে খাওয়া মানুষদের।
শুক্রবার সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জেলায় ১৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। যা ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে কমল ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।
কয়েকদিন শীতের তীব্রতা আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান।
তিনি বলেন, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাপমাত্রা কমতে পারে। এরপর আবারও তাপমাত্রা বাড়বে। তবে শৈত্যপ্রবাহের আভাস এখনও জানায়নি ঢাকা অফিস৷
এর আগে, ৩১ জানুয়ারি ও ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। যা দিনে কিছুটা গরম অনুভূতি হতে দেখা যায়।
শহরের হকপাড়ার বাসিন্দা রিকশাচালক জালাল উদ্দিন বলেন, আমি রাতে রিকশা চালিয়ে উপার্জন করি। কয়েকদিন ঠান্ডা ছিল না খুব বেশি। হঠাৎ আজ রাত থেকে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। হাত-পা কাঁপুনি ধরে গেছে। প্রথমে মোটা কাপড় নিয়েছিলাম না। বাধ্য হয়েই মধ্য রাতে বাড়ি গিয়ে জ্যাকেট নিয়ে এসেছি।
জেলা শহরের এক মুদি ব্যবসায়ী ইমরান হোসেন বলেন, খুব সকালেই দোকান খুলতে হয়। কয়েকদিন শীত কম ছিল। আজ থেকে হঠাৎ শীত বেড়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
অভিযানে বন্ধ, চলে গেলেই চালু হয় অবৈধ ইটভাটা
উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে বন্ধ করে দেওয়ার পরদিনই কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চালু হয়েছে ছয়টি অবৈধ ইটভাটা। মঙ্গলবার উপজেলার চরসাদিপুর ইউনিয়নের শ্রীকোল এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়েছিল।
এ সময় ভাটাগুলোকে নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি ব্যবহারসহ নানা অভিযোগে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভবিষ্যতে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভাটা পরিচালনা না করার বিষয়ে মুচলেকাও দেন মালিকরা। বুধবার সরেজমিন ওই এলাকার কেআরবি, এনএসবি, এমএমবিসহ বিভিন্ন ভাটায় ইট পোড়াতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুকনো পদ্মা নদীর প্রায় চার কিলোমিটার চর ইজিবাইকে পাড়ি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চরসাদিপুরের শ্রীকোল এলাকার কেআরবি, এনএসবি, এমএমসি, ভিআইপি, পদ্মা ও এমডিবি ব্রিকসে অভিযান চালায় প্রশাসন। ইটভাটা প্রস্তুত ও ভাটা ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম। তিনি কেআরবি, এনএসবি, এমএমসি, ভিআইপি ও পদ্মা ব্রিকসকে ৭০ হাজার করে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা; এমডিবি ব্রিকসকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর ড্রাম চিমনিও ভেঙে দেওয়া হয়।
বুধবার সকালে সরেজমিন ওই ভাটাগুলোতে কাজ চলতে দেখা গেছে। এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত ড্রাম চিমনিতে কাঠ পোড়ানোর দৃশ্যও চোখে পড়ে। সবগুলো ভাটার চারপাশে কৃষিজমি। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, প্রতিবছর উচ্ছেদের নামে নাটক করে প্রশাসন। নামমাত্র জরিমানা করে মালিকদের কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। অথচ পরদিন আবারও চালু হয় ভাটা; পোড়ানো হয় কাঠ। এ কারণে প্রতি বছরই অবৈধ ভাটার সংখ্যা বাড়ছে।
চিমনি দিয়ে ভাটা করতে অন্তত ৪০ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানিয়েছেন শ্রীকোল এলাকার কেআরবি ভাটার মালিক আছাই মণ্ডল। তিনি বলেন, জরিমানা-মুচলেকা দিয়েই পাঁচ বছর ধরে ভাটা পরিচালনা করে আসছেন। মঙ্গলবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়েছেন। এভাবেই অন্যরাও ভাটা পরিচালনা করে আসছেন। আগামী বছরও এভাবেই ভাটা পরিচালনা করবেন বলে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন তিনি।
পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে ২২ বর্গমাইল আয়তনের চরসাদিপুর ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের বাস। আইন অমান্য করে এ ইউনিয়নের ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে ৩৩টি ইটভাটা। এর মধ্যে অন্তত ১৯টিতে রয়েছে টিনের তৈরি ড্রাম চিমনি। এ ইউনিয়ন ঘেঁষে কুষ্টিয়া সদর ও পাবনা সদর ইউনিয়নের অংশেও আরও অন্তত সাতটি অবৈধ ভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় দেদার পোড়ানো হচ্ছে নদী ও ফসলি জমির মাটি; আশপাশের এলাকার গাছের কাঠ। ইট বহনে ব্যবহৃত ট্রাকের কারণে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে পড়ছে; দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় প্রশাসনও সহজে সেখানে অভিযানে যেতে চায় না।
২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের ৬০ সদস্যের দল চরসাদিপুর ইউনিয়নে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানে যায়। সেদিন ওই ইউনিয়নের ভোমরার মোড় এলাকায় তাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখেন ভাটার মালিক ও শ্রমিকরা। পরে ভাটা মালিকরা ‘আগামী বছর থেকে অবৈধভাবে ভাটা চালাবেন না’ মর্মে মুচলেকা দেন। সেটি নিয়েই কোনোমতে এলাকা ছাড়ে প্রশাসনের দলটি। এ ঘটনায় ১১ ডিসেম্বর ইটভাটার ১০ মালিকের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া পরিবেশ আদালতে ১০টি মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
চরসাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মেছের আলী খাঁ বলেন, ‘আমার কথা কেউ শোনে না। বারবার মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানিয়েও অবৈধ ভাটা বন্ধ হয়নি। বরং বছর গেলেই ভাটার সংখ্যা বাড়ছে।’ ১০ বছর আগে ওই ইউনিয়নে মাত্র একটি ইটভাটা ছিল। অথচ এখন এই সংখ্যা ৩৩টিতে দাঁড়িয়েছে বলেও জানান তিনি।
অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযানের তথ্য জানিয়ে ইউএনও এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবারও নিষিদ্ধ ড্রাম চিমনি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এ সময় ছয় ভাটা মালিককে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আগামীতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ইউএনও আরও বলেন, ৪ ডিসেম্বরের ঘটনায় আদালতে মামলা চলছে।