প্রাকৃতিক রাস্তাগুলো উন্মুক্ত করা দরকার
Published: 7th, February 2025 GMT
চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে বুনো হাতির আবাসস্থল যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, তাতে হাতির সঙ্গে মানুষের সংঘাত অনিবার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবির স্থাপনের কারণে সাত হাজার একর বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। এ ছাড়া বিগত সরকারের সময় নেওয়া রেললাইনসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগে বনভূমি সংকুচিত হয়েছে। ফলে হাতির চলাচলের প্রাকৃতিক রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। খাদ্যের সংকটেও পড়েছে হাতিগুলো। এ বাস্তবতায় হাতি আর মানুষের সংঘাতের ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে।
গত সাত বছরে উখিয়া ও টেকনাফে ২২টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরেই মারা গেছে সাতটি হাতি। দুর্ঘটনা ও অসুস্থতায় মৃত্যুর পাশাপাশি ফাঁদ পেতে, গুলি করে ও বৈদুতিক শক দিয়ে হাতি হত্যার ঘটনা থেমে নেই। গত ছয় বছরে সেখানে হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩৫ জন।
বন বিভাগের তথ্যমতে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে বর্তমানে ২৫ শাবকসহ হাতির সংখ্যা ২০৩। একটি হাতিকে প্রয়োজনীয় খাবার ও পানির জন্য ৭০ কিলোমিটার হাঁটাচলা করতে হয়। আশ্রয়শিবির, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কারণে হাতির প্রাকৃতিক চলাচলের রাস্তা এবং খাদ্য ও পানির জোগানস্থল কমে গেছে। এভাবে বন উজাড়ের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে হাতিগুলো।
কক্সবাজারে হাতি চলাচলের প্রাকৃতিক করিডর আছে আটটি। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কারণে তিনটি করিডর বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঘুমধুম সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের কারণে আরও দুটি করিডর বন্ধ হয়ে গেছে। আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাদের জ্বালানির প্রয়োজনেও বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। সব মিলিয়ে নিজেদের আবাসভূমিতেই অস্তিত্ব নিয়ে হুমকিতে পড়েছে হাতি। খাদ্য ও পানিসংকট এবং বিচরণের প্রাকৃতিক করিডর হারানোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই লোকালয়ে চলে আসছে হাতি। হত্যার শিকার হচ্ছে।
হাতি সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার অঙ্গীকার কাগজে–কলমে থাকলেও বাস্তবে তার উদ্যোগ দেখা যায় কমই। বন উজাড় প্রতিরোধ ও বনভূমি পুনরুদ্ধারে সরকারকে অবশ্যই জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। হাতির প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস করার কারণে শুধু হাতির অস্তিত্বই বিপন্ন হচ্ছে তা নয়, মানুষের জীবনও হুমকিতে পড়ছে। কক্সবাজারের হাতি রক্ষায় বন্ধ হয়ে যাওয়া করিডরগুলো উন্মুক্ত করা এবং পাহাড়ি ছড়া ও ঝরনাগুলোয় পানি রাখা জরুরি। অঞ্চলটিকে ঘিরে নেওয়া বিগত সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকেও পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
সর্বোপরি জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হাতি ও মানুষের সহাবস্থানের উপায় খুঁজে বের করাটাই সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষ বলছে, আপনাদেরকে আরো ৫ বছর দেখতে চাই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, “দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো। এসব দেখে মানুষ আমাকে বলছে, আপনাদেরকে আরো ৫ বছর দেখতে চাই।”
তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতিটি ঘটনার প্রতি সজাগ ও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছি। পুলিশের কর্মতৎপরতা আগের চেয়ে বাড়ছে। আরো বাড়ানো হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুর ২টায় সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ থানা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনাকে ফেরত আনা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি দেখার জন্য আমি এখানে এসেছি। ফরেন দেখার জন্য ফরেন অ্যাডভাইজার আছেন। তবে, ভারতের সাথে আমাদের একটি চুক্তি আছে। চুক্তিতে বন্দিবিনিময় করার কথা বলা আছে। এ চুক্তির আলোকে ক্রিমিনালকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। চিকেন নেক ইস্যু নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো যুদ্ধের শঙ্কা নেই।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো আমাদের নিজস্ব কিছু হাতিয়ার হারিয়েছি। এগুলো উদ্ধার করতে হবে।
দেশে মব জাস্টিস নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যেখানেই মব হচ্ছে, সেখানেই অ্যাকশনে যাচ্ছি আমরা। যারা ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছি। ভবিষ্যতে যদি কেউ মব সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে কঠোর হাতে দমন করা হবে।
শান্তিগঞ্জ থানা এলাকায় ঘন ঘন সংঘর্ষের বিষয়ে তিনি বলেন, শুধু পুলিশকে দোষ দিলে হবে না। এ কাজ শুধু পুলিশের না, জনসাধারণকে বেশি করে সচেতন করতে হবে।
আগ্নেয়াস্ত্র বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এ অস্ত্র যাতে ব্যবহার করা না হয়, সেদিক নজর রাখবে পুলিশ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজা-উন-নবী, জেলা প্রশাসক ড. ইলিয়াস মিয়া, পুলিশ সুপার তোফায়েল আহম্মেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পাল, শান্তিগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা, শান্তিগঞ্জ থানার ওসি আকরাম আলী প্রমুখ।
এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা শান্তিগঞ্জ থানা ভবনে অভ্যর্থনা কক্ষ, হাজতখানা প্রভৃতি ঘুরে দেখেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় হাওরে বোরো ধান কাটার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর।
ঢাকা/মনোয়ার/রফিক