উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন কাজ বাবদ বন্ধ হয়ে যাওয়া তিনটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের কাছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)। সারচার্জসহ এসব টাকা আদায়ে তিন এয়ারলাইন্সের এমডির বিরুদ্ধে বেবিচক এরই মধ্যে ১৫টি মামলা করেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা জজ আদালতে এসব মামলা করা হয়। তবুও এক টাকাও পাওনা আদায় করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এ  ছাড়া এসব এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারেরও অভিযোগ আছে।

অভিযুক্ত তিন প্রতিষ্ঠান হলো– জিএমজি, ইউনাইটেড ও রিজেন্ট এয়ারলাইন্স। বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, ইউনাইটেডের এমডি তাসবিরুল আলম চৌধুরী, জিএমজির এমডি সাহাব সাত্তার ও রিজেন্টের এমডি ইয়াসিন আলীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯০০ কোটি টাকার বেশি বকেয়ার অভিযোগে জিএমজির বিরুদ্ধে ৮টি, সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশি বকেয়ার অভিযোগে ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ৪টি এবং প্রায় তিনশ কোটি টাকা বকেয়ার অভিযোগে রিজেন্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করা হয়। 

২০০৭ সালে দেশে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করে ইউনাইটেড। আগাম ঘোষণা ছাড়াই ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় তারা। সে সময় ইউনাইটেডের বহরে থাকা ৮টি উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেবিচকের দ্বারস্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। দুই সপ্তাহ পর ফিরে আসার আশা ব্যক্ত করলেও ৯ বছরেও আর ফিরতে পারেনি তারা। ফলে এত বছর ধরে শাহজালাল বিমানবন্দরের জায়গা দখল করে আছে ইউনাইটেডের উড়োজাহাজগুলো। বর্তমানে এসব উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ইউনাইটেডের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৫০ কোটি টাকা। পাওনা আদায়ে বেবিচক গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার ইউনাইটেডকে চিঠি দিলেও পাওনা আদায়ে কোনো সাড়া মেলেনি।

২০২২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পর্ষদ ভেঙে নতুন সাত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলমকে করা হয় পর্ষদের চেয়ারম্যান। যদিও ২০২৩ সালে পরিষদ বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। তার পরও প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া প্রসঙ্গে কাজী ওয়াহিদুল আলম সমকালকে বলেন, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ৮-৯ বছর ফ্লাইট পরিচালনার পর ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় বেবিচকের মূল বকেয়া পাওনা ৫৫ কোটি টাকা। বেবিচকের হিসাব অনুযায়ী সারচার্জসহ তা ৩৫০ কোটি টাকা। এয়ারলাইন্স আবার চালু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে মূল পাওনা পরিশোধ করা হবে। এ কারণে সারচার্জের টাকা মওকুফ চেয়ে বেবিচক কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আমরা আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে এয়ারলাইন্স পরিচালনায় এওসি নবায়ন করতে পারিনি।

১৯৯৮ সালে চালু হওয়া জিএমজি বন্ধ হয় ২০১২ সালে। তাদের একটি উড়োজাহাজ এখনও রয়েছে বেবিচকের জিম্মায়। তাদের কাছে বেবিচকের পাওনা সারচার্জসহ ৯০০ কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে ২০১০ সালে চালু হওয়া রিজেন্ট বন্ধ হয় ২০২০ সালের মার্চে। তাদের দুটি উড়োজাহাজ আছে বেবিচকের কাছে। রিজেন্টের কাছে পাওনা সারচার্জসহ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। পাওনা আদায় বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠান দুটির কাউকে পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ আছে, বেবিচকের এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এতদিন পাওনা আটকে রেখেছে এয়ারলাইন্স তিনটি। যদিও এ বিষয়ে বেবিচকের কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। বিষয়টি নিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, বন্ধ থাকা তিনটি এয়ারলাইন্সের কাছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি বকেয়া পাওনা রয়েছে। টাকা আদায়ে এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের 

বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা জজ আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা আদায় করা হবে। এয়ারলাইন্সগুলোর যে ১২টি উড়োজাহাজ পড়ে আছে বিমানবন্দরে, সেগুলো নিয়েও মামলা করা হয়েছে। উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রি করতে আদালতের অনুমতির অপেক্ষা করতে হচ্ছে।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র এমড জ এমজ

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরাইলের তৈরি বালুর ঢিবি থেকে ৬৬ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার

সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর তৈরি করা বালুর ঢিবি থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে ৬৬ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

এ বিষয়ে বার্তাসংস্থাটি বলছে, বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলগুলো উত্তর গাজায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর তৈরি একটি বালুর ঢিবি থেকে ৬৬ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করেছে।

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, ‘ইসরাইলের বুলডোজিং অভিযানের কারণে গাজা শহর এবং উত্তরের বেশ কয়েকটি এলাকায় আত্মরক্ষার্থে সেনাবাহিনীর ব্যবহার করা বালুর ঢিবির নিচে ফিলিস্তিনিদের কবর দিয়েছিল তারা।’

তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলীয় শহর জাবালিয়ায় ৩৭টি এবং গাজা শহরের শাতি শরণার্থী শিবিরে ২৯ জনের লাশ পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক কবর এখনও আবিষ্কৃত হয়নি, কারণ ইসরাইলি অভিযানের কারণে ফিলিস্তিনিরা সেসময় মৃতদের রাস্তায়, স্কোয়ার এবং পাবলিক পার্কে কবর দিতে বাধ্য হয়েছিল। সিভিল ডিফেন্স টিম এবং মেডিকেল ক্রুরা সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ধ্বংসস্তূপ এবং বালুর ঢিবির নিচ থেকে লাশ উদ্ধারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।’

গাজার এই বেসামরিক প্রতিরক্ষা মুখপাত্র বলেছেন, গাজায় ঝোড়ো আবহাওয়া গাজাজুড়ে বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের কয়েক ডজন তাঁবু উড়িয়ে নিয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির পানি অনেক তাঁবুকে প্লাবিত করেছে।

তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের থাকার জন্য গাজায় জরুরিভাবে ১ লাখ ২০ হাজার তাঁবুর প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত গাজায় প্রবেশ করা তাঁবুগুলো সংখ্যাগত পরিমাণ বা মানের দিক থেকে ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করছে না এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন সেগুলো মোকাবিলার জন্যও অনুপযুক্ত।’

এনজে

সম্পর্কিত নিবন্ধ