ফিলিস্তিনের গাজার বাসিন্দাদের অন্য দেশে পাঠিয়ে উপত্যকাটি যুক্তরাষ্ট্রের দখলে নেওয়া ও উন্নয়নের পর সেটি ‘ভূমধ্যসাগরীয় সৈকত’ অবকাশযাপন কেন্দ্রে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন তাঁর জামাতার স্বপ্নই পুনরুজ্জীবিত করলেন।

এক বছর আগেই জামাতা জ্যারেড কুশনার গাজাকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুরূপ ধারণা প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘সাগরপাড়ের সম্পত্তি’ গাজার অনেক মূল্য।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হার্ভার্ডের একটি অনুষ্ঠানে জ্যারেড কুশনার বলেছিলেন, ‘গাজার সাগরপাড়ের সম্পত্তি খুবই মূল্যবান হতে পারে, যদি মানুষ সেখানে উপার্জনের দিকে মনোযোগ দেয়।’ আরব-ইসরায়েল সংঘাতকে একসময় ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আবাসন খাতের দ্বন্দ্বের চেয়ে বেশি কিছু নয়’ বলেও বর্ণনা করেন তিনি।

গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা দখলে নেওয়ার তাঁর বিস্ময়কর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ফিলিস্তিনিরা ছাড়াও ট্রাম্পের পশ্চিমা সমালোচকেরা ওই ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হবে জাতিগত নির্মূলের শামিল ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

ট্রাম্প আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগের সঙ্গে এবারই যে প্রথম গাজাকে টেনে কথা বললেন, তা নয়। গত বছরের অক্টোবরে রেডিওর একজন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে তিনি বলেছিলেন, যদি গাজাকে ঠিকমতো পুনর্নিমাণ করা যায়, তবে তা ‘মোনাকোর চেয়ে ভালো’ হতে পারে।

(ইসরায়েলের হামলায়) সেখানে (গাজায়) কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে ইসরায়েলি দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি, আমি সেখান থেকে লোকজনকে (ফিলিস্তিনি) সরিয়ে দিতে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব এবং এরপর সেটি পরিষ্কার করব।জ্যারেড কুশনার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা

গাজাকে ঢেলে পুনর্নির্মাণ করার ধারণা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর এ উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পরপরই প্রকাশ হয়েছিল প্রধানত কুশনারের কাছ থেকে। ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অজুহাতে গাজায় ওই আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে কুশনার তাঁর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করেন। ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ‘আব্রাহাম চুক্তি’ সই করার ক্ষেত্রেও সহায়তা করেন তিনি।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হার্ভার্ডের একটি অনুষ্ঠানে জ্যারেড কুশনার বলেছিলেন, ‘গাজার সাগরপাড়ের সম্পত্তি খুবই মূল্যবান হতে পারে, যদি মানুষ সেখানে উপার্জনের দিকে মনোযোগ দেয়।’ আরব–ইসরায়েল সংঘাতকে একসময় ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আবাসন খাতের দ্বন্দ্বের চেয়ে বেশি কিছু নয়’ বলেও বর্ণনা করেন তিনি।

আরও পড়ুনগাজার দখল নিতে চান ট্রাম্প০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

অনুষ্ঠানে কুশনার আরও বলেছিলেন, ‘(ইসরায়েলের হামলায়) সেখানে (গাজায়) কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে ইসরায়েলি দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি, আমি সেখান থেকে লোকজনকে (ফিলিস্তিনি) সরিয়ে দিতে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব এবং এরপর সেটি পরিষ্কার করব।’ উল্লেখ্য, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের আগে কুশনার নিউইয়র্কে একজন প্রপার্টি ডেভেলপার ছিলেন।

এ বিষয়ে কুশনারের একজন মুখপাত্রের কাছে জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া দেননি।

গাজাকে সমুদ্রসৈকতের অবকাশযাপন কেন্দ্র বানানোর ট্রাম্পের অসম্ভব পরিকল্পনাটি শুনতে ভালো হলেও ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি দুঃস্বপ্নের মতো। এ ঘোষণা তাঁদের ‘নাকবা’ বা ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরুতে তৈরি হওয়া বিপর্যয়কেই মনে করিয়ে দেয়। ইসরায়েলের দখলদারির মুখে ওই সময় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি নিজেদের ভূমি থেকে পালিয়ে যান বা তাঁদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

অবশ্য, গাজা দখলে নিয়ে এটিকে অবকাশযাপন কেন্দ্রে রূপ দেওয়ার ট্রাম্পের পরিকল্পনা কীভাবে কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।

রিয়াদের রয়্যাল কোর্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের মত, আরব বিশ্বের উদীয়মান শক্তি সৌদি আরব ট্রাম্পের ঘোষণাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না। এটি তেমন কোনো ভাবনার মধ্যে আনা হয়নি এবং এটি কার্যকর করা অসম্ভব। তাই, দিন শেষে ট্রাম্প নিজেও তা বুঝবেন।

আরও পড়ুন‘আমরা মরব, তা–ও গাজা ছাড়ব না’২১ ঘণ্টা আগে

গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফিলিস্তিনিদের তাঁদের ভূমি থেকে উৎখাত করার যেকোনো চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করছে দেশটি। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও হামাসও ট্রাম্পের ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছে।

গাজায় বিনিয়োগ নিয়ে কোনো আলোচনায় কুশনার এরই মধ্যে অংশ নিয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স। ইতিপূর্বে তাঁর ইকুইটি প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবের কাছ থেকে ২০০ কোটি ডলারসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়েছে।

গাজাকে সমুদ্রসৈকতের অবকাশযাপন কেন্দ্র বানানোর ট্রাম্পের অসম্ভব পরিকল্পনাটি শুনতে ভালো হলেও ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি দুঃস্বপ্নের মতো। এ ঘোষণা তাঁদের ‘নাকবা’ বা ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরুতে তৈরি হওয়া বিপর্যয়কেই মনে করিয়ে দেয়। ইসরায়েলের দখলদারির মুখে ওই সময় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি নিজেদের ভূমি থেকে পালিয়ে যান বা তাঁদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

আরও পড়ুনগাজাকে দখলে নেওয়ার ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কী আছে০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র বল ছ ল ন র দখল

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েল হত্যা করে, মিথ্যা বলে, আর পশ্চিমা মিডিয়া তা বিশ্বাস করে

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও সিভিল ডিফেন্সের ১৫ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা যোদ্ধা ছিলেন না। সন্ত্রাসীও ছিলেন না। তাঁদের কাছে কোনো রকেট বা অস্ত্র ছিল না। তাঁরা ছিলেন ত্রাণকর্মী, মানবতার সেবক। যখন যেখানে বোমা ফেলা হচ্ছিল, সেখানেই তাঁরা আহতদের সাহায্য করতে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁরা নিজের জীবন বাজি রেখে অন্যদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।

এর আগে গত ২৩ মার্চ গাজার দক্ষিণে রাফা এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী একটি অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবার গাড়ির বহরকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে আটজন রেড ক্রিসেন্টের কর্মী, ছয়জন ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের কর্মী এবং একজন জাতিসংঘের কর্মী নিহত হন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছিল, এই গাড়িগুলো ছিল অপরিচিত। সন্দেহ করা হয়েছিল, গাড়ির মধ্যে যোদ্ধারা ছিলেন, কিন্তু এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল।

রিফাত রাদওয়ান নামে নিহত চিকিৎসাকর্মীদের একজনের মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া ফুটেজে দেখা যায়, গাড়িগুলোতে স্পষ্টভাবে লালবাতি জ্বলছিল; সেগুলো চিহ্নিত অ্যাম্বুলেন্স ছিল এবং কোথাও কোনো অস্ত্র দেখা যায়নি। তারপর শুরু হয় ইসরায়েলি বাহিনীর প্রচণ্ড গুলি।

পরে রিফাতের মরদেহ আরও ১৩ জনের সঙ্গে একটি গণকবরে পাওয়া যায়। তাঁদের কয়েকজনের দেহে সরাসরি হত্যার চিহ্ন ছিল—মাথা বা বুকে গুলি লেগেছিল। কারও কারও হাত বাঁধা অবস্থায় ছিলেন।

মৃত্যুর পরও তাঁদের প্রমাণ দিতে হলো যে তাঁরা ত্রাণকর্মী ছিলেন।

তারপরও পশ্চিমা গণমাধ্যমের বড় অংশ প্রথমেই ইসরায়েলের কথাই প্রচার করল, ‘ইসরায়েল বলছে…’, ‘আইডিএফ দাবি করছে…’, ‘একজন সামরিক সূত্র জানিয়েছে…।’ এসব কৌশলে সাজানো বাক্য যেন রেড ক্রিসেন্টের রক্তমাখা ইউনিফর্মের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। যেন তারা সত্যের চেয়ে বেশি ‘সত্য’।

এটা নতুন কিছু নয়। এটা একবারের ভুলও নয়।
এটাই একটা সিস্টেম।

এখানে ফিলিস্তিনিদের শুধু বেঁচে থাকাই অপরাধের মতো মনে করা হয়। আমাদের অস্তিত্বকেও সন্দেহের চোখে দেখা হয়—প্রথমে সবাইকে বোঝাতে হয় যে আমরা কোনো হুমকি নই, আমাদের জীবনও মূল্যবান, তারপর হয়তো কেউ আমাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবে। এটাই হচ্ছে মানবতা হারানোর আসল রূপ।

আমি গাজায় জন্মেছি, সেখানেই বড় হয়েছি। আমি জানি, রেড ক্রিসেন্টের ইউনিফর্মের অর্থ কী। এর মানে হলো, সব শেষ হয়ে গেলেও আশার একটা আলো আছে। এর মানে হলো, কেউ আসছে সাহায্য করতে—লড়াই করতে বা হত্যা করতে নয়, জীবন বাঁচাতে। এর মানে হলো, ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও কারও কাছে জীবন এখনো মূল্যবান।

বিশ্বকে এখনই ফিলিস্তিনিদের প্রমাণ করতে বাধ্য করা বন্ধ করতে হবে যে তাঁরা মানুষ। আমরা মিথ্যা বলি আর আমাদের হত্যাকারীরা সত্য বলে—এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যাঁরা শুধু ফেরেশতা, শুধু তাঁদের জন্য শোক প্রকাশ করা যাবে, এই ভাষ্যকে আর প্রচার করতে দেওয়া যাবে না।

আমি এটাও জানি, সেই আশাকে হারালে কেমন লাগে। সেখানে চিকিৎসাকর্মীদের প্রথমে হত্যা করা হয়, তারপর তাঁদের সম্মান নষ্ট করা হয়। তাঁদের সততা নিয়ে বিতর্ক তোলা হয় আর তাঁদের সহকর্মীরা গণকবর খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধার করেন। তাঁদের সন্দেহের চোখে দেখা হয়, তারপর ভুলে যাওয়া হয়।

মানবতা হারানো শুধু কথার কথা নয়, এটা শুধু গণমাধ্যমের কাঠামো বা রাজনৈতিক ভাষার সমস্যা নয়। এটা হত্যা করে। মুছে ফেলে। এটা পুরো জাতিগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পরও বিশ্বকে চোখ ফিরিয়ে নিতে বলে। এটা আমাদের বলে দেয়: তোমার জীবন ততটা মূল্যবান নয়; তোমার শোক সত্যি কি না, তা আমরা যাচাই না করা পর্যন্ত শোক বলে বিবেচিত হতে পারে না; তোমার মৃত্যু দুঃখজনক কি না, তা আমাদের ছাড়পত্রের ওপর নির্ভরশীল।

এ কারণেই এই ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী ও উদ্ধারকর্মীর মৃত্যু এত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ডের গল্প নয়। এটি সেই অবিশ্বাসের প্রক্রিয়ার গল্প, যা প্রতিবার ফিলিস্তিনিরা নিহত হলে উঠে আসে। এটি সেই বাস্তবতা, যেখানে আমাদের নিজেদেরই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হতে হয়, নিজেদের আইনি লড়াই চালাতে হয়, নিজেদের প্রচারের কাজ করতে হয় এবং সবকিছুর সঙ্গে মরদেহের জন্য শোকও করতে হয়।

এই বোঝা আর কাউকে বইতে হয় না। যখন কোনো পশ্চিমা সাংবাদিক নিহত হন, তাঁদের সম্মান জানানো হয়। যখন কোনো ইসরায়েলি নাগরিক মারা যান, তখন তাঁদের নাম আর ছবি বিশ্বজুড়ে স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। কিন্তু যখন কোনো ফিলিস্তিনি মারা যান, তখন তাঁর পরিবারের প্রথম কাজ হয় প্রমাণ করা, যে তিনি সন্ত্রাসী ছিলেন না।
আমাদের সব সময় দোষী ধরে নেওয়া হয়, যতক্ষণ না নির্দোষ প্রমাণিত হই। অনেক সময় সেটা প্রমাণ করাও সম্ভব হয় না।

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিমা গণমাধ্যমে ইসরায়েলের কথা বেশি গুরুত্ব পায়, কিন্তু ফিলিস্তিনিদের কথা গুরুত্ব দেওয়া হয় কম। ইসরায়েল যদি কোনো দাবি করে, তা যাচাই-বাছাই ছাড়াই বিশ্বাস করা হয়; কিন্তু ফিলিস্তিনিরা কিছু বললে তা সন্দেহের চোখে দেখা হয়। এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যেন তাঁদের দুঃখ-কষ্ট, কান্না বা শোক তাঁদের কথাকে অবিশ্বাস্য বা অতিরঞ্জিত করে তোলে; অর্থাৎ ফিলিস্তিনিরা যা বলছেন, তা সত্য হলেও তাঁদের যন্ত্রণা দেখিয়ে তাঁরা বেশি বলছেন বা বাড়িয়ে বলছেন—এমন ধারণা তৈরি করা হয়।

এই গণমাধ্যমের ধারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলোকেও প্রভাবিত করে—অস্ত্র বিক্রি থেকে শুরু করে কূটনৈতিক দায়মুক্তি, আন্তর্জাতিক মঞ্চে নীরবতা থেকে জাতিসংঘে ভেটো দেওয়া পর্যন্ত। সবকিছু একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি মানুষ বলে যেহেতু গণ্য করা হয় না, সেহেতু তাদের হত্যাকারীদেরও পুরোপুরি দায়ী করা হয় না।

এর মানসিক চাপও ভয়াবহ। আমরা শুধু শোক করি না; আমাদের শোকের স্বীকৃতির জন্যও লড়তে হয়। আমরা শুধু আমাদের মৃত ব্যক্তিদের দাফন করি না; তাঁদের মৃত্যু স্বীকার করানোর জন্যও সংগ্রাম করি। আমরা এমন এক মানসিক চাপে বাস করি, যা কোনো সম্প্রদায়ের সহ্য করা উচিত নয়। আমাদের প্রতিনিয়ত প্রমাণ করতে হয় যে আমরা তা নই, যা বিশ্ব আমাদের ভেবে নিয়েছে।

এই ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী ও উদ্ধারকর্মী ছিলেন সত্যিকারের নায়ক। তাঁরা বিপদের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। তাঁরা তাঁদের জনগণের সেবা করেছিলেন। তাঁরা জীবনের পবিত্রতায় বিশ্বাস করতেন। তাঁদের স্মৃতি সম্মানের যোগ্য। অথচ তাঁদের গল্পও একটি বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বকে এখনই ফিলিস্তিনিদের প্রমাণ করতে বাধ্য করা বন্ধ করতে হবে যে তাঁরা মানুষ। আমরা মিথ্যা বলি আর আমাদের হত্যাকারীরা সত্য বলে—এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে যাঁরা শুধু ফেরেশতা, শুধু তাঁদের জন্য শোক প্রকাশ করা যাবে, এই ভাষ্যকে আর প্রচার করতে দেওয়া যাবে না।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া
ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
আহমেদ নাজার একজন ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নাট্যকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নড়াইলে হত্যা মামলায় একজনের যাবজ্জীবন
  • রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ইয়াংওয়ানের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে
  • দিনাজপুরের বনতাড়া গ্রামে ৭ দিন আতঙ্কের পর এল সম্প্রীতির বার্তা
  • নেত্রকোনায় কৃষক আনোয়ারুল হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড
  • ‘ও খোদা, এই ট্রাক দি আঁই কিরমু’
  • চলন্ত ট্রাকের চাকা বিস্ফোরণের পর রিংয়ের আঘাতে বিচ্ছিন্ন হলো পথচারীর পা
  • মধ্যপ্রাচ্যে নিষিদ্ধ ‘দ্য ডিপ্লোম্যাট’, মুখ খুললেন জন আব্রাহাম
  • ‘গায়ে আগুন লাগার পর তা নেভাতে আমি পশুর মতো এদিক-ওদিক ছুটছিলাম’
  • ‘মাইগ্রেন’ কি ভয়াবহ কোনো রোগ?
  • ইসরায়েল হত্যা করে, মিথ্যা বলে, আর পশ্চিমা মিডিয়া তা বিশ্বাস করে