জামাতা কুশনারের এক বছর আগের স্বপ্নই কি বাস্তবায়ন করতে চলেছেন ট্রাম্প
Published: 7th, February 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজার বাসিন্দাদের অন্য দেশে পাঠিয়ে উপত্যকাটি যুক্তরাষ্ট্রের দখলে নেওয়া ও উন্নয়নের পর সেটি ‘ভূমধ্যসাগরীয় সৈকত’ অবকাশযাপন কেন্দ্রে রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন তাঁর জামাতার স্বপ্নই পুনরুজ্জীবিত করলেন।
এক বছর আগেই জামাতা জ্যারেড কুশনার গাজাকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুরূপ ধারণা প্রকাশ করেছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘সাগরপাড়ের সম্পত্তি’ গাজার অনেক মূল্য।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হার্ভার্ডের একটি অনুষ্ঠানে জ্যারেড কুশনার বলেছিলেন, ‘গাজার সাগরপাড়ের সম্পত্তি খুবই মূল্যবান হতে পারে, যদি মানুষ সেখানে উপার্জনের দিকে মনোযোগ দেয়।’ আরব-ইসরায়েল সংঘাতকে একসময় ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আবাসন খাতের দ্বন্দ্বের চেয়ে বেশি কিছু নয়’ বলেও বর্ণনা করেন তিনি।গত মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা দখলে নেওয়ার তাঁর বিস্ময়কর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ফিলিস্তিনিরা ছাড়াও ট্রাম্পের পশ্চিমা সমালোচকেরা ওই ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হবে জাতিগত নির্মূলের শামিল ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
ট্রাম্প আবাসন খাতে বিনিয়োগের সুযোগের সঙ্গে এবারই যে প্রথম গাজাকে টেনে কথা বললেন, তা নয়। গত বছরের অক্টোবরে রেডিওর একজন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে তিনি বলেছিলেন, যদি গাজাকে ঠিকমতো পুনর্নিমাণ করা যায়, তবে তা ‘মোনাকোর চেয়ে ভালো’ হতে পারে।
(ইসরায়েলের হামলায়) সেখানে (গাজায়) কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে ইসরায়েলি দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি, আমি সেখান থেকে লোকজনকে (ফিলিস্তিনি) সরিয়ে দিতে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব এবং এরপর সেটি পরিষ্কার করব।জ্যারেড কুশনার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতাগাজাকে ঢেলে পুনর্নির্মাণ করার ধারণা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর এ উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা শুরুর পরপরই প্রকাশ হয়েছিল প্রধানত কুশনারের কাছ থেকে। ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার অজুহাতে গাজায় ওই আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে কুশনার তাঁর মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করেন। ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ‘আব্রাহাম চুক্তি’ সই করার ক্ষেত্রেও সহায়তা করেন তিনি।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে হার্ভার্ডের একটি অনুষ্ঠানে জ্যারেড কুশনার বলেছিলেন, ‘গাজার সাগরপাড়ের সম্পত্তি খুবই মূল্যবান হতে পারে, যদি মানুষ সেখানে উপার্জনের দিকে মনোযোগ দেয়।’ আরব–ইসরায়েল সংঘাতকে একসময় ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে আবাসন খাতের দ্বন্দ্বের চেয়ে বেশি কিছু নয়’ বলেও বর্ণনা করেন তিনি।
আরও পড়ুনগাজার দখল নিতে চান ট্রাম্প০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫অনুষ্ঠানে কুশনার আরও বলেছিলেন, ‘(ইসরায়েলের হামলায়) সেখানে (গাজায়) কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে ইসরায়েলি দৃষ্টিকোণ থেকে আমি মনে করি, আমি সেখান থেকে লোকজনকে (ফিলিস্তিনি) সরিয়ে দিতে আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব এবং এরপর সেটি পরিষ্কার করব।’ উল্লেখ্য, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের আগে কুশনার নিউইয়র্কে একজন প্রপার্টি ডেভেলপার ছিলেন।
এ বিষয়ে কুশনারের একজন মুখপাত্রের কাছে জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া দেননি।
গাজাকে সমুদ্রসৈকতের অবকাশযাপন কেন্দ্র বানানোর ট্রাম্পের অসম্ভব পরিকল্পনাটি শুনতে ভালো হলেও ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি দুঃস্বপ্নের মতো। এ ঘোষণা তাঁদের ‘নাকবা’ বা ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরুতে তৈরি হওয়া বিপর্যয়কেই মনে করিয়ে দেয়। ইসরায়েলের দখলদারির মুখে ওই সময় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি নিজেদের ভূমি থেকে পালিয়ে যান বা তাঁদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।অবশ্য, গাজা দখলে নিয়ে এটিকে অবকাশযাপন কেন্দ্রে রূপ দেওয়ার ট্রাম্পের পরিকল্পনা কীভাবে কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।
রিয়াদের রয়্যাল কোর্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের মত, আরব বিশ্বের উদীয়মান শক্তি সৌদি আরব ট্রাম্পের ঘোষণাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না। এটি তেমন কোনো ভাবনার মধ্যে আনা হয়নি এবং এটি কার্যকর করা অসম্ভব। তাই, দিন শেষে ট্রাম্প নিজেও তা বুঝবেন।
আরও পড়ুন‘আমরা মরব, তা–ও গাজা ছাড়ব না’২১ ঘণ্টা আগেগতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ফিলিস্তিনিদের তাঁদের ভূমি থেকে উৎখাত করার যেকোনো চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করছে দেশটি। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও হামাসও ট্রাম্পের ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছে।
গাজায় বিনিয়োগ নিয়ে কোনো আলোচনায় কুশনার এরই মধ্যে অংশ নিয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স। ইতিপূর্বে তাঁর ইকুইটি প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবের কাছ থেকে ২০০ কোটি ডলারসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছ থেকে বিনিয়োগ পেয়েছে।
গাজাকে সমুদ্রসৈকতের অবকাশযাপন কেন্দ্র বানানোর ট্রাম্পের অসম্ভব পরিকল্পনাটি শুনতে ভালো হলেও ফিলিস্তিনিদের জন্য এটি দুঃস্বপ্নের মতো। এ ঘোষণা তাঁদের ‘নাকবা’ বা ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের পর ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরুতে তৈরি হওয়া বিপর্যয়কেই মনে করিয়ে দেয়। ইসরায়েলের দখলদারির মুখে ওই সময় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি নিজেদের ভূমি থেকে পালিয়ে যান বা তাঁদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
আরও পড়ুনগাজাকে দখলে নেওয়ার ট্রাম্পের পরিকল্পনায় কী আছে০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র বল ছ ল ন র দখল
এছাড়াও পড়ুন:
ভাগ্য ফেরাতে কিনছেন ‘ব্যাংকের মাটি’
ভাগ্য ফেরাতে মানুষ কত কিছুই না করে। যদিও সফলতা পেতে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। তবু কেউ কেউ খোঁজেন সহজ কোনো পথ। দ্বিতীয় শ্রেণির এই মানুষদের কথা ভেবে চীনে ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন কিছু সুযোগসন্ধানী। দেশটির বড় ব্যাংকগুলোর বাইরে থেকে মাটি সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করছেন তাঁরা। এই মাটি নাকি ফেরাতে পারে ভাগ্য, এনে দিতে পারে সম্পদ—এমন বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।
‘সৌভাগ্যের’ এই মাটিরও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দাম। যেমন একজন অনলাইন বিক্রেতা চীনের পাঁচটি বড় ব্যাংক—ব্যাংক অব চায়না, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না, অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংক অব চায়না, চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংক ও ব্যাংক অব কমিউনিকেশনসের আশপাশের মাটি বিক্রি করেন। সবচেয়ে কমে ৩ ডলারে পাওয়া যায় এই মাটি, সর্বোচ্চ বিক্রি হয় ১২০ ডলারে।
একজন বিক্রেতা বলেন, বড় পাঁচটি ব্যাংকের বাইরে থেকে তাঁরা নিজেরা মাটি সংগ্রহ করেন। সাধারণত এ কাজ করা হয় রাতে। ওই বিক্রেতা বলেন, বিশ্বাস করা হয়, এই মাটি সম্পদ বাড়িয়ে দেয় এবং অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে। তবে এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয় বলেও স্বীকার করেন তিনি।
মাটি যে ‘খাঁটি’, তা প্রমাণের জন্য অনেক অনলাইন বিক্রেতা মাটি খোঁড়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। এমনই এক ভিডিওতে একটি ব্যাংকের প্রবেশমুখে মাটির কনটেইনার হাতে একজনকে দেখা যায়। আরেক ভিডিওতে একজন বিক্রেতাকে গ্রাহকদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘আমি আপনার জন্য মাটি খুঁড়ছি।’
এই মাটির একজন ক্রেতার সঙ্গেও কথা হয়েছে দেশটির একটি গণমাধ্যমের। পরিচয় প্রকাশ না করে ওই ব্যক্তি বলেন, তাঁর ব্যবসা রয়েছে। আশা করছেন এই মাটির মাধ্যমে ব্যবসার আরও আয়–উন্নতি হবে। তাঁর অনেক বন্ধুবান্ধবও ব্যাংকের মাটি কিনেছেন।
মাটি কিনে ভাগ্য বদলের বিষয়টি নিয়ে হাসিঠাট্টা করতেও ছাড়ছেন না অনেকে। যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন লিখেছেন, ‘আমার বাড়ি তো ব্যাংকের পাশেই। তাহলে আমার ভাগ্যটা বদলাচ্ছে না কেন?’