ডলারের দামে অস্থিরতা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, ভ্যাট প্রদানে হয়রানি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও উচ্চ ফি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অসহনীয় যানজটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ক্রমশই অবনতি হচ্ছে। গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় রাজধানীর গুলশান এলাকার তৃণমূল ব্যবসায়ীরা এমন তথ্য দিয়েছেন। 

ঢাকা চেম্বারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিসিসিআই গুলশান সেন্টারে অনুষ্ঠিত সভায় যেখানে গুলশান, মহাখালী, বনানী এবং বাড্ডা অঞ্চলের ১৪টি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা এবং বেশ কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের  অতিরিক্ত পরিচালক সাইয়েদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের  প্রথম সচিব মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) তারেক মাহমুদ বিশেষ অতিথি ছিলেন। 

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির কারণে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের ক্রমশই কঠিনতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর সঙ্গে কর ও ভ্যাট ব্যবস্থার জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত কর ও ভ্যাটের পরিবর্তন, অগ্রিম আয়কর ও রেগুলেটরি ডিউটির অতিরিক্ত বোঝা এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতার কারণে বেসরকারি খাতের ওপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। 

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং যানজট পরিস্থিতির অবনতির কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ঋণপত্র খোলার জটিলতা, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতা এবং উচ্চ সুদহার  স্থানীয় শিল্পায়ন বাধাগ্রস্ত করছে। 
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে গুলশান ১ নম্বর ডিএনসিসি দক্ষিণ পাকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মো.

আবু তাহের বলেন, এলসি খোলা হতে সমন্বয় পর্যন্ত প্রায় তিন মাস সময় লেগে যায়। দীর্ঘ সময়ের জন্য টাকা আটকে থাকার কারণে ব্যবসায়ীদের মূলধন স্বল্পতা দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি ডলারের মূল্যের অস্থিরতার কারণেও ব্যবসায়ীরা এলসির মূল্য পরিশোধে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। 

মহাখালী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম স্বপন জানান, ভ্যাটের হার বৃদ্ধি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের উচ্চ ফি এবং দীর্ঘসূত্রতার কারণে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। আমিন হোসেন অ্যান্ড কোং-এর পার্টনার মোহাম্মদ আল আমিন জানান, আয়কর আইনের ১৬৩ ধারা এবং অগ্রিম আয়কর সমন্বয়ের দীর্ঘসূত্রতার জন্য ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের মূলধন থেকে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

হাসান হার্ডওয়্যারের স্বত্বাধিকারী মাহফিজুল হক বলেন, অসহনীয় যানজট, অটোরিকশার দৌরাত্ম্য এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দোকানে ক্রেতার আগমন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। মেট্রোপলিটন শপিং প্লাজা মার্কেট সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি আলমগীর হোসেন বলেন, সম্প্রতি বেশ কিছু দোকান মালিক দুর্বৃত্তদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং থানায় এ ব্যাপারে সহযোগিতা চাওয়া হলে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। তিনি  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করেন। মওলা ট্রেডার্সের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চহার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, এলসি পেমেন্টে দূীর্ঘসূত্রতা, ভ্যাট প্রদানে হয়রানি প্রভৃতি কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।   

বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, কভিড মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে মার্কিন ডলারের মূল্যের অস্বাভাবিক ওঠানামার কারণে আমাদের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা অনায়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি। 

এনবিআরের প্রথম সচিব (মূসক বাস্তবায়ন) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বেশ চ্যালেঞ্জিং। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনি ব্যবসায়ীসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে করজাল বিস্তারের লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে একটি অটোমেটেড এবং স্বচ্ছ রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই।    
ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার তারেক মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জনগণের আস্থা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি  চাঁদাবাজি, হয়রানি ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণকে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তার আহ্বান জানান এবং সবার সম্মিলিত উদ্যোগে বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসন হবে বলে আশা করেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস ব যবস য় র ল ইসল ম র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরায় ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ

মাগুরায় ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের অভিযোগে জড়িতদের প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন মাগুরা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ও সাধারণ জনতা। 

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা নানা স্লোগান দিয়ে আদালতে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে সেনাবাহিনী তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে। বিক্ষুব্ধরা আদালতের সামনে অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। 

বিক্ষোভে অংশ নিয়ে সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বায়োজিদ হোসেন জানান, নির্মম এই শিশু ধর্ষণের ঘটনায় আমরা ক্ষব্ধ। যে কারনে শিক্ষার্থীরা ধর্ষকের প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বরে প্রতিবাদ জানাতে এসছেন। তাদের সঙ্গে সাধারণ জনগণও যোগ দিয়েছে। তারা ধর্ষকের প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি জানান। 

মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম সমকালকে জানান, শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় মা বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলার ৪ আসামি আগেই হেফাজতে ছিলেন। মামলার পর তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। চার আসামি হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজিব (১৮), সজীবের ভাই রাতুল (১৭), তাদের বাবা হিটু মিয়া (৪২) ও মা জাবেদা বেগম (৪০)।

তিনি আরও বলেন, শিশুটির মা ঢাকা থেকে স্বামী ও বড় মেয়েকে দিয়ে মাগুরা সদর থানায় এজাহার পাঠান। মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (৪)-এর ক/ ৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ করা হয়।

এজাহারে শিশুটির মা উল্লেখ করেন, বড় মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা হিটু শেখ শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি হিটুর স্ত্রী ও আরেক ছেলেও জানতেন। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, চার মাস আগে বড় মেয়ের সঙ্গে সজিবের বিয়ে হয়। এর পর থেকে বড় মেয়েকে তার শ্বশুর অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। বিষয়টি ওই পরিবারের সবাই জানলেও প্রতিবাদ করেননি।

মামলায় বলা হয়েছে, বুধবার রাত ১০টার দিকে খাবার খেয়ে বড় বোন ও তার স্বামীর সঙ্গে একই কক্ষে শিশুটি ঘুমায়। রাত আড়াইটার দিকে বড় বোন জেগে দেখেন, ছোট বোন পাশে নেই। মেঝেতে পড়ে আছে। তখন সে বড় বোনকে জানায়, গোপনাঙ্গে জ্বালাপোড়া হচ্ছে। বিষয়টি হালকাভাবে নেন তিনি। পরদিন সকাল ৬টার দিকে শিশুটি আবার বোনকে একই কথা জানান। তখন তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলে শিশুটি জানায়, রাতে দুলাভাই দরজা খুলে দিয়েছিল। তখন তার বাবা (হিটু শেখ) তার মুখ চেপে ধরে অন্য কক্ষে নিয়ে যায়। এ সময় চিৎকার করার চেষ্টা করলে গলা চেপে ধরা হয়েছিল। পরে তাকে বোনের কক্ষে ফেলে রেখে যায় হিটু শেখ। বোন বিষয়টি মোবাইল ফোনে তার মাকে জানাতে গেলে সজীব ফোন কেড়ে নিয়ে মারধর করেন। ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেন। পরে দুই বোনকে দুই কক্ষে আটকে রাখা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে সজিবের মা মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শিশুটিকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান তিনি।

মেয়েটির বড় বোন সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার ২০ দিন আগে সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ ছিল না। তিনি ঘরে আলো জ্বালিয়ে টয়লেটে যান। সেখান থেকে ফিরে দেখেন ঘরে আলো বন্ধ। এ সময় হঠাৎ একজন পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। উচ্চতা ও অন্যান্য বিষয় দেখে তিনি বুঝতে পারেন, জড়িয়ে ধরা ব্যক্তি তার শ্বশুর হিটু শেখ। বিষয়টি স্বামী সজিবকে তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। পরে বাবার বাড়ি চলে যান। আর স্বামীর বাড়ি ফিরতে চাইছিলেন না। বাবা-মা বুঝিয়ে ছোট বোনকে সঙ্গে করে পাঠিয়ে দেন শ্বশুর বাড়ি।

পরিবার জানায়, আট বছরের শিশুটিকে গত বুধবার ধর্ষণের শিকার হয়। প্রথমে তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেও তার অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গতকাল শুক্রবার রাতে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।

অবস্থার আরও অবনতি হলে বিকেল ৫টার দিকে শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাগুরার শিশুটির অবস্থার আবারও অবনতি
  • নিয়মিত বাহিনীকেই কার্যকর করতে হবে
  • আইনশৃঙ্খলার অবনতি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই: গণসংহতি আন্দোলন
  • যত দিন যাচ্ছে নারীদের প্রতি নির্যাতন ও ধর্ষণ বাড়ছে, জনগণ শঙ্কিত: ছাত্রদল
  • কার্যকর করহার কমানোর যৌক্তিক পদক্ষেপ দরকার
  • আজ সারাদেশে কর্মসূচি পালন করবে ছাত্রদল
  • আজ সারাদেশে সোমবার কর্মসূচি পালন করবে ছাত্রদল
  • জাবিতে ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ গঠন
  • মাগুরায় ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ
  • সারাদেশে সোমবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে ছাত্রদল