‘আগে গুলি চালাও, তারপর প্রশ্ন করো—শুল্ক বিষয়ে আমাদের এটাই কৌশল।’ গত বছরের শেষ দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারক আমাকে এ কথাটি বলেছিলেন।

এ ধরনের গর্বভরা কথাবার্তা তো এখন ওয়াশিংটনে হালফ্যাশন হয়ে উঠেছে; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের চিন্তাভাবনার তোয়াক্কা না করে খুব চাঁছাছোলা কথাবার্তা বলার কৌশলটা অত্যন্ত বিপজ্জনক—আমেরিকার জন্য তো বটেই, এমনকি যেসব দেশকে তিনি বাড়তি শুল্ক আরোপের জন্য বেছে নিয়েছেন, তাদের জন্যও।

এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বিশাল দুই বিপদ আসতে পারে। এগুলো হলো উচ্চহারে মূল্যস্ফীতি ও শিল্প খাতে বিপর্যয়। আর এ দুই বিপদের কথা সবারই জানা।

এটা ঠিক যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপের জন্য তেমন কোনো পরিণতি আমেরিকাকে তাৎক্ষণিকভাবে বহন করতে হবে না। তবে এর কৌশলগত পরিণতি একাধারে গুরুতর ও দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। ট্রাম্পের শুল্ক পশ্চিমা দুনিয়ার একতার মৈত্রী ধ্বংস হওয়ার হুমকিতে ফেলেছে। বিভিন্ন দেশ আমেরিকার কাছ থেকে নতুনভাবে হুমকি অনুভব করায় একটি বিকল্প জোট গঠন করতে পারে আর ট্রাম্প সেটিরই বীজ বুনতে শুরু করেছেন।

পশ্চিমা দুনিয়ার একতা ধসে গেলে তা হবে চীন ও রাশিয়ার একটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন। ট্রাম্প হয়তো ব্যক্তিগতভাবে এর তোয়াক্কা করেন না। তিনি প্রায়ই ভ্লাদিমির পুতিন ও সি চিনপিংয়ের প্রতি তাঁর মুগ্ধতা প্রকাশ করে থাকেন। কিন্তু যে দুজনকে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ করেছেন, সেই মারকো রুবিও এবং মাইক ওয়ালৎজ এটা বিশ্বাস করেন যে চীনের শক্তিমত্তাকে প্রশমিত করারই হলো যুক্তরাষ্ট্রের মূল কৌশলগত চ্যালেঞ্জ।

আর তাই যদি হয়ে থাকে, তাহলে চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর বাড়তি শুল্ক করা হবে ট্রাম্পের জন্য পুরোপুরি এক বোকামি। কারণ, এর মধ্য দিয়ে তিনি এই তিন দেশের স্বার্থের মধ্যে একটি অভিন্নতা আনয়নের ঝুঁকি তৈরি করেছেন। এদের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) আছে, যারা ট্রাম্পের শুল্ক আক্রমণের পরবর্তী লক্ষ্য।

আরও পড়ুনলাখো মানুষের আমেরিকান হওয়ার স্বপ্ন আটকে গেছে যে সীমান্তে০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২০২১ সালে বাইডেন প্রশাসন যখন দায়িত্বভার গ্রহণ করে, তখন ইইউ চীনের সঙ্গে নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তিতে উপনীত হওয়ার পথে ছিল; কিন্তু ওয়াশিংটনের চাপ ও বেইজিংয়ের মারাত্মক কিছু ভুলের ফলে ব্রাসেলসকে সরে আসতে হয়; তবে বাইডেন প্রশাসনের মেয়াদের শেষভাগে এসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কমিশন একযোগে কাজ করছিল চীনের সঙ্গে বাণিজ্যকে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি রপ্তানি আটকে দেওয়ার জন্য।

বাইডেন প্রশাসনের যুক্তি ছিল, যদি যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, তাহলে সে তখনই টিকে যাবে যখন অন্যান্য অগ্রসর গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে তার পাশে নিয়ে কাজ করতে পারে। এর বিপরীতে ট্রাম্প আমেরিকার প্রতিপক্ষদের তুলনায় মিত্রদের ওপর অধিক মাত্রায় চড়াও হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর সম্ভাব্য পরিণতি হতে পারে যে তিনি মিত্রদের চীনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকেরা এটা বেশ ভালোভাবেই জানেন, পরিবেশবান্ধব হিসেবে চারপাশকে গড়ে তোলার যে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য তাঁরা নিয়েছেন, চীনের বৈদ্যুতিক যানবাহন, ব্যাটারি ও সৌর প্যানেল ছাড়া তার বাস্তবায়ন অসম্ভব। আর আমেরিকার বাজার হাতছাড়া হওয়ার হুমকি চীনের বাজারকে আরও বেশি প্রয়োজনীয় করে তুলবে। আমি যখন একজন ঊর্ধ্বতন ইউরোপীয় নীতিনির্ধারককে গত সপ্তাহে এই বলে পরামর্শ দিয়েছিলাম যে ইইউ এখন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার কথা ভাবতে পারে, তখন তাঁর উত্তর ছিল, ‘বিশ্বাস করুন বা না–ই করুন, এই আলাপ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।’

কানাডা ও মেক্সিকো যন্ত্রণাবিদ্ধভাবেই এটা ওয়াকিফহাল যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে বাজির দান তাদের প্রতিকূলে। কিন্তু তাদের পাল্টা আঘাত করতেই হবে। আমেরিকার বলপ্রয়োগের মুখে কোনো জাতীয় নেতাই নিজেকে দুর্বল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মতো কাজ করতে পারেন না; এবং ট্রাম্পকে পাল্টা আঘাত করাই সম্ভবত সঠিক কৌশল। সম্প্রতি একজন ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, ‘ট্রাম্প আপনার মুখে ঘুষি মারলে আপনি যদি পাল্টা না মারেন, তাহলে তিনি আবারও আপনাকে আঘাত করবেন।’

এমনকি কয়েকজন প্রভাবশালী ইউরোপিয়ান এই প্রশ্ন করতে শুরু করেছেন যে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে কে সরাসরি বেশি হুমকি। দুই মাস আগে এ রকম প্রশ্ন অবান্তর ছিল; কিন্তু সি নয়; বরং ট্রাম্পই কানাডার স্বাধীনতার সমাপ্তি ঘটানোর কথা বলছেন। অথচ দেশটি ন্যাটোর অন্যতম সদস্য। আবার চীন সরকার নয়; বরং ট্রাম্প প্রশাসন ও ইলন মাস্ক ইউরোপে উগ্র দক্ষিণপন্থীদের মদদ জোগাচ্ছেন।

চীনের বেনিয়াবাদ এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ যুদ্ধকে বেইজিংয়ের সমর্থন এখনো ব্রাসেলস ও চীনের মধ্যে যেকোনো সুসম্পর্ক স্থাপনের পথে প্রধান বাধা হয়ে আছে; কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন যদি ইউক্রেনকে পরিত্যাগ করে আর বেইজিং যদি রাশিয়ার প্রতি কঠোর হয়, তাহলে ইউরোপীয়রা চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ার পথে হাঁটবে।

লাতিন আমেরিকাতেও চীন নতুন সুযোগ খুঁজতে যাবে; কারণ পানামা ও মেক্সিকোর প্রতি আমেরিকার হুমকি। ট্রাম্প যেহেতু পানামা খালের ওপর পুনর্নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে এবং মেক্সিকোর মাদক চক্রকে দেখে নিতে চান, সেহেতু এ দুই দেশের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগসহ যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী পদক্ষেপ আসন্ন।

কিন্তু মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ট্রাম্পের আগ্রাসন হিতে বিপরীত হতে পারে। উচ্চহারে আরোপিত শুল্কের কারণে দেশটিতে যদি মন্দা দেখা দেয়, তাহলে সেখান থেকে আমেরিকা যাওয়ার জন্য মরিয়া মানুষের সংখ্যা বাড়বে বই কমবে না। একই সঙ্গে বাড়বে মাদকচক্রের দৌরাত্ম্য; যাদের রপ্তানি শুল্কের হিসাবের বাইরে, মানে চোরাই পথে।

কানাডা ও মেক্সিকো যন্ত্রণাবিদ্ধভাবেই এটা ওয়াকিফহাল যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে বাজির দান তাদের প্রতিকূলে। কিন্তু তাদের পাল্টা আঘাত করতেই হবে। আমেরিকার বলপ্রয়োগের মুখে কোনো জাতীয় নেতাই নিজেকে দুর্বল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মতো কাজ করতে পারেন না; এবং ট্রাম্পকে পাল্টা আঘাত করাই সম্ভবত সঠিক কৌশল। সম্প্রতি একজন ইউরোপীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, ‘ট্রাম্প আপনার মুখে ঘুষি মারলে আপনি যদি পাল্টা না মারেন, তাহলে তিনি আবারও আপনাকে আঘাত করবেন।’

এখন পর্যন্ত ব্রিটেন ও জাপান ট্রাম্পের শুল্ক আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়নি। এটা তাদের জন্য সাময়িক স্বস্তি বটে। কিন্তু তারা যদি ভেবে থাকে যে চুপচাপ থাকলে বেঁচে যাবে, তাহলে তা হবে নিজেদের ছেলে ভোলানো বুঝ দেওয়া। ট্রাম্প যদি এটা সিদ্ধান্ত নেন যে প্রথম দফার শুল্কযুদ্ধ কাজে দিয়েছে, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি আরও নতুন লক্ষ্যবস্তু খুঁজে বের করবেন আক্রমণ চালানোর জন্য।

করপোরেট আমেরিকারও এখন সজাগ হওয়া উচিত, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ‘অ্যানিমেল স্পিরিটস’ ফিরে আসার জল্পনায় পিঠ চাপড়ানো বন্ধ করা উচিত। ট্রাম্প আসলে আমেরিকাকে যা দিতে চাইছেন, তা হলো কথিত অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং পশ্চিমা মিত্রতার ধ্বংস। আর তা আমেরিকার ব্যবসায়ীদের জন্য এক অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বিপর্যয় ডেকে আনবে, যেখানে গোটা আমেরিকাও নিমজ্জিত হবে।

গিডিয়ন রাখম্যান ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস–এর (এফটি) পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রধান কলামিস্ট। এফটি থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে রূপান্তর তানিম আসজাদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ক র ব ইউর প য় কর ছ ন র জন য হওয় র ন ইউর

এছাড়াও পড়ুন:

২৮ বছরে আমি পরিবারের মন জয় করতে পারিনি: পপি

কয়েকদিন ধরেই শোবিজ অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু জনপ্রিয় নায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। তবে সিনেমার আলোচনা নিয়ে নয়, পপির বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন তাঁর মাসহ পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি থানা পর্যন্তও গড়িয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে একেবারেই চুপ ছিলেন চিত্রনায়িকা পপি। এবার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন এই চিত্রনায়িকা।

আজ দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো একটি ভিডিও বার্তায় পপি বলেন, ‘২৮ বছর অনেক সুনামের সঙ্গে চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। কোটি কোটি দর্শকের ভালোবাসা পেয়েছি। কিন্তু আজ ক্যামেরার সামনে কথা বলছি একজন ব্যর্থ মানুষ হিসেবে। কারণ, সবার মন জয় করতে পারলেও ২৮ বছর আমি যাদের জন্য কাজ করেছি, যাদের এই হাতে লালনপালন করেছি তাদের কাছেই আমি একজন অযোগ্য মানুষ। তাদের মনে মত করে নিয়ন্ত্রিত হতে পারেনি। আমি যখন ইনকাম করেছি, তখন আমি আমার পরিবারের কাছে প্রিয় একজন মানুষ ছিলাম। এখন তেমন দিনে পারিনা তাই আমি এখন তাদের কাছে শত্রুর মত।’

এর আগে পপির বিরুদ্ধে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ তুলে ৩ ফেব্রুয়ারি সোনাডাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তার বোন ফিরোজা পারভীন।

জিডি সূত্রে জানা গেছে, পৈতৃক ৬ কাঠা জমি দখলের নেওয়ার জন্য স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল, কল্লোল মজুমদার ও শিপনসহ পপি ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিববাড়ি এলাকার ভাড়াটিয়া বাড়ির সামনে যান। এতে বাধা দিলে পপি ও তার স্বামী ফিরোজা পারভীনকে হুমকি দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামাতা কুশনারের এক বছর আগের স্বপ্নই কি বাস্তবায়ন করতে চলেছেন ট্রাম্প
  • রাশিয়ায় মানবপাচার চক্রের এক নারী সদস্য গ্রেপ্তার
  • করুণারত্নের শেষ টেস্টের প্রথম দিনেও বিবর্ণ শ্রীলঙ্কা
  • রাজধানীতে ছিনতাই ঠেকাতে ‘স্মল আর্মস’ পাচ্ছেন ট্রাফিক সার্জেন্টরা: ডিএমপি কমিশনার
  • অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের হাতকড়া ও শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ
  • ‘ট্রাম্প একজন উন্মাদ’: যুক্তরাষ্ট্রের গাজা দখলের পরিকল্পনায় ফিলিস্তিনির প্রতিক্রিয়া
  • ২৮ বছরেও আমি পরিবারের মন জয় করতে পারিনি: পপি
  • ২৮ বছরেও আমি পরিবারের মন জয় করতে পারিনি: চিত্রনায়িকা পপি
  • ২৮ বছরে আমি পরিবারের মন জয় করতে পারিনি: পপি