শুকনা মৌসুমে রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ প্রতিবছর বেশি থাকে; কিন্তু এবারের শুকনা মৌসুমে বায়ুদূষণের রেকর্ড ভাঙছে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস শুকনা মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। নভেম্বরে ঢাকার বায়ুর মান খারাপ হতে শুরু করে। সর্বশেষ নভেম্বরে বায়ুদূষণ ছিল আগের আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডিসেম্বরও বায়ুদূষণ ছিল আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর সদ্য শেষ হওয়া জানুয়ারি মাসে বায়ুদূষণ আগের আট বছরকে ছাড়িয়ে গেছে। জানুয়ারি মাসের দূষণের এ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাওয়া গত ৯ বছরের (২০১৭ থেকে ২০২৫) বায়ুমান সূচক বা একিউআইয়ের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে ক্যাপস। প্রতিষ্ঠানটি গতকাল বৃহস্পতিবার এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে।
জানুয়ারি মাসে প্রায় প্রতিদিন বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান বিশ্বের নগরগুলোর মধ্যে এক থেকে পাঁচের মধ্যেই ছিল। চরম দূষণ এখন নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী; কিন্তু দূষণের উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ে না। খোদ পরিবেশ অধিদপ্তরও বলছে, বায়ুদূষণ কমানো সময়সাপেক্ষ বিষয়। দ্রুত এটি কমছে না।
ভয়ানক দূষণ জানুয়ারিতে
বায়ুর মান ৩০০ পার হলেই তাকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বলা হয়। অর্থাৎ যেসব স্থানে বায়ুর মান এমন, সেখানে দূষণ পরিস্থিতি ভয়ানক রকম খারাপ। গত ২২ জানুয়ারি সকালে আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার সার্বিক বায়ুর মান ছিল ৫১৮। আর সারা দিনে বায়ুর মান ছিল ৬২২। সেদিনের বাতাসে যে ভয়াবহ দূষণ, তা সাম্প্রতিক অতীতে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিশেষজ্ঞরা। শুধু ওই এক দিন নয়, পুরো জানুয়ারিতে এক দিনও নির্মল বায়ু পাননি রাজধানীবাসী।
ক্যাপসের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসের বায়ুদূষণ আগের আট বছরের জানুয়ারি মাসের গড় মানের তুলনায় শতকরা ২৪ দশমিক ৫২ ভাগ বেশি ছিল। আট বছরের (২০১৭-২৪) জানুয়ারি মাসের গড় দূষণের মান ছিল ২৫৫ দশমিক ৪৮। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তা ছিল ৩১৮। আগের বছরের জানুয়ারিতে এটি ছিল ৩০২।
উদ্যোগগুলো যতটা কাগজে আছে, বাস্তবে নেই। তাই দূষণের হাল করুণ। আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও দূষণবিশেষজ্ঞগত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৩৭ এবং ৩০ দশমিক ৫৪ শতাংশ বায়ুদূষণ বৃদ্ধি ছিল আগের বছরগুলোর তুলনায়।
ক্যাপসের চেয়ারম্যান আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার বায়ুর মানের ক্রমাগত অবনমন দেখছি। আর এবারের শুকনা মৌসুমে দূষণের রেকর্ড হচ্ছে। গত নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি—প্রতিটি মাসেই আগের আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দূষণ দেখা গেছে। দূষণ থেকে নগরবাসীর কোনো মুক্তির দিশা দেখছি না।’
বায়ুর মান শূন্য থেকে ৫০ থাকলে ‘ভালো’ বলা হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে ‘গ্রহণযোগ্য’। ১০১ থেকে ১৫০ ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ক্ষতিকর’, ১৫১ থেকে ২০০ ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০ ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০০–এর বেশি হলে তা হয় ‘দুর্যোগপূর্ণ’।
ক্যাপসের তথ্য অনুযায়ী, এবারে জানুয়ারি মাসের ৩১ দিনের মধ্যে ১৬ দিনই ছিল ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ১৫ দিন ছিল ‘অতি অস্বাস্থ্যকর বা দুর্যোগপূর্ণ বায়ুমান।’
দূষণ নিয়ন্ত্রণে দিশা নেই
ঢাকায় যেদিন সবচেয়ে বেশি দূষণ দেখা যায় অর্থাৎ ২২ জানুয়ারি, তার পরদিনই থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে দূষণের কারণে আড়াই শর বেশি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। দূষণে থাইল্যান্ডের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। মাত্র তিন দিন বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর হওয়ার পরই স্কুল বন্ধের এমন নির্দেশনা আসে। জানুয়ারিতে ঢাকায় বায়ুমান ৩০০–এর বেশি গেছে কয়েক দিন; কিন্তু স্কুল বন্ধ বা জনস্বাস্থ্যের কথা ভেবে কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এর অবশ্য একটা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো.
বাস্তবে দূষণ যেন একদম গা–সওয়া হয়ে গেছে নগরবাসীর জন্য; কিন্তু এর উৎসগুলো নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগই চোখে পড়ছে না। গাড়ির কালো ধোঁয়া, কলকারখানার দূষণ, ইটভাটা, বর্জ্য পোড়ানো—এসব উৎস বন্ধে তৎপরতা নেই বললেই চলে।
জিয়াউল হক বলছিলেন, ‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ আসলে সময়সাপেক্ষ বিষয়। কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু ফল আসতে অপেক্ষা করতে হবে।’
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বর মাসে বায়ুদূষণ–সংক্রান্ত টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে প্রধান করে। কারখানা, গাড়ি ও ইটভাটাকে জরিমানাও করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও দূষণবিশেষজ্ঞ আবদুস সালাম বলছিলেন, উদ্যোগগুলো যতটা কাগজে আছে, বাস্তবে নেই। তাই দূষণের হাল করুণ।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাজ্যর থিঙ্ক বিগ স্কলারশিপ, টিউশন ফি–জীবনযাত্রার খরচসহ মিলবে নানা সুবিধা
উচ্চশিক্ষায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গন্তব্য হলো যুক্তরাজ্য। বিদেশি শিক্ষার্থীরা যে যে দেশে পড়তে যেতে চান, সেগুলোর মধ্য অন্যতম যুক্তরাজ্য। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য দেয় নানা স্কলারশিপ। এমন স্কলারশিপে মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামে বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপের অধ্যয়নের সুযোগ দিচ্ছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরাও এ স্কলারশিপের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ বৃত্তির কেতাবি নাম ‘থিঙ্ক বিগ স্কলারশিপ’। অনলাইনে আবেদন করা যাবে।
আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, আছে দৈনিক ২০০ টাকা ভাতা০৩ মার্চ ২০২৫ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টলে অবস্থিত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপের আওতায় সামাজিক বিজ্ঞান, আইন, কলা, প্রকৌশল, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, জীবনবিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত যেকোনো বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। তবে মেডিসিন, ডেনটিস্ট্রি এবং ভেটেরিনারি সায়েন্স বিষয়ে স্কলারশিপ নেই। ‘থিঙ্ক বিগ স্কলারশিপে’ স্নাতকের মেয়াদ তিন বছর এবং স্নাতকোত্তরের মেয়াদ এক বছর। ‘থিঙ্ক বিগ‘ স্কলারশিপের আওতায় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র জন্য অনুদান দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনকানাডায় পড়াশোনা: ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব পড়বে টিউশন ফি-চাকরিসহ যেসব খাতে০৫ মার্চ ২০২৫সুযোগ-সুবিধা—স্নাতকোত্তরে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার পাউন্ড দেবে
এ অর্থ শুধু টিউশন ফি’র জন্য ব্যবহার করা যাবে
জীবনযাত্রার খরচের জন্য ৩ হাজার পাউন্ড মিলবে
আবেদনের যোগ্যতা—স্নাতকোত্তরে জন্য স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে
একাডেমিক ফলাফল ভালো হতে হবে
টিউশন ফি’র জন্য অন্য কোনো তহবিলের আবেদনকারী হওয়া যাবে না
ইংরেজি দক্ষতার সনদ প্রদর্শন করতে হবে
আরও পড়ুনবাংলাদেশিদের জন্য ভারতের আইসিসিআর দিচ্ছে ৫০০ বৃত্তি, জেনে নিন বিস্তারিত০৪ মার্চ ২০২৫আবেদন প্রক্রিয়া—আগ্রহী প্রার্থীরা আবেদনপদ্ধতিসহ যেকোনো বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন
*আবেদনের শেষ তারিখ: আগামী ২৩ এপ্রিল ২০২৫, যুক্তরাজ্যর সময় সকাল ১০টা
আরও পড়ুনথাইল্যান্ডে বৃত্তি, আইইএলটিএস বা টোয়েফল ছাড়াই আবেদন ০৬ মার্চ ২০২৫