নব্যুয়ত-পূর্ববর্তী জাহিলিয়াতের সময়ে যে সমাজে কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়ার প্রচলন ছিল; কন্যাসন্তান জন্মের সংবাদে পিতারা অসম্মান বোধ করতেন। নব্যুয়ত-পরবর্তী সেই সমাজেই দেখা যায় কন্যাদের হাতে জ্ঞানের চাবিকাঠি তুলে দিচ্ছেন পিতারা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে কোরআন এবং ইসলামী জীবনযাপনের পদ্ধতি শিক্ষালাভের জন্য নারীরাও এগিয়ে এসেছেন; প্রশ্ন করে জেনে নিয়েছেন। সত্য প্রকাশে কখনও কাউকে ভয় পাননি।
হিজরি প্রথম ও দ্বিতীয় শতক ইসলামের সর্বোত্তম ও স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত ছিল। এই সময়টি ছিল সাহাবিদের সময়। নবীজির (সা.
প্রথম ও দ্বিতীয় হিজরি শতকে নারীদের বর্ণিত অনেক হাদিস বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থগুলোয় লিপিবদ্ধ হয়, যা থেকে মানুষ এখনও শিক্ষা গ্রহণ করে আসছে।
হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রে সাহাবিদের (নারী-পুরুষ) মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন আয়েশা (রা.)। তিনি ২ হাজার ২১০টি হাদিস বর্ণনা করেন। এর মধ্যে ২৯৭টি হাদিস বুখারি ও মুসলিমে স্থান পেয়েছে। ছয়টি হাদিস গ্রন্থে বেশিসংখ্যক হাদিস বর্ণনাকারীর মধ্যে তাঁর স্থান দ্বিতীয়। আবু হুরায়রার (রা.) পরেই তাঁর স্থান।
আয়েশার (রা.) পর বেশি হাদিস বর্ণনাকারীর মধ্যে ছিলেন উম্মে সালামা (রা.)। তিনি ৩৭৮টি হাদিস বর্ণনা করেন। এ ছাড়া আসমা বিনতে ইয়াজিদ ইবনুস সাকান, উম্মুল মুমিনিন মাইমুনা, উম্মুল মুমিনিন হাফসা, আসমা বিনতে আবু বকর, আসমা বিনতে উমাইস, আমারা বিনতে আব্দুর রহমান (রা.)-সহ অনেক নারী সাহাবি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
সাহাবিদের মধ্যে, হোক তিনি পুরুষ কিংবা নারী; সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে শিক্ষার্থীরা সুদূর ইরাক ও সিরিয়া থেকে মদিনা ভ্রমণ করতেন। মুহাদ্দিসাত ফাতিমা আল বাতাইহিয়া সিরিয়া থেকে মদিনায় এসে মসজিদে নববিতে পড়াতেন। তাঁর কাছে বড় বড় আলিম পড়তেন।
সেই সময়ে নারীরা ফতোয়া দিতেন, বিচারকাজ করতেন, সাক্ষ্য দিতেন, হাদিস মুখস্থ ও লেখার কাজ করতেন। প্রায় প্রতিটি ঘরে নারীরা কোরআন মুখস্থ করতেন। কোরআন ও হাদিসের যে কোনো ব্যাপারে ব্যাখ্যা জানতে সাহাবিরা আয়েশার (রা.) কাছে হাজির হতেন। তাঁর ফতোয়ার ওপর সবাই আস্থা রাখতেন।
ওই সময়ে নারী শিক্ষকরা মসজিদ, ফলের বাগান, নিজেদের ঘর, হাদিসের মজলিসে শিক্ষা দিতেন। তাদের কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করতেন বিশিষ্ট আলিম থেকে শুরু করে সাধারণ নারী-পুরুষ। যে নারী জ্ঞানের আলোয় নিজেকে রাঙাননি, তিনি কোনো কল্যাণ লাভ করেননি।
হাজার বছর আগে যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এত বিকশিত হয়নি, সেই সময়ে নারীরা জাগতিক যশ, খ্যাতি, দুনিয়ার প্রাচুর্য কিংবা ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষায় জ্ঞানসমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েননি। বরং আখিরাতের প্রাচুর্যের আকাঙ্ক্ষায় তারা দীনি জ্ঞান অর্জন করেছেন, সেই অনুযায়ী আমল করেছেন এবং অন্যকে শিক্ষা দিয়েছেন। এতে তারা দুনিয়াতেও যেমন সম্মানিত হয়েছেন, আখিরাতেও তারা তাদের প্রতিদান পাবেন ইনশাআল্লাহ।
নারীর বই পড়া মানে পুরো একটি পরিবারের বই পড়া। তখন নারীর জ্ঞানার্জনে কেউ কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং পিতারা নিজ নিজ কন্যাদের হাদিসের ক্লাসে নিয়ে যেতেন। কেউ পিতার কাছ থেকেই শিক্ষা নিতেন। কেউ পিতাকে জ্ঞানার্জনে সহায়তা করতেন।
অনেক নারী মুহাদ্দিসাত থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তাদের পিতা, তাদের স্বামী, তাদের ভাই। অনেক আলেম কোনো বিষয়ে জটিলতায় পড়লে স্ত্রীর কাছ থেকে সমাধান পেতেন। সেসব স্ত্রী ছিলেন জ্ঞানের আধার। এমন অনেক মুহাদ্দিসাতকে তাদের পিতা ধনাঢ্য কারও কাছে বিয়ে না দিয়ে জ্ঞানী ছাত্রদের কাছে বিয়ে দিতেন, যাতে তাদের কন্যাদের জ্ঞানার্জন অব্যাহত থাকে।
ইসলামের স্বর্ণযুগের মতো জ্ঞানপিপাসু সেই নারীদের আজ বড় প্রয়োজন। সাজসজ্জার চেয়ে জ্ঞানার্জনে নারীরা গুরুত্ব দিলে পরিবার ও সমাজের পরিবর্তন হতে পারে।
মেহেরুন নেছা রুমা: লেখক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ঞ ন র জন ই সময় ইসল ম করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
গান নিয়েই আমার সব ভাবনা
কর্নিয়া। তারকা কণ্ঠশিল্পী। অনলাইনে প্রকাশ পাচ্ছে বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া তাঁর দ্বৈত গান ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–
‘ভাঙা ঘর’ ও ‘আদর’-এর পর প্রকাশ পাচ্ছে ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। একনাগাড়ে দ্বৈত গান গেয়ে যাচ্ছেন, কারণ কী?
শ্রোতাদের চাওয়া আর নিজের ভালো লাগা থেকেই দ্বৈত গান গাওয়া, এর বাইরে আলাদা কোনো কারণ নেই। কারণ, সব সময় ভাবনায় এটাই থাকে, যে কাজটি করছি, তা শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করবে কিনা। সেটি একক, না দ্বৈত গান– তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তা ছাড়া রুবেল খন্দকারের সঙ্গে গাওয়া ‘ভাঙা ঘর’ ও অশোক সিংয়ের সঙ্গে গাওয়া ‘আদর’ গান দুটি যেমন ভিন্ন ধরনের, তেমনি বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’ অনেকটা আলাদা। আসল কথা হলো, যা কিছু করি, তার পেছনে শ্রোতার ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
দ্বৈত গানের সহশিল্পী হিসেবে নতুনদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণ?
সহশিল্পীর কণ্ঠ ও গায়কি যদি শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো হয়, তাহলে সে তরুণ, নাকি তারকা– তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। এমন তো নয় যে, নতুন শিল্পীরা ভালো গাইতে পারে না। তা ছাড়া তারকা শিল্পী ছাড়া দ্বৈত গান গাইব না– এই কথাও কখনও বলিনি। তাই দ্বৈত গানে তারকাদের পাশাপাশি নতুনদের সহশিল্পী হিসেবে বেছে নিতে কখনও আপত্তি করিনি।
প্রতিটি আয়োজনে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার যে চেষ্টা, তা কি ভার্সেটাইল শিল্পী প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য?
হ্যাঁ, শুরু থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলতে চেয়েছি। এ কারণে কখনও টেকনো, কখনও হার্ডরক, আবার কখনও ফোক ফিউশনের মতো মেলোডি গান কণ্ঠে তুলেছি। গায়কির মধ্য দিয়ে নিজেকে বারবার ভাঙার চেষ্টা করছি। সব সময়ই নিরীক্ষাধর্মী গান করতে ভালো লাগে। একই ধরনের কাজ বারবার করতে চাই না বলেই নানা ধরনের গান করছি। নিজেকে ভেঙে সব সময়ই নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা জারি রাখছি।
প্রযোজক হিসেবে নিজের চ্যানেলের জন্য নতুন কী আয়োজন করছেন?
আয়োজন থেমে নেই। তবে কবে নতুন গান প্রকাশ করব– তা এখনই বলতে পারছি না। কারণ একটাই, অন্যান্য কাজের মতো গান তো ঘড়ি ধরে কিংবা সময় বেঁধে তৈরি করা যায় না। একেকটি গানের পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। কোনো কোনো গানের কথা-সুর-সংগীতের কাটাছেঁড়া চলে দিনের পর দিন। এরপর যখন তা সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে হয়, তাখনই প্রকাশ করি।
গান গাওয়ার পাশাপাশি মডেলিং বা অভিনয় করার ইচ্ছা আছে?
সত্যি এটাই, গান নিয়েই আমার সব ভাবনা। তারপরও অনেকের অনুরোধে কয়েকটি পত্রিকার ফ্যাশন পাতার জন্য মডেল হিসেবে কাজ করেছি। তবে মডেল হব– এমন ইচ্ছা নিয়ে কাজ করিনি। অভিনয় নিয়েও কিছু ভাবি না। অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।