Samakal:
2025-04-10@11:15:15 GMT

ইসলামের জ্ঞানপিপাসু নারী

Published: 7th, February 2025 GMT

ইসলামের জ্ঞানপিপাসু নারী

নব্যুয়ত-পূর্ববর্তী জাহিলিয়াতের সময়ে যে সমাজে কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়ার প্রচলন ছিল; কন্যাসন্তান জন্মের সংবাদে পিতারা অসম্মান বোধ করতেন। নব্যুয়ত-পরবর্তী সেই সমাজেই দেখা যায় কন্যাদের হাতে জ্ঞানের চাবিকাঠি তুলে দিচ্ছেন পিতারা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে কোরআন এবং ইসলামী জীবনযাপনের পদ্ধতি শিক্ষালাভের জন্য নারীরাও এগিয়ে এসেছেন; প্রশ্ন করে জেনে নিয়েছেন। সত্য প্রকাশে কখনও কাউকে ভয় পাননি। 

হিজরি প্রথম ও দ্বিতীয় শতক ইসলামের সর্বোত্তম ও স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত ছিল। এই সময়টি ছিল সাহাবিদের সময়। নবীজির (সা.

) মুখনিঃসৃত বাণী সাহাবিরা অন্তরের মাঝে গেঁথে নিতেন। রাসুলুল্লাহর (সা.) ওফাতের পর যখন হাদিস সংকলন এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তখন সাহাবিদের মধ্য থেকে প্রত্যেকেই নানাভাবে সেই কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই হাদিস চর্চা করতেন।

প্রথম ও দ্বিতীয় হিজরি শতকে নারীদের বর্ণিত অনেক হাদিস বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থগুলোয় লিপিবদ্ধ হয়, যা থেকে মানুষ এখনও শিক্ষা গ্রহণ করে আসছে। 
হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রে সাহাবিদের (নারী-পুরুষ) মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন আয়েশা (রা.)। তিনি ২ হাজার ২১০টি হাদিস বর্ণনা করেন। এর মধ্যে ২৯৭টি হাদিস বুখারি ও মুসলিমে স্থান পেয়েছে। ছয়টি হাদিস গ্রন্থে বেশিসংখ্যক হাদিস বর্ণনাকারীর মধ্যে তাঁর স্থান দ্বিতীয়। আবু হুরায়রার (রা.) পরেই তাঁর স্থান।
আয়েশার (রা.) পর বেশি হাদিস বর্ণনাকারীর মধ্যে ছিলেন উম্মে সালামা (রা.)। তিনি ৩৭৮টি হাদিস বর্ণনা করেন। এ ছাড়া আসমা বিনতে ইয়াজিদ ইবনুস সাকান, উম্মুল মুমিনিন মাইমুনা, উম্মুল মুমিনিন হাফসা, আসমা বিনতে আবু বকর, আসমা বিনতে উমাইস, আমারা বিনতে আব্দুর রহমান (রা.)-সহ অনেক নারী সাহাবি হাদিস বর্ণনা করেছেন।

সাহাবিদের মধ্যে, হোক তিনি পুরুষ কিংবা নারী; সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে শিক্ষার্থীরা সুদূর ইরাক ও সিরিয়া থেকে মদিনা ভ্রমণ করতেন। মুহাদ্দিসাত ফাতিমা আল বাতাইহিয়া সিরিয়া থেকে মদিনায় এসে মসজিদে নববিতে পড়াতেন। তাঁর কাছে বড় বড় আলিম পড়তেন।

সেই সময়ে নারীরা ফতোয়া দিতেন, বিচারকাজ করতেন, সাক্ষ্য দিতেন, হাদিস মুখস্থ ও লেখার কাজ করতেন। প্রায় প্রতিটি ঘরে নারীরা কোরআন মুখস্থ করতেন। কোরআন ও হাদিসের যে কোনো ব্যাপারে ব্যাখ্যা জানতে সাহাবিরা আয়েশার (রা.) কাছে হাজির হতেন। তাঁর ফতোয়ার ওপর সবাই আস্থা রাখতেন।

ওই সময়ে নারী শিক্ষকরা মসজিদ, ফলের বাগান, নিজেদের ঘর, হাদিসের মজলিসে শিক্ষা দিতেন। তাদের কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করতেন বিশিষ্ট আলিম থেকে শুরু করে সাধারণ নারী-পুরুষ। যে নারী জ্ঞানের আলোয় নিজেকে রাঙাননি, তিনি কোনো কল্যাণ লাভ করেননি।

হাজার বছর আগে যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এত বিকশিত হয়নি, সেই সময়ে নারীরা জাগতিক যশ, খ্যাতি, দুনিয়ার প্রাচুর্য কিংবা ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষায় জ্ঞানসমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েননি। বরং আখিরাতের প্রাচুর্যের আকাঙ্ক্ষায় তারা দীনি জ্ঞান অর্জন করেছেন, সেই অনুযায়ী আমল করেছেন এবং অন্যকে শিক্ষা দিয়েছেন। এতে তারা দুনিয়াতেও যেমন সম্মানিত হয়েছেন, আখিরাতেও তারা তাদের প্রতিদান পাবেন ইনশাআল্লাহ। 

নারীর বই পড়া মানে পুরো একটি পরিবারের বই পড়া। তখন নারীর জ্ঞানার্জনে কেউ কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং পিতারা নিজ নিজ কন্যাদের হাদিসের ক্লাসে নিয়ে যেতেন। কেউ পিতার কাছ থেকেই শিক্ষা নিতেন। কেউ পিতাকে জ্ঞানার্জনে সহায়তা করতেন।

অনেক নারী মুহাদ্দিসাত থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তাদের পিতা, তাদের স্বামী, তাদের ভাই। অনেক আলেম কোনো বিষয়ে জটিলতায় পড়লে স্ত্রীর কাছ থেকে সমাধান পেতেন। সেসব স্ত্রী ছিলেন জ্ঞানের আধার। এমন অনেক মুহাদ্দিসাতকে তাদের পিতা ধনাঢ্য কারও কাছে বিয়ে না দিয়ে জ্ঞানী ছাত্রদের কাছে বিয়ে দিতেন, যাতে তাদের কন্যাদের জ্ঞানার্জন অব্যাহত থাকে। 

ইসলামের স্বর্ণযুগের মতো জ্ঞানপিপাসু সেই নারীদের আজ বড় প্রয়োজন। সাজসজ্জার চেয়ে জ্ঞানার্জনে নারীরা গুরুত্ব দিলে পরিবার ও সমাজের পরিবর্তন হতে পারে।

মেহেরুন নেছা রুমা: লেখক 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ঞ ন র জন ই সময় ইসল ম করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড

বড় ঋণগ্রহীতা বেশির ভাগই পলাতক। কেউ কেউ আছেন জেলে। এর মধ্যেই খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড হয়েছে। গত অক্টোবর-ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় করেছে। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আদায় ৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা, যা প্রায় ৮২ শতাংশ। ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধ; কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি এবং কোনো কোনো ব্যাংক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আদায় জোরদার করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যাংকাররা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নীতি নিয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের কাছে একটা কঠোর বার্তা গেছে– টিকে থাকতে হলে ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে হবে। ঋণ পরিশোধ না করে আর আগের মতো নিয়মিত দেখানো যাবে না। আবার চলতি মূলধন ঋণে সীমা বাড়িয়ে নিয়মিত দেখানোর পথও বন্ধ। চাইলেই আদালত থেকে খেলাপি ঋণের ওপর স্থগিতাদেশ মিলছে না। দুর্বল ব্যাংকগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে রয়েছে। ব্যাংক না টিকলে চাকরি বাঁচবে না– এমন চাপও আছে। এসব কারণে খেলাপিদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন ব্যাংকাররা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণের বিপরীতে মোট ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। এর আগে কোনো এক প্রান্তিকে সর্বোচ্চ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরে এই আদায় হয়েছিল। ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে আদায় হয় ৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে মাত্র ২ হাজার ৬৭২ কোটি এবং ২০২০ সালে ছিল ২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে খেলাপিদের থেকে আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৯১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সমকালকে বলেন, খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর তদারকি করছে। যে ঋণের যা শ্রেণিমান, ব্যাংকগুলোকে তা-ই দেখাতে হচ্ছে। আবার অনেক ব্যাংক নিজের অস্বিত্বের স্বার্থে আদায় জোরদার করছে। অবশ্য কেউ খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল করতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করবে। এ ক্ষেত্রে নির্ধারিত ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সব নিয়ম মেনে আসতে হচ্ছে। একদিকে কঠোরতা, আরেকদিকে নিজেদের অস্বিস্তের স্বার্থে ঋণ আদায় জোরদার করেছে ব্যাংক।

বিগত সরকারের সময়ে ঋণ আদায়ের চেয়ে নানা কৌশলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর উপায় বের করা হতো। মূলত ব্যবসায়ীদের খুশি করতে ২০১৪ সালের ‘রাতের ভোট’-এর আগের বছর থেকে ব্যাপকভাবে এ সংস্কৃতি শুরু হয়। কখনও নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনঃতপশিল, কখনও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় ১২ বছরের জন্য ঋণ নবায়ন কিংবা পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া হয়। এসব ছাপিয়ে করোনার পর ২০২০ সাল থেকে কিস্তি ফেরত না দিয়েও নিয়মিত দেখানোর পথ বাতলে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখন আর আগের মতো যেনতেন উপায়ে নিয়মিত দেখানোর সুযোগ মিলছে না। লুকানো খেলাপি ঋণের আসল চিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে। যে কারণে খেলাপি ঋণ দ্রুত বাড়ছে। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ঠেকেছে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায়, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এক বছর আগের তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ১৩১ কোটি টাকা। আর কেবল শেষ তিন মাসে বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ঋণ আদায়সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ২১ বছর তাঁর ব্যাংকিং ক্যারিয়ার। এর আগে কখনও ঋণ আদায়ে এত চাপ তৈরি হয়নি। ব্যাংকারদের মধ্যে একটা কঠোর বার্তা গেছে– ঋণ আদায় করতে না পারলে চাকরি থাকবে না। বিশেষ করে দুর্বল ব্যাংকগুলোতে এই চাপ বেশি। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত হয় বছরের শেষ প্রান্তিকের পরিস্থিতির ভিত্তিতে। সে অনুপাতে ব্যাংকগুলো লভ্যাংশ, কর্মীদের ইনসেনটিভ বোনাসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে। এবার প্রকৃত আদায় ছাড়া কোনো ব্যাংক খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে পারছে না। আবার কারও প্রভিশন ঘাটতি রেখে লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এসব কারণে ঋণ আদায় বেড়েছে। ঋণগ্রহীতা বড় অংশই পলাতক না থাকলে আরও অনেক বেশি আদায় হতো বলে তিনি জানান।
আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগদানের এক সপ্তাহের মাথায় ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ব্যাপক শিথিল করে ঋণ পুনঃতপশিলের একটি নীতিমালা করা হয়। ওই নীতিমালার পর আগের সব রেকর্ড ভেঙে শুধু ২০২২ ও ২০২৩ সালে পুনঃতপশিল হয় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪১ কোটি টাকার ঋণ। আর ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে পুনঃতপশিল করা হয়েছে আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ। এভাবে লুকিয়ে রাখা ঋণই এখন আবার খেলাপি হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বয়স তাঁর কাছে সংখ্যামাত্র
  • চীনের ওপর আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের
  • সারাজীবনের সম্বল ১০ মিনিটে পুড়ে শেষ
  • খেলাপি ঋণ আদায়ে রেকর্ড
  • ভূমি ভাবতেই পারেননি তার জীবনে এমন সুযোগ কখনও আসবে