ঢাকায় শেষ অফিস করলেন ইউএসএআইডি কর্মকর্তারা
Published: 7th, February 2025 GMT
ডোনাল্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার পাট শেষ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগী এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) কর্মকর্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার ৬০-৭০ কর্মকর্তা শেষ অফিস করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবারের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেই সংস্থাটির কর্মকর্তারা দেশে ফিরছেন।প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার পাট শেষ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগী এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) কর্মকর্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার ৬০-৭০ কর্মকর্তা শেষ অফিস করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবারের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেই সংস্থাটির কর্মকর্তারা দেশে ফিরছেন।
গত ২০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসার পর পরই বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির তহবিল স্থগিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন প্রশাসন সংস্থাটিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করছে। ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে ইউএসএআইডির প্রধান কার্যালয়ে না যেতে কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সংস্থার ওয়েবসাইটও।
গতকাল শেষ কর্মদিবস উপলক্ষে ঢাকা কার্যালয়ে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। দীর্ঘদিন স্থানীয়দের সঙ্গে কাজ করায় বন্ধন তৈরি হয়েছিল। একই সঙ্গে তহবিল বন্ধ করে দেওয়ায় সংস্থায় কাজ করা ২৫০ থেকে ৩০০ বাংলাদেশি কর্মকর্তার মধ্যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। ঢাকার কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র (আইডি) এরই মধ্যে অকার্যকর করা হয়েছে। তাদের চাকরি থাকবে কিনা, নতুন করে কোথায় চাকরি করবেন, ঢাকায় কার্যক্রম ভবিষ্যতে চালালেও খরচ যে কমিয়ে আনা হবে, তা নিয়ে সবার মধ্যে উদ্বেগ দেখা যায়।
জানতে চাইলে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সমকালকে জানায়, এ বিষয়ে তথ্য পেতে ইউএসএআইডির ওয়েবসাইটে যা প্রকাশ করা হয়েছে, তা দেখতে হবে। সংস্থার ঢাকা কার্যালয়ে ৬০-৭০ আমেরিকান কর্মরত জানিয়ে এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তহবিল স্থগিতের পর প্রথম সংস্থার ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়।
এর পর তারবার্তার মাধ্যমে কর্মরতদের ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরতে বলা হয়। শেষ কর্মদিবস হওয়ায় সংস্থার বাংলাদেশি ও আমেরিকান কর্মকর্তাদের মন ছিল বিষণ্ন। যেসব কর্মকর্তাদের জরুরি চিকিৎসা কিংবা সন্তানদের পড়াশোনা-সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সময় বাড়ানো হবে।
সংস্থার আরেক কর্মকর্তা বলেন, ইউএসএআইডির মতো এত বড় সংস্থা এভাবে হয়তো বন্ধ করতে পারবে না ট্রাম্প প্রশাসন। সাময়িকভাবে ৯০ দিনের জন্য স্যাংশন দিয়েছে। বিশ্ব থেকে পুরোপুরি কার্যক্রম বন্ধ করতে হলে পার্লামেন্টে বিল পাস করতে হবে। তিনি বলেন, কার্যক্রম চালু থাকলেও খরচ বর্তমান প্রশাসন কমিয়ে আনবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে বাংলাদেশি চাকরিজীবীও একেবারে কমিয়ে আনা হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের আদেশের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে শুরু করেছে। ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থা, পরিবেশ, জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমও গতি হারিয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েছে কর্মী ছাঁটাইয়ের নোটিশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে চাপে থাকা বাংলাদেশকে আরও বড় ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাত ঝুঁকিতে পড়েছে।
উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে উন্নয়নে বিশেষ করে কারিগরি সহায়তায় দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব পড়বে। এ জন্য এখন থেকেই কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বাণিজ্যিক সহযোগী।
এফএ ডট জিওভি ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ইউএসএআইডির অর্থ সহায়তা এসেছে ৩৩ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার ৭১০ ডলার। বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল পাকিস্তান ও ভারত থেকে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন, শিক্ষা ও সামাজিক সেবা এবং প্রকল্প থাকলেও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানবিক সহায়তা এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উন্নয়নকর্মী বলেন, তহবিল স্থগিতে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব পড়বে। দেশজুড়ে সংক্রামক রোগের বিস্তারও প্রভাবিত করবে। বিভিন্ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের হাজার হাজার উন্নয়নকর্মী অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।
ইউএসএআইডির অর্থায়নের পরিচালিত প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা অফিসে আসছি, সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটাই কিংবা নতুন কোনো স্কিল শেখার চেষ্টা করি। এ অনিশ্চয়তা হতাশাজনক।’
বাংলাদেশের উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজের (এডিএবি) পরিচালক এ কে এম জসিম উদ্দিন বলেন, আশা করি, পর্যালোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতে অন্তত ২০ হাজার পেশাদার কাজ করেন। ইতোমধ্যে আইসিডিডিআর,বি সহস্রাধিক কর্মী ছাঁটাই করেছে, যাদের বেশির ভাগ ছিলেন ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত টিউবারকুলোসিস প্রকল্পে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) আফগান শিক্ষার্থীদের অর্থায়নও স্থগিত করেছে। ফলে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়ছেন তারা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রকল প শ ষ কর ক জ কর ক কর ম তহব ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইউএসএআইডির অর্থায়ন পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে সোমবার ‘ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট-ইউএসএআইডির ‘ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক’ নিযুক্ত করেছেন। বিশ্বের বৃহত্তম দাতা সংস্থাটির দায়িত্ব নিয়েই তিনি বলেছেন, ‘আমরা আমেরিকান জনগণের স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি তাদের করের অর্থের যাতে অপচয় না হয়, সেটা নিশ্চিত করব।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে মঙ্গলবার এক বার্তায় আরও বলা হয়েছে, ইউএসএআইডি বিদেশে আমেরিকার স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল লক্ষ্য থেকে সরে এসেছে। এখন এটা স্পষ্ট, সংস্থাটির তহবিলের উল্লেখযোগ্য অংশ যুক্তরাষ্ট্রের মূল জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
উল্লেখ্য, ট্রাম্প প্রশাসন এ বছরের জানুয়ারিতে ক্ষমতায় আসার পর ইউএসএআইডির কার্যকলাপ আরও ভালোভাবে বোঝা ও সংস্থার কার্যকলাপের ওপর ট্রাম্প সরকারের নীতি প্রতিফলনের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সংস্থাটির অর্থায়নে বিশ্বের শতাধিক দেশে পরিচালিত প্রকল্পগুলো তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে। রুবিও বাড়তি দায়িত্ব নিয়েই মার্কিন কংগ্রেসকে জানিয়েছেন, ইউএসএআইডির বৈদেশিক সহায়তা কার্যক্রম পর্যালোচনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডা বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হবে।
সমকালের পাঠকরা ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ‘ট্রাম্পের আদেশের বড় ধাক্কা বাংলাদেশে, ঝুঁকিতে লাখো মানুষ’ শীর্ষক প্রধান সংবাদটি পড়েছেন। সেখানে ইউএসএআইডির অর্থায়নের প্রেক্ষাপট ও খাতগুলো এবং অর্থায়ন বন্ধ হলে বাংলাদেশের এনজিও খাত ও সরকারি প্রকল্পগুলো কী ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে, তার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আমি সে আলোচনায় যাব না। বরং এই নিবন্ধে ইউএসএআইডি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের কারণ, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের করণীয় ও প্রস্তুতি বিষয়ে আলোকপাত করব।
স্বীকার্য, ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত কার্যক্রম তিন মাসের জন্য বন্ধ হওয়ায় বাংলাদেশের বিশেষত এনজিওতে কর্মরত অনেকের মনে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের চাকরি হারানোসহ স্বাস্থ্য খাত বড় সংকটে পড়তে পারে বলে সমকালের প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আগের মেয়াদে ইউএসএআইডি নিয়ে মাথা ঘামাননি বললেই চলে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ধারাবাহিকতায় ট্রাম্পের মেয়াদেও ইউএসএআইডি গতানুগতিকভাবে চলেছে।
এবার যখন ট্রাম্প প্রশাসন ইউএসএআইডির তহবিলের উল্লেখযোগ্য অংশ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছে এবং কার্যক্রম স্থগিতের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে দেখতে চাইছে, তখন বিষয়টি হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সরকারকে এই জায়গা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। আমেরিকা যাতে আগের চেয়েও বেশি অনুদান দেয়, সেটা নিশ্চিত করতে এখনই কাজে নামতে হবে।
প্রশ্ন হলো– ট্রাম্প প্রশাসন গত মেয়াদে ইউএসএইডের কার্যক্রম পর্যালোচনা করেনি; এবার কেন করছে। এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে সংস্থাটির সর্বশেষ প্রশাসক সামান্থা পাওয়ারের জীবনী ও কর্ম এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন ১ হাজার ৩৫৮ দিনের কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণে।
ইউএসএআইডির ঐতিহ্য হলো, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে নতুন কেউ আসার সঙ্গে সঙ্গে ইউএসএআইডির প্রশাসক পদেও পরিবর্তন আসে। ১৯৬১ সালে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জন এফ. কেনেডির সময়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এটিই হয়ে আসছে। কারণ, পররাষ্ট্র দপ্তরের নীতির সঙ্গে সংস্থাটির কার্যক্রমের সামঞ্জস্য থাকতে হয়।
ইউএসএআইডির খণ্ড ও পূর্ণকালীন মিলিয়ে মোট ২৬ জন প্রশাসক ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৯তম প্রশাসক সামান্থা জেন পাওয়ার একদম ভিন্ন। তাঁর সময়ে ইউএসএআইডিতে নীতি সংক্রান্ত ও খুঁটিনাটি যত পরিবর্তন হয়েছে, তা সংস্থাটির ৬৪ বছরের ইতিহাসে ঘটেনি। তিনি ঘুমের সময় ছাড়া পুরো সময়টা কাজে ব্যস্ত থাকতেন। এই দায়িত্ব পালনকালে তিনি মার্কিন প্রশাসনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন; যার শুরুটা হয়েছিল ওবামার সময়ে এবং বাইডেন প্রশাসনেও তা বাড়তে থাকে। তিনি ইউএসএআইডির কার্যক্রম ও অর্থায়নে নানা মাত্রা যোগ করার পাশাপাশি আমেরিকার আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অভূতপূর্ব সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি ইউএসএআইডির কার্যক্রমের স্থানীয়করণ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্ততা সম্পর্কিত নীতি কাঠামো তৈরি করেন। তাঁর সময়ে এলজিবিটিকিউআই কার্যক্রম বিস্তৃত হয়। ফলে সামান্থা পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন সময়ের ইউএসএআইডির তিনটি অগ্রাধিকার– বেশি সহজলভ্য, ন্যায়সংগত ও সাড়ামূলক কার্যক্রম পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিচার-বিশ্লেষণ করা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রায় অবশ্যাম্ভাবী।
ডেমোক্র্যাট পার্টির সদস্য সামান্থা পাওয়ার ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ইয়েল ও হার্ভার্ড শিক্ষিত সামান্থা তৎকালীন সিনেটর বারাক ওবামার সিনিয়র অ্যাডভাইজার ছিলেন। এর পর যেসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব লাভ করেন, তার মধ্যে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দায়িত্বও ছিল।
জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত থাকা অবস্থায় সামান্থা ধর্মীয় স্বাধীনতা, নারী অধিকার, এলজিবিটিকিউআই অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে সোচ্চার থাকার পাশাপাশি বিদেশে নৃশংসতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র হস্তক্ষেপের বড় সমর্থক হিসেবে পরিচিত। লিবিয়াতে বারাক ওবামার সামরিক অভিযানে তাঁর ভূমিকা ছিল। আইরিশ-আমেরিকান সামান্থা কর্মজীবন শুরু করেছিলেন সাংবাদিক হিসেবে; পুলিৎজার পুরস্কারও পেয়েছেন।
কেউ যদি বুঝতে চান, ট্রাম্পের দিকনির্দেশনায় আগামী তিন মাস মার্কো রুবিওর নেতৃত্বে ইউএসএআইডির কার্যক্রম পর্যালোচনায় কী হতে পারে, তাহলে গত চার বছরে সামান্থা পাওয়ারের নেতৃত্বে ইউএসএআইডির কার্যক্রম দেখতে হবে। ট্রাম্প ক্ষমতালাভের পরপরই যেসব নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, সেগুলোকেও একত্রভাবে দেখতে হবে। বিশেষত বিদেশনীতি সংক্রান্ত আদেশগুলো।
বাংলাদেশে ইউএসএআইডির অর্থায়ন সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, ওয়াশিংটনের জন্য ঢাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আগের মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসন কী ধরনের প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে দেশটির বর্তমান পররাষ্ট্রনীতির আলোকে বোঝা সম্ভব, আগামীতে ইউএসএআইডি কোথায় কতটা অর্থায়ন করবে। এখন পর্যন্ত যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, তাতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষির কিছু প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ হতে পারে; কিন্তু নতুন অনেক প্রকল্পে অর্থায়ন হবে। আমার মতে, সামগ্রিকভাবে ইউএসএআইডির অর্থায়ন বাড়বে বাংলাদেশে। কারণ বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আমেরিকান জনগণের বন্ধন সম্প্রসারণে ট্রাম্প প্রশাসন আগের মেয়াদের চেয়ে বেশি অগ্রসর হবে।
মোহাম্মদ গোলাম নবী: কলাম লেখক; প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইট টার্ন