সাংবাদিক খায়রুল কবিরের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
Published: 7th, February 2025 GMT
দৈনিক সংবাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম আজীবন সদস্য খায়রুল কবিরের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ছিলেন ইউনিয়ন ব্যাংকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার, ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। এ ছাড়া পাকিস্তান শিল্প ব্যাংকের পরিচালক এবং জনতা ব্যাংকের প্রথম চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচির অন্যতম প্রণেতা খায়রুল কবির পাকিস্তান আর্ট কাউন্সিলের (বর্তমানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থার প্রথম ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি দেশের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র প্রসেসিং ও মুদ্রণ ল্যাবরেটরি স্থাপন করেন।
ঘোড়াশালের সম্ভ্রান্ত কবির পরিবারে জন্ম নেওয়া খায়রুল কবিরকে মৃত্যুর পর সেখানকার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনায় তাঁর পৈতৃক বাড়িতে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনী প্রশাসন সাজাতে এখনই সতর্ক সরকার
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রশাসন সাজাতে সতর্কে পা ফেলছে সরকার। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিকসহ বিভিন্ন তথ্য নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই চলছে। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পদায়নের চূড়ান্ত তালিকা (ফিটলিস্ট) তৈরি করা হচ্ছে সময় নিয়ে। এ কারণে ডিসি পদায়নের চূড়ান্ত তালিকা তৈরির সাক্ষাৎকার দুই মাসেও শেষ হয়নি।
সরকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার একটি বিতর্কহীন তালিকা তৈরি করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে ডিসি ও পুলিশ সুপার (এসপি) পদে প্রাধান্য পাবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা। ভোটের তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) ডিসি পদে রদবদল চাইলে এ তালিকা ধরেই করতে হবে। ডিসি-এসপির পাশাপাশি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তালিকা তৈরিরও কাজ চলছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ গত ৮ সেপ্টেম্বর ডিসি নিয়োগের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকায় কর্মকর্তা ছিলেন ১০৬ জন। এর মধ্যে ৬১ জনকে ডিসি করার পর বাকি ৪৫ কর্মকর্তা অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকলেও তাদের নানা কারণে গ্রহণযোগ্য মনে করছে না মন্ত্রণালয়। সংসদ নির্বাচনের আগে এসব কর্মকর্তাকে ডিসি পদে পদায়ন সম্ভব নয় বলে গত ১১ জানুয়ারি নতুন তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। তবে এখনও শেষ হয়নি অধিকাংশ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার। অথচ ফিটলিস্ট প্রণয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল এক দিন অন্তর সাক্ষাৎকার নিয়ে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করার। আজ শনিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৭তম ব্যাচের ৩০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা রয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান সমকালকে বলেন, এবার বিতর্কহীন তালিকা তৈরির কাজ চলছে। নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের ডিসি করা হবে। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের বদলের জন্য সর্বশেষ তালিকা তৈরিতে সময় কম পাওয়া গিয়েছিল। তাই ভালোভাবে তদন্ত প্রতিবেদন নেওয়া যায়নি। আগে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল, এর পর তদন্ত প্রতিবেদন এসেছে। এ জন্য সর্বশেষ তালিকার কিছু কর্মকর্তাকে ডিসি পদে না বসিয়ে নতুন তালিকা করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকবারই বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো অল্প সংস্কারের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে একমত হলে আগামী ডিসেম্বরের ভেতরে নির্বাচন হতে পারে। আর সংস্কার কার্যক্রম প্রসারিত হলে নির্বাচন হবে আরও ছয় মাস পরে।
দৌড়ে ৫০৯ কর্মকর্তা
নতুন ডিসি তালিকার জন্য প্রশাসন ও পূর্বতন ইকোনমিক ক্যাডারের বিবেচিত কর্মকর্তা রয়েছেন ৫০৯ জন। এর মধ্যে আছেন ২৫তম ব্যাচের ১৩৪ জন, ২৭তম ব্যাচের ২০৫ জন এবং ২৮তম ব্যাচের ১৫৮ জন। ২৫তম ব্যাচের ৪২ জন ও ২৭তম ব্যাচের ৩০ কর্মকর্তা আগেই ডিসি পদে পদায়ন পেয়েছেন।
প্রাধান্য পাবেন যারা
এখন ডিসি পদে কর্মরত আছেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা। ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের শিগগির যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি হতে পারে। পরে তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বদলি করা হবে। ফলে সংসদ নির্বাচনের সময় ডিসি পদে থাকবেন ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বেশি প্রাধান্য পাবেন। ২৫তম ব্যাচের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৪ সালে। তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট। ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর। ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত।
চারটি ব্যাচ থেকে এসপি বাছাই
এখন জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) দায়িত্ব পালন করছেন ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। সংসদ নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক ও বিএনপি সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে মাঠে রাখতে চায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটা মাথায় রেখেই সম্প্রতি ২৪তম ব্যাচের কিছু কর্মকর্তাকে জেলা পর্যায়ে এসপি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে ২৮তম ব্যাচের কিছু কর্মকর্তাকেও জেলায় এসপি পদে পদায়ন করা হতে পারে। এসপি পদে বসানো হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে। ২৪তম ব্যাচের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০০৪ সালে। তারা চাকরিতে যোগ দেন ২০০৫ সালের ২ জুলাই। সে সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি সরকার।
জাতীয় নির্বাচনে ডিসি-এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন– এমন কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে বলেন, নির্বাচন কমিশন যতই নিরপেক্ষ ও কঠোর হোক না কেন, যেসব কর্মকর্তা নির্বাচনসংশ্লিষ্ট পদে দায়িত্ব পালন করবেন, তারা দক্ষ, যোগ্য ও নিরপেক্ষ না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু করা কঠিন হবে। নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার পর থেকে ভোটের ফল গণনা পর্যন্ত এই কর্মকর্তারা যুক্ত থাকেন। জাতীয় নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। এ দায়িত্ব পাওয়ার পর তারা পোলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ দেন। শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠের প্রশাসনটা সাজান তারা। জেলা পুলিশ সুপাররা আইনশৃঙ্খলার সার্বিক বিষয় দেখভাল করেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে ডিসি হিসেবে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন– এমন ২২ কর্মকর্তাকে ফেব্রুয়ারিতে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। আবার ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন ৩৩ ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। একইভাবে যারা এসপির দায়িত্বে ছিলেন, তাদেরও বাধ্যতামূলক অবসর ও ওএসডি করা হয়েছে। ফলে এবার নিরপেক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে।
এদিকে এবার প্রথমবারের মতো ডিসি সম্মেলনের অধিবেশনে যুক্ত হয় ইসি। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আইনের মধ্যে থেকে ডিসিদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওপরের কোনো চাপ এলে সেটা ইসি সামলাবে। কারণ, সুষ্ঠু নির্বাচন করাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য। ডিসি সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ডিসিরা নির্ভয়ে কাজ করতে পারবেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডিসি নিয়োগ নিয়ে নজিরবিহীন হট্টগোল হয়। দক্ষ ও বঞ্চিত কর্মকর্তাদের তোপের মুখে ৯ ডিসির পদায়ন বাতিল করা হয়। রদবদল করা হয় চার জেলার ডিসিকে। ফলে ধীরগতিতে সাক্ষাৎকার নিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ইসি থেকেও হতে পারেন রিটার্নিং কর্মকর্তা
সংসদ নির্বাচনে মহানগর বাদে জেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন ৬৪ ডিসি। আর প্রতিটি আসনে ইসি কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। এবার প্রথমবারের মতো ইসি থেকেও রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে পারবে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার সমকালকে বলেন, আগে নির্বাচন কমিশনকে তাদের নিজেদের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া উচিত। এর পর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করা যেতে পারে। নির্বাচনের সময় সরকারি কর্মকর্তারা ইসির অধীনে থাকলেও নিরপেক্ষ হওয়া দুরূহ। তবে ইসি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ থাকা অনেক সহজ। কারণ, নির্বাচনের আগেপরে সরকারি কর্মকর্তাদের এমপি-মন্ত্রীর সঙ্গেই কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, একজন রিটার্নিং কর্মকর্তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো– সৎ ও নিরপেক্ষ হওয়া। পক্ষ-বিপক্ষ, হারজিত– এসব চিন্তা না করে দলীয় আনুগত্যের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করা।
বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন সমকালকে বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার কথা বলেছে। আমরাও দীর্ঘদিন বলে আসছি, বর্তমান কমিশনকেও বলেছি। তিনি বলেন, বিভাগীয়, জেলা ও উপেজলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দিয়ে ৩০০ আসনে নির্বাচন করার সক্ষমতা আমাদের আছে। সিটি করপোরেশন ও সংসদের উপনির্বাচন ইসি কর্মকর্তারা সম্পন্ন করছেন। জাতীয় নির্বাচনে ডিসিরা শুধু পদে থাকেন– সব কাজ ইসি কর্মকর্তারাই করেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ও আচরণবিধি অনুযায়ী কাজ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ইসির তত্ত্বাবধান, নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচন পরিচালনার সব কাজ তত্ত্বাবধান করবেন এবং ইসি তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবেন। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সহায়তা করেন।