পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন
Published: 7th, February 2025 GMT
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। সুতরাং কঠোরভাবে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি।
শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সই করা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ, জুলাই–আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে গতকাল বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙ্গে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে বিএনপির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকান্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। অথচ জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুনপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ নানান ধরণের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে ‘‘মব কালচারের’’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।’
বিএনপির বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘জুলাই আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারদের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, নিন্দিত ঘৃণিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, পরাজিত ফ্যাসিস্টদের উসকানিমূলক তৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অতি জরুরি অগ্রাধিকার, অথচ এসব বিষয়ে দৃশ্যমান এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।’
পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন দায়িত্বে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এখনও প্রশাসনকে পতিত ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসরমুক্ত করা হয়নি, বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বিদ্যমান, পুলিশ প্রশাসনে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত। এমতাবস্থায় সরকার জনআকাঙ্খা পূরণে সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে।’
বিএনপির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের নিত্যদিনের দু:খ দুর্দশা লাঘব করা জরুরি, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রেণী পেশার মানুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা গায়েবি মামলার কোনো সুরাহা এখনও হয়নি। গণতন্ত্রকামী জনগণ ফ্যাসিবাদী আমলের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় এখনও হয়রানির শিকার হচ্ছে, অথচ এ বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখেনি।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্র সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরী সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জনআকাঙ্খা উপেক্ষা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিজেরাই এই অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’
বিএনপি মনে করে, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচারের স্মৃতিচিহ্ন নিশ্চিহ্ন কিংবা নির্মূলের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন নিহিত নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আদর্শিক চিন্তা, শক্তি ও প্রভাবের আদর্শিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঐক্যকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়া এবং জাতীয় ঐক্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চাই উত্তম পন্থা। জনগণের মধ্যে এই ধরণের বার্তা ছড়িয়ে দিতে আমাদের সকলেরই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপির উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্রবিরোধী দেশী–বিদেশী অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে, যার উপসর্গ ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ সরক র গণঅভ য ত থ ন পর স থ ত র সরক র র প ব এনপ র পদক ষ প জনগণ র
এছাড়াও পড়ুন:
আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দুজন শনাক্ত
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় নিহতদের মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মরদেহগুলো ভ্যানে স্তূপ করে আগুন দেওয়ার আগে একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এ ঘটনার নতুন আরেকটি ভিডিও পাওয়া গেছে বলে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন বিভাগ। পাশাপাশি মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদনে ভিডিও যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আরও এক মাস সময় চাওয়া হয়।
আবেদনের ওপর শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এই মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের একটি নতুন ভিডিও হাতে পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। জড়িত দুজনকে শনাক্ত করা গেছে, বাকীদের শনাক্তের কাজ চলছে। তাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও এক মাস সময় প্রয়োজন।
শুনানি শেষে বিচারপতি মো. গোলাম মূর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২৫ মে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ঠিক করেন।
পরে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভিডিওটি যাচাই-বাছাই শেষে ২৫ মে ওই বিষয়ে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, তদন্ত পর্যায়ে আমরা একটা ভিডিও উদ্ধার করেছি। সেখানে কারা কিভাবে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে তা দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তদন্ত একটা চলমান প্রক্রিয়া। তদন্ত পর্যায়ে নতুন কোনো তথ্য-উপাত্ত আসলে এটাকে অবহেলা করার সুযোগ নাই। বিচার বিলম্বিত নয়, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে এই সময় নেওয়া হয়েছে।
এ মামলার আসামি হিসেবে সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, সাবেক উপপরিদর্শক মালেক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদারকে আজ কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এ দিন জুলাই-আগস্টের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী, রামপুরার গণহত্যাসহ তিনটি মামলার শুনানি হয়। এসব মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানসহ ১৩ আসামিকেও হাজির করা হয় ট্রাইব্যুনালে।
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের দিনে গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়া বাইপাইল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজন নিহত হন। পরে ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে পুলিশের ভেস্ট ও মাথায় হেলমেট পরা এক ব্যক্তি আরেক জনের সহায়তায় একটি ভ্যানে একজন যুবকের মরদেহ তুলতে দেখা যায়। এবার তদন্তের শেষ মুহুর্তে ওই ঘটনার দ্বিতীয় ভিডিও পাওয়ার দাবি করলেন তদন্ত কর্মকর্তারা।