বাংলাদেশে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা ও সুযোগ নিয়ে ‘ওয়াটারএইড বাংলাদেশ’ এর গবেষণায় দেখা যায়, পিরিয়ড চলাকালে স্বাস্থ্যবিধি পণ্য থেকে বঞ্চিত দেশের তিন চতুর্থাংশ নারী। যার অন্যতম কারণ, ক্রয়ক্ষমতা, সচেতনতার অভাব, মাসিক নিয়ে কুসংস্কার এবং নিরাপদ ও সঠিক মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব।

বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ওয়াটারএইড বাংলাদেশ পরিচালিত গবেষণার ফলাফল ও পর্যালোচনায় এসব তথ্য জানানো হয়। গবেষণায় নিম্ন আয়ের নারী এবং মেয়েদের জন্য উল্লেখযোগ্য অসুবিধাগুলো তুলে ধরা হয়। 

দেশের ৩ জেলার নারীদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় জানা গেছে, বাংলাদেশে ৭১ শতাংশ নারী এবং মেয়ে তাদের শেষ তিনটি মাসিকে অন্তত একবার স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেছেন। এদের অনেক বলেছেন, তারা বাইরে যাওয়ার সময় প্যাড ব্যবহার করলেও ঘরে থাকার সময় কাপড় ব্যবহার করেন, কারণ স্যানিটারি প্যাডের উচ্চমূল্যের কারণে এটি অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা স্যানিটারি পণ্যের উচ্চ খরচের কারণে এখনও মাসিকের সময় কাপড় ব্যবহার করেন। 

গবেষণাটি আরও দেখিয়েছে, বিকল্প মাসিক ব্যবস্থাপনা পণ্য সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে। মাত্র ২৭ শতাংশ মহিলা পুনঃব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি প্যাড সম্পর্কে জানেন এবং ১৩ শতাংশ মেনস্ট্রুয়াল কাপ সম্পর্কে জানেন। কিন্তু এই বিকল্প পণ্যের ব্যবহার খুব কম, যেখানে সচেতনতার অভাব, উচ্চ খরচ এবং সীমিত প্রাপ্যতা প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে।

এছাড়াও সরকারের সহায়ক নীতিমালার অভাব এবং এই শিল্পে বিনিয়োগের অভাব, এই বিকল্প পণ্যগুলির পণ্যের বাজার বৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। কাঁচামালের অভাব, আমদানি সীমাবদ্ধতা এবং স্থানীয় উৎপাদনের সীমিত সক্ষমতার কারণে সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদন আরও কঠিন হচ্ছে।

গবেষণায় দেখা যায়, কুসংস্কার এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামো মহিলাদের জন্য মাসিক পণ্য পাওয়া আরও কঠিন করে তোলে। ৭৭ শতাংশ নারী সামাজিক নিয়মকানুন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং স্কুল ও কর্মস্থলে সঠিক সুবিধার অভাবের কারণে এমএইচএম পণ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। এছাড়াও, স্যানিটারি প্যাডের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে পরিবেশগত উদ্বেগ সৃষ্টি হচ্ছে। অপর্যাপ্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির কারণে পরিবেশের ক্ষতি ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। 

এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য, গবেষণা রিপোর্টে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। নীতিনির্ধারকদের স্যানিটারি পণ্যের দাম কমানো এবং ভর্তুকি বৃদ্ধি করা উচিত যাতে বিকল্প পণ্য সবার জন্য সাশ্রয়ী হয়। পরিবেশবান্ধব পুনঃব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি পণ্যের প্রসারের জন্য আরও প্রচারণা চালানো দরকার, পাশাপাশি তাদের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য শিক্ষামূলক প্রচারণা চালানো উচিত। স্কুল এবং কর্মস্থলে, মাসিক স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার জন্য নিরাপদ স্থান তৈরি করা অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এছাড়াও, সমাজ-ভিত্তিক প্রোগ্রামে পুরুষদের অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যাতে মাসিক সংক্রান্ত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র জন য পর ব শ ব কল প

এছাড়াও পড়ুন:

দুই বছরেও শেষ হয়নি ৩৭ মিটার সেতুর কাজ

ধর্মপাশা উপজেলা সদরের মধ্যবাজারে অবস্থিত মাত্র ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের শয়তানখালী সেতুর পুনর্নির্মাণ কাজ দুই বছরেরও শেষ হয়নি। নির্মাণকাজে অবহেলা ও ধীরগতির কারণে ঠিকাদারের ওপর অসন্তুষ্ট থাকলেও এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত সময়ে সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রায় ১৫-২০টি গ্রামের মানুষকে। 

জানা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অর্ধশত বছরের পুরোনো শয়তানখালী সেতুটি দেবে যেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সেতুটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন সেতুটির ওপর দিয়ে পথচারী ও যান চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। দেবে যাওয়া পুরোনো সেতুর পরিবর্তে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০২৩ সালে এলজিইডির হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শয়তানখালী সেতু নির্মাণসহ ধর্মপাশা থানার সামনে থেকে বাহুটিয়াকান্দা পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মিটার সড়ক ও একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার ৪৮০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ কাজ বাস্তবায়নে সুনামগঞ্জের মাহবুব এন্টারপ্রাইজকে ঠিকাদার নিযুক্ত করে ওই বছরের ২৬ মার্চ কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। একই বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সেতু ও সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। কাজে ধীরগতির অভিযোগ এনে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ধর্মপাশা বাজারের ব্যবসায়ীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু এতেও কোনো হেলদোল নেই ঠিকাদারের। ঠিকাদার আগের মতোই ধীরগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।  

ধর্মপাশা বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, শয়তানখালী সেতুটি দ্রুত নির্মাণ না হওয়ায় মধ্যবাজারের ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

আরেক ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ বলেন, শয়তানখালী সেতুটির কারণে দীর্ঘ চার বছর ধরে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করা হলে মধ্যবাজারে ব্যবসায় গতি ফিরে আসবে।  

অভিযোগ প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল মহসিন মো. মাহবুবের ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। প্রকল্প সাইটে ঠিকাদারের নিযুক্ত ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি রাজধানীর হাতিরঝিলের সেতুর আদলে তৈরি হচ্ছে। শুরুর দিকে মিস্ত্রি পাওয়া যাচ্ছিল না এবং গত বর্ষায় কাজ করতে না পারায় কাজ পিছিয়েছে। মাস দুয়েকের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী।

উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বলেন, অত্যন্ত ধীরগতিতে সেতুটির নির্মাণকাজ চলতে থাকায় প্রকল্প পরিচালক কার্যাদেশ বাতিল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে কাজটি আরও পিছিয়ে যেতে পারে– এমন ভাবনা থেকে তা করা হয়নি। তাই ঠিকাদারকে সতর্ক করে দিয়ে আগামী ২৫ জুনের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে কার্যাদেশ বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ