গাজীপুর, বরিশালসহ ৩৫ জেলায় হামলা, ভাঙচুর ও আগুন
Published: 7th, February 2025 GMT
ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের পর গত বুধবার রাতে খুলনায় ‘শেখ বাড়ি’ ভাঙচুর করা হয়। এরপর কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হানিফের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। গত দুদিনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের কমপক্ষে ১৩টি বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ পরিবারের সদস্যদের অর্ধশত ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাতটি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও আগুন লাগানো হয়েছে। গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত সারা দেশ থেকে প্রথম আলোর প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
ঢাকার বাইরে অন্তত ৩৫টি স্থানে হামলা, ভাঙচুর, আগুন লাগানোর ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। ভোলায় তোফায়েল আহমেদ, নোয়াখালীতে ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহ ও আমুর বাড়ি ভাঙচুর–আগুন, কুমিল্লায় এমপি বাহাউদ্দিনের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বাইরে আওয়ামী লীগের নেতাদের এসব বাড়িঘরে গত ৪ ও ৫ আগস্টেও হামলা, লুটতরাজ হয়েছিল। এরপর থেকে এসব বাড়িঘর পরিত্যক্তই ছিল।
নেতাদের বাড়ি ভাঙচুর, আগুননারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদার বাড়ি বায়তুল আমানে হামলা ও ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় এক্সকাভেটর দিয়ে ওই বাড়ির দেয়াল ও ছাদ ভেঙে দেওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে কয়েক শ জনতা হামলা ও ভাঙচুর শুরু করেন। ওই বাড়িতে তখন কেউ ছিলেন না।
অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের বাবা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলীর জামালপুরের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সদর উপজেলার নরুন্দি ইউনিয়নের নরুন্দি রেলস্টেশন এলাকায় অবস্থিত ওই বাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য মির্জা আজমের পরিত্যক্ত বাড়িতে আবারও ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাতটার দিকে জামালপুর শহরের বকুলতলা এলাকায় অবস্থিত আজমের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে।
গত বুধবার রাতে ও গতকাল ভোলায় তোফায়েল আহমেদের বাড়ি ও নোয়াখালীতে ওবায়দুল কাদেরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহ ও আমির হোসেন আমুর বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। কুমিল্লায় সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিনের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
খুলনা নগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত ‘শেখ বাড়ি’র একটি অংশ এক্সকাভেটর দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার রাতভর দুটি এক্সকাভেটর চালিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক, দেয়ালসহ বেশির ভাগ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। কুষ্টিয়ায় এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙা হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ির একটি অংশ।
বরিশালে বুধবার রাত থেকে বুলডোজার দিয়ে সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ এবং প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর বাড়ি ভাঙা হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাত একটার দিকে ছাত্র–জনতা কালীবাড়ি রোডে সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবনের সামনে ভিড় জমান। রাত দেড়টার দিকে বাসভবন ঘিরে ভাঙচুরের একপর্যায়ে বুলডোজার দিয়ে বাড়ির নিচতলার একাংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাত দুইটার দিকে বরিশাল নগরের বগুড়া রোডে অবস্থিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বাসভবনটিও বুলডোজার দিয়ে ভাঙা শুরু হয়। ঝালকাঠি শহরের রোনালস রোডে আমুর পরিত্যক্ত বাড়িতে বুধবার রাতে ও গতকাল দুপুরে ভাঙচুর চালানো হয়। এর আগে সকাল ১০টার দিকে ঝালকাঠি কালেক্টরেট স্কুলসংলগ্ন আমির হোসেন আমুর স্ত্রীর নামের প্রতিষ্ঠান ফিরোজা আমু হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও ফিরোজা আমু টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দেন ছাত্র–জনতা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের বাসভবনেও ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত ১২টার পর এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কিছু আসবাব লুটের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল সকাল পর্যন্ত বাসভবনে আগুন জ্বলছিল।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল বেলা একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোয়াখালী জেলা শাখার সমন্বয়ক মো.
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকসিংগায় অবস্থিত সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। উপজেলার মণিগ্রাম ইউনিয়নের সাফারি গ্রামে শাহরিয়ার আলমের ট্রেনিং সেন্টারে আগুন দেওয়া হয়।
এ ছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নওশাদ আলীর বাড়িতে, পিরোজপুরে সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর ভাই সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমানের বাড়ি, নাটোর শহরে সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের (শিমুল) জান্নাতি প্যালেসে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। বুধবার রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাঁরা পেট্রল ঢেলে বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেন।
ম্যুরাল ভাঙচুরকিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের সদরের বিন্নাটি মোড়ে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানসহ জেলহত্যার ঘটনায় নিহত চার নেতা ও সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি ও ম্যুরাল গতকাল সন্ধ্যার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে ভেঙে দেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
বুধবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ পরিবারের সদস্যদের কমপক্ষে অর্ধশত ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি ভাঙা হয়েছে। কোথাও কোথাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই দিন রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও নগরের জামালখান এলাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।
যশোরে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার সাতটি ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও নামফলক ভাঙচুর করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা হাতুড়ি দিয়ে এসব স্থাপনা ভাঙচুর করেন।
সিলেটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙচুর হওয়া ম্যুরালটি এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচটি ম্যুরাল এবং শহরের একটি পাড়ায় থাকা একটি মাজার বুধবার রাতে ভাঙচুর করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
ময়মনসিংহ নগরের সার্কিট হাউস মাঠসংলগ্ন এলাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি বুধবার রাতে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড়ের ‘জয় বাংলা চত্বরে’ মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ম্যুরালটি ভেঙে দেওয়া হয়। রাত পৌনে আটটায় এক্সকাভেটর দিয়ে ম্যুরালটি ভাঙতে দেখা যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা’; ‘পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ফ্যাসিবাদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’; ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’ স্লোগান দেন।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাঁনমারী এলাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুরের প্রতিকৃতি ভাঙচুর করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।
এ ছাড়া সাতক্ষীরায় চারটি ও কিশোরগঞ্জে শেখ মুজিবের একটি ম্যুরাল, চুয়াডাঙ্গায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের চারটি ম্যুরাল, ঢাকার সাভারে শেখ মুজিবের একটি ম্যুরাল, যশোরের কেশবপুরে দুটি ম্যুরাল, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে সাবেক চার রাষ্ট্রপতির চারটি ম্যুরাল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নরসিংদী ও পঞ্চগড়ে একটি করে ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে। পটুয়াখালী জেলা পরিষদ চত্বরে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল ভাঙা হয়েছে।
আ.লীগের কার্যালয়ে হামলাগত দুদিনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের বেশি কিছু কার্যালয়ে ভাঙচুর চালিয়েছেন ও আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়কে পাবলিক টয়লেট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্র-জনতা। মাদারীপুরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা। গতকাল দুপুরে শহরের পুরান বাজার এলাকার দলীয় কার্যালয়ে এ হামলা চালানো হয়। জেলা যুবদলের সদস্যসচিব ফারুক ব্যাপারী বলেন, ‘মাদারীপুরে শেখ হাসিনার কোনো আস্তানা রাখা যাবে না। সবাই মিলে হাসিনার আস্তানা মুছে ফেলব।’
নওগাঁয় এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। গতকাল বিকেল পাঁচটা থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভাঙচুর শুরু করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গতকাল বিকেলে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল শক্তি’র ব্যানারে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ভাঙচুর চালান।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁরা জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত সভাপতি ও টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমানের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছেন। বিকেল পাঁচটার দিকে শহরের মেইন রোডে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শতাধিক ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে যান। তাঁরা এক্সকাভেটর দিয়ে অফিস ভবন গুঁড়িয়ে দেন।
চুয়াডাঙ্গায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে যান। তাঁরা এক্সকাভেটর দিয়ে কার্যালয়ের প্রধান ফটক, গ্রিল, নিচতলার দেয়ালের অংশবিশেষ ভেঙে দেন।
এ ছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়টিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক ভাঙচুররাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াললিখন মুছে দেওয়া হয়েছে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনা আবাসিক হলের নামফলক এবং সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শেখ রাসেল আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাতে শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল শেষে ওই ভাঙচুর চালায়। এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাবনা জেলার আহ্বায়ক বরকতল্লাহ ফাহাদ বলেন, ‘দেশের কোথাও ফ্যাসিবাদের চিহ্ন থাকবে না। ফ্যাসিবাদের শেষ পরিণতি দেখে কেউ যাতে আর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে সাহস না পায়।’
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল থেকে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম মুছে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। ভাংচুর করা হয়েছে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালেও। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নামফলক ভেঙে ফেলা হয়।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা]
আরও পড়ুনগুঁড়িয়ে দেওয়া হলো ৩২ নম্বরের বাড়ি ১ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ খ ম জ ব র রহম ন ও শ খ শ খ ম জ ব র রহম ন র ব ক ষ ব ধ ছ ত র জনত ন ব ক ষ ব ধ জনত আম র হ স ন আম র স দ ক আবদ ল ল হ ন মফলক ভ ঙ ক শ রগঞ জ র ন মফলক অবস থ ত গতক ল ব ব সভবন আম র ব এল ক য় র স মন উপজ ল র একট নগর র শহর র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় শেষ অফিস করলেন ইউএসএআইডি কর্মকর্তারা
ডোনাল্ড ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার পাট শেষ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগী এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) কর্মকর্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার ৬০-৭০ কর্মকর্তা শেষ অফিস করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবারের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেই সংস্থাটির কর্মকর্তারা দেশে ফিরছেন।প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার পাট শেষ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগী এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) কর্মকর্তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার ৬০-৭০ কর্মকর্তা শেষ অফিস করেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবারের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেই সংস্থাটির কর্মকর্তারা দেশে ফিরছেন।
গত ২০ জানুয়ারি ক্ষমতায় বসার পর পরই বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির তহবিল স্থগিত করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নতুন প্রশাসন সংস্থাটিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে একীভূত করছে। ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে ইউএসএআইডির প্রধান কার্যালয়ে না যেতে কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সংস্থার ওয়েবসাইটও।
গতকাল শেষ কর্মদিবস উপলক্ষে ঢাকা কার্যালয়ে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। দীর্ঘদিন স্থানীয়দের সঙ্গে কাজ করায় বন্ধন তৈরি হয়েছিল। একই সঙ্গে তহবিল বন্ধ করে দেওয়ায় সংস্থায় কাজ করা ২৫০ থেকে ৩০০ বাংলাদেশি কর্মকর্তার মধ্যে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। ঢাকার কর্মকর্তাদের পরিচয়পত্র (আইডি) এরই মধ্যে অকার্যকর করা হয়েছে। তাদের চাকরি থাকবে কিনা, নতুন করে কোথায় চাকরি করবেন, ঢাকায় কার্যক্রম ভবিষ্যতে চালালেও খরচ যে কমিয়ে আনা হবে, তা নিয়ে সবার মধ্যে উদ্বেগ দেখা যায়।
জানতে চাইলে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সমকালকে জানায়, এ বিষয়ে তথ্য পেতে ইউএসএআইডির ওয়েবসাইটে যা প্রকাশ করা হয়েছে, তা দেখতে হবে। সংস্থার ঢাকা কার্যালয়ে ৬০-৭০ আমেরিকান কর্মরত জানিয়ে এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, তহবিল স্থগিতের পর প্রথম সংস্থার ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়।
এর পর তারবার্তার মাধ্যমে কর্মরতদের ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ফিরতে বলা হয়। শেষ কর্মদিবস হওয়ায় সংস্থার বাংলাদেশি ও আমেরিকান কর্মকর্তাদের মন ছিল বিষণ্ন। যেসব কর্মকর্তাদের জরুরি চিকিৎসা কিংবা সন্তানদের পড়াশোনা-সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে সময় বাড়ানো হবে।
সংস্থার আরেক কর্মকর্তা বলেন, ইউএসএআইডির মতো এত বড় সংস্থা এভাবে হয়তো বন্ধ করতে পারবে না ট্রাম্প প্রশাসন। সাময়িকভাবে ৯০ দিনের জন্য স্যাংশন দিয়েছে। বিশ্ব থেকে পুরোপুরি কার্যক্রম বন্ধ করতে হলে পার্লামেন্টে বিল পাস করতে হবে। তিনি বলেন, কার্যক্রম চালু থাকলেও খরচ বর্তমান প্রশাসন কমিয়ে আনবে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে বাংলাদেশি চাকরিজীবীও একেবারে কমিয়ে আনা হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের আদেশের প্রভাব বাংলাদেশে পড়তে শুরু করেছে। ইউএসএআইডির অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত করা হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থা, পরিবেশ, জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমও গতি হারিয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েছে কর্মী ছাঁটাইয়ের নোটিশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে চাপে থাকা বাংলাদেশকে আরও বড় ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাত ঝুঁকিতে পড়েছে।
উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে উন্নয়নে বিশেষ করে কারিগরি সহায়তায় দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাব পড়বে। এ জন্য এখন থেকেই কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বাণিজ্যিক সহযোগী।
এফএ ডট জিওভি ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ইউএসএআইডির অর্থ সহায়তা এসেছে ৩৩ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার ৭১০ ডলার। বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল পাকিস্তান ও ভারত থেকে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন, শিক্ষা ও সামাজিক সেবা এবং প্রকল্প থাকলেও বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানবিক সহায়তা এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উন্নয়নকর্মী বলেন, তহবিল স্থগিতে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব পড়বে। দেশজুড়ে সংক্রামক রোগের বিস্তারও প্রভাবিত করবে। বিভিন্ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের হাজার হাজার উন্নয়নকর্মী অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।
ইউএসএআইডির অর্থায়নের পরিচালিত প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা অফিসে আসছি, সামাজিক মাধ্যমে সময় কাটাই কিংবা নতুন কোনো স্কিল শেখার চেষ্টা করি। এ অনিশ্চয়তা হতাশাজনক।’
বাংলাদেশের উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজের (এডিএবি) পরিচালক এ কে এম জসিম উদ্দিন বলেন, আশা করি, পর্যালোচনার পর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতে অন্তত ২০ হাজার পেশাদার কাজ করেন। ইতোমধ্যে আইসিডিডিআর,বি সহস্রাধিক কর্মী ছাঁটাই করেছে, যাদের বেশির ভাগ ছিলেন ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত টিউবারকুলোসিস প্রকল্পে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) আফগান শিক্ষার্থীদের অর্থায়নও স্থগিত করেছে। ফলে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়ছেন তারা।