স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতার অভিযোগে তাঁর বাসভবন ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের বাধায় রাজধানীর মিন্টো রোডের মাথায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ার থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনের উদ্দেশে বের হন শিক্ষার্থীরা। তবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে যেতে না পেরে রাত পৌনে ১২টার দিকে মিন্টো রোডের মাথায় বসে পড়েন তারা। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে পোস্ট দেন। ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমার জন্মভূমি হাতিয়ায় সাবেক এমপি জলদস্যু মোহাম্মদ আলীর বাসা থেকে ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। প্রশাসন আছে, কিন্তু সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্রও আছে। আমার ভাইদের উপর সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়েছে, আমি যাচ্ছি। হয় জন্মভূমি, নয় মৃত্যু। দোয়া করবেন।’

এর কিছুক্ষণ পরে আব্দুল হান্নান মাসউদ আরেকটি পোস্ট দেন। এতে তিনি লেখেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে যাচ্ছি, ওখানে অবস্থান করবো রাত ১২:৩০টা থেকে। ওনারা ঘুমাবে, আর আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের উপর গুলি করবে। যারা সঙ্গ দিবেন, আসতে পারেন।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মুনাফার লোভে টাকা দিয়ে মূলধন নিয়ে টানাটানি

রোকেয়া বেগম প্রতি লাখে মাসে ২ হাজার টাকা মুনাফার খবর শুনে তেলিয়াপাড়া নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটিতে ১০  লাখ টাকা জমা করেছিলেন। টাকা জমা রাখার প্রমাণ হিসেবে এনজিওটি তাঁকে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে দলিল সম্পাদন করে দেয়। চুক্তিনামা অনুযায়ী মাসে মাসে মুনাফা পেতেন রোকেয়া।

ভালো মুনাফার খবর শুনে রোকেয়ার মতো ছোট-বড় তিন হাজার বিভিন্ন পেশার মানুষ ওই এনজিওতে প্রায় দেড়শ কোটি টাকার আমানত রাখেন। গত কয়েক মাস ধরে এনজিওটি আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছে। এর মধ্যে কয়েকজন পরিচালক পালিয়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। 

কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এনজিওটির সব কার্যক্রম ঠিকমতোই চলছিল। গত ডিসেম্বর মাস থেকে হঠাৎ বিপত্তি দেখা দেয়। হঠাৎ করে এনজিওটিতে অর্থ সংকট দেখা দেয়। খবর চাউর হলে হাজারো গ্রাহক টাকা ফেরত পেতে নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির প্রধান কার্যালয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তখন উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে বৈঠকে ওই এনজিওর পরিচালকরা আমানতকারীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, এপ্রিল মাস থেকে লভ্যাংশ ও জুলাই মাস থেকে গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দেবেন। কিন্তু এর মধ্যে ওই এনজিওর তিনজন পরিচালক এলাকা থেকে পালিয়ে গেছেন। বর্তমানে এনজিওটির চেয়ারম্যান বেলাল মিয়া অফিসে আছেন। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। এতে  টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে ভরসা পাচ্ছেন না আমানতকারীরা। 

নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, সারাদেশে তাদের ২৮ শাখা ছিল। প্রায় দেড় লাখ সদস্য ছিলেন। কয়েক কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু গত ডিসেম্বর মাস থেকে গোলযোগের কারণে সবগুলো শাখা সমিতি বন্ধ হয়ে গেছে। সমিতির সদস্যরা কয়েক কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় নিশানের বাগান, জমি, বহুতলবিশিষ্ট ভবনসহ অনেক সম্পদ রয়েছে। ইচ্ছে ছিল সম্পদ বিক্রি করে ধীরে ধীরে মানুষের টাকা ফেরত দেব। কিন্তু আমানতকারীদের বিশৃঙ্খলার কারণে এখন সহায়-সম্পদ বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবু আমরা চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষের টাকা ফেরত দেওয়ার। টাকার পরিবর্তে নিশানের সম্পদ কেউ কেউ নিজেদের দখলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ভুক্তভোগী জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে এনজিওটি মানুষের কাছ থেকে টাকা জমা নিয়েছে। বিনিময়ে প্রতি মাসে মুনাফা দিয়ে আসছে। এই প্রলোভনে পড়ে ধনী-গরিব সবাই সেখানে টাকা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু বেশি মুনাফার লোভে সেখানে টাকা জমা রেখে তারা নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছেন। 

নুরুল ইসলাম নামে এক আমানতকারী জানান, জমি বিক্রি করে মুনাফার আশায় নিশান এনজিওতে তিনি টাকা জমা করেছিলেন। এখন তাঁর মতো শত শত লোক নিজেদের অর্থ ফিরে পেতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। যতই দিন যাচ্ছে গ্রাহকরা টাকা জমা করে হতাশায় ভুগছেন। অনেক গরিব মানুষ জমি ও সহায়-সম্পদ বিক্রি টাকা জমা করেছিলেন। সবাই এখন দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন। 

এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ বিন কাশেম বলেন, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে নিশান পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটিকে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এর পরও তারা টাকা ফেরত না দিলে আমানতকারীরা ওই এনজিওর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ