কিশোরগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়াসহ এক্সকাভেটর দিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলামের বাড়ি ও  ঢাকা মহানগর পুলিশের আলোচিত কর্মকর্তা বিপ্লব সরকারের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে।  

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত আটটার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের স্টেশন রোডে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়, যেটিকে গত বুধবার বিক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা টয়লেট ঘোষণা করেছিলেন, সেই কার্যালয় গতকাল রাতে এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে আগুন দেওয়া হয়। এদিকে রাত নয়টার দিকে জেলা শহরের খড়মপট্টি এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলামের বাড়িতে ভাঙচুর ও ঢাকা মহানগর পুলিশের আলোচিত কর্মকর্তা বিপ্লব সরকারের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের পর সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ হামলা–ভাঙচুর ও লুটপাট চালান বিক্ষুব্ধ জনতা।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ৫০০ গজের ভেতরে চারটি জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। এ সময় জেলা শহরের খড়মপট্টি, উকিলপাড়া, গৌরাঙ্গ বাজার ও স্টেশন রোড এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘণ্টাখানেক বিদ্যুৎ ছিল না। ভাঙচুর করা সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়িসহ হামলা করা অন্য জায়গা থেকে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা যায় অনেককে। তবে পুলিশের কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। এদিকে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের বিন্নাটি মোড়ে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানসহ জেলহত্যার ঘটনায় শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীসহ সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবিসংবলিত ম্যুরালটি এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।

গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী কামাল উদ্দিনসহ কয়েকজন জানান,  বৃহস্পতিবার বিকেলে কয়েক শ বিক্ষুব্ধ জনতা জড়ো হয়ে ম্যুরালে হামলা চালান। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা এক্সকাভেটর নিয়ে এসে শেখ মুজিবের ছবিসহ অন্যদের ছবি ভাঙচুর করেন। এতে ম্যুরালের নিচের অংশে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ জেলহত্যার ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ছবি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়ক ও কিশোরগঞ্জ-পাকুন্দিয়া সড়কের চার রাস্তা মোড়ের ব্যস্ততম জায়গায় এ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। অনেক উৎসুক জনতাকে আবার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ভিডিও করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া পাকুন্দিয়া পৌরসদর বাজারে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুরসহ বাজিতপুর পৌর সদর বাজারের সিনেমা হল মোড়ে শেখ মুজিবসহ সাবেক চার রাষ্ট্রপতির ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।

এর আগে বুধবার রাতে বিক্ষুব্ধ জনতাসহ ছাত্ররা জেলা শহরের স্টেশন রোডে অবস্থিত আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুনসহ এটিকে পাবলিক টয়লেট ঘোষণার পাশাপাশি শহরের খড়মপট্টি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ কার্যালয়ের গেটের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। তবে যেসব জায়গায় বুধবার ও বৃহস্পতিবার রাতে হামলা–ভাঙচুর করা হয়েছে, সেসব জায়গায় এর আগেও শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছিল। আবার এসব জায়গায় হামলা–ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ জনতা। অনেকে এটাকে পলাতক শেখ হাসিনার ভারত থেকে বক্তব্য ও ফেব্রুয়ারি মাসে লিফলেট বিতরণসহ আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচির ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে জানান অনেকে।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন রাত পৌনে ১১টার দিকে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িসহ কয়েকটি জায়গায় হামলা–ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ক র ষ ট রপত ব ক ষ ব ধ জনত ক শ রগঞ জ গতক ল র ঘটন শহর র আওয় ম আবদ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি হিলি কাস্টমস

চলতি (২০২৪-২৫) অর্থ বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর বেঁধে দেওয়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি দিনাজপুরের হিলি কাস্টমস। চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব ঘাটতি ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। 

এই বন্দর দিয়ে যেসব ভারতীয় পণ্য আমদানি হচ্ছে তার অধিকাংশ শুল্কমুক্ত। যদি শল্কয়ন যুক্ত পণ্য আমদানি হয় তাহলে আগামী দিনে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

রবিবার ( ৯ মার্চ) সন্ধ্যায় বিষয়টি জানিয়েছেন হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম। 

তিনি জানান, চলতি অর্থ বছরের গত ৬ মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৬২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এই ৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। 

তিনি আরও জানান, এই স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে, তার বেশির ভাগ শুল্কমুক্ত। যদি জিরা, কিশমিশসহ বিভিন্ন শুল্কায়নযুক্ত পণ্য আমদানি হয় তাহলে আগামী দিনে বাকি রাজস্বের ঘাটতি পূরণ হবে। 

এদিকে হিলি বন্দরের আমদানিকারকরা বলছেন, একদিকে ডলার সঙ্কট অন্যদিকে ব্যাংকের অসহযোগীতা এবং বন্দরের রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে অনেক ব্যবসায়ী এ বন্দর ছেড়েছেন। এই বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আসে তার অধিকাংশই শুল্কমুক্ত। যদি শুল্কায়নযুক্ত পণ্য ফল ও জিরা আমদানি হয়, তাহলে রাজস্ব অর্জনের পাশাপাশি লক্ষমাত্রাও ছাড়িয়ে যাবে।

ঢাকা/মোসলেম/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ