নোয়াখালীতে সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের গ্রামের বাড়িতে হামলা, আগুন
Published: 6th, February 2025 GMT
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের গ্রামের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। একই সময় পাশের চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেনের বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক আটটার দিকে এসব ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পৃথক দুটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
তবে এই হামলা-ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নোয়াখালী জেলা শাখার আহ্বায়ক মো.
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ রাত আটটার দিকে শতাধিক কিশোর-তরুণ ও যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামের বাড়িতে হামলা চালান। হামলাকারীরা সাবেক সেনাপ্রধানের ছোট ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি জাবেদ ইউ আহমেদের দ্বিতল বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালান এবং ড্রয়িংরুমের সোফায় আগুন ধরিয়ে দেন।
প্রায় একই সময় একই ব্যক্তিরা পাশের চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন ওরফে ফয়সলের বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন। স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, হামলাকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মাথায় হেলমেট ও মাস্ক ছিল। তবে হামলা-ভাঙচুরের সময় উভয় বাড়িতে কেউ ছিলেন না।
খবর পেয়ে বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ ও নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে হামলাকারীদের কাউকে পাননি। এ ঘটনার পর রাতে চৌমুহনী পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের গ্রামের বাড়িতে তাঁর ছোট ভাই জাবেদ ইউ আহমেদের দ্বিতল ভবনে একদল লোক সন্ধ্যার পর হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছেন। তাঁরা এ সময় নিচতলার সোফায় আগুন ধরিয়ে দেন এবং কিছু মালামাল লুট করে নিয়ে যান। এ ছাড়া একই সময় সাবেক পৌর মেয়র ফয়সলের বাড়িতেও কিছুটা হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে হামলাকালে বাড়ি দুটিতে বাসিন্দাদের কেউ ছিলেন না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রসভ র
এছাড়াও পড়ুন:
মায়ের কোলে ফিরল হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চুরি হওয়া ২ মাস ৭ দিন বয়সী এক শিশুকে র্যাব উদ্ধার করেছে। চুরির ঘটনার সাড়ে ১০ ঘণ্টা পর গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার মীর ওয়ারিশপুর ইউনিয়নের বেচার দোকান এলাকার একটি বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। অভিযানে চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক নারীকেও আটক করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া শিশুটির নাম আবদুর রহমান। সে উপজেলার মীর ওয়ারিশপুর ইউনিয়নের চৌকিদার বাড়ি এলাকার লিটন মিয়া ও জান্নাতুল ফেরদাউসের ছেলে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে শিশুটিকে চুরির ঘটনা ঘটে। শিশুটিকে উদ্ধারের পর গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে ওই শিশুটি তার মাসহ থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এ ঘটনায় আটক নারীর নাম সামছুন নাহার (৪০)। তিনিও মীর ওয়ারিশপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। র্যাব জানিয়েছে, লালন–পালনের উদ্দেশ্যেই ওই নারী শিশুটিকে চুরি করে ঘরে নিয়ে যান।
র্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শিশু চুরির বিষয়টি জানাজানি হলে তাৎক্ষণিক শিশুটিকে উদ্ধারে নানা তৎপরতা শুরু করে পুলিশ, র্যাব ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চুরির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে অভিযান শুরু করা হয়।
র্যাব-১১, নোয়াখালী ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) মিঠুন কুমার কুণ্ডু প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানের একপর্যায়ে রাতে তাঁরা জানতে পারেন, মীর ওয়ারিশপুর এলাকার একটি বাড়িতে চুরি হওয়া ওই শিশু রয়েছে। তাৎক্ষণিক সেখানে অভিযান পরিচালনা করে তথ্যের সত্যতা মেলে এবং শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। মিঠুন কুমার কুণ্ডু আরও বলেন, এ ঘটনায় আটক নারী জানিয়েছেন তাঁর একমাত্র সন্তান প্রতিবন্ধী। তাই তিনি লালন-পালনের উদ্দেশ্যে ওই শিশুটিকে চুরি করেন।
উদ্ধার করা শিশুটিকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তাঁর মা জান্নাতুল ফেরদাউস। তিনি বলেন, ‘হারানো মানিক ফিরে পেয়েছি এর চেয়ে খুশির কিছু নেই। আমার ছেলেকে উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরের দিকে শিশুটির মা জান্নাতুল ফেরদাউস তাঁর শিশুকে নিয়ে জ্বরের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে যান। সঙ্গে ছিলেন তাঁর (জান্নাতুলের) মা তাজনেহার বেগম। তিনিও চক্ষু চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। শিশুটির মা ও নানি টিকিট সংগ্রহের জন্য দুটি লাইনে দাঁড়ান। এ সময় জরুরি বিভাগের সামনে থাকা আরেক নারী জান্নাতুলকে সহযোগিতার কথা বলে তাঁর শিশুটি নিজের কোলে নিয়ে বেঞ্চে বসেন। মায়ের কাছ থেকে নেওয়ার পর কয়েক মিনিট ওই নারী শিশুটিকে নিয়ে বেঞ্চে বসা ছিলেন। এরপর ওই নারী শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে সটকে পড়েন। ওই নারীর সঙ্গে আনুমানিক ছয়-সাত বছরের একটি মেয়েশিশুও ছিল।
জান্নাতুল টিকিট সংগ্রহ করার পর যখন সন্তানকে নিতে আসেন, তখন দেখেন ওই নারী নেই। তখন তাঁর চিৎকার ও আহাজারিতে ঘটনাটি জানাজানি হয় এবং বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, অপরিচিত ওই নারী জান্নাতুলের শিশুপুত্রকে নিয়ে হাসপাতালের সীমানা অতিক্রম করে ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের দিকে চলে গেছেন।
বেগমগঞ্জ মডেল থানায় কর্তব্যরত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার করা শিশুটি তাঁর মাসহ থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। একইভাবে শিশু চুরির ঘটনায় জড়িত নারীও থানায় আছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আটক নারী ও উদ্ধার হওয়া শিশুকে আদালতে পাঠানো হবে।