‘লোকে বই কেনে না, বই হাতে নিয়ে সেলফি তোলে। তারপর বইটি টেবিলে ধপ করে ফেলে দিয়ে হাঁটা দেয়।’ কথাগুলো জাতীয় সাহিত্য প্রকাশের প্রকাশক কমল কান্তি দাসের। তাঁদের অনেক দিনের পুরোনো প্রকাশনা সংস্থা। প্রগতিশীল রাজনীতিক, সাহিত্যিকদের অনেক বই এখান থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রকাশকের ভাষ্য, বই তেমন আর বিক্রি হয় না। লোকে এখন বইয়ের পাতায় চোখ রাখার চেয়ে সেলফোনে তাকিয়ে থেকে সময় কাটিয়ে দেয়। ফলে বইমেলায় বই বিক্রি কমে গেছে।

অমর একুশের বইমেলায় আজ বৃহস্পতিবার লোকসমাগম আগের দিনগুলোর চেয়ে বেশ কম ছিল। প্রকাশকদের ধারণা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যে উত্তেজনাকর একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে মেলায়। লোকজন একটু সতর্ক থাকছেন। একটু নিরুৎসাহিত বোধ করছেন বাইরে যেতে। এতে বেশ ফাঁকা ফাঁকা লেগেছে মেলার পরিবেশ। তবে এর মধ্যে যাঁরা প্রকৃতই বইকেনার উদ্দেশ্য নিয়ে মেলায় এসেছিলেন, তাঁরা বেশ স্বস্তির সঙ্গে স্টল-প্যাভিলিয়ন ঘুরে পছন্দের বই কিনেছেন।

এমনই এক গ্রন্থানুরাগী কাওসার মোস্তফার সঙ্গে দেখা হলো রোদেলা প্রকাশনের স্টলে। পেশায় সমুদ্রগামী জাহাজের ক্যাপ্টেন। ছুটিতে বাড়িতে এসেছেন। তুর্কি লেখক সিদ্দিক গুমুসের কেন তারা মুসলমান হলো, সুফিসাধক ফরীদুদ্দীন আত্তারের ইলাহিনামাসহ দর্শন ধর্ম পরিবেশ বিষয়ে বেশ কিছু বই কিনেছেন। তিনি বললেন, ‘বইমেলার সময় ঢাকায় থাকব আর মেলায় আসব না—এমন হয় না।’ গল্প-উপন্যাসের চেয়ে দর্শন, পরিবেশ বিষয়ের গবেষণামূলক বই তাঁর পছন্দ। তাঁর কাছে বই পড়ার আনন্দ অন্য সব কিছুর চেয়ে আলাদা। তাই বইয়ের টানেই মেলায় আসা।

আজ মেলায় তথ্যকেন্দ্রের হিসাবে নতুন বই এসেছে ৮০টি। উল্লেখযোগ্য নতুন বইয়ের মধ্যে ঐতিহ্য থেকে এসেছে বাংলাদেশের উর্দু কবিদের কাব্যচর্চা ও তাঁদের কবিতা নিয়ে কবি আসাদ চৌধুরীর বাংলাদেশের উর্দু সাহিত্য, ইউপিএল এনেছে ভেলাম ভান সেন্দেলের বাংলাদেশ জনপদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, সুচয়নী পাবলিশার্স থেকে এসেছে গৌতম দত্তের বাংলা গদ্যসাহিত্য বিক্ষণ, অনিক মাহমুদের গল্প কাদামাটির সংসার, নবযুগ থেকে এসেছে ধর্মানন্দ কোসম্ভীর বৌদ্ধধর্মবিষয়ক ভগবান বুদ্ধ, আগামী থেকে এসেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের ভ্রমণবিষয়ক গ্রন্থ চীন দেশে কয়েকবার, ফরহাদ মজহারের সঙ্গে সাক্ষাৎকার সামনাসামনি, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশ থেকে এসেছে আবদুল গনীর ভাষাবিষয়ক গবেষণা গৌড়ের ভাষা বাংলা ভাষা: ভাষা ও লিপির ক্রমবিকাশ, বিভাস থেকে এসেছে রামশংকর দেবনাথের কিশোর উপন্যাস সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে, বাংলা একাডেমি এনেছে মিলন কান্তি দের নির্বাচিত যাত্রাপালা।

মেলামঞ্চের আলোচনা

মেলার মূলমঞ্চে আজ ছিল ‘স্মরণ : মাহবুবুল হক’ শীর্ষক আলোচনা। সৈয়দ আজিজুল হকের সভাপতিত্বে প্রবন্ধ পাঠ করেন তারিক মনজুর। আলোচনায় অংশ নেন মাহবুব বোরহান ও মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান।

জুলাইয়ের গল্প

আজ বইমেলায় শুরু হলো ‘জুলাইর গল্প’ নামে একটি নতুন কার্যক্রম। এতে গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ শাহারিয়া খাঁন আনাসের বাবা সাহরিয়া খান পলাশ ও মা সানজিদা খান আলোচনায় অংশ নেন। সঞ্চালনায় ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানবিষয়ক বিশেষ সেলের সেল সম্পাদক হাসান ইমাম।

প্রথম শিশুপ্রহরে নানা আয়োজন

কাল শুক্রবার মেলার প্রথম শিশুপ্রহর। মেলার দ্বার খুলবে বেলা ১১টায়, শিশুপ্রহর চলবে বেলা ১টা পর্যন্ত। তবে শিশু-কিশোরদের জন্য একাডেমির বিভিন্ন প্রতিযোগিতা শুরু হবে সকাল সাড়ে আটটায়। প্রথমে একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। সকাল ১০টা থেকে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। বরাবরের মতোই মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ শ প রহর বইম ল য় পর ব শ ব ষয়ক প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আহ্বান

ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে র‍্যালি করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কর্মসূচি।

র‍্যালি–পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অন্য যেকোনো সভার চেয়ে এই প্রতিবাদ মিছিল অস্বাভাবিক বড় হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও এতে অংশ নিয়েছেন। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।’

ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্ব মুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। মুসলিম বিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না বলে অভিমত দেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতার ছবি দেখলে সহ্য করা যায় না বলেও উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় যেমন জিয়াউর রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতেন এবং ইসরায়েল এমন সহিংসতা চালানোর সাহস পেত না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না।’

গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলছে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গণহত্যা বন্ধের জোর দাবি করছি।’

সালাহ উদ্দিন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ইসরায়েলকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের সঙ্গে ইসরায়েলের কাছ থেকে আড়িপাতার যন্ত্র কিনেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে জিয়াউর রহমান ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই থেকেই বিএনপি ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। আজ গাজা যেন অবরুদ্ধ খাঁচা, যেখানে শিশু ও নারীদের ওপর বর্বরতা চালানো হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার।’

ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তারা ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করছে বলেই মনে করব। তাদের প্রতিহত করতে হবে, তবে কোনোভাবেই মারপিট নয়—পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চলছে। নারী-পুরুষ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এটা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ। দেশের সাধারণ মানুষ দল–মতনির্বিশেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে, কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের থেকে তেমন কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘও নিষ্ক্রিয়—একটি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে গেছে।’

র‍্যালি–পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু। সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

বিএনপির এই কর্মসূচি বিকেল চারটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা আড়াইটা থেকেই নয়াপল্টনে নেতা–কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনের পতাকা ও কালো ব্যানার নিয়ে নেতা–কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন নয়াপল্টন এলাকা।

র‍্যালিটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে র‍্যালি শুরু হয়। সারা পথজুড়েই ছিল ব্যাপক জনসমাগম ও প্রতিবাদী স্লোগান। বিএনপির নেতা–কর্মীরা ‘ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করো, দুনিয়ার মুসলিম এক হও লড়াই করো’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বিএনপির নেতারা জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে—গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জনগণ ফিলিস্তিনের পাশে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ