সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বেই স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব
Published: 6th, February 2025 GMT
বাংলাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতের ভূমিকা শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, জরুরিও। সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্বেই দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন সম্ভব। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ‘এনগেজিং প্রাইভেট হেলথকেয়ার ইন দ্য ইউএইচসি এজেন্ডা’ শীর্ষক এক সভায় এ কথা বলেন বক্তারা। সভার আয়োজন করে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ইউএইচসি ফোরাম। সহযোগিতায় ছিল জাতিসংঘ জরুরি শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)।
বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতকে বাংলাদেশে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (ইউএইচসি) কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে আয়োজিত এ সভায় দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন। বিশেষ করে ইউএইচসি বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেন তাঁরা।
সভাপতির বক্তব্যে পিপিআরসির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং ইউএইচসি ফোরামের আহ্বায়ক হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ইউএইচসি বাস্তবায়নে প্রধান তিনটি লক্ষ্য হলো সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি, চিকিৎসা ব্যয় হতে হবে সামর্থ্যের মধ্যে এবং চিকিৎসার গুণমান ঠিক রাখা। প্রথমটি অনেকাংশে অর্জিত হলেও এটি অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যই দেশের সবচেয়ে বড় জাতীয় আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত। বেসরকারি খাত ওইভাবে আলোচনায় থাকে না। তাই তাদের বুঝতে এবং ইউএইচসি বাস্তবায়নে কীভাবে তারা যুক্ত হতে পারে, সেটা নিয়ে সবার মতামত শুনতেই আজকের এ অনুষ্ঠান।
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, ‘রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন কারণে স্বাস্থ্য খাত ভুল পথে গেছে। স্বাস্থ্যসেবাকে পণ্য হিসেবে দেখা যাবে না। আমাদের দর্শন অন্য রকম হওয়া উচিত ছিল। এখন সেই পথে ফিরে আসা দরকার। সেটাই সংস্কার কমিশনের লক্ষ্য। ইউএইচসিতে নিয়ে কাজ করা মানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করা। তাই কমিশনের আরেকটি লক্ষ্য হলো প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রিক (পিএইচসি) সংস্কার। অনেক স্টেকহোল্ডারকে (অংশীজন) নিয়ে আমরা ইতিমধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছেছি। চেষ্টা থাকবে সংবিধানে রাখতে না পারলেও পিএইচসির একটা প্যাকেজকে বাধ্যতামূলক করার। অর্থাৎ সরকার এই প্যাকেজে ফ্রিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেবে। এর মধ্যে জরুরি চিকিৎসা থাকতে পারে।’
ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মায়া ভেনডেনেন্ট বলেন, ‘ইউএইচসি নিশ্চিত করতে পিএইচসি হলো চাবি। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার মানোন্নয়ন এবং সরকারের কাঠামোয় স্বীকৃত হাসপাতাল প্রয়োজন। তবে এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যে দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত থেকে আয় করেন, সেখানে ব্যক্তিগত ও সামাজিক ইনস্যুরেন্সের (বিমা) ব্যবস্থা খুবই কঠিন, যা অসম্ভবের কাছাকাছি। কিন্তু আমরা প্রমাণ করেছি, কম খরচে সম্পূর্ণ ডিজিটাল মাধ্যমে ভালো মানের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। আলো ক্লিনিক তার একটি উদাহরণ। আশা করি, আজকে উঠে আসা পরামর্শ থেকে কিছু বড় উদ্যোগ দেখতে পাব।’
আলোচনায় বক্তারা বলেন, হাসপাতাল, চিকিৎসক ও ল্যাবকে একটা স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে তথ্য শেয়ারিং, পর্যবেক্ষণ ও মান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হতে পারে। এটি ইউএইচসি কর্মসূচি সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। চিকিৎসায় মানুষের পকেট থেকে যে খরচ হয়, তার কতটুকু মূল চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়, সেটা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন।
সভায় ল্যাবএইড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম শামীম বলেন, ‘দেশে ৬০-৭০ ভাগ সেবা আমরাই দিই। তাই আমাদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হবে। সরকার আমাদের সুবিধা দিলে, অনেক ক্ষেত্রে আমরাই যথেষ্ট। সেই সক্ষমতা আছে। কীভাবে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত কাজ করে, ভারতের “আয়ুষ্মান ভারত” প্রকল্প থেকে আমরা ধারণা নিতে পারি। সরকার অডিট করুক, সবাইকে এক কাঠামোতে আনুক।’
পিএইচসিকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল) মো.
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সমস্যা দুটো—রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আমলাতন্ত্র। তাই প্রভাবমুক্ত স্বাধীন কমিশন গঠন লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করতে পারে। এ ব্যাপারে সরকারকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।
দেশে পর্যাপ্ত গবেষণা না হওয়ার প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাহিদ আক্তার জাহান বলেন, ‘আমরা অনেক গবেষণা করেছি। তবে গবেষণার ফল অনুযায়ী বাস্তবায়ন হয় না। সুপারিশগুলো কাগজেই থেকে যায়।’
গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের প্রধান মেডিকেল প্ল্যানার লুৎফর রহমান কম খরচে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। দেশে ১৪৪টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র বানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এগুলোকে পূর্ণতা দিতে ডিজিটাল স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণ করা হচ্ছে সামাজিক হাসপাতাল, সামাজিক মেডিকেল কলেজ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের সিএসসিআর হাসপাতালের পরিচালক ও নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ইমরান বিন ইউনুস, ইউএইচসি ফোরামের মো. আমিনুল হাসান, সূর্যের হাসি ক্লিনিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শায়লা পারভীন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর মো. জয়নাল আবেদীন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ পরিচালক মনজুর কাদির, সেনসিভ ডায়াগনস্টিক লিমিটেডের সাদিক মাহমুদ, সিএমইডি হেলথের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার এ মামুন, আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ইকবাল আনোয়ার, সাওল হার্ট সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা মোহন রায়হান, মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সের (এমএসএফ) সহকারী মেডিকেল সমন্বয়ক আতিয়া শারমিন, পিএইচএফ পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন আফতাব উদ্দিন প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব সরক র ক জ কর ন নয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
৭৮০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক
বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড পরিচালন মুনাফা করলেও বছর শেষে ব্যাংকটির নিট মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়নি। গত বছর শেষে পূবালী ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি নিট মুনাফা করেছিল ৬৯৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা ৮২ কোটি টাকা বা প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি গত বছরের জন্য লভ্যাংশও অনুমোদন করা হয় গতকালের এই সভায়। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যার মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। ২০২৩ সালেও ব্যাংকটি একই হারে শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দিয়েছিল।
ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে পূবালী ব্যাংক ঋণের সুদ থেকে ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা আয় করেছে। বিনিয়োগ, কমিশন, মুদ্রা বিনিময় ও ব্রোকারেজ থেকে আয় করেছে ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। তাতে সব মিলিয়ে আয় হয় ৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। বিদায়ী বছরে বেতন-ভাতাসহ নানা খাতে খরচ হয় ১ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। ফলে পরিচালন মুনাফা হয় ২ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে ৯৬১ কোটি টাকা। এরপর কর পরিশোধের পর নিট বা প্রকৃত মুনাফা হয় ৭৮০ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় আমরা চাহিদার বেশি নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এই পরামর্শ দিয়েছে। খেলাপির তুলনায় বেশি সঞ্চিতি রাখার মাধ্যমে ব্যাংকটির ভিত্তি মজবুত করা হয়েছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে পূবালী ব্যাংকের আমানত বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণের হার কমে নেমে এসেছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন এখন ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। আর কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজার ৬৭৮। সারা দেশে ৫০৮টি শাখা ও ২২৭টি উপশাখা রয়েছে ব্যাংকটির। বর্তমানে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি নেটওয়ার্ক পূবালী ব্যাংকের।