সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আগের দমনমূলক শাসনের সময় যারা নিহত, আহত বা অন্ধ হয়েছেন; তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। ক্ষতিগুলো মানুষকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তোলে, যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে। জাতীয় ঐক্যে ধরে রাখতে হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে নর্ডিক ডে উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি প্রধান অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিচ্ছে— বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। বিচার প্রতিষ্ঠা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, যাতে অতীতের অন্যায়ের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। আগের দমনমূলক শাসনের সময় যারা নিহত, আহত বা অন্ধ হয়ে গেছেন, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।

সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে তাড়াহুড়ো থাকলেও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে সুসংগঠিত প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। তিনি সতর্ক করে বলেন, প্রক্রিয়া সঠিক না হলে কাঙ্ক্ষিত ফলও ন্যায়সঙ্গত হবে না।

নির্বাচন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তিনি বলেন, নির্বাচনই সব সমস্যার সমাধান নয়, কাঠামোগত সংস্কারও জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া এ সংস্কার কার্যকর হবে না।

তিনি বলেন, সরকারের সংস্কার পরিকল্পনায় খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলছে, এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আলোচনার নতুন ধাপ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, গত ৫৩ বছরে আমাদের জনগণ বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। তবে এবারের পরিবর্তন ছিল ব্যতিক্রম—রাজনৈতিক প্রভাব বা বাহ্যিক চাপ ছাড়াই তরুণদের উদ্যোগে এ পরিবর্তন এসেছে।

তিনি বলেন, অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা ও আর্থিক খাতের সংকট সামলানো চ্যালেঞ্জিং। সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে একটি দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থা পেয়েছে, কিন্তু জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।

প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সামলানো প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত ছয় মাসে আমরা ১৮০টি আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবিলা করেছি। প্রচলিত পুলিশি কৌশল ব্যবহার না করে ধৈর্য দেখিয়েছি, যা হয়তো একদিন স্বীকৃতি পাবে। আমাদের সামনে আরেকটি সুযোগ নেই। বাংলাদেশ বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়তে পারে না—এবার সঠিক পথেই হাঁটতে হবে। তিনি স্বীকার করেন, সংস্কারের চাপ যেমন আছে, তেমনি দ্রুততম সময়ে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বও আমাদের কাঁধে।

উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান নর্ডিক দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আপনাদের সহায়তা শুধুমাত্র অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য নয়, নাগরিক সমাজের জন্যও অত্যন্ত মূল্যবান। সরকারে যোগদানের আগে যখন আমি একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালনা করতাম, তখনও আপনাদের সমর্থন পেয়েছি।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কিমো লাহদেভির্তা, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হোকন আরল্ড গুলব্রান্ডসেন এবং সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন খাতের নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন, যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও পরিবেশ সংরক্ষণকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র গণতন ত র ন শ চ ত কর উপদ ষ ট প রসঙ গ র জন য র জওয সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক জুয়ার ভুলে কট্টরপন্থীরা কি জার্মানিতে ক্ষমতায় আসবে

জার্মান রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো দেশটিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই অনিশ্চয়তা শুধু ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে নয়। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। আর উগ্র ডানপন্থী দল ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি’(এএফডি) এই পরিস্থিতিতে উল্লসিত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জার্মান রাজনীতিতে উগ্র ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ তৈরি হয়েছিল, তা এখন গভীর সংকটে পড়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হয়তো গণতান্ত্রিক অস্থিরতার এক নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আর এই পুরো পরিস্থিতির জন্য দায়ী মূলত একটি রাজনৈতিক ভুল। এই ভুল করেছেন বিরোধী মধ্য ডানপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) দলের প্রধান নেতা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস।

ইমিগ্রেশন বা অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মের্ৎস। ঘটনাটি শুরু হয় যখন এক আফগান আশ্রয়প্রার্থী ছুরিকাঘাতে এক শিশুসহ দুইজনকে হত্যা করেন। এ ঘটনার পর মের্ৎস জার্মানির সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি করা, ফেডারেল পুলিশের ক্ষমতা বাড়ানো এবং অবৈধ অভিবাসীদের দ্রুত বহিষ্কার করার প্রস্তাব দেন।

জরিপ বলছে, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের পক্ষে শুধু সিডিইউয়ের সমর্থকেরাই নন, বরং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (এসপিডি), গ্রিন পার্টি ও লিবারেল দলের অনেক ভোটারও রয়েছেন। ডিসেম্বরে ক্রিসমাস মার্কেটে গাড়ি চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা এবং শত শত মানুষকে আহত করার মতো ভয়াবহ সাম্প্রতিক হামলার ঘটনা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। মের্ৎস মনে করেছিলেন, এই ইস্যু তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় শক্তিশালী ভিত্তি এনে দেবে।

কিন্তু মের্ৎসের এই পদক্ষেপ প্রত্যাশার চেয়ে ভিন্ন ফল বয়ে এনেছে।

কিন্তু তারপর, হয়তো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে, মের্ৎস সিদ্ধান্ত নিলেন বুন্ডেস্ট্যাগে (জার্মান পার্লামেন্ট) দুটি প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। তিনি দাবি করলেন যে তিনি সরাসরি এএফডির সমর্থন চাইবেন না। তবে যদি তাদের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাও প্রত্যাখ্যান করবেন না। একই সঙ্গে, তিনি তাঁর খসড়া প্রস্তাবগুলোয় এফডির বিরুদ্ধে তীব্র ভাষা ব্যবহার করলেন যাতে প্রস্তাবগুলো এএফডি গ্রহণ করতে না পারে। মের্ৎসের মূল লক্ষ্য ছিল, তাঁর অভিবাসনসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো সমর্থন করতে এসপিডি ও গ্রিন পার্টির ওপর চাপ সৃষ্টি করা।

কিন্তু এই রাজনৈতিক চাল ব্যর্থ হলো।

এএফডি নেতৃত্ব খুব দ্রুত বুঝতে পারল যে মের্ৎস এমন এক সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন, যা দিয়ে তারা রাজনৈতিক কেন্দ্রকে বিভক্ত করতে পারে। তারা সিডিইউয়ের পাশে দাঁড়িয়ে গেল। তাদের ভোটের সাহায্যে গত বুধবার মের্ৎসের প্রথম প্রস্তাব অল্প ভোটের ব্যবধানে বুন্ডেস্ট্যাগে পাস হয়ে গেল।

এরপরই দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। মাত্র ৪৮ ঘণ্টা পর দ্বিতীয় প্রস্তাবটি ব্যর্থ হয়ে গেল। সিডিইউয়ের ভেতর থেকেই একদল সংসদ সদস্য বিদ্রোহ করলেন। আর এতে হস্তক্ষেপ করলেন সাবেক চ্যান্সেলর ও সিডিইউয়ের প্রভাবশালী নেতা আঙ্গেলা ম্যার্কেল।

যদি মূলধারার দলগুলোর জোট গঠনের আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে জার্মানির সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। হয়তো আসবে সংখ্যালঘু রক্ষণশীল সরকার, যাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে উগ্র ডানপন্থী এএফডির সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে হবে।

পরিস্থিতি আরও জটিল হলো যখন এএফডির সহনেত্রী অ্যালিস ভাইডেল মের্ৎসকে প্রকাশ্যে অপমান করলেন। তিনি তাঁকে দুর্বল নেতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে বললেন, তাঁর নিজের দলই তাঁকে একদম নিচে নামিয়ে দিয়েছে।

এই পুরো পর্ব মের্ৎসের জন্য চূড়ান্ত বিপর্যয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি এএফডিকে আরও সাহসী করে তুলেছেন। নষ্ট করেছেন নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, তিনি জার্মানির যুদ্ধপরবর্তী রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি বড় ‘ট্যাবু’ভেঙে ফেলেছেন। সেই ট্যাবু হলো, উগ্র ডানপন্থীদের সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করা।

এখন মের্ৎস যদি বলেন যে তিনি আসলে এমন কিছু করতে চাননি, তাহলে সে হবে খোড়া অজুহাত। জার্মান গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে এএফডি চরমপন্থী সংগঠন হিসেবে সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। অথচ তাদের ভোটের ওপর নির্ভর করে অভিবাসনসংক্রান্ত প্রস্তাব পাস করানোর চেষ্টা করে মের্ৎস তাঁর নীতিগত অবস্থান হারিয়েছেন। গত নভেম্বরেও তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে সিডিইউ কখনো এএফডির সঙ্গে যাবে না। এমনকি ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতা’ পাওয়ার জন্যও নয়।

কিন্তু বাস্তবে মের্ৎস ঠিক সেটাই করলেন। আর এখন এই ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে তাঁকে।

মের্ৎসের পরিকল্পনা ছিল সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট (এসপিডি) ও গ্রিন পার্টির ওপর চাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ উল্টো ফল দিয়েছে। তিনি এসপিডি নেতা ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ এবং গ্রিন পার্টির নেতা রবার্ট হাবেকের হাতে এমন একটি ইস্যু তুলে দিয়েছেন যা তাঁদের দুর্বল নির্বাচনী প্রচারণাকে পুনর্জীবিত করতে পারে। এখন তাঁরা তাঁদের সমর্থকদের সামনে বলার সুযোগ পাচ্ছেন, সিডিইউ যে উগ্র ডানপন্থাকে স্বাভাবিক করছে, আর তারা এর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।

কিন্তু এই জায়গায় জার্মানি এল কীভাবে?

ফ্রিডরিখ মের্ৎস আদতে পুরোনো ধারার ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট। তিনি মুক্তবাজারের পক্ষে, ন্যাটোর সমর্থক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি অনুগত। তিনি আদতে জনতুষ্টিবাদী নন। তিনি জাতীয়তাবাদী বা বর্ণবাদীও নন। তা সত্ত্বেও, কেন্দ্র-বাম প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টায় এবং এএফডিকে কৌশলে পরাস্ত করতে গিয়ে তিনি নিজের নেতৃত্বের যোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকেই প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছেন।

এখানে একটা বিষয় বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ; সিডিইউ ও তাদের সহযোগী দল, ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) নিছক পশ্চিমা গণতন্ত্রের সাধারণ মধ্য ডানপন্থী বা রক্ষণশীল দল নয়। জার্মানির ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (সিডিইউ) গঠিত হয়েছিল তাদের ধারার আগের ব্যর্থ দলগুলোর ধ্বংসাবশেষ থেকে। এসব দল ছিল মূলত মধ্যবিত্ত জাতীয়তাবাদী, যারা নাৎসিদের শক্তিকে গুরুত্ব দেয়নি, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে নাৎসিদের সমর্থনও করেছিল। সিডিইউয়ের প্রথম নেতা ও ফেডারেল জার্মানির (পশ্চিম জার্মানি) প্রথম দীর্ঘমেয়াদি চ্যান্সেলর কনরাড আডেনাউয়ার ছিলেন গভীরভাবে রক্ষণশীল। কিন্তু একই সঙ্গে কট্টর নাৎসিবিরোধীও। তিনি জার্মান ডানপন্থাকে গণতন্ত্রবিরোধী প্রবণতা থেকে সরিয়ে এনেছিলেন।

আডেনাউয়ার তাঁর দলে অনেক সাবেক নাৎসিকেও জায়গা দিয়েছিলেন তাঁদের গণতন্ত্রের পথে আনা যাবে ভেবে। কিন্তু কখনোই তিনি পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে কোনো গণতন্ত্রবিরোধী দলের ওপর নির্ভর করার কথা ভাবতেন না। এ কারণে সিডিইউ জার্মান গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতার জন্য এক অবিচ্ছেদ্য স্তম্ভ।

সিডিইউ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মতাদর্শের রক্ষণশীলদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় হয়ে থেকেছে। তবে একটা জায়গায় তারা সব সময় কঠোর অবস্থান নিয়েছে। যাঁরা হলোকাস্টকে অস্বীকার করেন বা তাঁর গুরুত্ব কমিয়ে দেখান, তাঁদের জায়গা দলে কখনো ছিল না।

এখন যদি সিডিইউ উগ্র ডানপন্থী শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, অথবা এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে সিডিইউ আর জার্মান ডানপন্থীদের পুরোপুরি প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না, তাহলে তা হবে এক ভয়ংকর সংকেত। এটি শুধু সিডিইউয়ের জন্য নয়, বরং গোটা জার্মান গণতন্ত্রের জন্য এক অশনি সংকেত হয়ে উঠতে পারে।

প্রায় প্রতিদিনই উগ্র ডানপন্থী এএফডি জার্মানির ‘স্মরণ সংস্কৃতি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এই সংস্কৃতি আসলে একধরনের জাতীয় ঐকমত্য। এতে নাৎসি অতীতের অপরাধের মুখোমুখি হওয়াকে জার্মান পরিচয়ের একটি মৌলিক অংশ হিসেবে ধরা হয়। উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, এখন এএফডি এই প্রচেষ্টায় এক শক্তিশালী সহযোগী খুঁজে পেয়েছে।

গত ২৫ জানুয়ারি এএফডির এক নির্বাচনী প্রচার সভায় ভিডিও বার্তায় ইলন মাস্ক তাদের সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, অতীতের অপরাধবোধ নিয়ে ‘বেশি চিন্তা’ করার কোনো মানে নেই। তিনি যখন এ কথা বলছিলেন, তার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই ছিল ঐতিহাসিক অউশভিৎস মুক্তির ৮০তম বার্ষিকী। মাস্কের এই ‘অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার’ আহ্বান এএফডির কর্মীরা উল্লাসের সঙ্গে গ্রহণ করেন।

তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মের্ৎস ও তাঁর দলের মূলধারার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে এ ধরনের ইতিহাসবিকৃতি বা নাৎসি অপরাধকে হালকা করে দেখার কোনো সম্পর্ক নেই। শুক্রবার পার্লামেন্টের বিতর্কে এসপিডির এক নেতা তাঁকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি নরকের দরজা খুলে দিয়েছেন।’ তবে এটি স্পষ্ট যে মের্ৎসের আসল উদ্দেশ্য কখনোই উগ্র ডানপন্থীদের সরকারে নিয়ে আসা ছিল না। তিনি বরং চেয়েছিলেন, এএফডির প্রভাব কমিয়ে তাদের রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করে দিতে।

তাহলে প্রশ্ন হলো, মের্ৎস কেন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেন যে তাঁই সেই চরমপন্থী শক্তির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যাদের তিনি দুর্বল করতে চেয়েছিলেন?

জার্মানির মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো যে একসঙ্গে কাজ করতে পারছে না,তা গত সপ্তাহে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে রস্পরিক দোষারোপের মাত্রা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে নির্বাচনের পর কোনো সমঝোতায় আসা কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ জার্মানির সংসদীয় ব্যবস্থায় কার্যকর সরকার গঠনের জন্য বিভিন্ন দলের মধ্যে জোটবদ্ধ হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আর যদি মূলধারার দলগুলোর মধ্যে জোট গঠনের আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে জার্মানির সামনে হয়তো আরও খারাপ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। হয়তো আসবে সংখ্যালঘু রক্ষণশীল সরকার, যাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে উগ্র ডানপন্থী এএফডির সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে হবে।

আর যদি তা–ই হয়, তাহলে তা শুধু জার্মানির জন্য নয়, বরং পুরো ইউরোপের জন্য এক অস্থির রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করবে।

ইয়খ লাও ডেই জাইট পত্রিকার আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি

গার্ডিয়ান-এর ইংরেজি থেকে অনুবাদ জাভেদ হুসেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবের বাড়ি ভাঙার নিন্দা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের
  • ৩২ নম্বরে ভাঙচুর কারা করেছে, আমাদের জানা নেই: হাফিজ উদ্দিন আহমদ
  • ৩২ নম্বরে ভাঙচুরে কারা জড়িত, আমাদের কাছে তথ্য নেই: হাফিজ উদ্দিন আহমদ
  • ধানমন্ডির ভবন ভাঙার ঘটনায় ভারতের ইন্ধন থাকতে পারে: মেজর হাফিজ
  • রাজনৈতিক জুয়ার ভুলে কট্টরপন্থীরা কি জার্মানিতে ক্ষমতায় আসবে
  • মিয়ানমারের গণতন্ত্র রক্ষা অথবা স্বৈরাচারের কাছে আত্মসমর্পণ করুন
  • স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের মানবাধিকারবিষয়ক রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
  • সু চির বাড়ি তৃতীয় দফায় নিলামে বিক্রি করতে ব্যর্থ মিয়ানমারের জান্তা
  • ঢাবিতে মানবাধিকার বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত