ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে এক দশকের বেশি সময় আগে নির্যাতনে শাহনূর আলমের মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে র্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে করা মামলা চলার পথ খুলেছে। এ ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দায়রা জজ আদালতের দেওয়া আদেশ বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
নিহতের ভাইয়ের করা এক আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো.
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দায়রা জজ আদালতের ওই আদেশের বিরুদ্ধে নিহত শাহনূর আলমের ভাই মেহেদী হাসান ২০১৪ সালে হাইকোর্টে আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ১৫ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়। আদালতে আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আশরাফ রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল করিম।
রায়ের পর আশরাফ রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৪ সালের ৪ জুন এক আদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদীর দাখিল করা নালিশি অভিযোগ এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করে সিআইডিকে মামলা তদন্ত করতে আদেশ দেন। তবে অভিযোগ ওঠা এক র্যাব সদস্যের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আদেশ সংশোধন করে ২০১৪ সালের ৮ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দায়রা জজ আদালত আদেশ দেন। এতে তদন্তের পর আইনি ব্যবস্থা নিতে নবীনগর থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এই আদেশের ফলে নালিশি অভিযোগ এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করে মামলা তদন্ত করতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া আদেশের কার্যক্রম থমকে যায়। দায়রা জজ আদালতের আদেশ বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর ফলে নির্যাতনে শাহনূর আলমের মৃত্যুর অভিযোগ এজাহার হিসেবে লিপিবদ্ধ করতে হবে এবং ৯ র্যাব সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা চলবে। হাইকোর্টের রায়ের ফলে ঘটনার ১১ বছর পর মামলাটি চলার পথ খুলেছে।’
ঘটনার পূর্বাপর
র্যাব-১৪-এর তৎকালীন কোম্পানি কমান্ডারকে প্রধান আসামি করে চারজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরও সাত র্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নালিশি দরখাস্ত দেন নিহতের ভাই মেহেদী হাসান।
মেহেদী হাসানের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৪ সালের গত ২৯ এপ্রিল সাদা পোশাক পরিহিত তিন ব্যক্তি বাদীর বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর অজ্ঞাতনামা আরও ছয় ব্যক্তি সাদা পোশাকে ঘরে প্রবেশ করে। নয়জনই ব্যাগ থেকে র্যাবের পোশাক ও অস্ত্র বের করে পোশাক পড়ে শাহনুর আলমকে অস্ত্রের মুখে গ্রেপ্তার করে তাঁর চোখ ও মুখ বেঁধে নিয়ে যায়। শাহনুরকে ভৈরব র্যাব ক্যাম্প–১৪ এর অফিসে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পের তৎকালীন অধিনায়ক মেজর এ জেড এম শাকিব সিদ্দিক পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। একপর্যায়ে শাহনূর অচেতন হয়ে পড়েন। পরদিন তাঁকে নবীনগর থানায় আনা হয়। আবু তাহেরকে (৩নং আসামি) থানায় ডেকে এনে তাঁকে এজহারকারী করে শাহনূরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। এ মামলায় শাহনূরকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২০১৪ সালের ১ মে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ২০১৪ সালের ৪ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ২০১৪ সালের ৬ মে তিনি মারা যান।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, মেহেদী হাসানের দাখিল করা নালিশি আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৪ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নালিশি দরখাস্তটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড (লিপিবদ্ধ) করার জন্য নবীনগর থাকার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হলো। একই সঙ্গে মামলার তদন্তভার সিআইডির ওপর অর্পণ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এই আদেশের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া দায়রা জজ আদালতে আবেদন করেন অভিযোগ ওঠা একজন র্যাব সদস্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দেওয়া আদেশ সংশোধন করে ২০১৪ সালের ৮ জুন আদেশ দেন দায়রা আদালত। এতে অভিযোগ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে নবীনগর থানার ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া দায়রা জজ আদালতের আদেশ বাতিল চেয়ে ২০১৪ সালে হাইকোর্টে আবেদন করেন নিহতের ভাই মেহেদী হাসান। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ১৫ জুলাই হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ সংশোধন করে দায়রা জজ আদালতের ২০১৪ সালের ৮ জুন দেওয়া আদেশ কেন বাতিল হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুল যথাযথ ঘোষণা করে আজ রায় দেওয়া হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড ২০১৪ স ল র য ব সদস য তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
গুলশানে বাড়ি লুট: জাতীয়তাবাদী চালক দল কীভাবে এল, নেতা কারা
‘অবৈধ অস্ত্র ও ছাত্র-জনতার হত্যাকারীরা’ লুকিয়ে আছে—এমন কথা রটিয়ে ‘মব’ সৃষ্টি করে ঢাকার গুলশানে একটি বাড়ি লুট করতে যায় একদল লোক। ৪ মার্চ মধ্যরাতে এ ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন জুয়েল খন্দকার নামের এক ব্যক্তি। যিনি নিজেকে ‘জাতীয়তাবাদী চালক দল’-এর সাধারণ সম্পাদক বলে পরিচয় দেন।
এ ঘটনার পর আলোচনায় আসে জাতীয়তাবাদী চালক দল। এটা কী ধরনের সংগঠন, কারা বানিয়েছে এটা? এর সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির কোনো যোগসূত্র আছে কি না। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ এই সংগঠনকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নন। কেউ বলেন, এগুলো সব ‘দোকান’; কেউবা বলেন, ‘ভুঁইফোড়’ সংগঠন। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে ‘ধান্দা’ করার জন্য সামনে এমন সংগঠন সামনে আরও বাড়তে পারে বলেও নেতাদের অনেকে আশঙ্কা।
কিন্তু জাতীয়তাবাদী চালক দলের সভাপতি জসিম উদ্দিন কবিরের দাবি ভিন্ন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের এই সংগঠনের আবির্ভাব ২০১৪ সালে। এরপর বিভিন্ন সময়ে প্রেস ক্লাবের ভেতরে ও সামনের সড়কে তাঁরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। সেসব কর্মসূচিতে বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও অতিথি হয়ে গিয়েছিলেন।
জসিম উদ্দিন জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জে। তিনি আগে মোটরচালক দলের সঙ্গে ছিলেন। সেখানে জুয়েল খন্দকারও ছিলেন। পরে ২০১৪ সালে এসে জসিম নিজে ‘জাতীয়তাবাদী চালক দল’ নামে নতুন সংগঠন তৈরি করেন। তিনি ২০২২ সালে জুয়েল খন্দকারকে এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক করেন। তাঁদের ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটি আছে বলেও দাবি করেন।