যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা থেকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পরিবারের নাম এবং স্মৃতিফলক ভেঙে দিয়েছেন যবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের নামফলক, প্রধান ফটকে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, শেখ রাসেল জিমনেশিয়ামের নাম ফলক ভেঙে দেন তারা।

এর আগে, বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের নাম রঙ দিয়ে মুছে দেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সামিউল আজিম বলেন, “ফাসিস্টের সব স্মৃতি এভাবেই সবসময় ভেঙে দেওয়া হয়। এ ধ্বংসস্তুপ যেন সেখানেই রাখা হয়, যাতে পরবর্তীতে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, সে যেন বুঝতে পারে ফ্যাসিবাদের শেষ পরিণতি কি হয়।”

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার মুখ্য সংগঠক আল মামুন লিখন বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধেকের বেশি ভবন স্বৈরাচার শেখ পরিবারের নামে ছিল। জুলাই বিপ্লবের পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ নামগুলো পরিবর্তনের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আমরা শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলার সঙ্গে শেখ পরিবারের নামে থাকা ভবনগুলোর নামফলক উঠিয়ে ফেলেছি।”

তিনি বলেন, “প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, এ ভবনগুলোর নাম খুব দ্রুতই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই আন্দোলনের নায়কদের নামানুসারে রাখা হোক।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার যুগ্ম-আহ্বায়ক এস এম দোলেনুর করিম বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি সিস্টেমের দোহাই দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিবর্তনগুলো হওয়ার দরকার ছিল, তা এখনও হয়নি। যেখানে ছাত্র-জনতার চাহিদা, সেখানে এ রকম কাজগুলো দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঝুলিয়ে না রেখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।”

তিনি বলেন, “এ কাজগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনেক আগেই করার দরকার ছিল। যেহেতু তারা পারেনি, তাই আমরাই শৃঙ্খলার সঙ্গে প্রতিটা ভবনের নাম ফলক উঠিয়ে দিলাম। এটা ভবিষ্যতে কোন সরকার যেন একনায়ক শাসন ও শোষণ না করতে পারে, তারই একটা হুঁশিয়ারি বার্তা।”

ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র ন ম

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হল ও ১ স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ বিক্ষুব্ধদের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হল ও একটি স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার রাতে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াললিখন মুছে দিতে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘বিজয়-২৪ হল’, নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের পরিবর্তে ‘শহীদ আলী রায়হান হল’, শেখ হাসিনা হলের পরিবর্তে ‘ফাতিমা আল-ফাহরিয়া হল’ ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের পরিবর্তে ‘নবাব ফয়জুন নেসা চৌধুরানী’ নাম দিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দেন। এ ছাড়া শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নাম পরিবর্তন করে ‘রিয়া গোপ মডেল স্কুল’ নাম দেন তাঁরা।

এর আগে রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় তাঁরা ‘স্বৈরাচারের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘মুজিববাদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আগুন জ্বালো একসাথে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

সরেজমিন দেখা যায়, রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে যান। পরে তাঁরা হলটির নামফলক, উদ্বোধনী ফলকসহ শেখ মুজিবের চিহ্ন–সংবলিত স্থাপনাগুলো রড, হাতুড়ি ও কোদাল দিয়ে ভেঙে দেন। এ সময় তাঁরা হলটির নতুন নাম ‘বিজয় ২৪’ ঘোষণা করে রং দিয়ে দেয়ালে দেয়ালে নাম লিখে দেন। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে নির্মাণাধীন এ এইচ এম কামারুজ্জামান, শেখ হাসিনা হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নামফলক ভেঙে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

এদিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের নামফলক পরিবর্তনের সময় হলের ভেতর থেকে ছাত্রীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দিকে স্যান্ডেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এ সময় বাইরে থেকেও কয়েকজন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী হলে অবস্থিত নারী শিক্ষার্থীদের দিকে ঢিল ছুড়ে মারেন। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে ছাত্রীরা হল ফটকে টাঙানো নতুন নাম ফলকের ব্যানার ছিঁড়ে পুড়িয়ে ফেলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

হলের ভেতর থেকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের হলের নাম পরিবর্তন আমরা করব। বাইরে থেকে অন্য শিক্ষার্থীরা এসে কেন সেটি করবে? যেহেতু আগে থেকে ব্যানার নিয়ে আসা হয়েছে, এর মানে বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত। এ বিষয়ে আমাদের আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, সারা দেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হলের নাম পরিবর্তন করেছেন। তবে এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে হলের নাম পরিবর্তন নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই। যদি নাম পরিবর্তন করা হয়, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও অংশীজনদের আলোচনার মাধ্যমেই করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নামফলক খুলে ফেলা হয়েছে
  • বুয়েটের ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নতুন নাম ‘স্বাধীনতা হল’
  • ‘জুলাই অভ্যুত্থানকে সাহিত্য–সংস্কৃতিতে একটা আন্দোলন হিসেবে হাজির করা যেতে পারে’
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হল ও ১ স্কুলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ বিক্ষুব্ধদের
  • যশোরে শেখ মুজিবের সব ভাস্কর্য, শেখ হাসিনার নামফলক ভাঙচুর 
  •  ৪ আবাসিক হলের নতুন নাম দিলেন শিক্ষার্থীরা
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন আবাসিক হলের নামফলক ভাঙচুর
  • ‘জেলা প্রশাসক’ ও ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার’ পদবি পরিবর্তনের সুপারিশ
  • কুবিতে বিপ্লব পরবর্তী শিক্ষাঙ্গন ও গণমাধ্যম নিয়ে আলোচনা