গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে চাষাঢ়ায় ওসমান পরিবারের আলোচিত বায়তুল আমান ভবন
Published: 6th, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের শহরের চাষাঢ়ায় অবস্থিত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের দাদার বাড়ি বায়তুল আমান ভবন ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিএনপির নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনতা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ছয় টায় একটি বুলডোজার বায়তুল আমান ভবনের পূর্বপাশে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে রাত সাতটায় প্রথমে কয়েকজন যুবক ভবনের ভেতরে গিয়ে বারান্দায় উঠে ঘুরাঘুরি করতে থাকে। পরে বুলডোজার দিয়ে প্রথমে ভবনের পূর্বপাশ দিয়ে ভাঙ্গতে শুরু করে। মুল ফটক ভেঙ্গে বুলডোজার ভিতরে ঢুকে ভবন ভাংচুর করে। এসময় আগে থেকেই দ্বিতলার বারান্ডায় থাকা যুবকরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় আওয়ামীলীগ, শেখ হাসিনা ও শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দেন তারা। ভবনের চারিপাশে ও আশপাশের ভবন গুলোতে শত শত উৎসুক লোকজন ভাংচুর আগুনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করে।
এদিকে বাড়িটির ভাঙ্গার আগে মহানগর বিএনপির আহবায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপুর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক বিএনপির নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে বাড়িটির দিকে যায়। মিছিলে যোগ দেয় সাধারণ জনতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে 'বায়তুল আমান' বাড়িটি অবৈধ দখলে ছিল এবং জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিল। এছাড়া, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জায়গাটি দখলে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শত শত মানুষ চাষাড়া এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে। তারা 'দখলদারদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দাও' স্লোগান দিতে দিতে বাড়িটির সামনে অবস্থান নেয়। এরপর, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তারা ভেকু নিয়ে এসে বাড়িটি ভাঙতে শুরু করে।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তবে তারা সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি জানান, "আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
বাড়িটির মালিক শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব ওসমান আলী। এই বাড়িতে আওয়ামীলীগের জন্ম হয়েছে বলে ওসমান পরিবার দাবী করে আসছিল। এরআগে ২০০১ সালে বাড়িটি ভাঙ্গার উদ্যোগ নিয়েছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তখন ওসমান পরিবারের পুত্রবধূ চিত্র নায়িকা সারাহ বেগম কবরী বাধা হয়ে দাঁড়ান। বাড়িটিতে শামীম ওসমানের সৎ চাচা ননী ও মনি সারোয়ার বসবাস করতেন।
.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ শ ম ম ওসম ন র ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের সাবেক নেতা জাকির কারামুক্ত, গাড়িবহর নিয়ে অনুসারীদের বরণ
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান সাজার মেয়াদ শেষে কারামুক্ত হয়েছেন। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে কারামুক্ত হন তিনি।
এদিকে জাকির খানকে বরণ করে নিতে তাঁর অনুসারীরা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। এতে ওই এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
জেলা কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক ফোরকান ওয়াহিদ জানান, ১৯৯৪ সালের সন্ত্রাস দমন আইনের একটি মামলার রায়ে জাকির খানের ১৪ বছরের সাজা হয়েছিল। আপিল করার পর উচ্চ আদালতে সাজা কমিয়ে আট বছর করা হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদনে তাঁর সাজা কমে পাঁচ বছর করা হয়। পাঁচ বছরের সাজার মেয়াদ শেষে আজ রোববার সকালে জাকির খানকে কারামুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জাকির খানের মুক্তির খবরে আজ সকাল থেকে তাঁর অনুসারীরা মোটরসাইকলে ও প্রাইভেট কারের বহর নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে অবস্থান নেন। নেতা-কর্মীরা ট্রাকে সাউন্ড বক্স লাগিয়ে উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে মোটরসাইকেলের বহর বের করেন। জেলা কারাগারের সামনে নেতা-কর্মীদের ভিড় হয়। এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারাগার থেকে বের হন জাকির খান। এ সময় তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পরে তিনি হুডখোলা গাড়িতে চড়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে দেওভোগের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জাকির খানের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম খন্দকার হত্যাসহ ৪টি হত্যাসহ মোট ৩৩টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় বিভিন্ন সময় কারাগারে ছিলেন তিনি। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জাকির খান আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। শহরের দেওভোগ এলাকায় জাকির খান তাঁর বিশাল বাহিনী গড়ে তোলেন। দেওভোগ এলাকার সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে হত্যা করে শহরে ত্রাস সৃষ্টি করেন। ২০০৩ সালে ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে জাকির খান দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পাড়ি জমান। তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে পালিয়ে থাকার পর গোপনে দেশে ফিরে এসে রাজধানীর বসন্ধুরা আবাসিক এলাকায় পরিচয় গোপন করে সপরিবার বসবাস শুরু করেন। ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি পিস্তলসহ জাকির খানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর পর থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে ছিলেন তিনি। সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি ব্যবসায়ী নেতা শাব্বির আলম হত্যা মামলার রায়ে জাকির খানসহ সব আসামি খালাস পান।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, সাজা শেষে জাকির খান কারামুক্ত হয়েছেন। তিনি ২৬টি মামলায় খালাস পেয়েছেন। তিনটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, সেই মামলাগুলোতে তিনি জামিনে রয়েছেন।