আরেকবার কী হবে? ফরচুন বরিশালকে ঘিরে এখন এটাই প্রশ্ন। গত আসরে তারা শিরোপা জিতেছিল, এবার সামনে শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ জিততে ফাইনালের আগের দিন বরিশাল আজ পুরোদমেই অনুশীলন করেছে মিরপুরে একাডেমি মাঠে।

গত বছর অনেক উত্থান–পতনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল দলটা। এবার শুরু থেকেই ফেবারিট। লিগ পর্বে ১২ ম্যাচের আটটিতে জিতে পয়েন্ট টেবিলে সবার ওপরে থেকে কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নেয় তারা।

এরপর প্রথম কোয়ালিফায়ারে চিটাগং কিংসকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বরিশাল। চিটাগং কিংসের বিপক্ষে আজ শিরোপা ধরে রাখার শেষ পরীক্ষা বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের; কিন্তু প্রথম শিরোপা জয়ের যে রোমাঞ্চ, সেটা কি থাকবে এবার শিরোপা জিতলে?

এমন এক প্রশ্নের উত্তরে আজ ফাইনাল পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ফরচুন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘ট্রফি এমন একটা জিনিস, আমি নিশ্চিত যাকেই জিজ্ঞেস করেন না কেন, যারা পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তারাও চাইবে ছয়বার হতে। আমরাও অবশ্যই চাইব হতে।’

ফাইনাল বলে আলাদা কিছু করার দরকার নেই। আমাদের শান্ত থাকতে হবে। ১৩–১৪ ম্যাচে যা করেছি, আমার মনে হয় না আলাদা কিছু করার দরকার আছে।তামিম ইকবাল

আশা থাকলেও মাঠের ক্রিকেটের বাস্তবতা যে ভিন্ন, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন তামিম। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ চিটাগং কিংস। প্রথম কোয়ালিফায়ারে বরিশালের কাছে হারলেও পরেরটিতে শেষ বলের নাটকীয়তায় খুলনা টাইগার্সকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে দলটা। তামিম চান, ফাইনালকে শুধুই আরেকটি ক্রিকেট ম্যাচ ভেবে খেলতে; কিন্তু সঙ্গে এটাও বলেছেন, ‘আমরা এমন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলছি, যারা ভালো ক্রিকেট খেলেছে।’

খেলাটা যখন ক্রিকেট, কাগজ–কলমের হিসাবের চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়ায় মাঠের পারফরম্যান্স। একটা নির্দিষ্ট দিনে ব্যাটে–বলে সাফল্য–ব্যর্থতার হারই ঠিক করে কে জিতবে ম্যাচটা। তামিম সেই বাস্তবতাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আপনার দলে দুনিয়ার সেরা খেলোয়াড় থাকতে পারে; কিন্তু নির্দিষ্ট দিনে কে সামর্থ্যটা ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে, সেটাই আসল।’

আরও পড়ুনবরিশালের তামিম বললেন, চট্টগ্রামের মানুষ চিটাগংকেই সমর্থন করুক২ ঘণ্টা আগে

কাজেই ফাইনাল নিয়ে বাড়তি ভাবনা না ভেবে তামিমের দর্শন—মাথা ঠান্ডা রেখে খেলা। ‘ফাইনাল বলে আলাদা কিছু করার দরকার নেই। আমাদের শান্ত থাকতে হবে। ১৩–১৪ ম্যাচে যা করেছি, আমার মনে হয় না আলাদা কিছু করার দরকার আছে। ফাইনালটাকে আরেকটা ক্রিকেট ম্যাচ হিসেবেই নেওয়া উচিত’—বলেছেন বরিশাল অধিনায়ক।  

ফাইনালে যে দল বেশি শান্ত থাকবে, তারাই জিতবে বলে মনে করেন তামিম.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আহ্বান

ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে র‍্যালি করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কর্মসূচি।

র‍্যালি–পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অন্য যেকোনো সভার চেয়ে এই প্রতিবাদ মিছিল অস্বাভাবিক বড় হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও এতে অংশ নিয়েছেন। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।’

ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্ব মুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। মুসলিম বিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না বলে অভিমত দেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতার ছবি দেখলে সহ্য করা যায় না বলেও উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় যেমন জিয়াউর রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতেন এবং ইসরায়েল এমন সহিংসতা চালানোর সাহস পেত না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না।’

গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলছে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গণহত্যা বন্ধের জোর দাবি করছি।’

সালাহ উদ্দিন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ইসরায়েলকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের সঙ্গে ইসরায়েলের কাছ থেকে আড়িপাতার যন্ত্র কিনেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে জিয়াউর রহমান ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই থেকেই বিএনপি ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। আজ গাজা যেন অবরুদ্ধ খাঁচা, যেখানে শিশু ও নারীদের ওপর বর্বরতা চালানো হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার।’

ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তারা ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করছে বলেই মনে করব। তাদের প্রতিহত করতে হবে, তবে কোনোভাবেই মারপিট নয়—পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চলছে। নারী-পুরুষ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এটা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ। দেশের সাধারণ মানুষ দল–মতনির্বিশেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে, কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের থেকে তেমন কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘও নিষ্ক্রিয়—একটি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে গেছে।’

র‍্যালি–পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু। সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

বিএনপির এই কর্মসূচি বিকেল চারটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা আড়াইটা থেকেই নয়াপল্টনে নেতা–কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনের পতাকা ও কালো ব্যানার নিয়ে নেতা–কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন নয়াপল্টন এলাকা।

র‍্যালিটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে র‍্যালি শুরু হয়। সারা পথজুড়েই ছিল ব্যাপক জনসমাগম ও প্রতিবাদী স্লোগান। বিএনপির নেতা–কর্মীরা ‘ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করো, দুনিয়ার মুসলিম এক হও লড়াই করো’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

বিএনপির নেতারা জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে—গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জনগণ ফিলিস্তিনের পাশে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ