করব্যবস্থার জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা: ঢাকা চেম্বার সভাপতি
Published: 6th, February 2025 GMT
করব্যবস্থার জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে উদ্যোক্তাদের ক্রমেই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে করব্যবস্থার জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে করের নিয়মিত পরিবর্তন, অগ্রিম আয়কর ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কের বোঝা এবং আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশের বেসরকারি খাতের ওপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপের সৃষ্টি হচ্ছে।
দেশে সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও যানজটের অবনতির কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। তিনি বলেন, ঋণপত্র (এলসি) খুলতে জটিলতা, এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তিতে পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতা এবং উচ্চ সুদ স্থানীয় শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ অবস্থায় দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ায় জোর দেন তিনি।
রাজধানীর তৃণমূল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সমস্যা চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বারের আয়োজিত ‘আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক, যানজট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ শীর্ষক মত বিনিময় সভায় এ কথা বলেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ। ডিসিসিআইর গুলশান সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এ সভায় গুলশান, মহাখালী, বনানী ও বাড্ডা এলাকার ১৪টি বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের পাশাপাশি বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও অংশ নেন।
ঢাকা চেম্বারের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, মত বিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ) মো.
গুলশান ১ নম্বর ডিএনসিসি দক্ষিণ পাঁকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, শতভাগ মার্জিনের কারণে ব্যবসায়ীরা ভুগছেন। ঋণপত্র (এলসি) খোলা থেকে সমন্বয় হওয়া পর্যন্ত তিন মাস সময় লেগে যায়। দীর্ঘ সময়ের জন্য টাকা আটকে থাকায় মূলধনে টান পড়ে।
মহাখালী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফিরোজ আলম স্বপন জানান, ভ্যাটের হার বৃদ্ধি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের উচ্চ ফির কারণে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন।
আমিন হোসেন অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের পার্টনার মোহাম্মদ আল আমিন জানান, অগ্রিম আয়কর সমন্বয়ের দীর্ঘসূত্রতার জন্য ব্যবসায়ীরা আর্থিক দিক থেকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসার মূলধন থেকে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
হাসান হার্ডওয়্যারের স্বত্বাধিকারী মাহফিজুল হক বলেন, অসহনীয় যানজট, অটোরিকশার দৌরাত্ম্য এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ক্রেতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।
মেট্রোপলিটন শপিং প্লাজা মার্কেট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দোকানমালিক দুর্বৃত্তদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট থানায় সহযোগিতা চাওয়া হলে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোরালো ভূমিকার ওপর জোর দেন তিনি।
মওলা ট্রেডার্সের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ব্যাংকঋণের সুদের উচ্চ হার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, এলসি পেমেন্টে দীর্ঘসূত্রতা, ভ্যাট প্রদানে হয়রানি প্রভৃতি কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, ঋণপত্রের মার্জিন শতভাগ হবে কি না, এটি ব্যাংক ও ভোক্তার সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে। ঋণপত্রের মার্জিনের বিষয়টি সব পণ্যে এক নয়।
রাজস্ব আহরণে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে এনবিআরের প্রথম সচিব মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিবন্ধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে করজাল বিস্তারের লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে অটোমেটেড ও স্বচ্ছ রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) মো. তারেক মাহমুদ চাঁদাবাজি, হয়রানি ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণকে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তার আহ্বান জানান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী ও মো. সালেম সোলায়মান।
মত বিনিময় সভার পর ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে ডিসিসিআইয়ের সদস্যপদ প্রদান করা হয় বলে সংগঠনটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ র পর স থ ত ল ইসল ম ব যবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নথিপত্রহীনদের তাড়াতে অষ্টাদশ শতকের দুর্বোধ্য আইন ফেরাচ্ছেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রে নথিপত্রহীন বিপুলসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে তাড়াতে সদ্য শপথ নেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০০ বছর আগের যুদ্ধকালীন একটি দুর্বোধ্য আইন ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছেন। এ আইনের মাধ্যমে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিতাড়ন করতে আদালতে দ্বারস্থ হতে হবে না। একটি বোর্ড কর্তৃপক্ষ থাকবে। তারাই নথিপত্রহীনদের বিতাড়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবেন।
সোমবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, ওভাল অফিসে বসার পর থেকেই ট্রাম্প ৩ ফেব্রুয়ারি (স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার) ১৭৯৮ সালের এলিয়ান এনিমিজ অ্যাক্ট আইন বিষয়ে সামরিক বাহিনী ও অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। আইনটি সর্বশেষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে (১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত) বন্দিশালায় থাকা জাপান, জার্মানি ও ইতালীয় বংশোদ্ভূতদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছিল।
ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবে আইনি বাধার মুখে পড়বে। এর মাধ্যমে নথিপত্রহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ন্যায়সংগত প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো ব্যাহত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে নথিপত্রহীন হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে তাড়ানোর অঙ্গীকার করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ অবস্থায় গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের দিনেই বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে তিনি সই করেন। নথিপত্রহীনদের ধরতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিযান চালাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি গির্জা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এর আগে এসব স্থানে অভিযান চালাতে পারত না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আদালতের মাধ্যমে নথিপত্রহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরানোর প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ। এজন্য ট্রাম্প চান অতি পুরোনো সেই এলিয়ান এনিমিজ অ্যাক্ট নামের আইনটি ফিরিয়ে আনতে, যা দ্রুততর সময়ে নথিপত্রহীনদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করতে সক্ষম। এ ধরনের আইনের প্রয়োগ কেবল যুদ্ধকালেই দেখা যায়। আক্রমণের শিকার হলেই আইনটি প্রয়োগ করা হয়। রিপাবলিকানরা মনে করেন, নথিপত্রহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করছেন।
এরই মধ্যে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে মার্কিন সহযোগিতায় চলা বিশ্বব্যাপী অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এর ফলে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।