আট মাসের বেতন দিয়ে সিআইএর সব কর্মীকে সরাতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন
Published: 6th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) সব কর্মীকে আট মাসের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে পদত্যাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মী কমিয়ে আনা এবং নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিআইএর মুখপাত্র এবং এ প্রস্তাব সম্পর্কে অবগত দুটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তবে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগের অধিকাংশ কর্মীর ক্ষেত্রে পদত্যাগের প্রস্তাব কার্যকর হয়নি। জাতীয় নিরাপত্তার কাজে তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বিবেচনা করে এমনটি করা হয়নি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিআইএর পরিচালক জন র্যাটক্লিফ ব্যক্তিগতভাবে এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। জন র্যাটক্লিফ এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং ট্রাম্পের প্রথম আমলে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের (ডিএনআই) দায়িত্ব পালন করেছেন। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর গত সপ্তাহে সিআইএর পরিচালক হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত করেছে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট।
র্যাটক্লিফের এক সহযোগী বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সিআইএ পশ্চিম গোলার্ধে বেশি মনোযোগ দিতে চাই। ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়নি, এমন দেশগুলোকে তারা লক্ষ্যবস্তু করতে চায়।
আরও পড়ুনইউএসএআইডি বন্ধে তৎপর ট্রাম্প–মাস্ক: ‘এটি আমাদের শত্রুদের জন্য উপহার’০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫পদত্যাগের প্রস্তাবটি সিআইএর সব কর্মীর কাছে পাঠানো হলে সবাই তা গ্রহণ করতে পারবেন কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কিছু নির্দিষ্ট পেশা এবং বিশেষায়িত জ্ঞানের দরকার আছে, এমন কিছু খাতের কর্মীদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকবে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। ধারণা করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য বিভাগে যেভাবে একচেটিয়া কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে, সিআইএর ক্ষেত্রে তেমনটি হবে না।
অন্য দুটি সূত্র বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী ব্যবস্থাপনা অফিস (ওপিএম) গত সপ্তাহে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের কার্যালয়ের (ওডিএনআই) কিছু কর্মকর্তার পদত্যাগের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ নির্দেশনা জারি করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেলেন কিহাক সাং
বাংলাদেশের শিল্প খাতের বিকাশ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক আয়ে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেডে) পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে বাংলাদেশের সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার হাতে এ স্বীকৃতি তুলে দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) ও বস্ত্র খাতে অসামান্য অবদান রাখছেন কিহাক সাং। তিনি ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশে আসার পর থেকে এ শিল্প খাতে সহায়তা করে আসছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য তিনি পেলেন ‘সম্মানিত নাগরিক’ মর্যাদা।
কিহাক সাংয়ের হাতে বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তুলে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়ে কিহাক সাং তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত।’
কিহাক সাং বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। কিহাক সাং বাংলাদেশের শিল্পের সঙ্গে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন, এখন তা এক শিল্পসামাজ্যে রূপ নিয়েছে। শুধু তাই নয়, আশির দশকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রধম বিদেশি বিনিয়োগকারী।
ইয়াংওয়ান ১৯৮০ সালের মে মাসে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল রপ্তানি খাতে প্রথম বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এই শিল্পে নারীদের কর্মসংস্থানের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত।
অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব
কেন এবং কীভাবে কিহাক সাংকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার ধারণাটা এলো, তা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়ার ধারণাটি প্রথম আলোচনা হয়েছিল চীনের হাইনানে, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে। তখন বিওএও ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূস। সেখানে এক বৈঠকে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন প্রধান উপদেষ্টাকে জিজ্ঞাসা করেন, কিহাক সাং, যার হৃদয়ে বাংলাদেশ এবং যিনি কোরিয়ান ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশকে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত করেছিলেন, তাকে সম্মানিত করার কোনো পরিকল্পনা বাংলাদেশের আছে কি না?
এরপরই ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে উপস্থিত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন ড. ইউনূস। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে আজ বিনিয়োগ সম্মেলনে কিহাক সাং বলেন, “আমি সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেয়ে সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি।”
তিনি লিখেছেন, “আজ আমরা একজন আবেগাপ্লুত সাংকে দেখেছি, যিনি তার হৃদয়ের কথা বলছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব একদিন না একদিন পাবেনই। তিনি পেয়েছেন এবং সেটি এসেছে তার প্রত্যাশার পাঁচ বছর আগেই।”
“সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পাওয়ার মাধ্যমে কিহাক সাং মর্যাদাপূর্ণ এক গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলেন। তিনি যাদের সঙ্গে আছেন, তারা হলেন—কাজী নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, ফাদার মারিনো রিগন ও গর্ডন গ্রিনিজ। এদের প্রত্যেককেই বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের একজন বলেই গণ্য করেন,” লিখেন আজাদ মজুমদার।
ঢাকা/হাসান/রফিক