নাটোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের আলোচিত ‘জান্নাতি প্যালেসে’ দ্বিতীয় বারের মত ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর এবার জেলা আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নাটোর শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় আওয়ামী লীগের এ অস্থায়ী কার্যালয় ভেঙে ফেলা হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এছাড়া ভেঙে ফেলা দলীয় কার্যালয়ের স্থানে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘জুলাই স্মৃতি শিশুপার্ক’ করার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা।

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় ফ্যাসিস্ট সরকারের রাজনৈতিক ও দলীয় কার্যালয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে নাটোরে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার বিবৃতি কিংবা অপপ্রচার চালানো হলে ফ্যাসিস্ট সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের বাড়িঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। এসময় তারা দলীয় কার্যালয়টির স্থানে ‘জুলাই স্মৃতি শিশুপার্ক’ করার ঘোষণা দেন। 

পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইন জানান, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

এর আগে বুধবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে নাটোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের আলোচিত ‘জান্নাতি প্যালেসে’ অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ হোক

আমরা এ কোন সমাজে বাস করছি! এখানে ঘরে–বাইরে কোথাও  কন্যাশিশু ও নারীরা নিরাপদ নয়। সাম্প্রতিক কালে এমন কিছু নারী ও শিশু নিগ্রহ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যা পুরো সমাজকে ভীষণ ধাক্কা দিয়েছে।

সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই তরুণীকে পিটিয়ে আহত করা, পোশাক নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীর হেনস্তা হওয়া, অশালীন আচরণের প্রতিবাদ করায় বাকেরগঞ্জে এক নারীকে প্রকাশ্যে মারধর করার ঘটনাগুলো খুবই উদ্বেগজনক। অথচ এসব ঘটনায় রাষ্ট্র ও সরকারের দিক থেকে যে রকম কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ছিল, সেটা দৃশ্যমান হচ্ছে না।

গত সপ্তাহে মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে আট বছরের শিশুটি যেভাবে ধর্ষণের শিকার হলো, তা সমাজের মুখে চুনকালি মেখে দিয়েছে বললেও কম বলা হবে। একটি শিশু বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে আর এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বোনেরই শ্বশুর নামের এক পাষণ্ড।

মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৪)–এর ক/৩০ ধারায় ধর্ষণ ও ধর্ষণের মাধ্যমে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন এবং ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

শিশুটি এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, বর্তমানে ঢাকার সিএমএইচে  চিকিৎসাধীন। এর আগে মাগুরা সাধারণ হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়েছে।

নারী ও শিশু ধর্ষণ এবং নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে সারা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ। পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে এসেছেন; যেমনটি এসেছিলেন গত বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে নারী ও শিশু নিগ্রহের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে পরিবারের সদস্য ও স্বজনের মাধ্যমে।

এই যে দেশে একের পর এক নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে, সরকার কী করছে? কী করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা? কোথাও অপরাধ ঘটলে তাঁরা হয়তো মামলা নেন। কিন্তু এসব দুষ্কর্ম যারা করে, তাদের বেশির ভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। সম্প্রতি দিনাজপুরে শিশুধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাড়ে আট বছর যেতে না যেতেই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। ভুক্তভোগী শিশু ও তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। 

দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনবিরোধী বহু আইন আছে, কিন্তু এগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই। মামলা হলেও যথাযথ তদন্ত হয় না। বেশ কয়েক বছর আগে প্রথম আলোর এক গবেষণায় দেখা যায়, শিশু ও নারী নির্যাতন মামলার মাত্র ৩ শতাংশ অভিযুক্ত শাস্তি পান। এ অবস্থায় নারী ও শিশু নিগ্রহের ঘটনা কমার কোনো কারণ নেই।

মাগুরার ঘটনায় ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটির (শিশুটি ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগে মামলা) তদন্ত ও অভিযোগ আমলে নেওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। আইন নিজস্ব গতিতে চললে উচ্চ আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে হয় না। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত ও বিচারকাজ সম্পন্ন করবেন।

নারী ও শিশুদের সুরক্ষা দিতে হলে প্রথমত আমাদের বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রতিটি ঘটনায় অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে অপরাধীদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ। ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতনকে ‘না’ বলুন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ