ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিরা পশ্চিমবঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বিদেশি বিভিন্ন বড় কোম্পানিও রাজ্যটিতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। সব মিলিয়ে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৯৫ কোটি রুপির বিনিয়োগ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের ৬ লাখ কোটি টাকার মতো। এ ব্যাপারে দুই দিনে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে ২১২টি।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতায় অষ্টম বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান। গতকাল বুধবার কলকাতার উপশহর রাজারহাটের নিউটাউনের বিশ্ববঙ্গ কনভেনশন সেন্টার হলে দুই দিনের এই সম্মেলন শুরু হয়।

এবারের সম্মেলন বিশ্বের নবম শীর্ষ এবং ভারত ও এশিয়ার শীর্ষ বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানি ৫০ হাজার কোটি রুপির বিনিয়োগ প্রস্তাব দেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী রিলায়েন্স গ্রুপের কর্ণধার জানান, তাঁরা এই রাজ্যে ডেটা সেন্টার, খুচরা ব্যবসা, কেব্‌ল ল্যান্ডিং স্টেশন ও সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে নতুন করে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চান।

শিল্পপ্রতিষ্ঠান জেএসডব্লিউ বিদ্যুৎ খাত ও দুর্গাপুর বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পে ১৬ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতের প্রথম সারির আরেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান অম্বুজা নেওটিয়া গোষ্ঠী এই রাজ্যের হেলথ কেয়ার, হসপিটালিটি, পর্যটন ও রিয়েল স্টেট প্রকল্পে ১৫ হাজার কোটি রুপির বিনিয়োগের প্রস্তাব রেখেছে। আরপি-এসজি এনার্জি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ১০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগের পরিকল্পনা তুলে ধরেছে। এ ছাড়া মাঝারি আকারের বেশ কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ ভারতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে রিলায়েন্স শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার মুকেশ আম্বানি ছাড়াও আইটিসি শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান সঞ্জীব পুরী, শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা, অম্বুজা নেওটিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, জেএসডব্লিউ গ্রুপের চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দাল, শিল্পপতি হর্ষবর্ধন আগরওয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী, ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে ২৫ জন বিদেশি রাষ্ট্রদূতসহ ৪০টি দেশের দুই শতাধিক ব্যবসায়ী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন।

কলকাতায় অষ্টম বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন রিলায়েন্স গ্রুপের কর্ণধার মুকেশ আম্পানি। গতকাল বুধবার কলকাতার রাজারহাটের নিউটাউনের বিশ্ব বঙ্গ কনভেনশন সেন্টারে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কলক ত ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বিষ দিয়ে তিনটি গরুকে মেরে ফেলার অভিযোগ

মাটির দেয়ালে জং ধরা টিনের চাল। সেই চালের এক পাশে পোষা তিনটি গাভি, আরেক পাশে স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে বসবাস। গাভির দুধ বিক্রি করে চলত সংসার। বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন গাভি তিনটি হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন দিনমজুর আজিজুল ইসলাম।

আজিজুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর গরু তিনটিকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি প্রতিবেশী মজনু মিয়ার নামে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মজনু মিয়া বলেন, ‘আমি কেন গরু মারতে যাব! আমাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা তথ্য রটানো হচ্ছে।’

আজিজুল ইসলামের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামে। গতকাল শনিবার রাতে তাঁর ঘরে থাকা গাভি তিনটি মারা যায়। প্রাণিসম্পদ বিভাগ মারা যাওয়া গরু তিনটির মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ময়নাতদন্ত করছে।

আজিজুলের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁর বসতভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। দরিদ্র হওয়ায় আজিজুল ইসলামের শ্বশুর মহির উদ্দিন ১০ বছর আগে একটি ফ্রিজিয়ান জাতের বকনা বাছুর দেন। সেই বাছুর লালন–পালন করার পর পূর্ণবয়স্ক হয়ে অনেকগুলো বাছুর জন্ম দেয়। এর মধ্যে তিনটি বকনা বাছুর পালন করে গাভিতে পরিণত করেন আজিজুল। সেই গাভির দুধ বিক্রি করে পাঁচ সদস্যের সংসার চলত। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বাড়ির অদূরেই বাঁশঝাড়ে গাভি তিনটি বেঁধে রাখার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যায়। এরপর গতকাল শনিবার রাতে তিনটি গাভি মারা যায়। তিনটি গাভির মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা।

রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, একসঙ্গে তিনটি গরু মারা যাওয়া আজিজুল ইসলামের বাড়িতে স্থানীয় লোকজনের ভিড়। উঠানের সামনে ময়নাতদন্ত করছে প্রাণিসম্পদের দল।

বাড়ির বারান্দায় বসে কাঁদছিলেন আজিজুলের স্ত্রী স্বপনা বেগম। এ সময় আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘হামার গ্রামের মজনুর সাথে মোর ঝগড়া চলছে। মজনু ২০ দিন আগোত হুমকি দিছিল, মোক নিঃস্ব করি দিবে, মোর সংসার ফকির করতে যা করা লাগে করবে। মজনু ওর কথা পালন করছে, মোক ফকির বানাইল। এ্যালা মুই নিঃস্ব। ওয় মোর গরু বিষ দিয়ে মারি ফেলাইছে। গরুগুলার কী দোষ? ওয় মোক মারত। মুই ওর বিচারের জন্যে থানায় অভিযোগ দিছি। মুই সঠিক বিচার চাই।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ কে এম ইফতেখায়ের বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর টিম নিয়ে আজিজুল ইসলামের বাড়িতে যাই। গাভিগুলোর প্রকৃত মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, তিনটি গরু মারা যাওয়ার ঘটনায় মালিক থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ