খুলনায় ‘শেখ বাড়ি’ এখন ধ্বংসস্তূপ, ইট-রড খুলে বিক্রি হচ্ছে
Published: 6th, February 2025 GMT
খুলনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ চাচাতো ভাইয়ের ‘শেখ বাড়িতে’ বুধবার রাতে অগ্নিসংযোগ ও বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুরের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাড়ির ইট ও রড খুলে নিয়ে গেছে লোকজন। প্রায় দেড় দশক খুলনায় ‘ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু’ থাকা ভাঙা বাড়িটি দেখতে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর শেরে বাংলা রোডে গিয়ে দেখা যায়, ‘শেখ বাড়ি’ এখন পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপ। অসংখ্য মানুষ হাতুড়ি দিয়ে ইট খুলে রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইকে করে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ যন্ত্রপাতি দিয়ে রড কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ ইট ও রড খুলে ওই বাড়ির সামনে বিক্রি করছে। ভোর থেকে এই কর্মকাণ্ড চলছে বলে জানান স্থানীয় লোকজন। বিকেলে বাড়িটির সামনে গিয়েও দেখা গেছে একই চিত্র।
বাড়ির চত্বরে ডিজিটাল দাঁড়িপাল্লা দিয়ে ওজন করে রড কিনছিলেন শেখপাড়া এলাকার এক ভাঙাড়ির দোকানি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দোকানি বলেন, এখানে সস্তায় কিনতে পারছি, সে কারণে এখানে এসেছি।
রিকশায় করে ইট নিয়ে যাওয়ার সময় চালক সোলায়মান হোসেন বলেন, ‘১৫ বছর আওয়ামী লীগের লোকজন লুট করেছে। সে কারণে এখন তাদের ইট-রড খুলে নিয়ে যাচ্ছি। এই বাড়ির লোকজন খুলনার মানুষের ওপর অনেক নিপীড়ন চালিয়েছে।’
এর আগে বুধবার রাত ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা শেখ বাড়ির সামনে জড়ো হয়। তারা সেখানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় ছাত্র-জনতা স্লোগান দিতে থাকে ‘শেখ বাড়ির আস্তানা ভেঙে দাও, গুড়িয়ে দাও’, স্বৈরাচারের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’। রাত ৯টা থেকে ৩টি বুলডোজার দিয়ে বাড়ির গেট ও দোতলা বাড়ির অর্ধেক অংশ গুঁড়িয়ে দেয়। এছাড়া বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় উৎসুক অসংখ্য মানুষ সেখানে ভিড় করেন।
বাড়িটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই ও সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল, যুবলীগ নেতা শেখ সোহেল, শেখ জালাল উদ্দিন রুবেল ও শেখ বাবুর। এই বাড়ি থেকে নিয়ন্ত্রিত হতো খুলনায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি, ব্যবসা, ঠিকাদারি, নিয়োগ, বদলি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ অনেক কিছু। এর আগে ৪ ও ৫ আগস্ট এই বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সবচেয়ে বেশি ভাঙচুর চালিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান বিক্ষুব্ধ লোকজন। তবে সেদিন শেখ পরিবারের কেউ বাড়িটিতে ছিলেন না।
আগস্টে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর বাড়িটিতে শুধু ইটের অবকাঠামো অবশিষ্ট ছিল। গেটও খুলে নিয়ে যায় লোকজন। কিছুদিন পর কেউ যাতে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য গেটে টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল। তবে বাউন্ডারি ওয়ালসহ সবকিছুই বুধবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
খুবিতে মুর্যালসহ ৫ স্থানে ভাঙচুর: এদিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুরসহ পাঁচটি স্থানে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে শিক্ষার্থীরা নগরীর দৌলতপুরে সরকারি বিএল কলেজে শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল ভাঙচুর করে। বেলা ১১টার দিকে নগরীর গল্লামারী এলাকায় লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল ভাঙচুর করা হয়।
এর আগে বুধবার রাতে শিক্ষার্থীরা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ‘কালজয়ী মুজিব’ ম্যুরাল ভাঙচুর করে। রাতে নগরীর দোলখোলা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলোর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ভেঙে দেওয়া হয় তার বিলাসবহুল গাড়ি। আগুন দেওয়ার পর ৫ তলা বাড়ির লোকজন আতঙ্কে ছাদে উঠে যায়। পরে ফায়ারা সার্ভিসের দু’টি গাড়ি গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা আইয়ুব আলীর বাড়ি ভাঙচুর করে লোকজন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ খ ম জ ব র রহম ন র নগর র আওয় ম ল কজন
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিলেন ছাত্র-জনতা, নেতাদের বাড়িতে হামলা
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার বিকেলে ৫টার দিকে শহরের মেইন রোডে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শতাধিক ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে যান। তাঁরা এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে কার্যালয় ভবন গুঁড়িয়ে দেন। পরে কার্যালয়ের সামনে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।
সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে টাঙ্গাইলের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মারইয়াম মুকাদ্দাস বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইলে কোনো আওয়ামী লীগ অফিস রাখতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরও ভেঙে দেওয়া হবে।’
পরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে এক্সকাভেটরসহ মিছিল নিয়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা শহরের থানা পাড়া এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত সভাপতি ফজলুর রহমান খানের বাড়িতে যান। সেখানে এক্সকাভেটর দিয়ে বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। বাড়িতে ঢুকে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ সময় বাড়ির জিনিসপত্র লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য প্রয়াত সভাপতি ও টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জামিলুর রহমানের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।