করুণারত্নের শেষ টেস্টের প্রথম দিনেও বিবর্ণ শ্রীলঙ্কা
Published: 6th, February 2025 GMT
একজনের শুরু, আরেকজনের শেষ। অস্ট্রেলিয়ার ৪৭১তম খেলোয়াড় হিসেবে আজ টেস্ট অভিষেক হলো কুপার কনোলির। ওদিকে শ্রীলঙ্কার দিমুথ করুণারত্নে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন গলে শততম টেস্টটিই হবে তাঁর শেষ ।
দুজনের জন্যই বিশেষ হয়ে ওঠা দিনটিতে মাঠে ছিল তাঁদেরও। খেলতে নামার আগে একজন নতুন ব্যাগি গ্রিন, আরেকজন একাধিক স্মারক পাওয়ার পর যখন পরিবারের সদস্যদের আলিঙ্গনে বাঁধা পড়লেন, গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তখন আবেগঘন পরিবেশ।
দিনের শেষে অবশ্য কনোলির মুখেই চওড়া হাসি লেগে থাকল। তাঁর দল অস্ট্রেলিয়া যে প্রথম দিনেই শ্রীলঙ্কাকে কোণঠাসা করে ফেলেছে! শুরুতে নাথান লায়নের ঘূর্ণি আর পড়ন্ত বিকেলে মিচেল স্টার্কের তোপে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনে ৯ উইকেট হারিয়ে ২২৯ রান করতে পেরেছে লঙ্কানরা।
বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামা করুণারত্নে শেষের শুরুতে করেছেন ৩৬ রান। অভিষিক্ত অলরাউন্ডার কনোলি বাঁহাতি স্পিনে ৩ ওভার করেও কোনো উইকেট পাননি।
সংক্ষিপ্ত স্কোরশ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২২৯/৯
(চান্ডিমাল ৭৪, কুশল মেন্ডিস ৫৯*, করুণারত্নে ৩৬, রমেশ মেন্ডিস ২৮; স্টার্ক ৩/৩৭, লায়ন ৩/৭৮, কুনেম্যান ২/৫৩, হেড ১/৩১)।
* ১ম দিন শেষে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স কত দূর যেতে পারেন
যুক্তরাষ্ট্রের আর দশজন ভাইস প্রেসিডেন্টের মতো নন জেডি ভ্যান্স। তিনি একজন ভিন্ন ধরনের মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
ওয়াশিংটনের ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা তেমন কোনো নেতা তিনি নন, যিনি অন্তরালে থেকে কাজ করেন। অন্তরালে থেকে কাজ করা মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের একজন ডিক চেনি।
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ভ্যান্স অনুকূল ব্যক্তি নন। তরুণ ভ্যান্স বরং তাঁর কর্তা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে চরম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টের মূর্ত প্রতীক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছেন বলে মনে হয়।
আরও পড়ুনজেলেনস্কির প্রতি কেন এত মারমুখী ছিলেন ভ্যান্স০২ মার্চ ২০২৫গত ২৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হয়। এই বৈঠকে ভ্যান্সও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জেলেনস্কির ওপর আক্রমণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ভ্যান্স। তাঁর উসকানির কারণেই একটি কূটনৈতিক সংকটের সূত্রপাত হয়।
এর আগে গত মাসের মাঝামাঝি জার্মানিতে অনুষ্ঠিত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ভ্যান্স। এই সম্মেলনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্রদের আক্রমণ করেছেন। সম্মেলনে তাঁর বক্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্রদের জন্য অপমানজনক।
ভ্যান্স তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যের জন্য যুক্তরাজ্যের পত্রপত্রিকার প্রথম পাতায় স্থান করে নেন। তিনি বলেছিলেন, গত ৩০-৪০ বছরে যুদ্ধ করেনি—এমন দেশের প্রস্তাবিত নিরাপত্তার নিশ্চয়তার চেয়ে ইউক্রেনের আরও ভালো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দরকার।
ভ্যান্স অবশ্য পরে বলেন, তিনি এই বক্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, এমনটা বলা ঠিক নয়। তবে বাস্তবতা হলো, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সই প্রকাশ্যে ইউক্রেনে শান্তিবাহিনী মোতায়েনের কথা বলছে।
আরও পড়ুনভ্যান্সকে কেন রানিং মেট হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প২৪ জুলাই ২০২৪ভ্যান্স ভালো করেই জানেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে হাওয়া কোন দিকে বইছে। আর সে কারণেই তিনি ট্রাম্পের প্রতি তাঁর অবজ্ঞা ত্যাগ করেছেন। অথচ এই তিনিই আট বছর আগে ট্রাম্পকে একজন ‘হাঁদারাম’ বলে উপহাস করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ২০১৬ সালে তিনি হিটলারের সঙ্গে ট্রাম্পের তুলনা করেছিলেন।
রিপাবলিকান দল এখন সর্বতোভাবে ট্রাম্পকে ভক্তি করে। আর ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স হলেন প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে বিশিষ্ট প্রকাশ্য ভক্তদের একজন।
ভ্যান্স একজন আকর্ষণীয় চরিত্রের ব্যক্তি। তিনি আইভি লিগভুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমানও।
ভ্যান্স কিছুদিনের জন্য ওহাইওর সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথাগত মূলধারার গণমাধ্যম ও ওয়াশিংটনের অভিজাতদের ঘৃণা করেন। তাই ট্রাম্পের জনতুষ্টিবাদের সঙ্গে তিনি স্বাভাবিকভাবেই মানানসই।
ভ্যান্স একজন সাবেক মার্কিন মেরিন সেনাও। তাই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে মার্কিন মিত্রদের অবদান সম্পর্কে তাঁর আরও ভালোভাবে জানাশোনা থাকার কথা।
আরও পড়ুনইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে তুলাধোনা করলেন ভ্যান্স১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সিলিকন ভ্যালিতে ধনী হয়ে ওঠেন ভ্যান্স। বড় বড় প্রযুক্তি অভিজাতদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে, যাঁরা তীব্রভাবে ডানপন্থী হয়ে উঠেছেন। আর ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁকে কাছে টেনে নিয়েছেন।
ওহাইও এবং কেন্টাকির সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে নিজের শৈশব নিয়ে একটি স্মৃতিকথামূলক বই লিখেছেন ভ্যান্স। বইটির নাম ‘হিলবিলি এলিগি’। এই বইয়ের জন্য তিনি আলোচিত হন।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর সমর্থকদের বোঝার জন্য ২০১৬ সালের এই বইটি ‘সারগ্রন্থ’ হয়ে ওঠে। এই পটভূমি বিবেচনায় নিলে এটা অবাক করার মতো কিছু নয় যে ভ্যান্স ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ অর্থনৈতিক নীতির পক্ষে প্রচারে সবচেয়ে স্পষ্ট যুক্তি উপস্থাপন করেছিলেন।
ভ্যান্সের বয়স এখন ৪০ বছর। এই বয়সেই তাঁকে ট্রাম্পের সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী মনে করা হচ্ছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে মজার ছলে বিষয়টি নাকচ করেছেন। ট্রাম্পের বক্তব্যে মনে হয়, তিনি এত তাড়াতাড়ি তাঁর সিংহাসন ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে রাজি নন।
আরও পড়ুনজেডি ভ্যান্সের সমালোচনায় জার্মান রাজনীতিকেরা১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইউরোপ সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন ভ্যান্স। তিনি একজন স্বাতন্ত্র্যবাদী, যিনি ইউক্রেনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় স্বার্থ দেখতে পান না। এ কারণেই ২০২২ সালে ভ্যান্স এক পডকাস্টে বলেছিলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে কী ঘটছে, তা নিয়ে তিনি সত্যিই চিন্তা করেন না।
ভ্যান্সের নানা ঠোঁটকাটা কথাবার্তা ও ইঙ্গিত অনেক বিদেশিকে বিরক্ত করেছে। এর মধ্যে ইউরোপের অতি-ডানপন্থীদের প্রতি তাঁর সমর্থনের বিষয়টি আছে।
ওভাল অফিসে জেলেনস্কির মুখোমুখি হওয়ার এক দিন আগেই ভ্যান্স যুক্তরাজ্যে বাক্স্বাধীনতার বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে তিরস্কার করেছিলেন।
ভ্যান্স তরুণ, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, আদর্শিক। তিনি দ্রুত উঁচুতে উঠছেন। তবে তাঁর অহংকার তাঁকে সূর্যের খুব কাছে যেতে বাধ্য করে কি না, তা দেখার বিষয়।
আরও পড়ুনট্রাম্পকে ‘আমেরিকার হিটলার’ বলা জেডি ভ্যান্সই এখন তাঁর রানিং মেট১৬ জুলাই ২০২৪