নাটোরে এক নারী নিজে বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট (একপ্রকার কীটনাশক) খাওয়ার পর তিন মেয়েকেও খাওয়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে শারমিন বেগম (৩২) নামের ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে যমজ দুজনসহ তিন বোনকে। বুধবার মধ্যরাতে সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের দুর্গম বড়গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া শারমিন বেগম বড়গ্রামের মুরাদ হোসেনের স্ত্রী। তাঁদের অসুস্থ মেয়েরা হচ্ছে জিম খাতুন (৮), মিম খাতুন (৮) ও সিনহা খাতুন (৩)। তাদের বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বারবার মেয়ে হওয়া নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কটাক্ষের হাত থেকে বাঁচতে শারমিন এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে শারমিন বেগম নিজে বিষাক্ত গ্যাস ট্যাবলেট সেবন করে। এর পরপরই কৃমিনাশক ট্যাবলেটের কথা বলে ঘুমন্ত তিন মেয়েকে জাগিয়ে তিনি একই ট্যাবলেট সেবন করান। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই অসুস্থ হতে শুরু করলে স্বজনেরা তাদের প্রথমে সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তবে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় তাৎক্ষণিক তাদের বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই শারমিন বেগম অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে মারা যান। পরে অসুস্থ তিন মেয়েকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত তারা চিকিৎসাধীন ছিল।

মারা যাওয়া শারমিনের বাবা আবদুল ছালাম বলেন, বিয়ের পর থেকে শারমিনকে নির্যাতন করতেন স্বামী মুরাদ হোসেন। কিছুদিন বিদেশে থাকার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। ইতিমধ্যে শারমিনের তিনটি মেয়েসন্তান জন্ম নেওয়ায় স্বামীসহ শ্বশুরড়াবির লোকজন গালমন্দ করতেন। সারাক্ষণ কটাক্ষের মধ্যে তাকে বসবাস করতে হতো। তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ের দুই যমজ মেয়ের একটা (জিম) আমার কাছে থাকত। বুধবার আমি তাকে ওর বাবা–মার কাছে রেখে আসি। এরপর রাতেই গ্যাস ট্যাবলেট খাওয়ার ঘটনা ঘটে।’

ঘটনার পর থেকে মুরাদ হোসেন পলাতক। তবে তাঁর বড় ভাই নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি ও তাঁর ভাই মুরাদ গ্রামের বাজারে ছিলেন। খবর পেয়ে বাড়িতে এসে অসুস্থ শারমিন ও মেয়েদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। পথে মুরাদের স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তবে মেয়েরা হাসপাতালে ভালো আছে। মেয়েসন্তান জন্ম নেওয়ার কারণে কটাক্ষ করার অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘এ রকম কিছু হলে তো আমার জানার কথা ছিল। আমার ভাইবউ এমন অভিযোগ আমার কাছে করেননি।’

সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোজাহেদুল ইসলাম জানান, রাতে অসুস্থদের হাসপাতালে যখন আনা হয়েছিল, তখন তাদের অবস্থা খারাপ ছিল। তাই তাৎক্ষণিক তাদের বগুড়া বা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

এ ব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসমাউল হক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ য স ট য বল ট

এছাড়াও পড়ুন:

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ একদল ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ভাঙচুর করে তারা। এর আগে শহরের পুরান বাজার এলাকায় একত্রিত হয়ে মিছিল বের করে স্থানীয় ছাত্র-জনতা।

বিক্ষুব্ধদের দাবি, স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে এটি তাদের কঠোর কর্মসূচি। স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা আবারও নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে। আবারও তারা স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই প্রতিবাদী জনগণ স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে দিতে এই আয়োজন করেছে। এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দেয় বিক্ষুব্ধরা।

মিছিলে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহাদাত হাওলাদার, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ফারুক বেপারী, সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান ফুকু, শ্রমিকদল নেতা সেলিম মুন্সী, ছাত্রদল নেতা নাজমুল হাসান মিলনসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ।

জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান ফুকু বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিগত ১৭ বছর হত্যাসহ নির্যাতন চালিয়েছে। তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আজকের ছাত্র জনতা শেখ হাসিনা, শেখ মুজিবের বিভিন্ন জায়গায় ম্যুরালসহ বিভিন্ন স্থাপনা চাইতেছে না। তাই সব ভেঙে দিয়েছে। যতদিন তাদের চিহ্ন থাকবে ততদিন যুবদল ছাত্রদল রাজপথে থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ