Samakal:
2025-04-09@09:17:06 GMT

এই বসন্তে এই সুন্দরে

Published: 6th, February 2025 GMT

এই বসন্তে এই সুন্দরে

‘আরে, তোমারও তো চুলে পাক ধরে গেছে দেখছি!’ বিস্মিত হয়ে যে বন্ধু এ কথাটা বলেছিল, সে আসলে হিসাব রাখেনি, কতটা সময় ক্ষয়ে যাওয়ার পর আমাদের এই পরিবর্তন। তাই ওর কথা আমাকে অবাক করেনি। কিন্তু চমকে গেছি, যখন সে প্রিয় এক কণ্ঠশিল্পীর প্রসঙ্গ টেনে এনেছে। বিস্ময় নিয়ে বলেছে, ‘আমরা সেই স্কুলজীবন থেকে আঁখি আলমগীরের গান শুনছি। কিন্তু দেখো, এখনও সে একই রকম আছে! কিশোরীর খোলস ছেড়ে সদ্য বেরিয়ে আসা তরুণীকে যেমন দেখায়, শুরুতে তেমনই দেখাত। এখন পরিপূর্ণ নারী, তারপরও সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে একই রকম রয়ে গেছেন। অথচ মাঝেখানে পেরিয়ে গেছে ৩০ বছর– ভাবা যায়!’

বন্ধু তো রূপ-লাবণ্যে খুন, তাই আসল কথটা বলতেই ভুলে গেছে। সেটি স্মরণ করিয়ে দিতেই বললাম, চল্লিশ-পঞ্চাশ পেরোলেও চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েনি, এমন তারকা তো আরও কয়েকজন আছে। এদিকে থেকে আঁখি আলমগীরের প্লাস পয়েন্ট হলো, তাঁর কণ্ঠের মাদকতা ধরে রাখতে পারা। সেটি ধরে রাখতে পেরেছেন বলেই আমরা কখনও তাঁকে থেমে থাকতে দেখিনি। একের পর এক নতুন গানের আয়োজন করে যাওয়া, দেশ-বিদেশের মঞ্চে ছুটে চলা; রেডিও, টিভি, সিনেমা, অনলাইন– সব মাধ্যমেই সমানভাবে গান গেয়ে যাওয়া– চলছে তো চলছেই। ‘তাই তো, এ কথা একদম ঠিক। আঁখি আলমগীরের ভক্ত বনে যাওয়ার পর আমরা তো শুধু সামনের দিনগুলোর অপেক্ষায় থেকেছি। খোঁজ-খবর রেখেছি, কবে, কখন, কোথায় পারফর্ম করবেন। রেডিও, টিভি, মঞ্চ– সেখানে মাধ্যমে তাঁর গান শোনার সুযোগ এসেছে, সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। ক্যাসেট-সিডি যুগের পর এখন অনলাইনে তাঁর গান শুনে যাচ্ছি। আর এভাবেই কখন যে এতটা সময় পেরিয়ে গেছে, বুঝতেই পরিনি।’ 

অজ্ঞাত দুই ভক্তের এই কথোপকথন যখন আঁখি আলমগীরের সামনে তুলে আনা হলো, তখন তাঁর মুখে ছিল একচিলতে মিষ্টি হাসি। মুখের সেই মিষ্টি হাসি ধরে রেখেই বললেন, ‘সত্যি, নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে এটা জেনে যে, এখনও গান আর গায়কি নিয়ে শ্রোতারা আলোচনায় মুখর থাকেন। আসলে নিজেও তো কখনও হিসাব-নিকাশ করিনি, গানে গানে কতটা সময় পেরিয়ে এসেছি। ক’দিন আগে সাংবাদিক বন্ধুরাই এটি মনে করিয়ে দিয়েছেন। তারপর যখনই এ প্রসঙ্গ এসেছে, তখন অবাক হয়েছি এই ভেবে যে, এতদিনে যার পরিচিতি গড়ে ওঠার কথা আইনজীবী হিসেবে, এখন সবাই তাঁকে চেনেন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। মানবজীবন সত্যি রহস্যময়।’ 
আঁখির এই কথা আবাক করেছে আমাদেরও। যদিও আমরা জানি, তিনি ভালো ছাত্রী ছিলেন, আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। আইন পেশায় নিজেকে জড়াতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু কণ্ঠশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন কখনোই দেখেননি, এ কথা সত্যি অবাক করার মতো। দেশের শীর্ষ অভিনেতা আলমগীর ও নন্দিত গীতিকবি খোশনূরের এই উত্তরসূরির সংস্কৃতি অঙ্গনের পা রাখবেন না, এটি ভাবাও অনেকের জন্য কঠিন। ছোটবেলায় সংগীতে যাঁর তালিম নেওয়ার সুযোগ হয়েছে, অভিজ্ঞতা হয়েছে বেতার ও টিভিতে পারফর্ম গান তালিকাভুক্ত শিল্পী হওয়ার, ‘ভাত দে’ সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও যাঁর ঝুলিতে উঠেছে, সেই মানুষটি অঙ্গন থেকে দূরে সরে যাবেন– এটি হয়তো প্রকৃতিও চায়নি। আর চায়নি বলেই ঘটনার পাকচক্রে আঁখি আলমগীর হয়ে উঠেছেন সময়ের আলোচিত ভার্সেটাইল কণ্ঠশিল্পী। গানই হয়ে উঠেছে তাঁর পেশা ও নেশা। তাই গানে গানে তাঁকে কুড়িয়ে নিতে হচ্ছে শ্রোতার ভালোবাসা।

আঁখির কথায়, “ভালোবাসার শক্তি অপরিসীম। নইলে যে আমি শখে গান করতাম, সেই আমি এখন সংগীতের নেশায় আসক্ত। যা শুধু শ্রোতাদের ভালোবাসার কারণে। ১৯৯৪ সালে যখন ‘বিদ্রোহী বধূ’ সিনেমায় প্লেব্যাক করি, তখনও জানতাম না আমার ভবিষ্যৎ কী? এরপর অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতা থেকে যখন অ্যালবাম করার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখনও শিল্পী হওয়ার বাসনা প্রবল হয়ে ওঠেনি। কিন্তু প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে প্রশংসা আর অ্যালবামের গানের সুবাদে শ্রোতাদের মনোযোগ কেড়ে নিতে পারায় তাদের কাছে প্রত্যাশার একটা জায়গাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়েই আর থেমে থাকার অবকাশ হয়নি। ভালো লাগা এখানেই যে, সাংস্কৃতিক বলয়ে বেড়ে উঠলেও মা-বাবার পরিচয়কে পুঁজি করে কোনো কিছু অর্জন করতে হয়নি। নিজেও তা চাইনি। আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে সব সময় কাজ করেছি, এখনও করছি। গানের ভুবনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার এটাই মূলমন্ত্র। তারপরও আমি মনে করি, তিন দশকের শিল্পীজীবনে আমার প্রাপ্তি অনেক, যা কখনও কল্পনা করিনি। তাই বাড়তি যা কিছু পেয়েছি, তার প্রতিদানে গানে গানেই দিয়ে যেতে চাই।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আ খ আলমগ র আলমগ র র

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দর নগরীতে ৫৪ বছরেও নেই বিশেষায়িত হাসপাতাল

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট নির্মাণের দাবিতে রাস্তায় নেমে একাধিকবার বিক্ষোভ করেন নগরবাসী।  তবে অর্থ সংকটসহ নানা জটিলতায় এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি বার্ন ইউনিটের নির্মাণকাজ। বিশেষায়িত একটি শিশু হাসপাতাল স্থাপনে প্রকল্প অনুমোদন হলেও ভূমি জটিলতায় বছরের পর বছর সেটিও আটকা। শুধু বার্ন ইউনিট কিংবা শিশু হাসপাতালই নয়, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই নগরীতে গড়ে ওঠেনি বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল। 
এই অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষের ‘সবেধন নীলমণি’ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল! সদর হাসপাতাল থাকলেও সেখানকার চিকিৎসাসেবা বেশ নাজুক। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থাও করুণ। এখানে জ্বর-সর্দি ছাড়া অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ নেই। এমন বাস্তবতায় জটিল রোগীকে চিকিৎসার জন্য এখনও ছুটতে হয় রাজধানী ঢাকায়। এতে একদিকে যেমন মানুষের চিকৎসা খরচ বাড়ছে, তেমনি রোগীর স্বজনকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। এ পটভূমিতে আজ সোমবার নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। 
স্বাধীনতার এত বছর পরও চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতে এমন ভঙ্গুর অবস্থার পেছনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকদের দুষছেন অনেকেই। এ জন্য কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রীয় কাঠামোও দায়ী বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 
চট্টগ্রামে রয়েছে দেশের বেশির ভাগ ভারী শিল্প। জাহাজভাঙা, পোশাক কারখানা, কেমিক্যাল ডিপোর সংখ্যাও অনেক। আছে সমুদ্রবন্দর। ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামে জনসংখ্যাও বেড়েছে বহু গুণ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও। তবে বাড়ছে না চিকিৎসার সহজলভ্যতা। বৃহত্তর চট্টগ্রামের পোড়া রোগীদের একমাত্র ভরসা চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শয্যা আছে মাত্র ২৬টি। অথচ শয্যার বিপরীতে এখানে প্রতিদিন কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এখানে একটু বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীর চিকিৎসা, আইসিইউ ও ইনফেকশন কন্ট্রোলের কোনো ব্যবস্থাও নেই। যে কারণে বেশি পোড়া রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হয়। 
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরও একই হাল। কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলে স্তন, জরায়ুমুখ, ফুসফুস, মুখগহ্বর, গলাসহ কয়েকটি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এখানে চিকিৎসার সুযোগ নেই। চমেক হাসপাতালে পুরুষ ও নারী রোগীর জন্য শয্যা রয়েছে মাত্র ৩০টি। ক্যান্সার শনাক্তে নেই প্যাট-সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থা। রোগ শনাক্তে নেই মলিকুলার ল্যাবও। অথচ চিকিৎসকরা বলছেন, মলিকুলার ল্যাবের মাধ্যমে যে ফল পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতেই নির্দিষ্ট থেরাপি দিতে হয় রোগীকে। সংকট রয়েছে চিকিৎসক-নার্সেরও।
চমেক হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডও এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। ডায়ালাইসিস মেশিনের চেয়ে এখানে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ১০ গুণ। পর্যাপ্ত মেশিনের অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে ডায়ালাইসিস পরীক্ষা করাতে না পেরে অনেকের জীবন পড়ে হুমকিতে। 
এখনও বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় এই অঞ্চলে শিশু স্বাস্থ্যসেবার অবস্থাও নাজুক। ১৫ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোনোটিতে নেই এনআইসিইউ ব্যবস্থা। বেসরকারিভাবে শহরের কিছু হাসপাতালে এই সেবা চালু হলেও শুধু এনআইসিইউ শয্যা বাবদ এক দিনে ভাড়া গুনতে হয় ২০ হাজার টাকার বেশি। 
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘ঢাকার পর চট্টগ্রামের অবস্থান হলেও স্বাস্থ্যসেবায় বন্দরনগরী এখনও অনেক পিছিয়ে। অথচ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে চট্টগ্রামের অবদান অনেক বেশি। এই অঞ্চলে এখনও একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে ওঠেনি, এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য হতাশার। অনেক বছর ধরে শুনছি, একটি বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট হচ্ছে। বাস্তবে কিছুই হয়নি। উল্টো এর নামে অনেক টাকা নষ্ট হয়েছে।’ 
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পার্থকের বাস্তব চিত্র বৈষম্যের বড় প্রমাণ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। অনেকে মুখে চট্টগ্রামকে দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তিও বলেন। অথচ এখানকার স্বাস্থ্যসেবার মান এখনও রুগ্‌ণ। স্বাস্থ্য খাতের এমন ভঙ্গুর অবস্থার দায়ভার বিগত সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকরা এড়াতে পারেন না।’ 
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘চট্টগ্রামে বড় কোনো বিস্ফোরণ বা আগুনজনিত দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। সে কারণে একটু বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকে নিয়ে ছুটতে হয় ঢাকায়। আর যাদের ঢাকায় যাওয়ার সামর্থ্য নেই, তারা চিকিৎসার অভাবেই মারা যান।’ 
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘পুরো অঞ্চলের কয়েক লাখ রোগীকে  চমেক হাসপাতালের ওপরই নির্ভর করতে হয়। এ কারণে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর চাপ।’
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অপূর্ব-মেহজাবীনের রেকর্ড ভাঙলেন নিলয়-হিমি
  • ৮ বছর পর ‘বড় ছেলে’র রেকর্ড ভাঙল যে নাটক
  • ‘চূড়ান্ত হয়‌নি ১০৪৮৭ হজযাত্রীর বা‌ড়ি ভাড়া, এজেন্সির অবহেলা বরদাস্ত করা হ‌বে না’
  • ১০ হাজার ৪৮৭ হজযাত্রী নিয়ে শঙ্কায় আছি: ধর্ম উপদেষ্টা
  • মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩,৬০০
  • কবিতা
  • জিম্মির পর জয়ার ‘তাণ্ডব’
  • ওষুধ ও সেবা মিলছে না শিশু, মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি
  • বন্দর নগরীতে ৫৪ বছরেও নেই বিশেষায়িত হাসপাতাল
  • বাড়িতে প্রেমিকের রক্ত ছিটিয়ে নিখোঁজের নাটক সাজান গৃহবধূ: পুলিশ