বরিশালের তামিম বললেন, চট্টগ্রামের মানুষ চিটাগংকেই সমর্থন করুক
Published: 6th, February 2025 GMT
‘প্রথম দিন থেকেই নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে হয়’, ফরচুন বরিশালের সমর্থকদের প্রসঙ্গ আসতেই কথাটি বলেন তামিম ইকবাল।
তা হওয়ারই কথা। এবারের বিপিএলজুড়েই ফ্র্যাঞ্চাইজিটির জন্য দর্শকের আগ্রহ ছিল বিপুল। প্রায় প্রতি ম্যাচেই গ্যালারি ভরা দর্শক, স্লোগান-সমর্থনে কোলাহলে ভরা ছিল পুরো স্টেডিয়াম।
দর্শকের ওই প্রত্যাশা মাঠের ক্রিকেটে ভালোভাবেই পূরণ করেছে বরিশাল। গতবারের চ্যাম্পিয়নরা এবার লিগ পর্বে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট নিয়ে প্লে–অফে ওঠে। এরপর প্রথম কোয়ালিফায়ারে চিটাগং কিংসকে হারিয়ে জায়গা করে নেয় টানা দ্বিতীয় ফাইনালে। শুক্রবার আবার তাদের বিপক্ষেই শিরোপার লড়াইয়ে নামবে বরিশাল।
ফাইনাল সামনে রেখে আজ দুপুরে অনুশীলন করে ফরচুন বরিশাল। এরপর সংবাদ সম্মেলনে এসে ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে ঘিরে সমর্থন নিয়ে কথা বলেন অধিনায়ক তামিম, ‘প্রথম দিন থেকেই বলি, আমরা খুবই সৌভাগ্যবান যে এমন ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে খেলি, যাদের এত সমর্থন। চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকা বলেন, আমরা যখনই যে ম্যাচ খেলেছি, বরিশালের দর্শক সব সময় ছিল। আমরা এটার জন্য খুবই সৌভাগ্যবান মনে করি নিজেদের। বিপিএল নিয়ে আমরা এমন স্বপ্নই দেখেছি। একেকটা ফ্র্যাঞ্চাইজির একেক ধরনের ফ্যানবেজ থাকবে। যেটা আমার কাছে মনে হয়, বরিশাল খুব সফলভাবে করতে পেরেছে, বিশেষত গত দুই বছরে। তাদের জন্য পুরোপুরিভাবে চেষ্টা থাকবে কালকে যেন আমরা ভালো খেলে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি।’
গত বছর বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হলে লঞ্চে করে ট্রফি বরিশালে যাবে, এমন কথা বলেছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কর্ণধার মিজানুর রহমান। যদিও শেষ পর্যন্ত নিতে পারেননি। এবারও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তামিম ইকবাল এ নিয়ে বলেছেন, ‘যদি হতে পারি (চ্যাম্পিয়ন), তাহলে তো পরিকল্পনা আছেই। গত বছরও পরিকল্পনা ছিল। আমার মনে হয়, যেকোনো কারণেই যাওয়া হয়নি। এটা নয় যে আমাদের ইচ্ছা ছিল না, সব সময় ইচ্ছা ছিল। এবারও আমাদের ইচ্ছা আছে। আল্লাহ যদি রহমত করে, অবশ্যই।’
দলগতের পাশাপাশি ব্যক্তি তামিমের সমর্থকও আছে ফরচুন বরিশালের। সেটা খেলোয়াড় তামিম যেমন, আবার চট্টগ্রামের তামিমেরও। ফাইনালে অবশ্য এই সমর্থকদের বেশ দ্বিধায়ই পড়তে হবে। কারণ, তামিমের ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে খেলবে তাঁর জন্মস্থান চট্টগ্রামের দল। যদিও এর আগেই তিনবার চিটাগং কিংসের বিপক্ষে এই টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয়েছেন তামিম। কিন্তু ফাইনালে চট্টগ্রামের মানুষদের সমর্থন কি তাঁদের নিজেদের ছেলে, নাকি বিভাগের জন্য থাকবে?
তামিমের উত্তর বেশ সোজাসাপটা, ‘যদি আমি সত্যি বলি, চট্টগ্রামের (মানুষদের) তাদেরই (কিংসকে) সাপোর্ট করা উচিত। আমি ব্যাটিংয়ে নামলে হয়তো একটু চিয়ার (হাততালি দিতে) করতে পারে। কিন্তু চিটাগং ফাইনাল খেলছে, চট্টগ্রামের মানুষ তাদের নিজেদের দল সাপোর্ট করবে, এটাই প্রত্যাশা করি।’
গতবার ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের মুখোমুখি হয়েছিল বরিশাল। তাদের হারিয়ে পেয়েছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ। এবার বরিশালের প্রতি শুরু থেকেই প্রত্যাশা ছিল বেশি। তবে ম্যাচের আগে দল নির্ভার আছে বলেই মনে করেন তামিম। মাঠের ক্রিকেটে কেবল পরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চান তিনি।
বরিশাল অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, আমার দলের সেরা ব্যাপার হচ্ছে রিল্যাক্স আছি। আমরা জানি যে আমাদের কী করতে হবে। এটাই দেখার বিষয়, আমরা বাস্তবায়নটা করি কত ভালোভাবে। যদি আমরা সেটা ভালো করতে পারি, তাহলে আমাদের দিকেই আসবে সবকিছু।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ র য ঞ চ ইজ আম দ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলিম বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আহ্বান
ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে র্যালি করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই কর্মসূচি।
র্যালি–পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অন্য যেকোনো সভার চেয়ে এই প্রতিবাদ মিছিল অস্বাভাবিক বড় হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও এতে অংশ নিয়েছেন। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।’
ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্ব মুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। মুসলিম বিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা সাহস দেখাতে পারত না বলে অভিমত দেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনে চলমান সহিংসতার ছবি দেখলে সহ্য করা যায় না বলেও উল্লেখ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় যেমন জিয়াউর রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতেন এবং ইসরায়েল এমন সহিংসতা চালানোর সাহস পেত না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বিশ্বের কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিস্তিনে গণহত্যা শুরু হয়েছে। আজ ফিলিস্তিনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিম বিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না।’
গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলছে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গণহত্যা বন্ধের জোর দাবি করছি।’
সালাহ উদ্দিন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ইসরায়েলকে পরোক্ষভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের সঙ্গে ইসরায়েলের কাছ থেকে আড়িপাতার যন্ত্র কিনেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে জিয়াউর রহমান ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেই থেকেই বিএনপি ফিলিস্তিনের জনগণের সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। আজ গাজা যেন অবরুদ্ধ খাঁচা, যেখানে শিশু ও নারীদের ওপর বর্বরতা চালানো হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার।’
ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, তারা ইসরায়েলের পক্ষে কাজ করছে বলেই মনে করব। তাদের প্রতিহত করতে হবে, তবে কোনোভাবেই মারপিট নয়—পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ ধরে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চলছে। নারী-পুরুষ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এটা সরাসরি মানবতাবিরোধী অপরাধ। দেশের সাধারণ মানুষ দল–মতনির্বিশেষে ফিলিস্তিনের পক্ষে, কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের থেকে তেমন কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘও নিষ্ক্রিয়—একটি ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে গেছে।’
র্যালি–পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু। সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বিএনপির এই কর্মসূচি বিকেল চারটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা আড়াইটা থেকেই নয়াপল্টনে নেতা–কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফিলিস্তিনের পতাকা ও কালো ব্যানার নিয়ে নেতা–কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেন নয়াপল্টন এলাকা।
র্যালিটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে শান্তিনগর, মৌচাক, মগবাজার হয়ে বাংলামোটরে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে র্যালি শুরু হয়। সারা পথজুড়েই ছিল ব্যাপক জনসমাগম ও প্রতিবাদী স্লোগান। বিএনপির নেতা–কর্মীরা ‘ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করো, দুনিয়ার মুসলিম এক হও লড়াই করো’, ‘ফিলিস্তিনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিএনপির নেতারা জানান, এই কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া হয়েছে—গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জনগণ ফিলিস্তিনের পাশে আছে।