রক্তে তাঁর অভিনয়, সেই কারিশমা তিনি দেখিয়েছেন পর্দায়। একজন প্রেমিকা হারানো প্রেমিক কতটা দুঃখ-বিভোর থাকতে পারে, সেটা অভিনয়ে বাপ্পারাজ দেখিয়ে গেছেন। নব্বইর দশকে প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার পর প্রেমিকদের অবস্থা যেমন হতো, বাপ্পারাজ তা অভিনয়ের মাধ্যমে জীবন্ত করে তুলেছেন পর্দায়। তাই আজও ব্যর্থ প্রেমিকের সফল অভিনেতার স্বীকৃতিটা তাঁর দখলেই রয়েছে। নায়করাজ রাজ্জাকের সন্তান তিনি। পিতার সেই পরিচয়ে নিজেকে তিনি আবদ্ধ রাখেননি।
অভিনয়ে নিজের প্রতিভা ও মেধার বিকাশ ঘটিয়ে নিজের আলাদা পরিচয় গড়েছেন। অথচ এ বাপ্পারাজ এখন অভিনয়হীন। তাঁকে দেখা যায় না, সিনেমার পর্দায় কিংবা হালের ওটিটির জোয়ারে। অথচ প্রায়ই তিনি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন ইস্যুতে। তাঁর গান, তাঁর সিনেমার সংলাপ ফিরে আসে এ জেনারেশনের মাঝে। সম্প্রতি তাঁর ৩০ বছর আগের ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমায় ‘চাচা হেনা কোথায়?’ সংলাপের কারণে নতুন করে আলোচনায় এলেন বাপ্পারাজ। সঙ্গে খবর এলো বাপ্পারাজ নতুন একটি ওয়েব কনটেন্টে ‘রক্তঋণ’-এ কাজ করেছেন। যেখানে প্রেমিক নয়, অ্যাকশন অবতারে দেখা যাবে তাঁকে। সম্প্রতি একটি ক্যারেক্টার টিজার পোস্ট করে তেমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন বাপ্পারাজ। যেখানে তিনি বলছেন, ‘অনেক তো বিরহ হলো। এবার একটু অ্যাকশন হয়ে যাক।’ কনটেন্টটি পরিচালনা করছেন মোস্তফা খান সিহান। নির্মাতা জানান, থ্রিলার রহস্য গল্পে নিয়ে আসছি। শুটিং চলমান। তার আগে দর্শকদের জানালাম, কী আনছি আমরা।
২০১৮ সালে রায়হান রাফী পরিচালিত ‘পোড়ামন ২’ ছবিতে দেখা গিয়েছিল বাপ্পারাজকে। বহুবছর পর ছবিতে সিয়ামের বড়ভাই-এর চরিত্রে অভিনয় করে তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন। এরপর থেকে স্ক্রিনে মিসিং বাপ্পারাজ! যদিও এই অভিনেতা একাধিকবার ইচ্ছে পোষণ করেন যে, তিনি ভালো গল্প, চরিত্র পেলে কাজ করবেন, তবুও কেন তাঁকে পর্দায় দেখা যায় না?
বাপ্পারাজ বলেছিলেন, আমার কাছে যেসব সিনেমার প্রস্তাব যায়, প্রায় একই চরিত্র। বারবার একই চরিত্রে কাজ করতে মজা লাগে না। বয়স হয়েছে, তাই ভারী কিছু চরিত্রে অভিনয় করতে চাই।
‘বাবা কেন চাকর’ ছবির নায়ক বাপ্পারাজ বলেন, এ শুক্রবারেও একটি ছবির প্রস্তাব পেয়েছি। পাণ্ডুলিপি পড়ে দেখলাম, বেডসিন। এ বয়সে আমি কি বেডসিন করব? আরে ব্যাটা, আগে দেখে আয় আমার ছবিগুলো। আমি কি এ ধরনের একটি ছবিও করেছি? মাঝখানে ওটিটিতেও কয়েকটি প্রস্তাব পেয়েছিলাম, সেগুলোও এমন অ্যাডাল্ট। ক্যামেরার বাইরে থাকতে খুব কষ্ট হয়। সারাক্ষণই কানে বাজে, লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন। মিস করি শুটিং। তাই বলে এ ধরনের চরিত্রে তো অভিনয় করতে পারব না। সমাজ নষ্ট করার অধিকার তো আমার নেই।
বাপ্পারাজদের নিজস্ব প্রোডাকশন হাউস ‘রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন’ থেকে নতুন ছবি করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন ছবি নির্মাণ করা মানে নিজেকে অপরাধী করে তোলা। একসময় যারা আমাদের অফিসে এসে বসে থাকত, এখন তারা পরিবেশক। তাদের হাতে-পায়ে ধরে ছবি চালাতে পারব না। আমাদের মাফ করবেন। কখনও ইন্ডাস্ট্রি স্বাভাবিক হলে আবার ছবি নির্মাণ করব।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বছরেও শেষ হয়নি ৩৭ মিটার সেতুর কাজ
ধর্মপাশা উপজেলা সদরের মধ্যবাজারে অবস্থিত মাত্র ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্যের শয়তানখালী সেতুর পুনর্নির্মাণ কাজ দুই বছরেরও শেষ হয়নি। নির্মাণকাজে অবহেলা ও ধীরগতির কারণে ঠিকাদারের ওপর অসন্তুষ্ট থাকলেও এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত সময়ে সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে প্রায় ১৫-২০টি গ্রামের মানুষকে।
জানা যায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে অর্ধশত বছরের পুরোনো শয়তানখালী সেতুটি দেবে যেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সেতুটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তখন সেতুটির ওপর দিয়ে পথচারী ও যান চলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। দেবে যাওয়া পুরোনো সেতুর পরিবর্তে নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ২০২৩ সালে এলজিইডির হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শয়তানখালী সেতু নির্মাণসহ ধর্মপাশা থানার সামনে থেকে বাহুটিয়াকান্দা পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মিটার সড়ক ও একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার ৪৮০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ কাজ বাস্তবায়নে সুনামগঞ্জের মাহবুব এন্টারপ্রাইজকে ঠিকাদার নিযুক্ত করে ওই বছরের ২৬ মার্চ কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। একই বছরের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সেতু ও সড়ক নির্মাণের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। কাজে ধীরগতির অভিযোগ এনে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ধর্মপাশা বাজারের ব্যবসায়ীরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু এতেও কোনো হেলদোল নেই ঠিকাদারের। ঠিকাদার আগের মতোই ধীরগতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ধর্মপাশা বাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, শয়তানখালী সেতুটি দ্রুত নির্মাণ না হওয়ায় মধ্যবাজারের ব্যবসায়ীরা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ব্যবসায় মন্দা দেখা দেওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
আরেক ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ বলেন, শয়তানখালী সেতুটির কারণে দীর্ঘ চার বছর ধরে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করা হলে মধ্যবাজারে ব্যবসায় গতি ফিরে আসবে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবুল মহসিন মো. মাহবুবের ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। প্রকল্প সাইটে ঠিকাদারের নিযুক্ত ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি রাজধানীর হাতিরঝিলের সেতুর আদলে তৈরি হচ্ছে। শুরুর দিকে মিস্ত্রি পাওয়া যাচ্ছিল না এবং গত বর্ষায় কাজ করতে না পারায় কাজ পিছিয়েছে। মাস দুয়েকের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করা যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন বলেন, অত্যন্ত ধীরগতিতে সেতুটির নির্মাণকাজ চলতে থাকায় প্রকল্প পরিচালক কার্যাদেশ বাতিল করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়ার কারণে কাজটি আরও পিছিয়ে যেতে পারে– এমন ভাবনা থেকে তা করা হয়নি। তাই ঠিকাদারকে সতর্ক করে দিয়ে আগামী ২৫ জুনের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে কার্যাদেশ বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করা হবে।