ময়মনসিংহে মুক্তিপণ না পেয়ে শিশু হত্যার দায়ে যুবকের আমৃত্যু কারাদণ্ড
Published: 6th, February 2025 GMT
ময়মনসিংহের নান্দাইলে ৭ বছর বয়সী এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে মো. শহিদ মিয়া (২৫) নামের এক আসামিকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালতের বিচারক আলী মনসুর এ রায় দেন। একই সঙ্গে তাঁকে ৭৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাজাপ্রাপ্ত আসামি শহিদ নান্দাইল উপজেলার মুশুল্লি ইউনিয়নের আগ মুশুল্লি গ্রামের বাসিন্দা। একই গ্রামের আবদুল কাইয়ুম ও পলিনা খাতুন দম্পতির ৭ বছর বয়সী ছেলে মো.
পরে ১৭ আগস্ট শহিদ মিয়াকে আটকের পর তাঁর দেখানো স্থান থেকে শিশু তাসিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মুক্তিপণ না দেওয়ায় শিশুটিকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর একটি টয়লেটের সেফটিক ট্যাংকের ভেতর ফেলে রাখা হয়েছিল। ওই ঘটনায় শিশুটির মা ১৭ আগস্ট বাদী হয়ে ১১ জনকে আসামি করে থানায় আরেকটি মামলা করেন। আসামিদের সঙ্গে বাড়ির সীমানা ও গাছপালা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে পুলিশ মামলাটির তদন্ত শেষে শহিদ মিয়া, তাঁর বাবা তাহের উদ্দিন ও মা তহুরা খাতুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
মামলাটির দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ বৃহস্পতিবার রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত। রায়ে শহিদ মিয়াকে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বাকি দুই আসামি তাহের উদ্দিন ও তহুরা বেগমকে খালাস দেন বিচারক। রায়ের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন আসামি শহিদ মিয়া। ময়মনসিংহ আদালত পরিদর্শক মোস্তাছিনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মনোয়ার বেগম এবং রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন এপিপি মো. শামীম উল আজম খান।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহের মিনি চিড়িয়াখানায় ভালুকের শরীরে পচন
ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় একটি ভালুকের শরীরে পচন ধরেছে। ইতিমধ্যে প্রাণীটির পায়ের অংশবিশেষ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ভালুকটির শরীর থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধও। ভালুকটিকে সারিয়ে তোলা কঠিন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৩ সালের দিকে নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনি চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়। হরিণ, ভালুক, কুমির, হনুমান, গাধা, অজগরসহ ২৪ প্রজাতির প্রাণী ছিল চিড়িয়াখানাটিতে। তবে মেছো বাঘের মৃত্যুর পর বর্তমানে সেখানে ২৩ প্রজাতির প্রাণী আছে। ৩০ টাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানাটিতে ঢুকতে পারেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জায়গা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে চিড়িখানাটি।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. সিদ্দীকুর রহমান বলেন, সাবেক কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান তাঁর শ্যালকের নামে চিড়িয়াখানাটির জায়গা বরাদ্দ নিয়েছিলেন। প্রয়োজনে বিনা নোটিশে বরাদ্দ বাতিল করা হবে—এই শর্তে জায়গাটি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চিড়িয়াখানাটির সরঞ্জাম ও প্রাণী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা করেছে।
আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ২ নম্বর প্যানেল মেয়র মাহবুবুর রহমান গত ৮ মার্চ গ্রেপ্তার হন। চিড়িয়াখানার কর্মী মিজানুর রহমান বলেন, মাহবুবুর রহমান চিড়িয়াখানা দেখাশোনা করতেন। তিনি কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর পরিবারের লোকজন মাঝেমধ্যে আসেন। তবে এখন তাঁর কর্মীরা এটি পরিচালনা করছেন, নিজেদের বেতন নিচ্ছেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে সরেজমিনে চিড়িয়াখানায় একটি খাঁচায় দুটি কালো রঙের ভালুক দেখা যায়। এর মধ্যে একটি ভালুকের বা পায়ে পচন ধরেছে। ওই পায়ে হলুদের গুঁড়া ছিটাচ্ছেন এক ব্যক্তি।
চিড়িয়াখানা পরিচালনাকারীদের কাছ থেকে খবরে পেয়ে গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল আলম ভালুকটি দেখতে আসেন। অন্য ভালুকটির শরীরেও রোগ ছড়াতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি অসুস্থ ভালুকটিকে অন্যত্র স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।
অধ্যাপক মো. রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভালুকের শরীরে সংক্রমণ রয়েছে। অসুস্থ ভালুকটির সেরে ওঠার সম্ভাবনা খুব কম। তারপরও তাঁরা সারিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন।
নগরীর সানকিপাড়ার বাসিন্দা দুবাইপ্রবাসী সাফি আহমেদ গতকাল চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অসুস্থ ভালুকটি দেখে অনেক দর্শনার্থীর মন খারাপ হয়। সেটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া উচিত।
চিড়িয়াখানার ভালুক দুটির বয়স কত, সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি চিড়িয়াখানার কর্মীরা। চিড়িয়াখানার ১০ কর্মীর একজন কামাল হোসেন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে প্রাণীগুলোর দেখাশোনা করছেন। কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুটি ভালুকই পুরুষ। এগুলো ২০১৩ সালে ছোট অবস্থায় আনা হয়। তখন ঘর ছোট ছিল। কিন্তু প্রাণীগুলো বড় হলেও ঘর বড় হয়নি। দুটি ভালুক প্রায়ই একে অন্যকে আক্রমণ করে। ১৮–২০ দিন আগে একটি ভালুকের পা কামড়ে ছিঁড়ে ফেলেছে অন্যটি। তারপর স্থানীয় প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন তাঁরা। কিন্তু ভালুকের পায়ের ক্ষত বাড়ছে। তাঁর দাবি, তাঁরা পশু-পাখি নিয়ে কখনো গাফিলতি করেন না। দর্শনার্থীরা এসে এখানে সৌন্দর্য দেখতে চান। তাঁরা চিড়িয়াখানা পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করেন।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজিদ বলেন, চিড়িয়াখানার জন্য সিটি করপোরেশন শুধু জমি বরাদ্দ দিয়েছে। সেখানকার প্রাণীর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের নয়। তিনি বলেন, ভালুকটিকে চিকিৎসা করিয়ে সারিয়ে তুলতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। তারা যদি প্রাণীদের সুরক্ষা দিতে না পারে ও চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে, তাহলে ইজারা বাতিলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।