‘আরে, তোমারও তো চুলে পাক ধরে গেছে দেখছি!’ বিস্মিত হয়ে যে বন্ধু এ কথাটা বলেছিল, সে আসলে হিসাব রাখেনি, কতটা সময় ক্ষয়ে যাওয়ার পর আমাদের এই পরিবর্তন। তাই ওর কথা আমাকে অবাক করেনি। কিন্তু চমকে গেছি, যখন সে প্রিয় এক কণ্ঠশিল্পীর প্রসঙ্গ টেনে এনেছে। বিস্ময় নিয়ে বলেছে, ‘আমরা সেই স্কুলজীবন থেকে আঁখি আলমগীরের গান শুনছি। কিন্তু দেখো, এখনও সে একই রকম আছে! কিশোরীর খোলস ছেড়ে সদ্য বেরিয়ে আসা তরুণীকে যেমন দেখায়, শুরুতে তেমনই দেখাত। এখন পরিপূর্ণ নারী, তারপরও সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে একই রকম রয়ে গেছেন। অথচ মাঝেখানে পেরিয়ে গেছে ৩০ বছর– ভাবা যায়!’ বন্ধু তো রূপ-লাবণ্যে খুন, তাই আসল কথটা বলতেই ভুলে গেছে। সেটি স্মরণ করিয়ে দিতেই বললাম, চল্লিশ-পঞ্চাশ পেরোলেও চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েনি, এমন তারকা তো আরও কয়েকজন আছে। 

এদিকে থেকে আঁখি আলমগীরের প্লাস পয়েন্ট হলো, তাঁর কণ্ঠের মাদকতা ধরে রাখতে পারা। সেটি ধরে রাখতে পেরেছেন বলেই আমরা কখনও তাঁকে থেমে থাকতে দেখিনি। একের পর এক নতুন গানের আয়োজন করে যাওয়া, দেশ-বিদেশের মঞ্চে ছুটে চলা; রেডিও, টিভি, সিনেমা, অনলাইন– সব মাধ্যমেই সমানভাবে গান গেয়ে যাওয়া– চলছে তো চলছেই। ‘তাই তো, এ কথা একদম ঠিক। আঁখি আলমগীরের ভক্ত বনে যাওয়ার পর আমরা তো শুধু সামনের দিনগুলোর অপেক্ষায় থেকেছি। খোঁজ-খবর রেখেছি, কবে, কখন, কোথায় পারফর্ম করবেন। রেডিও, টিভি, মঞ্চ– সেখানে মাধ্যমে তাঁর গান শোনার সুযোগ এসেছে, সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। ক্যাসেট-সিডি যুগের পর এখন অনলাইনে তাঁর গান শুনে যাচ্ছি। আর এভাবেই কখন যে এতটা সময় পেরিয়ে গেছে, বুঝতেই পরিনি।’ 


অজ্ঞাত দুই ভক্তের এই কথোপকথন যখন আঁখি আলমগীরের সামনে তুলে আনা হলো, তখন তাঁর মুখে ছিল একচিলতে মিষ্টি হাসি। মুখের সেই মিষ্টি হাসি ধরে রেখেই বললেন, ‘সত্যি, নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে এটা জেনে যে, এখনও গান আর গায়কি নিয়ে শ্রোতারা আলোচনায় মুখর থাকেন। আসলে নিজেও তো কখনও হিসাব-নিকাশ করিনি, গানে গানে কতটা সময় পেরিয়ে এসেছি। ক’দিন আগে সাংবাদিক বন্ধুরাই এটি মনে করিয়ে দিয়েছেন। তারপর যখনই এ প্রসঙ্গ এসেছে, তখন অবাক হয়েছি এই ভেবে যে, এতদিনে যার পরিচিতি গড়ে ওঠার কথা আইনজীবী হিসেবে, এখন সবাই তাঁকে চেনেন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। মানবজীবন সত্যি রহস্যময়।’

আঁখির এই কথা আবাক করেছে আমাদেরও। যদিও আমরা জানি, তিনি ভালো ছাত্রী ছিলেন, আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। আইন পেশায় নিজেকে জড়াতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু কণ্ঠশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন কখনোই দেখেননি, এ কথা সত্যি অবাক করার মতো। দেশের শীর্ষ অভিনেতা আলমগীর ও নন্দিত গীতিকবি খোশনূরের এই উত্তরসূরির সংস্কৃতি অঙ্গনের পা রাখবেন না, এটি ভাবাও অনেকের জন্য কঠিন। ছোটবেলায় সংগীতে যাঁর তালিম নেওয়ার সুযোগ হয়েছে, অভিজ্ঞতা হয়েছে বেতার ও টিভিতে পারফর্ম গান তালিকাভুক্ত শিল্পী হওয়ার, ‘ভাত দে’ সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও যাঁর ঝুলিতে উঠেছে, সেই মানুষটি অঙ্গন থেকে দূরে সরে যাবেন– এটি হয়তো প্রকৃতিও চায়নি। আর চায়নি বলেই ঘটনার পাকচক্রে আঁখি আলমগীর হয়ে উঠেছেন সময়ের আলোচিত ভার্সেটাইল কণ্ঠশিল্পী। গানই হয়ে উঠেছে তাঁর পেশা ও নেশা। তাই গানে গানে তাঁকে কুড়িয়ে নিতে হচ্ছে শ্রোতার ভালোবাসা। 

আঁখির কথায়, “ভালোবাসার শক্তি অপরিসীম। নইলে যে আমি শখে গান করতাম, সেই আমি এখন সংগীতের নেশায় আসক্ত। যা শুধু শ্রোতাদের ভালোবাসার কারণে। ১৯৯৪ সালে যখন ‘বিদ্রোহী বধূ’ সিনেমায় প্লেব্যাক করি, তখনও জানতাম না আমার ভবিষ্যৎ কী? এরপর অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতা থেকে যখন অ্যালবাম করার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখনও শিল্পী হওয়ার বাসনা প্রবল হয়ে ওঠেনি। কিন্তু প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে প্রশংসা আর অ্যালবামের গানের সুবাদে শ্রোতাদের মনোযোগ কেড়ে নিতে পারায় তাদের কাছে প্রত্যাশার একটা জায়গাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়েই আর থেমে থাকার অবকাশ হয়নি। ভালো লাগা এখানেই যে, সাংস্কৃতিক বলয়ে বেড়ে উঠলেও মা-বাবার পরিচয়কে পুঁজি করে কোনো কিছু অর্জন করতে হয়নি। নিজেও তা চাইনি। আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে সব সময় কাজ করেছি, এখনও করছি। গানের ভুবনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার এটাই মূলমন্ত্র। তারপরও আমি মনে করি, তিন দশকের শিল্পীজীবনে আমার প্রাপ্তি অনেক, যা কখনও কল্পনা করিনি। তাই বাড়তি যা কিছু পেয়েছি, তার প্রতিদানে গানে গানেই দিয়ে যেতে চাই।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আ খ আলমগ র আলমগ র র

এছাড়াও পড়ুন:

শিবলী রুবাইয়াত-আলমগীর কারাগারে, রিমান্ড শুনানি বৃহস্পতিবার 

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন। রিমান্ড শুনানির জন্য আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়েছে। 

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের পৃথক দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর আলাদা দুটি মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে দুদক। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানি করেন। এ বিষয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়েছে। 

বুধবার দুদকের উপ-পরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. মাসুদুর রহমান বাদী হয়ে শিবলী রুবাইয়াতসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন—মোনার্ক হোল্ডিং ইনকর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জাবেদ এ মতিন, ঝিন বাংলা ফেব্রিক্সের মালিক আরিফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির দিলকুশা শাখার ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের সাবেক ইনচার্জ ইসরাত জাহান, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকবাল হোসেন এবং এসইভিপি সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ভুয়া বাড়িভাড়া চুক্তিনামা দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা বা প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার ৩০৮ ইউএস ডলার ঘুষ গ্রহণ করেন। এছাড়া, ভুয়া বিক্রয় চুক্তি দেখিয়ে পণ্য রপ্তানি না করে প্রতারণা ও জালিয়াতি করা হয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা কাস্টমার ডিউ ডিলিজেন্স অনুসরণ না করে এবং পণ্য রপ্তানির বিপরীতে কোনো রেকর্ডপত্র না পেয়েও কর্তব্যে অবহেলা ও পরস্পর যোগসাজশে নিজের বা অন্য কারো অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে ৩ লাখ ৬১ হাজার ডলার টাকা বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে তিনি ১ কোটি ৮৪ লাখ ২৮ হাজার টাকা নিজে গ্রহণ করেন। 

অন্যদিকে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের নামে মোট ৭২ কোটি ৮৫ লাখ ৩ হাজার ৫২৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে, যার বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় ৫৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭ টাকা। এক্ষেত্রে তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ ২৭ কোটি ৮৬ লাখ ২০ হাজার ৯০৮ টাকা। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে গত ১৬ বছরে রেলের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। 

ঢাকা/মামুন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এই বসন্তে এই সুন্দরে
  • শিবলী ও আলমগীরকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ
  • ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যানকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি
  • শিবলী রুবাইয়াতের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে মামলা
  • শিবলী রুবাইয়াত ও গোলাম মোহাম্মদ কারাগারে, রিমান্ড শুনানি বৃহস্পতিবার
  • শিবলী রুবাইয়াত-আলমগীর কারাগারে, রিমান্ড শুনানি বৃহস্পতিবার 
  • এ সময়ে ত্বকের যত্ন
  • দিনাজপুরে শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামি পঞ্চগড় থেকে গ্রেপ্তার
  • যারা কোনোদিন মন থেকে মুছবে না