শিল্পীজীবনে প্রাপ্তি অনেক, যা কখনও কল্পনা করিনি: আঁখি
Published: 6th, February 2025 GMT
‘আরে, তোমারও তো চুলে পাক ধরে গেছে দেখছি!’ বিস্মিত হয়ে যে বন্ধু এ কথাটা বলেছিল, সে আসলে হিসাব রাখেনি, কতটা সময় ক্ষয়ে যাওয়ার পর আমাদের এই পরিবর্তন। তাই ওর কথা আমাকে অবাক করেনি। কিন্তু চমকে গেছি, যখন সে প্রিয় এক কণ্ঠশিল্পীর প্রসঙ্গ টেনে এনেছে। বিস্ময় নিয়ে বলেছে, ‘আমরা সেই স্কুলজীবন থেকে আঁখি আলমগীরের গান শুনছি। কিন্তু দেখো, এখনও সে একই রকম আছে! কিশোরীর খোলস ছেড়ে সদ্য বেরিয়ে আসা তরুণীকে যেমন দেখায়, শুরুতে তেমনই দেখাত। এখন পরিপূর্ণ নারী, তারপরও সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে একই রকম রয়ে গেছেন। অথচ মাঝেখানে পেরিয়ে গেছে ৩০ বছর– ভাবা যায়!’ বন্ধু তো রূপ-লাবণ্যে খুন, তাই আসল কথটা বলতেই ভুলে গেছে। সেটি স্মরণ করিয়ে দিতেই বললাম, চল্লিশ-পঞ্চাশ পেরোলেও চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েনি, এমন তারকা তো আরও কয়েকজন আছে।
এদিকে থেকে আঁখি আলমগীরের প্লাস পয়েন্ট হলো, তাঁর কণ্ঠের মাদকতা ধরে রাখতে পারা। সেটি ধরে রাখতে পেরেছেন বলেই আমরা কখনও তাঁকে থেমে থাকতে দেখিনি। একের পর এক নতুন গানের আয়োজন করে যাওয়া, দেশ-বিদেশের মঞ্চে ছুটে চলা; রেডিও, টিভি, সিনেমা, অনলাইন– সব মাধ্যমেই সমানভাবে গান গেয়ে যাওয়া– চলছে তো চলছেই। ‘তাই তো, এ কথা একদম ঠিক। আঁখি আলমগীরের ভক্ত বনে যাওয়ার পর আমরা তো শুধু সামনের দিনগুলোর অপেক্ষায় থেকেছি। খোঁজ-খবর রেখেছি, কবে, কখন, কোথায় পারফর্ম করবেন। রেডিও, টিভি, মঞ্চ– সেখানে মাধ্যমে তাঁর গান শোনার সুযোগ এসেছে, সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। ক্যাসেট-সিডি যুগের পর এখন অনলাইনে তাঁর গান শুনে যাচ্ছি। আর এভাবেই কখন যে এতটা সময় পেরিয়ে গেছে, বুঝতেই পরিনি।’
অজ্ঞাত দুই ভক্তের এই কথোপকথন যখন আঁখি আলমগীরের সামনে তুলে আনা হলো, তখন তাঁর মুখে ছিল একচিলতে মিষ্টি হাসি। মুখের সেই মিষ্টি হাসি ধরে রেখেই বললেন, ‘সত্যি, নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে এটা জেনে যে, এখনও গান আর গায়কি নিয়ে শ্রোতারা আলোচনায় মুখর থাকেন। আসলে নিজেও তো কখনও হিসাব-নিকাশ করিনি, গানে গানে কতটা সময় পেরিয়ে এসেছি। ক’দিন আগে সাংবাদিক বন্ধুরাই এটি মনে করিয়ে দিয়েছেন। তারপর যখনই এ প্রসঙ্গ এসেছে, তখন অবাক হয়েছি এই ভেবে যে, এতদিনে যার পরিচিতি গড়ে ওঠার কথা আইনজীবী হিসেবে, এখন সবাই তাঁকে চেনেন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। মানবজীবন সত্যি রহস্যময়।’
আঁখির এই কথা আবাক করেছে আমাদেরও। যদিও আমরা জানি, তিনি ভালো ছাত্রী ছিলেন, আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। আইন পেশায় নিজেকে জড়াতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু কণ্ঠশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন কখনোই দেখেননি, এ কথা সত্যি অবাক করার মতো। দেশের শীর্ষ অভিনেতা আলমগীর ও নন্দিত গীতিকবি খোশনূরের এই উত্তরসূরির সংস্কৃতি অঙ্গনের পা রাখবেন না, এটি ভাবাও অনেকের জন্য কঠিন। ছোটবেলায় সংগীতে যাঁর তালিম নেওয়ার সুযোগ হয়েছে, অভিজ্ঞতা হয়েছে বেতার ও টিভিতে পারফর্ম গান তালিকাভুক্ত শিল্পী হওয়ার, ‘ভাত দে’ সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও যাঁর ঝুলিতে উঠেছে, সেই মানুষটি অঙ্গন থেকে দূরে সরে যাবেন– এটি হয়তো প্রকৃতিও চায়নি। আর চায়নি বলেই ঘটনার পাকচক্রে আঁখি আলমগীর হয়ে উঠেছেন সময়ের আলোচিত ভার্সেটাইল কণ্ঠশিল্পী। গানই হয়ে উঠেছে তাঁর পেশা ও নেশা। তাই গানে গানে তাঁকে কুড়িয়ে নিতে হচ্ছে শ্রোতার ভালোবাসা।
আঁখির কথায়, “ভালোবাসার শক্তি অপরিসীম। নইলে যে আমি শখে গান করতাম, সেই আমি এখন সংগীতের নেশায় আসক্ত। যা শুধু শ্রোতাদের ভালোবাসার কারণে। ১৯৯৪ সালে যখন ‘বিদ্রোহী বধূ’ সিনেমায় প্লেব্যাক করি, তখনও জানতাম না আমার ভবিষ্যৎ কী? এরপর অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতা থেকে যখন অ্যালবাম করার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখনও শিল্পী হওয়ার বাসনা প্রবল হয়ে ওঠেনি। কিন্তু প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে প্রশংসা আর অ্যালবামের গানের সুবাদে শ্রোতাদের মনোযোগ কেড়ে নিতে পারায় তাদের কাছে প্রত্যাশার একটা জায়গাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়েই আর থেমে থাকার অবকাশ হয়নি। ভালো লাগা এখানেই যে, সাংস্কৃতিক বলয়ে বেড়ে উঠলেও মা-বাবার পরিচয়কে পুঁজি করে কোনো কিছু অর্জন করতে হয়নি। নিজেও তা চাইনি। আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে সব সময় কাজ করেছি, এখনও করছি। গানের ভুবনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার এটাই মূলমন্ত্র। তারপরও আমি মনে করি, তিন দশকের শিল্পীজীবনে আমার প্রাপ্তি অনেক, যা কখনও কল্পনা করিনি। তাই বাড়তি যা কিছু পেয়েছি, তার প্রতিদানে গানে গানেই দিয়ে যেতে চাই।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আ খ আলমগ র আলমগ র র
এছাড়াও পড়ুন:
নারী-শিশুর প্রতি বাড়ছে সহিংসতা
আদালতের নির্দেশনার পরও কমছে না নারীর প্রতি সহিংসতা। গত মাসেই অন্তত ১০৭ নারী ও কন্যাশিশু নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এক মাসে ৫৩ জন ধর্ষণের শিকার, যাদের মধ্যে ৩৮ জনই অপ্রাপ্তবয়স্ক। সাম্প্রতিক সময়ে ‘মব ভায়োলেন্স’-এর মাধ্যমে নারী হয়রানি হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ ঘটনায় অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা ফিরছে আরও বেপরোয়া হয়ে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগের তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ধূমপান করা নিয়ে দুই নারীকে হয়রানির রেশ না কাটতেই সামনে এসেছে ‘ওড়না’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত বুধবার ‘ওড়না পরা’ নিয়ে কটূক্তির মাধ্যমে এক ছাত্রীকে হেনস্তা করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থগারের সহকারী বাইন্ডার মোস্তফা আসিফ অর্ণব। ভুক্তভোগী মামলা করলেও, শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার প্রশ্নে তুলে নিতে হয়েছে। কারণ এ ঘটনার সঙ্গে ধর্মকে যুক্ত করে অর্ণবকে হিরো বানানো হয়েছে। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর ‘তৌহিদি জনতা’র থানা ঘেরাও এবং পরদিন দুপুরেই অর্ণবের জামিনে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েন ওই শিক্ষার্থী।
নিপীড়কের পার পেয়ে যাওয়া অশনিসংকেত বলছেন নারীবাদীরা। ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নারীর প্রতি একের পর এক অবমাননাকর ঘটনা ঘটছে। কিন্তু একটিরও যথাযথ বিচার হচ্ছে না। অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের, প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের বক্তব্য কখনও কখনও অপরাধ উস্কে দিচ্ছে।’
‘মব জাস্টিস’ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আসলে মব ভায়োলেন্স। জাস্টিস শব্দজুড়ে অপরাধকে প্রশ্রয় কিংবা জায়েজ করা হচ্ছে। নারীর অধিকার, নারীর প্রতি সম্মান না দেখিয়ে সমাজকে অধঃপতনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নারীর সম্মান ও অধিকার নিশ্চিতে রাষ্ট্রকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের জরিপে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক নারী প্রতিনিয়ত রাস্তা, পাবলিক পরিবহন এমনকি জনসেবামূলক স্থানে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এর মূল কারণ যৌন হয়রানি ও অপর্যাপ্ত নারীবান্ধব পরিবেশ। আবার বেশির ভাগ নারী মনে করেন, নিরাপত্তাহীনতা থেকে তাদের মুক্তি নেই। কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে নারী।
যৌন হয়রানি নিরসনে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত নির্দেশনা দেন। কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি করতে বলেন। কিন্তু ২০১৮ সালের এক গবেষণায় বলা হয়, অধিকাংশ কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪ ভাগ শিক্ষার্থী কমিটির বিষয়ে কিছুই জানেন না।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) জরিপে বলা হয়েছে, শুধু ফেব্রুয়ারিতে ১০৭ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ৫৩ জনের মধ্যে ৩৮ নারীর বয়সই ১৮ বছরের কম। উদ্বেগ জানিয়ে সংস্থাটি বলেছে, এটি খুবই উদ্বেগের যে, ১৩ নারী ও কন্যাশিশু দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে দু’জন আত্মহত্যা করেন। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে মারা গেছেন ৩৩ জন।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক এবং অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম সমকালকে বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা আগেও হতো, এখনও হচ্ছে। তবে এখন জনসমক্ষে নারী নিপীড়ন বেশি হচ্ছে। কারণ একটি বিশেষ গোষ্ঠী মনে করছে, এসব করলেও তাদের কেউ কিছু করতে পারবে না। আবারও রাষ্ট্রও তাদের রুখতে নির্বিকার। ফলে নারী হয়ে পড়ছে নিরাপত্তাহীন।