ময়মনসিংহে ‘অজানা বিষক্রিয়ায়’ ৩ জনের মৃত্যু
Published: 6th, February 2025 GMT
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ‘অজানা বিষক্রিয়ায়’ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। আর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন চা বিক্রেতা আবদুল জলিল (৫২), ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক ওরফে নিজাম (৫৩) ও গাড়িচালক মো.
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোজাম্মেল হক পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছেন বলে গফরগাঁও এসেছিলেন। বুধবার রাতে গফরগাঁওয়ের চরমুসলন্দ গ্রামে আবদুল জলিলের বাড়িতে মোজাম্মেলসহ কয়েকজন আড্ডা দেন। সেখান থেকে আজ ভোর ৪টা ২০ মিনিটের দিকে আবদুল জলিল ও মোজাম্মেল হককে গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৬টার দিকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দুজনের মৃত্যুর প্রমাণপত্রে চিকিৎসক উল্লেখ করেন, ‘মৃত অবস্থায় দুজনকে আনা হয়। অজানা বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।’
এদিকে আজ ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরমুসলন্দ গ্রামের হাসিম মিয়ার ছেলে মো. সজীবকে (৩০) অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করা হয়। তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক।
গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আজ ভোরে প্রথম দুজনকে আনা হলে তাঁদের ময়মনসিংহে পাঠানো হয়। তাঁরা মদ্যপ ছিলেন। পরে সজীব নামের একজনকে আনা হয়; তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় সুমন নামের একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।
আজ দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরের সামনে নিহত মোজাম্মেল হকের চাচাতো ভাই জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘আমার ভাই বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছি বলে গত বুধবার ঢাকার বাসা থেকে বের হন। কী কারণে মারা গেছে, আমরা বলতে পারছি না।’
গফরগাঁও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সকাল সাড়ে ৯টায় সুমন মিয়াকে মৃত ঘোষণা করলে স্বজনেরা তাঁর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে দাফনের প্রস্তুতি শুরু করেন। সুমনের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার বলেন, তাঁর স্বামী মধ্যরাতে বাড়িতে ফেরেন। বাড়িতে ফেরার পর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আজ সকালে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিবিরুল ইসলাম বলেন, মোজাম্মেল হক এক বোতল হুইস্কি নিয়ে বন্ধু জলিলের বাড়িতে এসেছিলেন। সেখানে তাঁরা চার-পাঁচ বন্ধু মিলে মদ খান। অসুস্থ বোধ করলে তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। মৃত সুমনের বিষয়ে পুলিশের কাছে এখনো তথ্য আসেনি; তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ও স ব স থ য কমপ ল ক স ম জ ম ম ল হক চ ক ৎসক অবস থ য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
মাছবাহী গাড়ির পানি ঝরে ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার নাসির গ্লাস কারখানা থেকে নিশিন্দা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার এলাকায় অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। কিছু স্থানে খানাখন্দ এত বড়, সেসব স্থানে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভালুকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ২৫ কিলোমিটার এলাকা খানাখন্দে ভরে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে জামিরদিয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার আইডিয়াল মোড় থেকে উত্তরে স্কয়ার ফ্যাশান, মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ড হয়ে তেপান্তর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার। আমতলী, সিডস্টোর বাজার, ভালুকা সদরের খিরু নদীর দক্ষিণে এআর ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে উত্তরে থানার মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার। এ ছাড়া ভরাডোবার বাকসাতরা মোড় থেকে উত্তরে ক্লাবের বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঢাকাগামী লেনের কার্পেটিং উঠে অসংখ্য খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। কিছু খানাখন্দ যেন মরণফাঁদ। যেখানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
একাধিক গাড়িচালক জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকা উপজেলার মাস্টারবাড়ি ও থানার মোড় এলাকার কিছু রাস্তা সবচেয়ে খারাপ ও বিপজ্জনক। এসব এলাকায় গাড়ি চালানো অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের দাবি, মাছের গাড়ি থেকে পানি পড়ে সব সময় ওইসব গর্ত ভরে থাকে। অপরিচিত চালকরা গর্তের আকার ও গভীরতা বুঝতে না পারার কারণে প্রায়ই দেখা যায়, মাস্টারবাড়ি এলাকায় সড়কের গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টে আছে।
ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের তথ্যমতে, এমনিতেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন চলাচল করে। অপরদিকে সদর, ভালুকা ও ত্রিশাল উপজেলায় দেশের সবচেয়ে বেশি পাঙাশ মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব মাছ পানিভর্তি ড্রামে ট্রাকে এই মহাসড়ক দিয়ে রাজধানীসহ দেশের হাটবাজারে নেওয়া হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি রাতে ২৫০-৩৫০ ট্রাক মাছ পরিবহন করা হচ্ছে। মহাসড়কজুড়ে ওইসব মাছ বহনকারী ট্রাক থেকে অনবরত পানি পড়ছে। এই পানির কারণেই অল্প সময়ের মধ্যে মহাসড়কের কার্পেটিং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন জানান, মহাসড়কের কিছু স্থান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে ভালুকা উপজেলার ভরাডোবার ক্লাবের বাজার, ভালুকা সদরের থানার মোড় খিরু সেতুর দুই পাশ ও মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকার প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা। ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগ ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে অব্যাহত রুটিন ওয়ার্ক করলেও তা ২-৩ দিনের বেশি টিকছে না। তাঁর দাবি, কিছু ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ডাবল এইচবিবি করা হলেও বেশি দিন টিকছে না। সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার মূল কারণ প্রতিদিন মাছ বহনকারী শত শত ট্রাক ও পিকআপ থেকে অবিরাম পানি ঝরা। গত বছর সদর, ত্রিশাল ও ভালুকা উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মাছের গাড়িগুলোয় পানি সরবরাহ করা মহাসড়কের দু’পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ ৫০টিরও বেশি পানির পাম্প উচ্ছেদ করা হয়েছে। তাতেও ফল পাওয়া যায়নি। এক কথায়, মহাসড়কে পানি পড়া সম্পূর্ণ বন্ধ করতে না পারলে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবেই।
প্রকৌশলী খাইরুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন আমরা উল্লিখিত বিষয়ে লিখিতভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বারবার করেছি এবং মহাসড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে আরসিসি করার প্রস্তাব দিয়েছি। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো আরসিসি করার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম চলমান।’