ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে গতকাল বুধবার রাতে ভাঙচুর শুরু হয়। এর পর থেকে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের ম্যুরাল ভাঙচুর, আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি ও আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। খুলনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচার বাড়ি ‘শেখ বাড়ি’ ভাঙার মধ্য দিয়ে ঢাকার বাইরে এ ধরনের কাজ শুরু হয়।

চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

খুলনা
খুলনা নগরের ময়লাপোতা এলাকায় অবস্থিত ‘শেখ বাড়ি’র একটি অংশ এক্সকাভেটর দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার রাত নয়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ঘোষণা দিয়ে ওই ভাঙচুর শুরু করেন। রাতভর দুটি এক্সকাভেটর চালিয়ে বাড়ির প্রধান ফটক, দেয়ালসহ বেশির ভাগ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়িটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচা শেখ আবু নাসেরের। এ বাড়িতে শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, বিসিবির সাবেক পরিচালক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা শেখ সোহেল উদ্দিনসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতেন। মূলত ওই বাড়ি থেকেই পদ্মার এপারের আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো।

গত বছরের ৪ আগস্ট প্রথম দফায় বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল ছাত্র-জনতা। সেদিন বাড়িতে কেউ ছিলেন না। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর আবারও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। দরজা, জানালা থেকে শুরু করে কোনো কিছুই ছিল না। ভাঙচুর ও লুটপাটের পর বাড়িটিতে শুধু ইটপাথরের কাঠামোই অবশিষ্ট ছিল।

এদিকে গতকাল রাতেই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটিও এক্সকাভেটর দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙা হয়েছে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ির একটি অংশ। গতকাল রাত ১০টার দিকে শহরের পিটিআই সড়কে তিনতলা বাড়িটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে ভাঙা শুরু হয়। এর আগে গত ৪ আগস্ট ও ৫ আগস্ট এই বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, একটি এক্সকাভেটর নিয়ে প্রথমে বাড়ির প্রধান ফটক ও সীমানাপ্রাচীর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় ছাত্র-জনতা স্লোগান দিতে থাকে ‘স্বৈরাচারের আস্তানা জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’। এ সময় বাড়ির সামনে অনেকেই ভিড় করে। এর আগে উপজেলা মোড় থেকে একটি মশাল মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা হানিফের বাড়ির সামনে আসে। রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত হানিফের বাড়িতে ভাঙচুর চালান বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।

এদিকে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল থেকে শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নাম মুছে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর আগে রাত নয়টার দিকে ক্যাম্পাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙা ম্যুরালে ক্ষমতাচ্যুত সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার পোস্টার ঝুলিয়ে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে জুতা নিক্ষেপ করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘এক্সকাভেটর মিছিল’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের চারটি ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক আসলাম হোসেন ও সদস্যসচিব সাফ্ফাতুল ইসলামের নেতৃত্বে গতকাল রাত ১০টা থেকে ছাত্র-জনতা সংগঠিত হতে থাকে। রাত ১১টায় সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তাঁরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে যান। এরপর সেখানে শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের দুটি ম্যুরাল প্রথমে হাতুড়ি, শাবল ও রড দিয়ে ভাঙচুর করা হয়। দিবাগত রাত ১২টার দিকে এক্সকাভেটর দিয়ে তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ছাত্র-জনতা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে পৌঁছায়। এ সময় মিছিলকারীরা শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এক্সকাভেটর দিয়ে ভেঙে ফেলার পাশাপাশি প্রধান ফটক, গ্রিল, নিচতলার দেয়ালের আংশিক ভেঙে দেওয়া হয়। রাত একটার দিকে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল একই এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

যশোর
যশোরে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার সাতটি ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও নামফলক ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১১টা থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা হাতুড়ি দিয়ে এসব স্থাপনা ভাঙচুর করে। এসব স্থাপনা গত বছর ৫ আগস্টের পর কমবেশি ভাঙচুর করা হয়েছিল। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ভাঙচুরের কোনো নির্দেশনা ছিল না। কারা ভাঙচুর করেছে, তা তাঁরা জানেন না।

এদিকে যশোরের কেশবপুরে গতকাল রাতে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এ এস এস কে সাদেকের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।

বরিশাল
বরিশালে গতকাল রাত থেকে বুলডোজার দিয়ে সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ এবং প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর বাড়ি ভাঙা শুরু হয়েছে। গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কালীবাড়ি রোডে সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবনের সামনে ভিড় জমান। রাত দেড়টার দিকে বাসভবন ঘিরে ভাঙচুরের একপর্যায়ে বুলডোজার দিয়ে বাড়ির নিচতলার একাংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনতলায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। আজকেও বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙা চলছিল।
সাদিক আবদুল্লাহর বাবা সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই।

গতকাল রাত দুইটার দিকে বরিশাল নগরের বগুড়া রোডে আমির হোসেন আমুর বাসভবন বুলডোজার দিয়ে ভাঙা শুরু হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও শিক্ষার্থীরা সকাল পর্যন্ত তিনতলা বাড়ির একতলার নিচের অংশ ভেঙেছেন।

ভোলা
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের বাসভবনে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাত ১২টার পর এ ঘটনা ঘটে। আজকে সকাল পর্যন্ত বাসভবনে আগুন জ্বলছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভোলা সদরের গাজীপুর সড়কে ‘প্রিয় কুটির’ নামের ভবনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন একদল বিক্ষুব্ধ লোক। পরে তাঁরা ভবনটিতে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। তাঁরা বাড়ির দরজা-জানালা ভেঙে দেয়ালে সাঁটানো বিভিন্ন ছবি, ক্রেস্ট ও কাগজপত্র রাস্তায় এনে আগুন ধরিয়ে দেন। কয়েকটি ফ্যান ও আসবাব লুট করে নিয়ে যান তাঁরা।

পিরোজপুর
পিরোজপুরে সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম এ আউয়াল এবং তাঁর ভাই সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। গতকাল রাত একটার দিকে শহরের পাড়েরহাট সড়কে এ ঘটনা ঘটে। গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৫ ও ৬ আগস্ট বাড়ি দুটিতে একাধিকবার আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

সিলেট
সিলেটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙচুর হওয়া ম্যুরালটি এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। গতকাল রাত ১০টার দিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করে তারা। এর আগে রাত সাড়ে নয়টার দিকে নগরের কিনব্রিজ এলাকা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনের একটি বুলডোজার (হুইল এক্সকাভেটর) নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান। পরে তাঁরা ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করেন।

সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচটি ম্যুরাল এবং শহরের একটি পাড়ায় থাকা একটি মাজার গতকাল রাতে ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী প্রথমে পৌর ভবন চত্বরে জড়ো হন। সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। এরপর শহরের ঐতিহ্য জাদুঘর প্রাঙ্গণে গিয়ে তাঁরা শেখ মুজিবর রহমানের আরেকটি ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। একে একে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা পরিষদ ও সদর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে থাকা ম্যুরালগুলো ভেঙে ফেলা হয়। গভীর রাতে পৌর শহরের হাছননগর এলাকায় হুসেন বখত চত্বরের দক্ষিণ পাশে থাকা ‘ডংকা শাহের মাজার’ হিসেবে পরিচিত আধা পাকা ছোট ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।

রংপুর
রংপুরে গতকাল রাতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারমাইকেল কলেজে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা ম্যুরাল দুটি ভাঙচুর করেন। গতকাল রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের এক্সকাভেটর এনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে রাত সাড়ে নয়টার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নামফলক ভেঙে ফেলা হয়।

রাজশাহী
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকসিংগা মহল্লায় অবস্থিত বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ছাড়া উপজেলার মণিগ্রাম ইউনিয়নের সাফারি গ্রামে শাহরিয়ার আলমের ট্রেনিং সেন্টারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ৫০ থেকে ৬০টি মোটরসাইকেলে প্রায় দেড় শ লোক এসে বাড়িতে হামলা চালান। স্থানীয় লোকজন এসে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁরা হুমকি দিয়ে চলে যেতে বলেন। এরপর তাঁরা বাড়িতে হামলা চালিয়ে দরজা-জানালা ভাঙচুর করে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। তারপর পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে চলে যান।

আগুন লাগানোর প্রায় আধা ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নেভাতে শুরু করেন। প্রায় একই সময়ে পুলিশ চলে আসে। তখন দেখা যায়, বাড়ির চারটি এসি পুড়ে গেছে। বাড়ির ২২টি ফ্যান আগুনে পুড়ে বাঁকা হয়ে গেছে। একটি ফ্যান খুলে নিচে পড়ে গেছে। দুটি জেনারেটর ও বাড়ির আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা সব নামফলক, গ্রাফিতি ও দেয়াললিখন মুছে দিতে বিক্ষোভ করছেন একদল শিক্ষার্থী। গতকাল রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বর থেকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে মিছিল নিয়ে কয়েকটি আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে নতুন নামকরণ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এ ছাড়া রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো.

নওশাদ আলীর বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল রাত ১২টার দিকে মুখোশ পরা ৪০-৫০ জনের একটি দল বাড়িতে ঢুকে পুরো বাড়ির আসবাব তছনছ করে। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভাড়রা গ্রামে।

নাটোর
নাটোর শহরে সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের (শিমুল) জান্নাতি প্যালেসে আবার আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে শহরের কান্দিভিটুয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হন। সেখান থেকে মাইক নিয়ে তাঁরা মিছিল করতে করতে কান্দিভিটুয়ায় শফিকুল ইসলামের বাড়িতে যান। পরে তাঁরা বাড়িটির গ্যারেজে থাকা আগের পোড়ানো একটি গাড়িতে আবার আগুন দেন। একই সময় তিনতলা এ বাড়ির বারান্দায় আগুন জ্বালানো হয়।

৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শফিকুল ইসলামের ওই বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত ছিল।

পাবনা
পাবনার ঈশ্বরদীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় এক্সকাভেটর (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতা। এ ছাড়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনা আবাসিক হলের নামফলক এবং সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের শেখ রাসেল আবাসিক হলের নামফলক ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গতকাল শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ মিছিল শেষে এই ভাঙচুর চালায়। এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাবনা জেলার আহ্বায়ক বরকতল্লাহ ফাহাদ বলেন, ‘দেশের কোথাও ফ্যাসিবাদের চিহ্ন থাকবে না, ইনশা আল্লাহ। ফ্যাসিবাদের শেষ পরিণতি দেখে কেউ যাতে আর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে সাহস না পায়।’

ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ নগরের সার্কিট হাউস মাঠসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। গতকাল রাতে হাতুড়ি-শাবল নিয়ে ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সদস্যসচিব আলী হোসেন, জেলা কমিটির মুখপাত্র ফয়সাল ফারনিম, মহানগর কমিটির সদস্যসচিব আল নুর মো. আয়াস, মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নাফিউস রোহানসহ ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সদস্যসচিব আলী হোসেন বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর আবার ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এ অপতৎপরতা দেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। তারই প্রতীকস্বরূপ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের মতো ময়মনসিংহেও স্বৈরাচারের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুরের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে ছাত্র-জনতা।’

অপর দিকে ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু হলের ‘মুজিব ম্যুরাল’।

কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়কে পাবলিক টয়লেট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ সদরের স্টেশন রোড এলাকায় দলটির পরিত্যক্ত ভবনের একটি ভাঙা দেয়ালে ‘পাবলিক টয়লেট’ লিখে দিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে শেখ মুজিবের একটি ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গতকাল রাতে কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের ওই পরিত্যক্ত ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর আগে গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভবনটিতে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। ওই সময় থেকে ভবনটির ভাঙা ও ঝুলে থাকা দেয়ালের অংশে গতকাল ‘পাবলিক টয়লেট’ লেখা হয়েছে। পরে ভবনটির সামনে দাঁড়িয়ে এটিকে ‘পাবলিক টয়লেট’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর খড়মপট্টি এলাকায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।

গত বছরের ৪ আগস্ট আন্দোলনের সময় ও ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও আওয়ামী লীগের লোকজনের কয়েকটি বাড়ি ও স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

চট্টগ্রাম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও নগরের জামালখান এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করেন। গতকাল রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো একাডেমিক ভবনের সামনে একটু ম্যুরাল ভাঙছেন ২০-২৫ জন। তাঁদের কয়েকজনের হাতে হাতুড়ি ছিল। অন্যদের হাতে পাথর। স্থানীয় ভাসমান দোকানিরা বলেন, সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ছিল। সাড়ে নয়টার দিকে ছাত্ররা এসে সেটি ভাঙচুর করেন।

মেডিকেলে ভাঙচুরের পর মশালমিছিলটি নগরের জামালখান এলাকায় যায়। সেখানে দেয়ালে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা। এ সময় তাঁরা সাংবাদিকদের বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে শেখ হাসিনা দেশের বাইরে থেকে উসকানিমূলক বক্তৃতা দিচ্ছেন। দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। এটির প্রতিবাদে তাঁরা ভাঙচুর করছেন। ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ধ্বংসের যে ষড়যন্ত্র করছে, তা রুখে দিতে ছাত্র-জনতা এখনো প্রস্তুত আছে। তা হতে দেওয়া হবে না কোনো অবস্থাতেই।

কুমিল্লা
কুমিল্লায় সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। গতকাল রাত একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিক্ষুব্ধরা পেট্রল ঢেলে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন বলেন, গতকাল রাত একটার দিকে কুমিল্লা নগরের মুন্সেফ বাড়ি এলাকায় অবস্থিত বাহাউদ্দিনের বাড়ির জানালার গ্রিল ভাঙার চেষ্টা করেন বিক্ষুব্ধরা। অনেকে বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর চালান তাঁরা। পরে পেট্রল ঢেলে বাড়ির কয়েকটি কক্ষে এবং ভবনের সামনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ওই বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছিল।

রাত দুইটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক আবু রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পরও আবার কখনো ভিডিও বার্তা, কখনো অডিও বার্তার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার এসব অপতৎপরতা দেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। তাই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর শেষে বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে। সাবেক এমপি বাহার বছরের পর বছর ধরে কুমিল্লার মানুষের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালিয়েছেন।

এর আগে রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরের রামঘাট এলাকায় অবস্থিত কুমিল্লা মহানগর ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়। বিক্ষুব্ধরা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থাকা ইটের গাঁথুনি ভেঙে ফেলেন।

নোয়াখালী
আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। আজ বেলা একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আজ বেলা একটার দিকে কয়েক শ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা লাঠিসোঁটা নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে হামলা চালান। হামলাকারীরা এ সময় ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের মির্জার দ্বিতল পাকা ভবনে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, গত ৫ আগস্ট একই বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিল বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। ওই ঘটনার পরে আব্দুল কাদের মির্জা তাঁর স্বজনদের মাধ্যমে বাড়িতে সংস্কারকাজ করান। সংস্কারকাজের পর আজ আবার ভাঙচুর চালানো হলো।

ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা শাখার সমন্বয়ক মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, অসংখ্য মানুষ ওবায়দুল কাদের ও তাঁর ভাইয়ের বাহিনীর মাধ্যমে অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব কারণে তাঁদের প্রতি যে ক্ষোভ জমেছিল, আজকের হামলা-ভাঙচুর তারই বহিঃপ্রকাশ।

নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাঁনমারী এলাকায় অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে কালো কালিতে ঢেকে দেওয়া শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ভাঙচুর করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। আজ বেলা ১১টার দিকে একদল আইনজীবীর উপস্থিতিতে হামার দিয়ে শ্রমিকেরা এই প্রতিকৃতি ভাঙচুর করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ভাঙচুরকালে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন এবং সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক সাধারণ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত বছরের ২৯ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছিল বিএনপির সাংস্কৃতিক দল জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) নেতা-কর্মীরা। ওই সময় সেখানে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ খ ম জ ব র রহম ন র ম য র ল ভ ঙ শ খ ম জ ব র রহম ন র প শ খ ম জ ব র রহম ন ও ব ক ষ ব ধ ছ ত র জনত র ত একট র দ ক গতক ল র ত স ড় ক ষমত চ য ত ন মফলক ভ ঙ সদস যসচ ব র পর ব র র ক শ রগঞ জ ১১ট র দ ক আবদ ল ল হ ল ইসল ম র ১২ট র দ ক গত বছর র ভ স কর য প র ঙ গণ কম ট র স ক ল কল জ র সদস য শহর র প ৫ আগস ট ব সভবন আইনজ ব মন ত র হয় ছ ল ন র এক কর ম র ন র পর ট র পর করছ ন সরক র এ ঘটন প রথম র শহর হ নগর ধ নমন উপজ ল আওয় ম এ সময় র একট নগর র ল কজন র করছ

এছাড়াও পড়ুন:

রিজার্ভ বেড়ে ফের ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল

সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

বেশ কয়েক মাস ধরেই দেশে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামা করছে। সদ্য বিদায়ী জানুয়ারি মাসের শুরুতে ২১ বিলিয়নের ঘরে উঠলেও মাসটির মাঝামাঝি সময়ে আকুর বিল পরিশোধের পর তা কমে ১৯ বিলিয়নের ঘরে নেমে যায়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তা ২০ বিলিয়নের কাছাকাছি অবস্থান করে। অবশেষে আবারও বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে চলে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, গতকাল বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বেড়ে ২০ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ২০ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলারে উঠেছে। একই দিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পৃথক হিসাব মতে, দেশের মোট রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২ হাজার ৫৫৪ কোটি ডলার বা ২৫ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশে মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৯৯৭ কোটি (১৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন) ডলার। ওইদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের আলাদা হিসাব মতে, মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৩১ কোটি (২৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন) ডলার। সে হিসাবে গত ৬ দিনে বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ বেড়েছে ২৩ কোটি ডলার। তবে এ দুই হিসাবের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরও একটি হিসাব রয়েছে, যা প্রকাশ করা হয় না। সে হিসাবটি শুধুমাত্র আইএমএফকে দেওয়া হয়। ওই হিসাব অনুযায়ী রিজার্ভ ১৫ বিলিয়নের ঘরে অবস্থান করছে।

এএ

সম্পর্কিত নিবন্ধ