উড়োজাহাজে ৪০ ঘণ্টার নরকযন্ত্রণা: হাতে হাতকড়া, পায়ে শিকল, টেনেহিঁচড়ে নেওয়া হয় শৌচাগারে
Published: 6th, February 2025 GMT
‘দীর্ঘ ৪০ ঘণ্টার বিমানযাত্রা। আমাদের সবার হাতকড়া পরানো ছিল। পা ছিল শিকলে বাঁধা। আসন থেকে এক ইঞ্চিও সরতে দেওয়া হয়নি। এমনকি শৌচাগারে যেতে বারবার অনুরোধ করতে হয়। টেনেহিঁচড়ে শৌচাগারে নেওয়া হয়। শৌচাগারের দরজা খুলে ক্রুরা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঠেলে দেন।’
কথাগুলো বলছিলেন হরবিন্দর সিং। তাঁর বয়স ৪০ বছর। বাড়ি ভারতের পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরের তাহলি গ্রামে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দেশটি থেকে প্রথম ব্যাচে নথিপত্রবিহীন যে ১০৪ জন অভিবাসীকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাঁদেরই একজন হরবিন্দর।
নথিপত্রবিহীন ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ গতকাল বুধবার দুপুরে পাঞ্জাবের অমৃতসর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত—৪০ ঘণ্টার এই উড়োজাহাজযাত্রাকে ‘নরকের চেয়েও জঘন্য’ বলে মন্তব্য করেন হরবিন্দর।
এই ভারতীয় নাগরিকের ভাষ্য, ৪০ ঘণ্টার যাত্রায় ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হয়নি। হরবিন্দর বলেন, ‘হাতকড়া পরেই খেতে বাধ্য করা হয় আমাদের। নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে কয়েক মিনিটের জন্য হলেও হাতকড়া খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। এই যাত্রা শুধু শারীরিকভাবে যন্ত্রণার ছিল না, মানসিকভাবেও ক্লান্তিকর ছিল।’
তবে একজন ‘দয়ালু’ ক্রু তাঁদের ফল খেতে দিয়েছিলেন বলে জানান হরবিন্দর।
মাত্র আট মাস আগে ‘ডাঙ্কি রুট’ ধরে ভারত ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের পথে পাড়ি জমিয়েছিলেন হরবিন্দর। ভারতে রেখে যাওয়া স্ত্রীকে আরও সমৃদ্ধ জীবনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। হরবিন্দর বলেন, দীর্ঘ যাত্রাপথে তিনি একটুও ঘুমাতে পারেননি। সারাক্ষণ শুধু স্ত্রীকে দিয়ে যাওয়া প্রতিশ্রুতির কথা মনে পড়ছিল।
হরবিন্দরের স্ত্রীর নাম কুলজিন্দর কউর। ১৩ বছরের বিবাহিত জীবন তাঁদের। দুই সন্তান রয়েছে। ছেলেটির বয়স ১২ বছর। আর মেয়ের ১১ বছর। পরিবারটি জমি চাষ করে আর গরুর দুধ বিক্রি করে জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছিল। ২০২৪ সালের জুনে হরবিন্দর ও তাঁর স্ত্রী একটি সিদ্ধান্ত নেন।
নথিপত্রহীন ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়ে পাঞ্জাবের অমৃতসরে অবতরণ করে একটি মার্কিন সামরিক বিমান। ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘মাইগ্রেন’ কি ভয়াবহ কোনো রোগ?
চিকিৎসকেরা বলছেন, বিশ্বের অনেক মানুষ মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন মাইগ্রেন সারিয়ে তোলা যায় না। তাহলে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগলে করণীয় কী?
ভারতীয় নিউরোলজিস্ট ডা. অমিতাভ ঘোষ একটি ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ মাইগ্রেনের ব্যথা টিপিক্যালি মাথার একদিকে হয়। হয়তো ডানে, নয়তো বামে। পরে ছড়াতে পারে। ব্যথা বেড়ে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। কিন্তু শুরু হয় একদিক থেকে। দপ-দপ করে। কারও কাছে মনে হতে পারে, কেউ মাথা পেটাচ্ছে। কেউ বলে মাথার ভেতর থেকে ফেটে বেরোচ্ছে। উজ্জ্বল আলোর দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। আওয়াজে কষ্ট হয়। রোগী ঘরের আলো নিভিয়ে শুয়ে থাকতে চায়। অনেকের বমি আসে। দৈনন্দিন কাজে অসুবিধা হয়। অনেক সময় মনে হয় টেবিলে মাথা হেলিয়ে শুয়ে থাকি। বা বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়তে ইচ্ছা হয়। এগুলো টিপিক্যাল মাইগ্রেনের লক্ষণ।
এই নিউরোলজিস্ট আরও বলেন, ‘‘মাইগ্রেন ভয়াবহ কোনো রোগ নয়। এটি সারিয়ে তোলা যায় না কিন্তু কমিয়ে রাখা যায়। অনেক সময় মাইগ্রেনের ব্যথা ঘন ঘন হতে পারে। আবার এক মাসে একবার নাও হতে পারে। বিশ্বের প্রতি পাঁচ জন নারী ও শিশুর মধ্যে একজন মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন। নারী-পুরুষ মিলিয়ে প্রত্যেক দশ জনে একজন মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছেন। বিশ্বের প্রায় এক শতাংশ মানুষ প্রত্যেক মাসে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। ’’
আরো পড়ুন:
কীভাবে বুঝবেন গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নাকি হার্টের ব্যথা
ঘুম কম হয় কেন?
ডা. অমিতাভ জানান, যাদের ঘন ঘন ব্যথা হয় তাদের ওষুধ দেই যাতে ব্যথা কমিয়ে রাখা যায়। যাদের মাসে একবার মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দেয় তাদের নরমাল পেইন কিলার বা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। যদি ব্যথার মাত্রা বেশি থাকে তাহলে স্ক্যান করা লাগতে পারে।
ঢাকা/লিপি