বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে শীতের বিদায়ী লগ্নের জানান দিচ্ছে মাঘ। হালকা কুয়াশার সঙ্গে কমলা রঙের রোদের মিতালি দিয়ে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় গতকাল বুধবারের সকালটি শুরু হয়। এমন স্নিগ্ধ সকালে উৎসবমুখর আয়োজনের মধ্য দিয়ে জমে ওঠে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বকচরের ‘জামাইবরণ মেলা’।

মাঘ মাসের তৃতীয় বুধবার ধুনট উপজেলার হেউডনগর-কোদলাপাড়া এলাকায় বসে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই জামাইবরণ মেলা। দিনব্যাপী মেলাটির প্রধান আকর্ষণ ছিল হরেক পদের মাছ। সারি সারি দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে জমজমাট হয়ে ওঠে এই মেলা। দিঘি, পুকুর, খাল-বিল ও নদ-নদী থেকে আনা বড়সড় রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, বোয়াল, ব্রিগেডসহ নানা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। এসব মাছ কিনতে দূরদূরান্ত থেকে মেলায় ভিড় করেন ক্রেতারা। এ ছাড়া জিলাপি, কদমা থেকে শুরু করে হরেক মিঠাই-মিষ্টান্নের দোকানে ছেয়ে যায় মেলার মাঠ। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলা, চরকি ও খেলনার পসরা।

আয়োজকেরা জানান, হেউডনগর-কোদলাপাড়া গ্রামে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এ মেলায় সমবেত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ উপলক্ষে হেউডনগর, রামনগর, ঈশ্বরঘাট ছাড়াও আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।আত্মীয়স্বজনকে বিশেষভাবে নিজ বাড়িতে নিয়ন্ত্রণ জানান তাঁরা। মেয়েরা নাইওর আসেন। সঙ্গে থাকেন মেয়ের জামাইয়েরা। ঘরে ঘরে অন্য রকম উৎসবের আমেজে দিনটি কাটান স্থানীয় বাসিন্দারা। জামাইয়েরা কিন্তু খালি হাতে শ্বশুরবাড়িতে যান না; মেলা থেকে বাহারি মাছ ও মাটির হাঁড়িতে ভরা মিষ্টি কিনে তবেই ঢোকেন শ্বশুরবাড়িতে। কার জামাই কত বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে যেতে পারেন—এ নিয়ে চলে অলিখিত প্রতিযোগিতা। শুধু জামাই নয়, দিনভর মেলায় নামে হাজারো মানুষের ঢল। মেলার ব্যাপ্তি এক দিনের হলেও পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে একে ‘বউ মেলা’ ডাকা হয়। জামাইদের সঙ্গে করে নারীরা এদিন সাধারণত আলতা-চুরি-প্রসাধনী থেকে শুরু করে পছন্দের জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন। মেলায় সবচেয়ে বেশি আনন্দে উদ্‌যাপনে মেতে ওঠে শিশুরা। তাদের জন্য মেলা প্রাঙ্গণে রাখা হয় বিশেষ ব্যবস্থাও।

হরেক রকমের মিষ্টি দেখাচ্ছেন দোকানিরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

পবিত্র রমজান: দেশে দেশে যত আচার-রীতি

বিশ্বব্যাপী সব মুসলমান একই নিয়মে রোজা রাখেন, সাহ্‌রি ও ইফতার করেন। কিন্তু পবিত্র রমজানকেন্দ্রিক আচার-অনুষ্ঠান পালনে মুসলমানদের মধ্যে কিছু ভিন্নতা দেখা যায়। এর কারণ, দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য। ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা যে আচার পালন করেন, মরক্কোর মুসলমানরা তা করেন না। এভাবে রমজান যেন হয়ে ওঠে মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি চর্চার মাস।

তুরস্কে এখনো তোপধ্বনি দিয়ে ইফতারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এটা মধ্যপ্রাচ্য ও সংলগ্ন দেশগুলোর অনেক পুরোনো রীতি। এই আধুনিক সময়ে এসেও ঐতিহ্য থেকে সরে যায়নি প্রাচীন সভ্যতার দেশটি। পয়লা রমজানে ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদের সামনে ইফতারের আগে জড়ো হয়েছিলেন হাজারো নারী-পুরুষ। সরকারিভাবে বিতরণ করা হচ্ছিল ইফতারির প্যাকেট। তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে ঘোষণা করা হলো, ইফতারের সময় হয়েছে। পরিবারগুলো ঘাসের ওপর মাদুর বিছিয়ে আনন্দ ও সন্তুষ্টির সঙ্গে ইফতার শুরু করল।

ওই দিন আয়া সোফিয়া মসজিদের সামনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিক ও খ্যাতনামা কনটেন্ট ক্রিয়েটর সালাউদ্দিন সুমন। ৪ মার্চ রাতে প্রথম আলোকে সেই সন্ধ্যার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি, ‘কামান দাগার আগে অনেকটা সময় ধরে ইসলামি সংগীত পরিবেশন হয়েছিল। সংগীতের সুরের মূর্ছনায় একটা মোহনীয় পরিবেশ তৈরি হলো। ব্যাপারটা বিশেষভাবে ভালো লেগেছে।’ সুমন জানান, ঐতিহাসিক এই মসজিদের সামনে উপস্থিত থেকে এত বড় আয়োজনের অংশ হওয়া তাঁর জীবনের এক পরম পাওয়া। সে দিন তিনিও সরকারিভাবে বিতরণ করা প্যাকেট সংগ্রহ করে উন্মুক্ত প্রান্তরে বসে ইফতার করেছেন বলে জানালেন।

তুরস্কে তোপধ্বনি দেওয়ার সময়ই মসজিদের মিনারগুলোতে জ্বালানো হয় ‘কানদিল’ নামের একধরনের বাতি। বাতিগুলো জ্বলতে থাকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। বাতি জ্বালানোর এই ঐতিহ্য বহু পুরোনো। আর তোপধ্বনি কেবল ইফতারের সময় নয়, সাহ্‌রি শুরু ও শেষের সময়ও দেওয়া হয়।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে রমজানকে স্বাগত জানানো হয় ভিন্নধর্মী এক উৎসবের মধ্য দিয়ে। এ উৎসবের নাম ‘হক আল লায়লা’। মূলত শাবান মাসের ১৫ তারিখের পরই ছোট শিশুরা রঙিন কাপড় পরে দলবদ্ধ হয়ে প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি যায়। এ সময় তারা সুর করে বলতে থাকে, ‘তোমার দরজায় এসেছি, আমাদের দুহাত ভরে দাও। আমাদের দিলে আল্লাহও তোমাদের দেবেন।’ তখন গৃহকর্ত্রীরা শিশুদের হাতে চকলেট, বাদাম, কেকসহ নানা উপহার তুলে দেন। সাধারণত আসরের নামাজের পর শিশুরা বের হয় এবং মাগরিব অবধি মিষ্টান্ন সংগ্রহ করে।

আরব আমিরাতে শত বছর ধরে এই হক আল লায়লা উৎসব চলছে। এর মধ্য দিয়ে শিশুরা অন্যকে উপহার দেওয়া এবং ভাগাভাগির মতো গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধের সঙ্গে পরিচিত হয়।

দুবাইয়ে বসবাসরত প্রবাসী সাংবাদিক কামরুল হাসান বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলছিলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের লোকেরা নিজেদের সংস্কৃতিকে লালন করতে ভালোবাসেন। রোজার আগে হক আল লায়লা উৎসব তেমনই এক সংস্কৃতি। তবে করোনার পর অনেক ধরনের সামাজিক উৎসবে বদল এসেছে, অথবা সীমিত হয়ে পড়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের ছোট কিন্তু ধনী দেশ কাতারে ১৪ রমজানে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করা হয়। মাগরিবের নামাজের পর শিশুরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে মানানসই ব্যাগ নিয়ে বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। এ সময় তারা গায় ‘গারাংগাও’ গান। উপহার হিসেবে পায় মিষ্টি ও চকলেট। এটা মাত্র ওই এক দিনই করা হয়।

প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের লীলাভূমি মিসরে রমজান মাসে বাড়ি বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে রঙিন ফানুস ঝুলিয়ে রাখা হয়। মূলত এগুলো লন্ঠন। এসব ফানুস বা লন্ঠন দেশজুড়ে উৎসবের বার্তা আনে।

উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কোয় পবিত্র রমজানকে বরণ করার প্রস্তুতি শুরু হয় শাবান মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। মানুষ রমজানের আগে তাঁদের বাড়িঘর রং করান। ঘরের চারদিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন, ধুয়েমুছে একেবারে চকচকে করে তোলেন।

ইফতারের পর ইরাকিরা মেহাবেস নামে একটি খেলা খেলে থাকেন। ৫০ থেকে আড়াই শ জন এ খেলায় অংশ নেন। এটা মূলত আংটি লোকানো খেলা। পালা করে একটি দল আংটি লুকিয়ে রাখে। অন্য দলের সদস্যদের ধারণা করতে হয় যে আংটিটি কার কাছে আছে।

জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। রমজানের আগে তাঁরা নিজেদের শরীর পবিত্র করার জন্য বিশেষ একধরনের গোসল করে থাকেন। একে বলা হয় পাদুসান। জাভা দ্বীপের মুসলিমদের বিশ্বাস, এই গোসল কেবল শরীর নয়, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। বাথরুমে শাওয়ার ছেড়ে নয়, এই গোসল করা হয় পাহাড়ি ঝরনা কিংবা কোনো প্রাকৃতিক জলাশয়ে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ছোট্ট দেশ মালদ্বীপে ইফতারের পর রাইভারু নামে একধরনের কবিতা পড়া হয়। এটা সাধারণত চার বা ছয় লাইনের হয়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লেখা থেকে জানা যায়, সপ্তদশ শতাব্দীতে দেশটিতে রাইভারু ছড়িয়ে পড়ে। সেখানকার মানুষ রাইভারু গাইতে গাইতে ইফতার করেন। কেউ কেউ আবার ইফতারের পর সমবেত সংগীতের মতো এটা আবৃত্তি করেন।

আমাদের ঢাকা শহরে কাসিদা গেয়ে সাহ্‌রির জন্য রোজাদারদের ঘুম থেকে জাগানোর সংস্কৃতি একসময় চালু ছিল। এখন তেমন নেই। রোজাদারদের জন্য যাঁরা এমন ত্যাগ স্বীকার করেন, মিসর ও জর্ডানে তাঁরা মেসাহারাতি নামে পরিচিত। আর মরক্কোয় তাঁদের ডাকা হয় নাফারস নামে। তুরস্কের গ্রামেগঞ্জে দাভুল নামে একধরনের ঢোল পিটিয়ে এই কাজ করা হয়। ঐতিহ্যবাহী তুর্কি পোশাক পরে যে তরুণেরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা বকশিশ পান, এমনকি অনেক পরিবার তাঁদের ডেকে নিয়েই সাহ্‌রি করিয়ে থাকে। বিভিন্ন সূত্র অবলম্বনে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইফতার উৎসবে রাবি শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা
  • খুশির খবর দিয়ে মেহজাবীন লিখলেন, ‘কী সুন্দর একটি সকাল’
  • স্মার্টফোনে ঈদ উৎসব
  • জাতীয় নারী ফুটবল দলের অয়ন্তের বাড়িতে উৎসবের আমেজ
  • ঝোঁকের মাথায় অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার বদভ্যাস ত্যাগ করবেন যেভাবে
  • রাজ মাসুদ ফরহাদের দুটি কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত
  • বেড়েছে রোমান্টিক-পারিবারিক গল্পের চাহিদা
  • ঈদ নাটকের প্রস্তুতি, বেড়েছে রোমান্টিক-পারিবারিক গল্পের চাহিদা
  • পবিত্র রমজান: দেশে দেশে যত আচার-রীতি
  • হাফসা মোসলেমের ঈদের গহনায় আভিজাত্য