ছাপা পত্রিকা পড়েন না ৭৩ শতাংশ মানুষ
Published: 6th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপ বলছে, খবর জানতে প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে মোবাইল বেশি ব্যবহার করেন মানুষ। ছাপা পত্রিকা কম পড়লেও পাঠক মোবাইলে অনলাইন সংস্করণ পড়ছেন। ৫৯ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোনে অনলাইন সংস্করণে খবর পড়েন। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা ছাপা পত্রিকা পড়েন না। কারণ হিসেবে ৪৬ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, খবরের কাগজ পড়ার প্রয়োজন মনে করেন না তাঁরা। টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এই হার ৫৩ শতাংশের বেশি। তবে ৬৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা টেলিভিশন দেখেন।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে জনমনে ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে পাঠক, দর্শক ও শ্রোতাদের মনোভাব জানার জন্য পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য জানা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের জন্য জরিপটি করেছে বিবিএস। এ বছর ১ থেকে ৭ জানুয়ারি দেশের ৬৪ জেলায় ৪৫ হাজার খানা (হাউসহোল্ড) থেকে ১০ বছরের বেশি বয়সীদের কাছ থেকে উত্তর সংগ্রহ করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের বিস্তার, মানুষের সংবাদ গ্রহণের অভ্যাসের পরিবর্তন, গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। এতে ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা মুদ্রিত খবরের কাগজ না পড়লেও মোবাইল ফোনে অনলাইন সংস্করণ দেখেন। কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাবে পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ দেখেন বলে জানিয়েছেন আড়াই শতাংশ উত্তরদাতা।
৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তাঁরা গণমাধ্যমের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের হার ৭ শতাংশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে খবরের জন্য ৩১ শতাংশ উত্তরদাতার আস্থা রয়েছে ফেসবুকে। এরপর ইউটিউবে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কোনো কিছু শেখা বা জ্ঞানার্জনের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে শিক্ষকের ওপরই ভরসা বেশি। এ ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতার কাছে শিক্ষকেরাই সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এই বসন্তে এই সুন্দরে
‘আরে, তোমারও তো চুলে পাক ধরে গেছে দেখছি!’ বিস্মিত হয়ে যে বন্ধু এ কথাটা বলেছিল, সে আসলে হিসাব রাখেনি, কতটা সময় ক্ষয়ে যাওয়ার পর আমাদের এই পরিবর্তন। তাই ওর কথা আমাকে অবাক করেনি। কিন্তু চমকে গেছি, যখন সে প্রিয় এক কণ্ঠশিল্পীর প্রসঙ্গ টেনে এনেছে। বিস্ময় নিয়ে বলেছে, ‘আমরা সেই স্কুলজীবন থেকে আঁখি আলমগীরের গান শুনছি। কিন্তু দেখো, এখনও সে একই রকম আছে! কিশোরীর খোলস ছেড়ে সদ্য বেরিয়ে আসা তরুণীকে যেমন দেখায়, শুরুতে তেমনই দেখাত। এখন পরিপূর্ণ নারী, তারপরও সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে একই রকম রয়ে গেছেন। অথচ মাঝেখানে পেরিয়ে গেছে ৩০ বছর– ভাবা যায়!’
বন্ধু তো রূপ-লাবণ্যে খুন, তাই আসল কথটা বলতেই ভুলে গেছে। সেটি স্মরণ করিয়ে দিতেই বললাম, চল্লিশ-পঞ্চাশ পেরোলেও চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েনি, এমন তারকা তো আরও কয়েকজন আছে। এদিকে থেকে আঁখি আলমগীরের প্লাস পয়েন্ট হলো, তাঁর কণ্ঠের মাদকতা ধরে রাখতে পারা। সেটি ধরে রাখতে পেরেছেন বলেই আমরা কখনও তাঁকে থেমে থাকতে দেখিনি। একের পর এক নতুন গানের আয়োজন করে যাওয়া, দেশ-বিদেশের মঞ্চে ছুটে চলা; রেডিও, টিভি, সিনেমা, অনলাইন– সব মাধ্যমেই সমানভাবে গান গেয়ে যাওয়া– চলছে তো চলছেই। ‘তাই তো, এ কথা একদম ঠিক। আঁখি আলমগীরের ভক্ত বনে যাওয়ার পর আমরা তো শুধু সামনের দিনগুলোর অপেক্ষায় থেকেছি। খোঁজ-খবর রেখেছি, কবে, কখন, কোথায় পারফর্ম করবেন। রেডিও, টিভি, মঞ্চ– সেখানে মাধ্যমে তাঁর গান শোনার সুযোগ এসেছে, সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। ক্যাসেট-সিডি যুগের পর এখন অনলাইনে তাঁর গান শুনে যাচ্ছি। আর এভাবেই কখন যে এতটা সময় পেরিয়ে গেছে, বুঝতেই পরিনি।’
অজ্ঞাত দুই ভক্তের এই কথোপকথন যখন আঁখি আলমগীরের সামনে তুলে আনা হলো, তখন তাঁর মুখে ছিল একচিলতে মিষ্টি হাসি। মুখের সেই মিষ্টি হাসি ধরে রেখেই বললেন, ‘সত্যি, নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে এটা জেনে যে, এখনও গান আর গায়কি নিয়ে শ্রোতারা আলোচনায় মুখর থাকেন। আসলে নিজেও তো কখনও হিসাব-নিকাশ করিনি, গানে গানে কতটা সময় পেরিয়ে এসেছি। ক’দিন আগে সাংবাদিক বন্ধুরাই এটি মনে করিয়ে দিয়েছেন। তারপর যখনই এ প্রসঙ্গ এসেছে, তখন অবাক হয়েছি এই ভেবে যে, এতদিনে যার পরিচিতি গড়ে ওঠার কথা আইনজীবী হিসেবে, এখন সবাই তাঁকে চেনেন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। মানবজীবন সত্যি রহস্যময়।’
আঁখির এই কথা আবাক করেছে আমাদেরও। যদিও আমরা জানি, তিনি ভালো ছাত্রী ছিলেন, আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। আইন পেশায় নিজেকে জড়াতেও চেয়েছিলেন। কিন্তু কণ্ঠশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন কখনোই দেখেননি, এ কথা সত্যি অবাক করার মতো। দেশের শীর্ষ অভিনেতা আলমগীর ও নন্দিত গীতিকবি খোশনূরের এই উত্তরসূরির সংস্কৃতি অঙ্গনের পা রাখবেন না, এটি ভাবাও অনেকের জন্য কঠিন। ছোটবেলায় সংগীতে যাঁর তালিম নেওয়ার সুযোগ হয়েছে, অভিজ্ঞতা হয়েছে বেতার ও টিভিতে পারফর্ম গান তালিকাভুক্ত শিল্পী হওয়ার, ‘ভাত দে’ সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও যাঁর ঝুলিতে উঠেছে, সেই মানুষটি অঙ্গন থেকে দূরে সরে যাবেন– এটি হয়তো প্রকৃতিও চায়নি। আর চায়নি বলেই ঘটনার পাকচক্রে আঁখি আলমগীর হয়ে উঠেছেন সময়ের আলোচিত ভার্সেটাইল কণ্ঠশিল্পী। গানই হয়ে উঠেছে তাঁর পেশা ও নেশা। তাই গানে গানে তাঁকে কুড়িয়ে নিতে হচ্ছে শ্রোতার ভালোবাসা।
আঁখির কথায়, “ভালোবাসার শক্তি অপরিসীম। নইলে যে আমি শখে গান করতাম, সেই আমি এখন সংগীতের নেশায় আসক্ত। যা শুধু শ্রোতাদের ভালোবাসার কারণে। ১৯৯৪ সালে যখন ‘বিদ্রোহী বধূ’ সিনেমায় প্লেব্যাক করি, তখনও জানতাম না আমার ভবিষ্যৎ কী? এরপর অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতা থেকে যখন অ্যালবাম করার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখনও শিল্পী হওয়ার বাসনা প্রবল হয়ে ওঠেনি। কিন্তু প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে প্রশংসা আর অ্যালবামের গানের সুবাদে শ্রোতাদের মনোযোগ কেড়ে নিতে পারায় তাদের কাছে প্রত্যাশার একটা জায়গাও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে গিয়েই আর থেমে থাকার অবকাশ হয়নি। ভালো লাগা এখানেই যে, সাংস্কৃতিক বলয়ে বেড়ে উঠলেও মা-বাবার পরিচয়কে পুঁজি করে কোনো কিছু অর্জন করতে হয়নি। নিজেও তা চাইনি। আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে নিষ্ঠার সঙ্গে সব সময় কাজ করেছি, এখনও করছি। গানের ভুবনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার এটাই মূলমন্ত্র। তারপরও আমি মনে করি, তিন দশকের শিল্পীজীবনে আমার প্রাপ্তি অনেক, যা কখনও কল্পনা করিনি। তাই বাড়তি যা কিছু পেয়েছি, তার প্রতিদানে গানে গানেই দিয়ে যেতে চাই।’