উত্তরা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার এই তরুণী কে
Published: 6th, February 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরার জসিমউদ্দীন রোড এলাকা থেকে অচেতন অবস্থায় এক তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসক বলছেন, তাঁর শরীরে বাহ্যিক কোনো আঘাত নেই। তবে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ভোরে তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তরুণীর বয়স ২৫ বছর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অচেতন থাকায় তরুণীর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাসলিমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তরুণীর স্বজনদের থানা বা হাসপাতালে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’
তরুণীকে আজ সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন এক পথচারী। পথচারী তাঁর নাম বলেন শাহীন আলম ওরফে বাবু।
শাহীন আলম প্রথম আলোকে বলেন, আজ ভোর সাড়ে চারটার দিকে উত্তরা জসিমউদ্দীন রোড-সংলগ্ন এলাকায় অচেতন অবস্থায় তরুণীকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। পুলিশের সহযোগিতায় তিনিসহ অন্য পথচারীরা প্রথমে তাঁকে উত্তরার মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শাহীন আলম জানান, তরুণীর হাতে ও গলায় গয়না (আংটি ও চেইন) ছিল। তাঁর সঙ্গে ছিল ১৮ হাজার টাকা। তবে তাঁর কাছে কোনো মুঠোফোন পাওয়া যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইফতেখার ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এই তরুণী সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্য কোনোভাবে আহত হয়েছেন কি না, তা আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক রেজাউর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীর শরীরে বাহ্যিক কোনো আঘাত নেই। তবে সিটি স্ক্যান প্রতিবেদনে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কে রক্ত জমাট রয়েছে। তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন
স্বাধীন বাংলাদেশে আজ নতুন করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী সূর্য সেনকে নিয়ে নাট্য নির্মাণ কেন? শুধুই কি ইতিহাসের কাহিনি উপস্থাপন? না। বাংলাদেশের স্বনামধন্য নাট্যদল ঢাকা পদাতিকের আগে তাদের নাট্য প্রযোজনায় যে প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে তাতে তা মনে হয় না। ঢাকা পদাতিক তাদের ৩৮তম এ প্রযোজনায় বিপ্লবী নায়ক সূর্য সেনকে নতুন প্রজন্মের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। চরিত্র ইতিহাস বিপ্লবের মন্থনে অনাগত জাতিসত্তাকে নতুন করে মুক্তির পথ নির্দেশ করে। সূর্যসেন ইতিহাসের পুনরুত্থানে একটি প্রতীক। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন বিশিষ্ট নাট্যজন মাসুম আজিজ।
অভিনেতা নির্দেশক মাসুম আজিজ ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর আকস্মিকভাবে মারা গেলে নাটকটির নির্দেশনার দায়িত্ব পালন করেন দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও বিশিষ্ট অভিনেতা নাদের চৌধুরী। ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি নাটকটির উদ্বোধন প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল ‘নাট্যযাত্রা’। নাটকটিতে উপজীব্য করা হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী সূর্য সেনের প্রহসনমূলক বিচারকে। যে বিচারের ফলে সূর্য সেনকে ফাঁসির নামে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সূর্য সেন ১৯১৬ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্রকালীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।
তারপর চট্টগ্রামে এসে বিপ্লবী দল গঠন করেন। তারকেশ্বর দস্তিদার, কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা প্রমুখ মিলে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেন। ১৯৩০ সালের দিকে সূর্য সেনের নির্দেশে প্রীতিলতা ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করতে ৫৩ জন ইংরেজ হতাহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সূর্য সেন মোস্ট ওয়ান্টেডে পড়েন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সূর্য সেন আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধরা পড়েন। অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলার আসামি দেখিয়ে ১২১/১২১-এর ধারা অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ২ জুন থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বিচারের নামে প্রহসন চলে। ব্রিটিশরা সূর্য সেনের ওপর বর্বরোচিত অত্যাচার করে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলে এবং শরীরের হাড় ভেঙে দেয়। হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে পেটাতে পেটাতে তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলে। পরে অর্ধমৃতদেহ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়ে ফাঁসি কার্যকরের ঘোষণা করে। যুগে যুগে বিপ্লবী সূর্য সেন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেরণা হয়ে উঠেছে। নাটকটি প্রসেনিয়াম মঞ্চে উপস্থাপিত।
গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটকের একটি প্রদর্শনী হয়েছে। দর্শকরা বেশ উপভোগ করেছে প্রদর্শনীটি। অভিনয়শিল্পীরা যে যার জায়গা থেকে সেরাটি দিয়েছেন। নাটকটিতে চল্লিশের অধিক চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। এর মধ্যে সূর্য সেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাদের চৌধুরী। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন– মাহবুবা হক কুমকুম, মিল্টন আহমেদ, হাসনাহেনা শিল্পী, মাহাবুবুর রহমান, সাবিহা জামান, শ্যামল হাসান, কাজী আমিনুর, আক্তার হোসেন প্রমুখ।
নবনির্দেশনার অনুভূতি জানিয়ে নাদের চৌধুরী বলেন, “ট্রায়াল অব সূর্য সেন’ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ঐতিহাসিক একটি নাটক। এর রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রয়াত মাসুম আজিজ ভাই। পরবর্তী সময়ে এ নাটকের কিছু কিছু জায়গায় প্রয়োজনসাপেক্ষে অলংকরণ করে নবনির্দেশনার কাজটি আমি করেছি। ঐতিহাসিক এ নাটক আমাদের এখনকার জেনারেশনের দেখা উচিত।”