যুক্তরাষ্ট্রে এক ডজন ডিমের দাম ১৪৬৪ টাকা
Published: 6th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে একেকটি মুরগির ডিম এক ডলারে (বাংলাদেশি ১২২ টাকা) বিক্রি হচ্ছে। এক ডজন বা ১২টি ডিম খুচরা বাজারে কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১১ দশমিক ৯৯ ডলার দিয়ে (বাংলাদেশি ১৪৬৪ টাকা প্রায়)। অর্গানিক ও বাদামি রঙের ডিমের চেয়ে সাদা খোসার ডিমের দামই বেশি। বেড়েছে ডিম দিয়ে তৈরি খাবারের দামও। ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক ডজন মধ্যম আকারের সাদা ডিমের দাম ছিল ৮ ডলার, যা গত সপ্তাহে ছিল মাত্র ৩ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২৫ সালে ডিমের দাম আরও ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
নিউইয়র্কের কুইন্স বরোর বাসিন্দা রিমি রুম্মান প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা অ্যাভিনিউর জংশন ব্লুভার্ডের “চেরি ভ্যালি” সুপারমার্কেট থেকে বড় আকারের এক ডজন ডিম কিনেছি ১২ ডলার দিয়ে। তার আগের সপ্তাহে ছিল ১০ ডলার। গত সপ্তাহে পাইকারি বাজারে গিয়েছিলাম কেনাকাটা করতে। সেখানেও একই অবস্থা। ডিমের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।’
রিমি আরও বলেন, ‘পেনসিলভানিয়ার ল্যান্সডেল এলাকায় বসবাস করেন আমার এক বন্ধু। তিনি জানিয়েছেন, সেখানে ওয়ালমার্টে ৩ ডজন ডিমের বাক্সর দাম এখন ৩৬ ডলার, যা কিছুদিন আগেও ছিল ১১ ডলার। দিন দিন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে ডিমের দাম।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ খাদ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে চাপে পড়ছেন। নিউইয়র্ক নগরের জ্যাকসন হাইটস এলাকার বাসিন্দা হৃদয় খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। তাই ডিমের পরিবর্তে অন্য কিছু খাওয়ার চিন্তা করছি।’ ব্রঙ্কস এলাকার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাবির হোসাইন বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের পরিবারে এক ডজন ডিম খাওয়া হয়ে যায়। এত দামে ডিম কিনে খাওয়ার চেয়ে বিকল্প প্রোটিন চিন্তা করছি। মাংসের দাম তুলনামূলক বেশি বৃদ্ধি হয়নি। তাই মাংস ও সবজি খাওয়া শুরু করছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডিমের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ২০১৯ সালের তুলনায় ১৬০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী, এইচ৫এন১ নামের ভাইরাসের কারণে ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে হাঁস–মুরগির মধ্যে অ্যাভিয়ান ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে, যা ডিমের বাজারকে অস্থির করে তুলেছিল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই ভাইরাসে ১ কোটি ৩২ লাখ ডিম পাড়া মুরগি মারা গেছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে প্রায় ৭ কোটি ৯৩ লাখ মুরগি মারা গেছে বা বাধ্যতামূলকভাবে হত্যা করতে হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় সাংবাদিকদের তাঁবুতে হামলা
ফিলিস্তিনের গাজায় এবার স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি তাঁবুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে এক সাংবাদিক নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে এ হামলা চালানো হয়। চিকিৎসক ও স্থানীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন এ কথা জানিয়েছে।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ১৫ প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মী নিহতের ঘটনায় বৈশ্বিক নিন্দা ও ক্ষোভের মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটনা ঘটল। এ ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ‘ঠান্ডা মাথায়’ তাঁদের হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভেতরে সাংবাদিকদের অবস্থান করা তাঁবুতে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। একটি ভিডিওতে হামলার পর লোকজনকে তাঁবুর আগুন নেভাতে দেখা যায়। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, আসবাব ও বিভিন্ন সরঞ্জামসহ তাঁবুটি পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
একাধিক ছবিতে দেখা যায়, হামলার পর তাঁবুতে একজন সাংবাদিককে পুড়তে দেখা যায়। তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন আরেকজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরুর পর এ নিয়ে ২১০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।নিহত ওই সাংবাদিক হেলমি আল-ফাকাবি। পরে তাঁর জানাজায় অংশ নেন কয়েক ডজন সাংবাদিক ও তাঁর আত্মীয়-স্বজন। ফাকাবির সহকর্মী আবদ শায়াত বলেন, ‘আমরা খবর সরবরাহ করে যাব এবং গোটা বিশ্বের কাছে সত্য তুলে ধরব। এটা আমাদের মানবিক দায়িত্ব।’
প্যালিস্টিনিয়ান জার্নালিস্ট সিন্ডিকেটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরুর পর এ নিয়ে ২১০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
১ এপ্রিল ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ স্মরণকালে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২৩২ সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এ হিসাব অনুযায়ী দুই বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধ এবং আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মিলিয়ে যত সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, গাজায় তার চেয়েও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
মার্কিন– ফিলিস্তিনি কিশোরকে হত্যাএদিকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিদের গুলিতে মার্কিন নাগরিক এক ফিলিস্তিনি কিশোর নিহত হয়েছেন। গত রোববার ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন। নিহত ওমর মোহাম্মদ রাবিয়ার বয়স ১৪ বছর।
তুরমুস আয়া শহরের মেয়র আদীব লাফি বলেন, তুরমুস আয়ার প্রবেশমুখে ওমরসহ তিন কিশোরকে গুলি করে এক সশস্ত্র ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী। এরপর তাকে আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী। পরে ওমরকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনাকে শহরে অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, এটি ইসরায়েলের অব্যাহত দায়মুক্তিরই ফল।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে সেনারা গুলি ছুড়েছেন। এক সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে। জখম হয়েছে আরও দুই সন্ত্রাসী।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৩৭ জন। গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে। গত ১৮ মার্চ নতুন করে হামলা শুরুর পর গাজায় ১ হাজার ৩৯১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৪৩৪ জন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৭৫২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৫ জন।
‘হামাস বা ইসরায়েল গাজা শাসন করবে না’মিসর সফররত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের নিন্দা জানায় ফ্রান্স। তিনি অনতিবিলম্বে ইসরায়েলি জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল কায়রোয় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মাখোঁ বলেন, ‘কোনো বাসিন্দাকে তাঁদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরকে দখলে নেওয়ার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।’
গাজা পুনর্গঠনে আরব দেশগুলোর দেওয়া প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, এটা গাজার প্রতি বাস্তবসম্মত সমর্থন এবং এটি গাজা উপত্যকায় নতুন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের পথ খুলে দেবে। তিনি বলেন, গাজা শাসনে হামাস কিংবা ইসরায়েল অংশ হতে পারবে না।