যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে একেকটি মুরগির ডিম এক ডলারে (বাংলাদেশি ১২২ টাকা) বিক্রি হচ্ছে। এক ডজন বা ১২টি ডিম খুচরা বাজারে কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ১১ দশমিক ৯৯ ডলার দিয়ে (বাংলাদেশি ১৪৬৪ টাকা প্রায়)। অর্গানিক ও বাদামি রঙের ডিমের চেয়ে সাদা খোসার ডিমের দামই বেশি। বেড়েছে ডিম দিয়ে তৈরি খাবারের দামও। ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক ডজন মধ্যম আকারের সাদা ডিমের দাম ছিল ৮ ডলার, যা গত সপ্তাহে ছিল মাত্র ৩ ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২৫ সালে ডিমের দাম আরও ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

নিউইয়র্কের কুইন্স বরোর বাসিন্দা রিমি রুম্মান প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনা অ্যাভিনিউর জংশন ব্লুভার্ডের “চেরি ভ‍্যালি” সুপারমার্কেট থেকে বড় আকারের এক ডজন ডিম কিনেছি ১২ ডলার দিয়ে। তার আগের সপ্তাহে ছিল ১০ ডলার। গত সপ্তাহে পাইকারি বাজারে গিয়েছিলাম কেনাকাটা করতে। সেখানেও একই অবস্থা। ডিমের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।’

রিমি আরও বলেন, ‘পেনসিলভানিয়ার ল‍্যান্সডেল এলাকায় বসবাস করেন আমার এক বন্ধু। তিনি জানিয়েছেন, সেখানে ওয়ালমার্টে ৩ ডজন ডিমের বাক্সর দাম এখন ৩৬ ডলার, যা কিছুদিন আগেও ছিল ১১ ডলার। দিন দিন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে ডিমের দাম।’

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ খাদ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে চাপে পড়ছেন। নিউইয়র্ক নগরের জ্যাকসন হাইটস এলাকার বাসিন্দা হৃদয় খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। তাই ডিমের পরিবর্তে অন্য কিছু খাওয়ার চিন্তা করছি।’ ব্রঙ্কস এলাকার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাবির হোসাইন বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের পরিবারে এক ডজন ডিম খাওয়া হয়ে যায়। এত দামে ডিম কিনে খাওয়ার চেয়ে বিকল্প প্রোটিন চিন্তা করছি। মাংসের দাম তুলনামূলক বেশি বৃদ্ধি হয়নি। তাই মাংস ও সবজি খাওয়া শুরু করছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডিমের দাম ২০২৩ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার ২০১৯ সালের তুলনায় ১৬০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী, এইচ৫এন১ নামের ভাইরাসের কারণে ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে হাঁস–মুরগির মধ্যে অ্যাভিয়ান ফ্লু ছড়িয়ে পড়ে, যা ডিমের বাজারকে অস্থির করে তুলেছিল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই ভাইরাসে ১ কোটি ৩২ লাখ ডিম পাড়া মুরগি মারা গেছে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে প্রায় ৭ কোটি ৯৩ লাখ মুরগি মারা গেছে বা বাধ্যতামূলকভাবে হত্যা করতে হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

তালেবান সরকার কেন ভারতের দিকে ঝুঁকছে

২০২১ সালে ভারত যখন আফগানিস্তান থেকে তাদের কূটনীতিকদের সরিয়ে নিল, তখন খুব কম বিশেষজ্ঞই ভেবেছিলেন যে তালেবান কাবুলের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দুই দেশের সম্পর্ক কখনো আবার চালু হবে।

নব্বই দশক থেকেই আফগান তালেবানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বৈরী ছিল। এর মূল কারণ ছিল তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালের প্রথম তালেবান শাসনামলে ভারত আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহ ও আহমদ শাহ মাসুদের নেতৃত্বাধীন ‘নর্দান অ্যালায়েন্সকে’ সমর্থন দিয়েছিল তালেবান উৎখাতে।

পরে ২০০১–২১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর উপস্থিতি ছিল। সেই সময় ভারত তাদের তালেবানবিরোধী নীতিকে আরও শক্ত করে তোলে। ফলে কাবুল ও নয়াদিল্লির দূরত্ব আরও বাড়ে। এই সময়জুড়ে ভারত তালেবানকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে চিহ্নিত করত। তাদের কোনো রাজনৈতিক স্বীকৃতি দিত না। এমনকি যখন আমেরিকা দোহায় তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিল, তখনও ভারত যে কোনো ধরনের শান্তি আলোচনার ধারণারই বিরোধিতা করেছিল।

আরও পড়ুন তালেবানদের নিয়ে এখন কী করবে পাকিস্তান ২০ জানুয়ারি ২০২৫

২০২০ সালের দোহা চুক্তির পর বিশ্লেষকেরা মনে করেছিলেন যে আফগানিস্তান প্রসঙ্গে ভারত প্রভাব হারিয়েছে। তালেবান কাবুল দখলের আগে ভারত তার দূতাবাস ফেলে পালিয়ে আসে। যদিও ২০২২ সালে কিছু প্রাথমিক পর্যায়ের কূটনৈতিক কার্যক্রম আবার শুরু হয়। যেমন মানবিক সহায়তা পাঠানো। তবুও ভারতের সঙ্গে দ্বিতীয় মেয়াদের তালেবান নেতৃত্বাধীন ‘ইসলামিক আমিরাত’-এর সম্পর্ক উন্নতির সম্ভাবনা তখনও দুরাশাই মনে হচ্ছিল। আদর্শগত ব্যবধান ও অতীতের তিক্ততা ছাড়াও পাকিস্তানের ভৌগোলিক উপস্থিতি ছিল এই দুই পক্ষের মধ্যে এক অদৃশ্য প্রাচীর।

কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে দৃশ্যপট পাল্টেছে। এখন পাকিস্তান এক সংকটময় অবস্থায় আছে। তার দুই পাশের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বৈরিতা বাড়ছে।

মিশ্রি-মুততাকি বৈঠক: এক নতুন মোড়

গত জানুয়ারিতে দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকির মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। বোঝা যাচ্ছে যে ভারত এখন পাকিস্তানের আফগান নীতির দুর্বলতার সুযোগ নিতে প্রস্তুত। এর আগে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাকিস্তান-আফগানিস্তান-ইরান বিভাগের যুগ্ম সচিব জে পি সিং প্রথমবারের মতো কাবুলে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ইয়াকুব হচ্ছেন তালেবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের পুত্র।

পাকিস্তানের সাবেক আফগান রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমদ খান ডন পত্রিকাকে বলেন, ‘আফগানিস্তান-ভারত সংযোগ নিয়ে পাকিস্তানের বিচলিত হওয়া উচিত নয়। ... পাকিস্তানের উচিত আফগানিস্তানের সঙ্গে এমন সম্পর্ক গড়ে তোলা, যাতে প্রতিবেশী দুই দেশের স্বাভাবিক মৈত্রী বজায় থাকে।’

কিন্তু বাস্তবে এটি সহজ কাজ নয়। আফগানিস্তানের বর্তমান শাসকদের সঙ্গে পাকিস্তানের আগের সখ্য কমে এসেছে। খাইবার পাখতুনখাওয়ার মাদ্রাসার সঙ্গে তালেবান নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। কিন্তু তবু ২০২১ সালের ১৫ আগস্টের পর পাকিস্তান কাবুলের নতুন সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। তবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।

আরও পড়ুনভারত কি পাকিস্তান–তালেবান দ্বন্দ্বের সুযোগ নিচ্ছে১৫ জানুয়ারি ২০২৫সব মিলিয়ে বলা যায়, আফগানিস্তানে ভারতের নতুন তৎপরতা শুধু পাকিস্তানের জন্য নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার জন্যও এক নতুন পরীক্ষা। পাকিস্তানের কূটনৈতিক ভুলগুলোর সুযোগ নিয়ে ভারত যদি তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে পারে, তাহলে আঞ্চলিক রাজনীতিতে বড় ধরনের পালাবদল ঘটতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বিলাওয়াল ভুট্টো আফগান তালেবানকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরেও পাকিস্তানের জাতিসংঘ দূত মুনির আকরাম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেছিলেন যে আফগানিস্তানের সমস্যার সমাধান সংলাপ ও যৌথ ব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্ভব।

কিন্তু এখানেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ডুরান্ড রেখা বরাবর সীমান্ত সংঘর্ষ, অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা, টোরখাম ও চামান সীমান্তে দিনের পর দিন অচলাবস্থা—এসব ঘটনা পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের সম্পর্কে গভীর অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। আফগানিস্তানের অধিকাংশ স্থল বাণিজ্য ও সমুদ্রবন্দর নির্ভর করে পাকিস্তানের ওপর। তাই সীমান্ত বন্ধ হলে কাবুলের অর্থনীতি বড় ধাক্কা খায়।

তার ওপর যুক্ত হয়েছে আশ্রয়প্রার্থী সমস্যা। ২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রায় পাঁচ লাখ ‘অবৈধ’ আফগান শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফায় আরও প্রায় ১০ লাখ মানুষকে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সংকটে জর্জরিত আফগান প্রশাসন এই চাপ নিতে মোটেও প্রস্তুত নয়।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের আকাশপথ থেকে আফগানিস্তানের ওপর বিমান হামলা। গত তিন বছরে পাকিস্তান দুবার তালেবানপন্থী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-র ঘাঁটিতে হামলা চালায়। আফগানিস্তানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের চেষ্টা চলাকালেই এমন হামলা হয়েছে, ফলে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলাফল নেতিবাচক হয়েছে।

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাকর সময়ে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকি ও ভারতের কূটনীতিক আনন্দ প্রকাশের মধ্যে বৈঠক। কাবুল, ২৭ এপ্রিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিট রিজার্ভও ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের পদাবনতি, দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
  • দুই বছর ধরে ঝুলছে যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলার তদন্ত
  • নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের জবি শাখার ৩৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
  • সড়কের কাজ ফেলে রেখে উধাও ঠিকাদার, দুর্ভোগে অর্ধলাখ বাসিন্দা
  • তালেবান সরকার কেন ভারতের দিকে ঝুঁকছে
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল পাওয়ায় বাধা খোলা ড্রাম
  • খাল-ফসলি জমির মাটি ইটভাটায়
  • আইপিএলে আরও ম্যাচ বাড়ানোর পরিকল্পনা
  • ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে