Risingbd:
2025-04-10@10:11:02 GMT

বকশিসে মেলে জন্ম-মৃত্যু সনদ

Published: 6th, February 2025 GMT

বকশিসে মেলে জন্ম-মৃত্যু সনদ

দেশব্যাপী ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে’ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিয়ম অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় নাম তুলতে ডিজিটাল জন্ম সনদ আবশ্যক। ফলে, যাদের নেই তারা জন্ম সনদ সংগ্রহ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আঞ্চলিক অফিসে যোগাযোগ করছেন। তবে, বকশিস ছাড়া মিলছে না জন্ম সনদ। এমনকি, মৃত্যু, নাগরিক ও ওয়ারিশ সনদ পেতেও দিতে হচ্ছে বকশিস। সব মিলিয়ে নাগরিক সেবা পেতে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী।

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নগর ভবনে কথা হয় পুরান ঢাকার চাঁন খাঁ মসজিদ এলাকার (৩৩ নম্বর ওয়ার্ড) বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। রাইজিংবিডি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘গত ২৫ জানুয়ারি অনলাইনে নাগরিক সনদের জন্য আবেদন করি। ভেরিফিকেশনে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন ডিএসসিসির আঞ্চলিক অফিসের এক কর্মকর্তা। অফিসের কর্মচারীরা বকশিস চায়। দিতে না চাইলে একেক সময় একেক কথা বলেন।’’

‘‘৩ ফেব্রুয়ারি ভোটার হওয়ার শেষ দিন ছিল। কী আর করা! ডিজিটাল জন্ম সনদ ছাড়া ভোটার হওয়া যাবে না। তাই বকশিস দেওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে জন্ম সনদ দিয়েছেন।’’

ডিএসসিসির নগর ভবনের জন্ম নিবন্ধন শাখার কম্পিউটার অপারেটর শফিক জানান, নির্বাচিত কাউন্সিলরের অধীনে তারা নাগরিক সনদ দিতে এক-দুই ঘণ্টা নিতেন। এখন ৯-১০ দিন লাগছে। একইভাবে, ওয়ারিশ সনদে একমাস ও জন্ম-মৃত্যু সনদে লাগছে ১০-১২ দিন । কয়েক মাস ধরে স্থানীয় সরকার শাখা থেকে সংশোধনী না ছাড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

এ সময় ‘বকশিস নেওয়ার’ বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

নগর ভবনের ১১ তলায় সিটি করপোরেশনের সেবা নিতে প্রায় ২০ জন অপেক্ষা করছেন। তাদের বেশিরভাগই জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ-সংক্রান্ত কাজে এসেছেন। জানতে চাইলে সেবাপ্রার্থী জসিম উদ্দীন বলেন, ‘‘টাকা ছাড়া কোনো সেবা মিলছে না। জন্ম নিবন্ধন নতুন কিংবা সংশোধনের জন্য ৫০০ থেকে ২ হাজার করে টাকা নিচ্ছেন।’’

সেখানে উপস্থিত বংশালের বাসিন্দা রবিউল হক বলেন, ‘‘ছেলের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য আবেদন করেছি। তারা বলেছেন, সংশোধন করতে যেতে হবে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। আমি না গেলে তাদের দুই হাজার টাকা দিতে হবে। আমি বেসরকারি চাকরিজীবী, ছুটি কম। ঝামেলা এড়াতে দেড় হাজার টাকা দিয়েছি।’’

একই এলাকার সরোয়ার হোসেন রকি বলেন, ‘‘ভাতিজির জন্ম নিবন্ধনের জন্য ১০ দিন ঘুরতে হয়েছে। আবেদন করার পর নগর ভবনে গেলে কয়েক দফায় বিভিন্ন কাগজপত্র চাওয়া হয়। তারপরও হয়রানির মাত্রা বেড়ে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে প্রধান নির্বাহী সমস্যার সমাধান করে দেন।’’

ন্যাশনাল কলেজের শিক্ষার্থী সাবির মোস্তফা এসেছেন জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে। রাইজিংবিডি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাকে বলল, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের ফটোকপি লাগবে। আমি এসব আনার পর বলছে হোল্ডিং ট্যাক্সেরও ফটোকপি লাগবে। সবকিছু জমার পর এখন বলছেন, হলফনামা লাগবে। মূলত টালবাহানা করছে বকশিসের জন্য।’’

নগর ভবনের রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) মো.

যাহিদ হোসেন বলেন, নাগরিকেরা যেন সহজে সেবা পান, সেজন্য সিস্টেমের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। কাজে গতি এসেছে। সংশোধনের কাজ বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। জালিয়াতির কোনো অভিযোগ পেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঁঞার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘‘জন্ম নিবন্ধনসহ অন্যান্য কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। কোনো কার্যক্রমে জড়িত অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/এনএইচ/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নগর ভবন ড এসস স র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে ঢোকার অনুমতি পায়নি চার ট্রাক তৈরি পোশাক, গন্তব্য ছিল স্পেন

ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করায় পেট্রাপোল কাস্টমস তৈরি পোশাকবোঝাই চারটি ট্রাককে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি (কারপাস) দেয়নি। এতে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে গতকাল বুধবার ট্রাকগুলো ঢাকায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় দেশে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা দিতে ২০২০ সালের ২৯ জুন আদেশ জারি করেছিল ভারত। ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি) গত মঙ্গলবার সেই আদেশ বাতিল করে।

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ঢাকা থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক তিনটি প্রতিষ্ঠান চারটি ট্রাকে পণ্য বোঝাই করে বেনাপোল বন্দরে নিয়ে আসে। ট্রানজিট নিয়ে ওই পণ্য কলকাতার দমদম বিমানবন্দর হয়ে স্পেনে রপ্তানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে ট্রাকগুলো প্রবেশের অনুমতি পায়নি। এতে পণ্যগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ফিরিয়ে নিয়েছে।

বেনাপোলে এই পণ্যের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট ছিল পদ্মা ট্রেডিং। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মালিক অনিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। এর আগেই ট্রাকবোঝাই এসব পণ্য বেনাপোল বন্দরে চলে আসে। পণ্য ঢুকতে না দেওয়ায় রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ও আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছি।’ তিনি জানান, এই সুবিধা বাতিলের এক দিন আগেও ২০ ট্রাক তৈরি পোশাক তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের ট্রানজিট ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে। সাধারণত তৈরি পোশাকের রপ্তানি গ্রীষ্মে বাড়ে। এখন রপ্তানির ভরা মৌসুম। এই মুহূর্তে ভারতের এই সিদ্ধান্তে তাঁরা বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘যে রপ্তানিকারকের পণ্য ফিরে গেছে, তাদের কোনো প্রতিনিধি আমাদের কিছু জানাননি। তবে আমরা জেনেছি, ভারতের পেট্রাপোল কাস্টমস থেকে কারপাস দেওয়া হয়নি। যে কারণে পণ্য ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

২০২০ সালের ২৯ জুন এক আদেশে ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানিতে ভারতের কলকাতা বন্দর, নবসেবা বন্দর ও কলকাতা বিমান কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছিল সিবিআইসি। এখন সে সুবিধা প্রত্যাহার করল ভারত।

বিবৃতিতে ভারত দাবি করেছে, এসব পদক্ষেপে ভারতের সীমান্ত দিয়ে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়বে না।

বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, বেনাপোল দিয়ে ভারতের ট্রানজিট নিয়ে তৃতীয় কোনো দেশে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হয়, তার বেশির ভাগ যায় ইউরোপের দেশগুলোয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বেনাপোল ও পেট্রাপোল দিয়ে স্পেন ও সুইজারল্যান্ডে বেশি যায়। এই বন্দর দিয়ে নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানি কম হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ