ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গতকাল বুধবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ব্যাপক বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এরপর যে যা পারছেন সেখান থেকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ লোহা-রড, কেউ টিন, কেউ আবার শেখ মুজিব ও তার পরিবার নিয়ে লেখা বই নিয়ে যাচ্ছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রড-লোহার মতো নির্মাণসামগ্রী রাত থেকেই মানুষ নিয়ে যাচ্ছে। যারা নিচ্ছেন তাদের অধিকাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ। কেউ আবার পথশিশু। আজ সকাল থেকে মানুষ আরও বেশি নিচ্ছে। অনেকে ভবনের ভেতরে পড়ে থাকা বইসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগ বই হলো বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর বাংলাসহ বিভিন্ন ভাষার অনুবাদ। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বইও রয়েছে। কাউকে কাউকে কাটার দিয়ে রড, স্টিলের জিনিসপত্র কাটতে দেখা গেছে।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, কিছু পুড়িয়ে ফেলা বই রয়েছে বাড়িটির অবশিষ্ট অংশের বিভিন্ন ফ্লোরে।

পরে গভীর রাতে শুরু হয় ক্রেন, বুলডোজার এবং এক্সক্যাভেটর দিয়ে ভাঙার কাজ।

পরের দিন সকালেও ক্রেন ও এক্সকাভেটর দিয়ে বাড়িটির বিভিন্ন অংশ ভাঙতে দেখা গেছে। কিছু জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। বাড়ির বিভিন্ন অংশে লাল কালি দিয়ে লেখা ছিল, ‘স্বৈরাচার সাবধান।’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়ায় ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুর

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত উল্লেখ করে অন্তবর্তী সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে সে ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

গত ছয় মাসে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ হয়নি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, গতকাল রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে  যার দুটো অংশ আছে। একটি হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন শেখ হাসিনা তাদেরকে অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহীদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা করেছেন ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন। 

দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই হুমকি-ধামকির সুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে সে ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। 

অন্তবর্তী সরকারের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও জনগণের জানমালের রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্ক আছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বাত্মকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার যথাযথ চেষ্টা করছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো সম্ভব। সরকার আশা করে, ভারত যেন তার ভূখণ্ডকে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এমন কাজে ব্যবহৃত হতে না দেয় এবং শেখ হাসিনাকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার  ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না। 

বিবৃতিতে সরকার জানায়, জুলাই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল তাদের বিচারকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এই বিচার নিশ্চিত করে গণহত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কী কী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা সরকার খতিয়ে দেখবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ