‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ নিছক ভাঙা নয়, বরং বিকল্প গড়ারও লড়াই। নতুন বন্দোবস্তে আমরা ভাঙার চেয়ে গড়ার দিকে গুরুত্ব দিতে চাই।’ এ মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি আরও লেখেন ‘ভাঙার পরে গড়ার সুযোগ এসেছে, কিন্তু অনন্ত ভাঙা প্রকল্প আমাদের জন্য ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবহ না। গড়ার প্রকল্পগুলো খুব দ্রুতই শুরু ও বাস্তবায়ন হবে। আপনারা গড়ার কাজে সক্রিয় হোন।’ বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন বলেন, ‘আমরা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক আধিপত্যবাদ মোকাবেলা করছি। নিছক কিছু মূর্তি বা দালান নয়। মূর্তি (idols) না ভেঙে আমাদের উচিত আমাদের শত্রুদের শক্তির বিপরীতে পাল্টা চিন্তা (Ideals), শক্তি ও হেজেমনি গড়ে তোলা। ভাঙার প্রকল্প থেকে সরে এসে দিনকে দিন আমাদের গড়ার প্রকল্প হাতে নেয়া উচিত।’

মাহফুজ আলম আরও লেখেন, ‘লীগ বা হাসিনা সে অর্থে কিছুই না, বরং আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের এক্সটেনশন। আর, আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ তার হেজেমনি তৈরি করছে বাস্তবধর্মী রাষ্ট্রকল্পনা, দেশে এবং ডায়াসপোরায় দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করে। আমাদের পাল্টা হেজেমনিও এ তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল।’

তিনি লিখেছেন, ‘ভাঙার পরে গড়ার সুযোগ এসেছে, কিন্তু অনন্ত ভাঙা প্রকল্প আমাদের জন্য ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবহ না। গড়ার প্রকল্পগুলো খুব দ্রুতই শুরু ও বাস্তবায়ন হবে। আপনারা গড়ার কাজে সক্রিয় হোন। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন শীঘ্রই শুরু হবে। আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন ও জুলাই গণহত্যার বিচারের কাজ ও চলমান। এ মাসেই এ কাজগুলো আরো গতি পাবে।’ 

ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘পুনশ্চ: খুনি হাসিনার বক্তব্য প্রচার এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সব রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য দায়ী থাকবে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ। এজন্যই আমাদের উচিত, সৃজনশীল শক্তির বিকাশ ঘটানো এবং সার্বিকভাবে এ আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে দূরদর্শী পদ্ধতি নেওয়া। কারণ, এ লড়াই মাত্র শুরু হল। অন্তত, এক দশক পরে এ লড়াইয়ের একটা মীমাংসা হয়ত হবে। অথচ, সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি সামান্যই।’

অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা-নেতিবাচক এনার্জি, কিন্তু অভ্যুত্থানের পর আমাদের এ সকল এনার্জিকে ইতিবাচক রূপান্তরের সুযোগ তৈরি হয়েছিল। এখনও সে সুযোগ হারিয়ে যায়নি। আগামী অন্তত এক দশকব্যাপী দীর্ঘ গণতান্ত্রিক ও আধিপত্যবাদ-বিরোধী লড়াইয়ের জন্য আমাদের সৃজনশীল  শক্তিকে কাজে লাগানো দরকার। ভবিষ্যতপানে তাকান, ইতিহাস আমাদের সুযোগ দিয়েছে। আমাদের এবার জিততেই হবে আর জেতার উপায় একটাই- রাষ্ট্রকল্প, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান ও  দক্ষ ও মর্যাদাবান মানবসম্পদ গড়ে তোলা।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প রকল প র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন যুগে যুগে

স্বাধীন বাংলাদেশে আজ নতুন করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী সূর্য সেনকে নিয়ে নাট্য নির্মাণ কেন? শুধুই কি ইতিহাসের কাহিনি উপস্থাপন? না। বাংলাদেশের স্বনামধন্য নাট্যদল ঢাকা পদাতিকের আগে তাদের নাট্য প্রযোজনায় যে প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে তাতে তা মনে হয় না। ঢাকা পদাতিক তাদের ৩৮তম এ প্রযোজনায় বিপ্লবী নায়ক সূর্য সেনকে নতুন প্রজন্মের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। চরিত্র ইতিহাস বিপ্লবের মন্থনে অনাগত জাতিসত্তাকে নতুন করে মুক্তির পথ নির্দেশ করে।

 সূর্যসেন ইতিহাসের পুনরুত্থানে একটি প্রতীক। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন বিশিষ্ট নাট্যজন মাসুম আজিজ। অভিনেতা নির্দেশক মাসুম আজিজ ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর আকস্মিকভাবে মারা গেলে নাটকটির নির্দেশনার দায়িত্ব পালন করেন দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও বিশিষ্ট অভিনেতা নাদের চৌধুরী। ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি নাটকটির উদ্বোধন প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল ‘নাট্যযাত্রা’। নাটকটিতে উপজীব্য করা হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী সূর্য সেনের প্রহসনমূলক বিচারকে। যে বিচারের ফলে সূর্য সেনকে ফাঁসির নামে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সূর্য সেন ১৯১৬ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্রকালীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। তারপর চট্টগ্রামে এসে বিপ্লবী দল গঠন করেন। তারকেশ্বর দস্তিদার, কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা প্রমুখ মিলে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেন। 

১৯৩০ সালের দিকে সূর্য সেনের নির্দেশে প্রীতিলতা ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করতে ৫৩ জন ইংরেজ হতাহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সূর্য সেন মোস্ট ওয়ান্টেডে পড়েন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সূর্য সেন আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধরা পড়েন। অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলার আসামি দেখিয়ে ১২১/১২১-এর ধারা অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ২ জুন থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বিচারের নামে প্রহসন চলে। ব্রিটিশরা সূর্য সেনের ওপর বর্বরোচিত অত্যাচার করে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলে এবং শরীরের হাড় ভেঙে দেয়। হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে পেটাতে পেটাতে তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলে। পরে অর্ধমৃতদেহ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়ে ফাঁসি কার্যকরের ঘোষণা করে। যুগে যুগে বিপ্লবী সূর্য সেন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেরণা হয়ে উঠেছে।নাটকটি প্রসেনিয়াম মঞ্চে উপস্থাপিত। 

গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটকের একটি প্রদর্শনী হয়েছে। দর্শকরা বেশ উপভোগ করেছে প্রদর্শনীটি। অভিনয়শিল্পীরা যে যার জায়গা থেকে সেরাটি দিয়েছেন। নাটকটিতে চল্লিশের অধিক চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। এর মধ্যে সূর্য সেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাদের চৌধুরী। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন– মাহবুবা হক কুমকুম, মিল্টন আহমেদ, হাসনাহেনা শিল্পী, মাহাবুবুর রহমান, সাবিহা জামান, শ্যামল হাসান, কাজী আমিনুর, আক্তার হোসেন প্রমুখ। 

নবনির্দেশনার অনুভূতি জানিয়ে নাদের চৌধুরী বলেন, “ট্রায়াল অব সূর্য সেন’ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ঐতিহাসিক একটি নাটক। এর রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রয়াত মাসুম আজিজ ভাই। পরবর্তী সময়ে এ নাটকের কিছু কিছু জায়গায় প্রয়োজনসাপেক্ষে অলংকরণ করে নবনির্দেশনার কাজটি আমি করেছি। ঐতিহাসিক এ নাটক আমাদের এখনকার জেনারেশনের দেখা উচিত।” 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ