৫৯ শতাংশ মোবাইলে অনলাইনে খবর পড়েন: জরিপ
Published: 6th, February 2025 GMT
খবর জানতে প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে মোবাইল বেশি ব্যবহার করেন মানুষ। ছাপা পত্রিকা কম পড়লেও পাঠক মোবাইলে অনলাইন সংস্করণ পড়ছেন। ৫৯ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোনে অনলাইন সংস্করণে খবর পড়েন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে জনমনে ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে পাঠক, দর্শক ও শ্রোতাদের মনোভাব জানার জন্য পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য জানা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের জন্য জরিপটি করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জরিপে অংশ নেওয়া ৭৩ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা ছাপা পত্রিকা পড়েন না। কারণ হিসেবে ৪৬ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, খবরের কাগজ পড়ার প্রয়োজন মনে করেন না তাঁরা। টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এই হার ৫৩ শতাংশের বেশি। তবে ৬৫ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা টেলিভিশন দেখেন।
এ বছর ১ থেকে ৭ জানুয়ারি দেশের ৬৪ জেলায় ৪৫ হাজার খানা (হাউসহোল্ড) থেকে ১০ বছরের বেশি বয়সীদের কাছ থেকে উত্তর সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের বিস্তার, মানুষের সংবাদ গ্রহণের অভ্যাসের পরিবর্তন, গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। এতে ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তাঁরা মুদ্রিত খবরের কাগজ না পড়লেও মোবাইল ফোনে অনলাইন সংস্করণ দেখেন। কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাবে পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ দেখেন বলে জানিয়েছেন আড়াই শতাংশ উত্তরদাতা।
সামগ্রিকভাবে ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তাঁরা গণমাধ্যমের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের হার ৭ শতাংশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে খবরের জন্য ৩১ শতাংশ উত্তরদাতার আস্থা রয়েছে ফেসবুকে। এরপর ইউটিউবে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কোনো কিছু শেখা বা জ্ঞানার্জনের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে শিক্ষকের ওপরই ভরসা বেশি। এ ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতার কাছে শিক্ষকেরাই সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য।
জরিপে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর মানুষ আস্থা হারাননি। তবে রাজনৈতিক, সরকারি ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জরিপের তথ্য উল্লেখ করে আরও বলা হয়, জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটে তথ্য খোঁজার জন্য এখনো মানুষ চোখ রাখেন টেলিভিশনের পর্দায়। তবে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে রেডিওর প্রাসঙ্গিকতা তলানিতে। ৯৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা রেডিও শোনেন না। তাঁদের ৫৪ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা রেডিও শোনার প্রয়োজন মনে করেন না। প্রায় ৩৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী রেডিও সেটের অপ্রাপ্যতার কথা উল্লেখ করেছেন।
গণমাধ্যমকে স্বাধীন, পক্ষপাতহীন, সরকারি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দেখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে জরিপে। তবে বেশির ভাগ উত্তরদাতাই মনে করেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ধুনটে শত বছরের ঐতিহ্যের জৌলুশ ধরে রেখেছে ‘জামাইবরণ মেলা’
বসন্তের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে শীতের বিদায়ী লগ্নের জানান দিচ্ছে মাঘ। হালকা কুয়াশার সঙ্গে কমলা রঙের রোদের মিতালি দিয়ে বগুড়ার ধুনট উপজেলায় গতকাল বুধবারের সকালটি শুরু হয়। এমন স্নিগ্ধ সকালে উৎসবমুখর আয়োজনের মধ্য দিয়ে জমে ওঠে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী বকচরের ‘জামাইবরণ মেলা’।
মাঘ মাসের তৃতীয় বুধবার ধুনট উপজেলার হেউডনগর-কোদলাপাড়া এলাকায় বসে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই জামাইবরণ মেলা। দিনব্যাপী মেলাটির প্রধান আকর্ষণ ছিল হরেক পদের মাছ। সারি সারি দোকানে ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে জমজমাট হয়ে ওঠে এই মেলা। দিঘি, পুকুর, খাল-বিল ও নদ-নদী থেকে আনা বড়সড় রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, বোয়াল, ব্রিগেডসহ নানা মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ী ও খামারিরা। এসব মাছ কিনতে দূরদূরান্ত থেকে মেলায় ভিড় করেন ক্রেতারা। এ ছাড়া জিলাপি, কদমা থেকে শুরু করে হরেক মিঠাই-মিষ্টান্নের দোকানে ছেয়ে যায় মেলার মাঠ। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলা, চরকি ও খেলনার পসরা।
আয়োজকেরা জানান, হেউডনগর-কোদলাপাড়া গ্রামে ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এ মেলায় সমবেত হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ উপলক্ষে হেউডনগর, রামনগর, ঈশ্বরঘাট ছাড়াও আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ।আত্মীয়স্বজনকে বিশেষভাবে নিজ বাড়িতে নিয়ন্ত্রণ জানান তাঁরা। মেয়েরা নাইওর আসেন। সঙ্গে থাকেন মেয়ের জামাইয়েরা। ঘরে ঘরে অন্য রকম উৎসবের আমেজে দিনটি কাটান স্থানীয় বাসিন্দারা। জামাইয়েরা কিন্তু খালি হাতে শ্বশুরবাড়িতে যান না; মেলা থেকে বাহারি মাছ ও মাটির হাঁড়িতে ভরা মিষ্টি কিনে তবেই ঢোকেন শ্বশুরবাড়িতে। কার জামাই কত বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে যেতে পারেন—এ নিয়ে চলে অলিখিত প্রতিযোগিতা। শুধু জামাই নয়, দিনভর মেলায় নামে হাজারো মানুষের ঢল। মেলার ব্যাপ্তি এক দিনের হলেও পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে একে ‘বউ মেলা’ ডাকা হয়। জামাইদের সঙ্গে করে নারীরা এদিন সাধারণত আলতা-চুরি-প্রসাধনী থেকে শুরু করে পছন্দের জিনিসপত্র কেনাকাটা করেন। মেলায় সবচেয়ে বেশি আনন্দে উদ্যাপনে মেতে ওঠে শিশুরা। তাদের জন্য মেলা প্রাঙ্গণে রাখা হয় বিশেষ ব্যবস্থাও।
হরেক রকমের মিষ্টি দেখাচ্ছেন দোকানিরা