সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়ার খবরে বুধবার রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কুমিল্লা নগরীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা রাস্তায় ছিলেন। প্রতিবাদী কর্মসূচির শুরুতে তারা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে। পরে তারা মহানগর আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে সমবেত হয়ে অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। সেখানে সাবেক এমপি বাহারের নামে থাকা একটি ভিত্তি প্রস্তর ভেঙ্গে ফেলা হয়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গভীর রাতে নগরীর মুন্সেফবাড়ি এলাকায় অবস্থিত বাহারের বাড়ির সামনে তার ব্যক্তিগত অফিসে গেট ও জানালার গ্রিল ভাঙার চেষ্টা করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা। এ সময় অনেকে বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে বাড়িটিতে বাহির থেকে ভাঙচুর চালান। পরে বাহারের বাড়ির সামনে ব্যক্তিগত অফিসের সামনে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। 

এছাড়াও রাত ১০টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আদর্শ সদর উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নিয়াজ পাভেলের শাসনগাছা এলাকার ব্যক্তিগত অফিস, দোকান ও লেবার শেডে হামলা হয়েছে।   এ সময় রাস্তায় আগুন দেওয়া হয়। 

বৃহস্পতিবার সকালে অজ্ঞাত স্থান থেকে পাভেল হোয়াটসঅ্যাপে জানান, তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা করেনি। যারা হামলা করেছে সকলে এলাকায় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী হিসেবে পরিচিত।   

স্থানীয়রা বলেন, গত ৫  আগস্ট সরকার পতনের দিন মহানগর আওয়ামী লীগের অফিস ও বাহারের বাড়িতে হামলা ভাংচুর, আগুন ও লুটের ঘটনা ঘটে। ওই দিন লুট হওয়া বাহারের লাইসেন্স করা অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি। বর্তমানে সাবেক এমপি বাহার ও তার মেয়ে কুমিল্লা সিটির মেয়র ডা.

তাহসিন বাহার সূচনা ভারতে অবস্থান করছেন। তাদের বিরুদ্ধে কুমিল্লার কোতয়ালী, সদর দক্ষিণ, ডিএমপি ও সিএমপির বিভিন্ন থানায় দায়ের হয়েছে ডজনখানেক মামলা।   

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক আবু রায়হান  বলেন, ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পরও কখনও ভিডিও বার্তা, কখনও অডিও বার্তার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তাই বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর শেষে বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে।   

কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকালে সমকালকে বলেন, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আওয়ামী লীগ অফিস ও সাবেক এমপি বাহাউদ্দিনের বাড়িতে বাহির থেকে হামলা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হলেও ভেতরে কেউ প্রবেশ করেনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এমপ ব হ র র স মন ত কর ম আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ: মধ্যরাতে আদালতে শুনানি, চার আসামির রিমান্ড মঞ্জুর

নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় আসামিদের গতকাল রোববার দিনে আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ। পরিস্থিতি বিবেচনায়, গতকাল গভীর রাতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি করেছেন আদালত।

মূল অভিযুক্ত ভুক্তভোগী শিশুর বোনের শ্বশুরকে ৭ দিন, স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুর প্রত্যেককে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। মাগুরার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মতিন এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্র ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে প্রায় দিনভর মাগুরা শহরে শিশু ধর্ষণে জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুদন্ডের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারীরা। এরপর সেখান থেকে সরে গিয়ে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ভায়না মোড় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। সন্ধ্যার পরে শহরে আবার মশাল মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে, আসামিদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা থাকায় তাঁদের আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ।

গতকাল রাত ১২টার পর শুরু হয় রিমান্ড শুনানি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সব আসামিদের ৭ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। এ সময় আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি। আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিলে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন আসামিরা। রিমান্ড না দেওয়ারও দাবি করেন তাঁরা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে জানান হয়, ভুক্তভোগী শিশু অচেতন থাকায় জবানবন্দি নেওয়া যায়নি, ফলে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে মামলার মূল অভিযুক্তকে ৭ দিন এবং অন্য তিন আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।

আরও পড়ুননিরাপত্তা শঙ্কায় আদালতে নেওয়া যায়নি আসামিদের, রিমান্ড শুনানিও হয়নি১৩ ঘণ্টা আগে

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মামলার তদন্ত সংস্লিষ্ট এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিমান্ডের আবেদনসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি থাকলেও গতকাল দিনে আসামিদের আদালতে হাজির করার ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। দিনভর আন্দোলনকারীরা আদলতের ফটক ঘিরে রেখেছিলেন। আসামিদের তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করছিলেন। এ কারণে রাতে শুনানি করেছেন আদালত।’

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটির মা বললেন, ‘ইশ্‌! ক্যান যে পাঠাইছিলাম’১৫ ঘণ্টা আগে

মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। শিশুটি বর্তমানে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) চিকিৎসাধীন রয়েছে।

গত শনিবার শিশুটির মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। এতে শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বোনের স্বামী, শাশুড়ি ও ভাশুরকে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুনমাগুরায় আদালতের ফটক ছেড়ে শিক্ষার্থীদের ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ১৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ