শহীদ পরিবারের স্বজনদের অবরোধ, শাহবাগে যান চলাচল বন্ধ
Published: 6th, February 2025 GMT
ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের স্বজনেরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে তাঁরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এতে ওই এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এবং আশপাশের রাস্তায়ও যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
শহীদ পরিবারের স্বজনেরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বেন না। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন দাবি জানান।
শাহবাগ মোড় অবরোধের কারণে আশপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
তরুণদের এই মৃত্যুযাত্রা থামাতেই হবে
ইতালিতে ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে যাত্রাপথে লিবীয় উপসাগরে নৌকা ডুবে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে মাদারীপুরের সুজন ফরাজীসহ বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণের। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ময়দানে ড্রোন হামলার শিকার হয়ে নিহত হন নাটোরের হুমায়ুন কবির। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দালালদের প্রতারণার শিকার হয়ে ভাগ্যান্বেষী তরুণদের মৃত্যু নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ইতালি গিয়ে ভাগ্য ফেরাতে চেয়েছিলেন সুজন ফরাজী। বাবা রাজি না হওয়ায় তাঁকে না জানিয়ে ফুফুর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা নিয়ে সুজন ফরাজী ইতালি যাত্রা করেছিলেন। কিন্তু ইতালি যাওয়া তাঁর হয়নি। ৫৬ জন আরোহী নিয়ে নৌযানটি ২৫ জানুয়ারি ভূমধ্যসাগরে ডুবে গেলে ২৩টি লাশ সৈকতে ভেসে আসে। এর মধ্যে সবাই যে ডুবে মারা গেছেন, তা নয়। ফরিদপুরের কামারখালীর হৃদয় হাওলাদারের বাবা মিন্টু হাওলাদার জানিয়েছেন, ২৪ জানুয়ারি রাতে তাঁদের জাহাজে করে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছোট বোটে করে নিতে চাইলে অনেকে বোটে উঠতে চাননি। যাঁরা উঠতে চাননি, তাঁদের গুলি করে হত্যা করেছে। যাঁরা উঠেছেন, তাঁরা ডুবে মারা গেছেন।
কী ভয়াবহ পরিস্থিতি! যে দালালদের খপ্পরে পড়ে দেশের তরুণেরা বিদেশে গিয়ে হারিয়ে যান, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। জনশক্তি রপ্তানির নামে একশ্রেণির দালাল বিদেশে ভাগ্যান্বেষী তরুণদের খুঁজে বের করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার মজুমদারকান্দি এলাকার মনির শেখ নামের এক দালাল সুজনের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকায় ইতালি নেওয়ার চুক্তি করেছিলেন। লিবিয়ায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে মাদারীপুর ও ফরিদপুরের অন্তত ১২ জন আছেন বলে স্বজনদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
দালালদের একটি চক্র লিবিয়ায় ইতালিগামী তরুণদের বন্দিশিবিরে আটক করে নির্যাতন চালায়। দেশে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার পরই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় বছরে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে ৪ হাজার ২০০ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখনো হাজারের বেশি অবৈধ বাংলাদেশি আটকে আছেন লিবিয়ায়। ১০ বছর ধরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যাঁরা ইউরোপে যান, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৮৪ হাজার বাংলাদেশি এভাবে সমুদ্রপথে ইউরোপে গেছেন। প্রতিবছর গড়ে অন্তত ১০০ বাংলাদেশি নৌকা ডুবে মারা যান।
অভিবাসনবিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনির ডয়চে ভেলেকে বলেন, এর সঙ্গে শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক চক্রও জড়িত। প্রত্যেকের ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগে। কিন্তু এই টাকা খরচের পর অনেকেই বিপদে পড়েন, মারা যান, বন্দী হন, ক্যাম্পে আটক হন।
সরকার আন্তর্জাতিক চক্রকে ধরতে না পারলেও দেশি চক্রকে তো ধরতে পারে। সরকার কি কেবল হতভাগ্য যুবকদের লাশ দেশে এনে দায়িত্ব শেষ করবে? যারা ভাগ্যান্বেষী তরুণদের বিদেশে নিয়ে লাশ বানায়, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেবে না? এই দালাল চক্রের পেছনে কিছু অনুমোদিত জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জড়িত, যাদের মাধ্যমে তারা বিদেশে লোক পাঠিয়ে থাকে।
অতীতে এ রকম অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কেননা এ চক্রের সঙ্গে জড়িতদের অনেকেই ছিলেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালী। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতি নিতে হবে।
বিদেশে মানব পাচার বন্ধ করতে হলে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। বাংলাদেশি তরুণদের এই মৃত্যুযাত্রা সরকারকে অবশ্যই থামাতে হবে। তরুণদের জন্য ভালো কর্মসংস্থান সৃষ্টিই এই মৃত্যুযাত্রা থামানোর সবচেয়ে ভালো বিকল্প।