প্রমত্তা পদ্মা নদী শুকিয়ে তার জৌলুস হারিয়েছে। পানি কমায় সেখানে বাড়ছে চরের বিস্তৃতি। এক সময়ের ভরা যৌবনা পদ্মা শুকিয়ে ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে এখন বিভিন্ন কৃষিজাত ফসলের চাষ হচ্ছে।

পদ্মার শাখা, উপশাখা নদীগুলো মূলত পদ্মাকে ঘিরেই এর সৌন্দর্য বিরাজ করে। কিন্তু শুষ্ক মওসুমের আগেই পদ্মার পানিশূন্য হয়ে পড়ায়, এর প্রভাব পড়েছে এসব নদী ও খাল বিলে। চির যৌবনা পদ্মা এখন পানিশূন্য নদী। দূর-দিগন্তে যতদূর চোখ যায়, শুধু ধু-ধু বালুচর। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার বৈশাখ মাস আসার আগেই যতটুকু পানি পদ্মায় রয়েছে, হয়তো সেটা আর দেখা যাবে না। মূলত নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে বালুচরের উচ্চতা বেড়ে গেছে। বর্ষা মওসুমে মাস তিনেকের জন্য নদীতে পানি থাকলেও বছরজুড়েই তলানিতে থাকে পানি। পদ্মায় শেষ পর্যন্ত যে পানি থাকে, তাতে কোনো কাজে লাগে না। বেশিরভাগ সময় একেবারে নাগালের বাইরে এ পানি অবস্থান করে। যা দিয়ে সেচের কাজও করতে পারেন না কৃষকরা।

নদীপাড়ের জেলে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘‘পদ্মা নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে জেলেদের একটি বড় অংশ বেকার হয়ে যায়। যারা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের এখনই দুর্দিন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই পদ্মা নদী থেকে নৌকা ও জাল গুটিয়ে নিয়েছেন। তারা মাছ শিকার না করে দিনমজুর, অটো, ভ্যান ও রিকশা চালানোর পেশা বেছে নেয়।’’

পরিবেশবিদ আতাউর রহমান বলেন, ‘‘আমরা অনেক আগে থেকেই ‘নদী বাঁচাও’ আন্দোলন করে যাচ্ছি। তবে মূল বিষয়টি হল, ভারত আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে গঙ্গাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি একতরফাভাবে সরিয়ে নিচ্ছে। এ কারণে পদ্মা থেকে শুরু করে শাখা উপশাখা নদীগুলো শুষ্ক মওসুমের আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে। আর এ অঞ্চলের মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়ছে।’’

কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘নদীতে পানি কম থাকায় চর বেড়েছে। এতে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পূর্ব পাশে লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের মাঝখানে পদ্মার চরে গাজর চাষের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আগাম জাতের গাজরের ভালো ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত গাজর বিক্রি হয়েছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘অন্য বছরের তুলনায় এবারে গাজর আবাদের খরচ বেড়েছে। গাজরের বীজ এবারে কৃষকরা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি কৃত্রিম সার সংকটের কারণে সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে হয়েছে। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে আবাদের শুরুতে তীব্র খরায় দ্বিগুণ সেচ দিতে হয়েছে। গাজর চাষে আগে খরচ হতো সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা। এবারে হয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। তবে সার ও বীজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদেশ থেকে গাজর আমদানির ফলে কৃষকরা দেশীয় গাজরের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। গাজর চাষিদের কেউ কেউ আগাম গাজরের দাম পেয়ে খুশি।’’

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদা সুলতানা বলেন, ‘‘নদী শুকিয়ে গেলে জেলেরা এখানে চাষাবাদ করে থাকেন। এবার তারা গাজর চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো। গাজর চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর আবাদ বাড়ছে। বর্তমান বাজারে গাজর যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তাতে কৃষকরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। এজন্য চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে কৃষি বিভাগ।’’ 

ঢাকা/কাঞ্চন/এনএইচ/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক ষকর

এছাড়াও পড়ুন:

ধর্ষণ-নির্যাতনের অভিযোগ জানাতে খোলা হচ্ছে ‘হটলাইন’

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ব‌লে‌ছেন, “রাস্তাঘাটে যে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি হয়, এ ব্যাপারে প্রতিকার নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত একটি আলাদা হটলাইন দেওয়া হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি জানিয়ে দেওয়া হবে। এটি হবে টোল ফ্রি।”

রবিবার (৯ মার্চ) সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে তি‌নি এ তথ‌্য জানান।

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও তথ‌্য ও সম্প্রচার উপ‌দেষ্টা মো, মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

‘দেশে নারী নির্যাতন প্রচুর হচ্ছে’

লিবিয়া থেকে উদ্ধারের জন্য ২৭ বাংলাদেশির আকুতি

আইন উপদেষ্টা বলেন, “হটলাইন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবে। অভিযোগ জানানো যাবে। এটি তদারকি করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটা ডেডিকেটেড সেল থাকবে।”

“একই সঙ্গে ধর্ষণের মামলাগুলো তদারকি করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা সেল থাকবে। যেখানে মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে অযথা কালক্ষেপণ যেন না করা হয়, সেটি দেখা হবে,” ব‌লেও জানান তি‌নি।

বাংলাদেশে এখন যে নারীর প্রতি সহিংসতা হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে, ধর্ষণ হচ্ছে-এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না জা‌নি‌য়ে আসিপ নজরুল বলেন, “এই সরকারের পুরো প্রশাসন এসব মামলায় সুবিচার নিশ্চিত ও সব ধরনের যৌন হয়রানি বন্ধের সব প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর।”

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে আজকের মিটিং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা প্রত্যেকেই আপনাদের মতো ডিস্টার্ব। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের আরো অনেক কঠোর হতে হবে। এখান থেকে যেকোনো ধরনের মব জাস্টিসকে কঠোরভাবে দমন করা হবে।”

দিনাজপুরের শিশু ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সাইফুল ইসলামের জামিন আপিল বিভাগে বাতিল হয়েছে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, “অনেক সময় প্রত্যাশামাফিক আমরা কাজ করতে পারি না। সেটা নিয়ে যন্ত্রণা থাকে, আত্মদহন থাকে।”

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ