রুপির দরপতন অব্যাহত, ১ ডলারে মিলছে ৮৭ রুপির বেশি
Published: 6th, February 2025 GMT
ভারতীয় মুদ্রা রুপির দরপতন চলছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রুপির মান সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়—প্রতি ডলারের বিপরীতে ৮৭ দশমিক ৫৭ রুপি। পরে অবশ্য রুপির মান কিছুটা বেড়েছে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় ডলারের বিপরীতে রুপির মান ছিল ৮৭ দশমিক ৫৩।
গত সোমবার প্রথমবার ডলারের মান ৮৭ রুপি পেরিয়ে যায়। এর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে রুপির দরপতন হচ্ছে। বাজারের নিয়ম অনুযায়ী কখনো বাড়ছে আবার কখনো কমছে। সেই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে রুপির দর ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়।
সোমবার ডলারের বিপরীতে রুপির ৬৭ পয়সা দরপতন হয়েছিল। গতকাল বুধবার হয়েছে ৩৯ পয়সা। রুপির দামের এই ধসে ভারতের সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, আর কতটা দুর্বল হবে ভারতীয় মুদ্রা, নতুন বছরের শুরুতেই ৮৬-র পরে ৮৭-এর মাইলফলকও পেরিয়ে গেল ডলার। এর সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের সম্পর্ক আছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এরপরও রুপির দরপতন নিয়ে আশঙ্কার বিষয়ে অতটা উদ্বিগ্ন নয়। দেশটির অর্থসচিব তুহিন কান্ত পাণ্ডের আশ্বাস, চিন্তার কিছু নেই। মুদ্রার অস্থিরতা সামলাচ্ছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। শেয়ারবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগ বেরিয়ে যাওয়ার কারণেই বিনিময়মূল্য চাপের মুখে পড়ছে—এ কথা স্বীকার করে তাঁর দাবি, রুপির লেনদেন অবাধ হচ্ছে। মুদ্রার দর নিয়ন্ত্রণ বা তার স্থায়ী দাম বলে কিছু থাকতে পারে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলার চাঙা হওয়ায় কয়েক মাস ধরেই রুপির দরপতন হচ্ছে। ভারতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্রমাগত শেয়ার বিক্রিও এর অন্যতম কারণ। তবে চলতি সপ্তাহে রুপির এই দরপতনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির যোগ আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তিনি আবার বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করায় রুপির এই দরপতন হয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা ও ট্রাম্পের শুল্ক সিদ্ধান্তের কারণে সব উন্নয়নশীল দেশের মুদ্রাই দুর্বল হয়েছে। ট্রাম্পের আগ্রাসী পদক্ষেপের পাশাপাশি ভারতের বাজেটও দায়ী। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তা আকৃষ্ট করতে পারেনি। ফলে তাদের শেয়ার বিক্রিতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্র যত নিষেধাজ্ঞা দেবে, ততই অন্যান্য দেশের মুদ্রার সাপেক্ষে ডলার শক্তিশালী হবে। রুপির দরপতনও অব্যাহত থাকবে। এটা আমদানিকারকদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়। এতে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে পারে।
আরবিআইয়ের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন সম্প্রতি বলেছেন, রুপির দরপতন নিয়ে চিন্তিত নন। ভারতীয় মুদ্রা রুপির ধারাবাহিক দরপতনে চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘মুদ্রার শক্তি নিশ্চিতভাবেই রুপি-ডলারের সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। কিন্তু বিষয়টি হলো, অনেক দেশের মুদ্রার নিরিখেই ডলার শক্তিশালী হয়েছে। এমনকি ডলারের সাপেক্ষে ইউরোর দরপতন হয়েছে। গত এক বছরে ইউরোর দরপতন হয়েছে ৬ থেকে ৭ শতাংশ। ভারতের বাজারে ডলারের দাম ৮৩ থেকে ৮৬ রুপিতে ওঠা সেই তুলনায় কম।’
এদিকে বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হওয়ার সঙ্গে বিশ্ববাজারে সোনার দামও বাড়ছে। প্রতি আউন্স সোনার দাম এখন ২ হাজার ৮৭০ ডলারের কাছাকাছি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র ব পর ত
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের শুল্কে এক দিনে ৫০ হাজার কোটি রিয়াল হারিয়েছে সৌদি পুঁজিবাজার
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে সৃষ্ট বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে গতকাল রোববার লেনদেন চলাকালে ৫০ হাজার কোটি রিয়ালের বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে সৌদি আরবের শেয়ারবাজার। এ বাণিজ্যযুদ্ধে পতনের মুখে পড়েছে উপসাগরীয় অন্যান্য শেয়ারবাজারও। সপ্তাহান্তে জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্যহ্রাস ও বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে দরপতনও উপসাগরীয় বাজারে পতনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
সৌদি আরবের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচক তাদাউল অল শেয়ার ইনডেক্স (টিএএসআই) ৭০০ পয়েন্টের বেশি (৬ দশমিক ১ শতাংশ) কমে ১১ হাজার ২০০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে। এই পতনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে সৌদি আরামকো। কোম্পানিটির বাজারদর ৩৪ হাজার কোটি রিয়ালের বেশি কমেছে। অন্যান্য উপসাগরীয় সূচকেও সামগ্রিকভাবে পতন দেখা গেছে। গতকাল কাতার, কুয়েত, ওমান ও বাহরাইনও শেয়ারবাজারে পতনের খবর জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্যান্য দেশের মতো উপসাগরীয় পণ্য আমদানির ওপর ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর বাজারে পতন শুরু হয়। নতুন এই মার্কিন শুল্ক ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা অন্যায্য বাণিজ্যিক চর্চা মোকাবিলায় এ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জে টিএএসআই ও নোমু সূচকে তালিকাভুক্ত ৩৪টি কোম্পানি গতকাল লেনদেনের শুরু থেকে দুপুর পর্যন্ত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় দরপতন দেখেছে। বাণিজ্যযুদ্ধ ও চার বছরের মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম সর্বনিম্ন স্তরে নেমে আসার কারণে মূলত এই দরপতন হয়েছে।
সৌদি কোম্পানি তাকউইন, আল আমার, অ্যারাবিয়ান ড্রিলিং, গালফ জেনারেল, সাইফ গ্যালারি, ফার্স্ট মিলস, ফোর্থ মিলস, অ্যারাবিয়ান মিলস, আল নাহদি, এন্তাজ, আদ্দিস, আমেরিকানা, তালকো, দার আল–মা’দাত, দেরায়াহ, রায়দান, সামাস্কো, ফাকিয়েহ হেলথ, লুমি, নাইস ওয়ান, নাকি ও হার্ফি ফুডসের শেয়ারের দাম রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে।
অন্যদিকে সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক নোমু প্যারালাল মার্কেট ইনডেক্স দুপুর নাগাদ ৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৬০০ পয়েন্ট হারিয়েছে। টানা পাঁচ কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী অবস্থা থেকে পরপর দুই দিন সূচকটি পতনের মুখ দেখেছে। নোমুতে ১৩টি কোম্পানির শেয়ারের দাম রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এর মধ্যে রয়েছে তাকাত, ওবাইকান গ্লাস, অ্যারাবিকা স্টার, জানা, আমওয়াজ ইন্টারন্যাশনাল, তাইবা, মানাওয়ালা, রেশিও, আল বাতাল ফ্যাক্টরি, লামাসাত, সুলতান ফুড, শামু আল মাদি ও হাদাব আল খালিজ।